আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত ধর্মগুরু ও সংসারবিরাগীদেরকে রব হিসাবে গ্রহণ করা

আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত তাদেরকে রব হিসাবে গ্রহণ করে ইবাদত করা।

................................................

ব্যাখ্যা: ইয়াহুদী খ্রিষ্টানদের ব্যাপারে আল্লাহ ত‘আলা বলেন,

(اتَّخَذُوا أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَاباً مِنْ دُونِ اللَّهِ وَالْمَسِيحَ ابْنَ مَرْيَمَ وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا إِلَهاً وَاحِداً) [التوبة: 31]

তারা আল্লাহকে ছেড়ে তাদের পন্ডিতগণ ও সংসার-বিরাগীদের রব হিসাবে গ্রহণ করেছে এবং মারইয়ামপুত্র মাসীহকেও। অথচ তারা এক ইলাহের ইবাদত করার জন্যই আদিষ্ট হয়েছে, তিনি ব্যতীত কোন (হক) ইলাহ নেই। তারা যে শরীক করে তিনি তা থেকে পবিত্র (সূরা তাওবা ৯:৩১)।

এখানে পন্ডিত বলতে আলেম ও সংসারবিরাগী বলতে ইবাদতকারী বুঝানো হয়েছে। ইয়াহুদী-খ্রিষ্টানরা পন্ডিত ও সংসারবিরাগীদেরকে অনুসরণের মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলার অবাধ্যতা সত্ত্বেও তাদের ইবাদত করে। তারা হালালকে হারাম ও হারামকে হালালে পরিণত করে। তারা তাদের আনুগত্যকে ইবাদত বলে গণ্য করে।

যেমন তারা বলে আলেমদের আনুগত্য করা ওয়াজীব। আমরা বলবো আল্লাহর আনুগত্যে তাদের আনুগত্যে ওয়াজীব। আর আল্লাহর অবাধ্যতায় তাদের আনুগত্য নেই। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

لا طاعة لمخلوق في معصية الخالق

স্রষ্টার অবাধ্যতায় সৃষ্টির কোন আনুগত্য নেই।[1]

যদিও আলিম বা ইবাদতকারীরা মানুষের মাঝে বেশি ইবাদতে লিপ্ত থাকে। তারা হক্বের উপর অটল না থাকলে তাদের আনুগত্য করা বৈধ নয়। আল্লাহ তা‘আলা যা হারাম করেছেন তারা তা হালাল করে ও হালাল কে হারাম করে এটা জানা সত্বেও যারা তাদের আনুগত্য করে, তারা মূলতঃ তাদেরকে রব হিসাবেই মেনে নেয়। অর্থাৎ তারা আল্লাহ তা‘আলার সাথে তাদেরকে শরীক করে। কেননা হালাল-হারাম নির্ধারণ করা আল্লাহর অধিকার। আল্লাহর কিতাব ও রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাহ ছাড়া হালাল-হারামের পরিবর্তন ও শরীয়ত নির্ধারণ করা কারো জন্য বৈধ নয়। মহান আল্লাহ বলেন,

(وَلا تَقُولُوا لِمَا تَصِفُ أَلْسِنَتُكُمُ الْكَذِبَ هَذَا حَلالٌ وَهَذَا حَرَامٌ لِتَفْتَرُوا عَلَى اللَّهِ الْكَذِبَ إِنَّ الَّذِينَ يَفْتَرُونَ عَلَى اللَّهِ الْكَذِبَ لا يُفْلِحُونَ مَتَاعٌ قَلِيلٌ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ) [النحل: 116-117]

আর তোমাদের জিহবা দ্বারা বানানো মিথ্যার উপর নির্ভর করে বলো না যে, এটা হালাল এবং এটা হারাম, আল্লাহর উপর মিথ্যা রটানোর জন্য। নিশ্চয় যারা আল্লাহর উপর মিথ্যা রটায়, তারা সফল হবে না। সামান্য ভোগ এবং তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব (সূরা নাহাল ১৬ : ১১৬,১১৭)। আলেমের সঠিক অথবা ভুল যা-ই হোক, আমরা সাধারণভাবে তাদের অনুসরণ করবো না। তারা সঠিক সিন্ধান্তে উপনিত হলে তবেই আমরা তাদের অনুসরণ করবো। আর তাদের দ্বারা সংঘটিত ভুল থেকে বিরত থাকবো। তাই যারা আল্লাহর আনুগত্য করে আমরা তাদের অনুসরণ করবো। পক্ষান্তরে, যারা আল্লাহ তা‘আলার অবাধ্য হয়, তাদেরকে অমান্য করবো এবং তাদের ভুলের বিরোধিতা করবো। এটাই সঠিক দীন। আর আলেমের ভুল বুঝতে না পারলে তা অজুহাত হিসাবে গণ্য হবে। আর যারা বলে, আলেমদের ভুল তাদের উপরই বর্তাবে, আমরা বলবো, এটা বলা বৈধ নয়। কিয়ামতের দিন তা কোন কাজে আসবে না। নিজ দায়িত্ব নিজের উপর ও তাদের দায়ভার তাদের উপরই বর্তাবে। আর আল্লাহর কিতাব ও রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাহ ব্যতিরেকে কোন ফাতওয়ার উপর নির্ভর করা যাবে না। ফাতওয়া দলীল সম্মত নয় জানা গেলে তা গ্রহণ করা হারাম, অন্যথায় অজুহাত বলে গণ্য হবে। তবে সঠিক বিষয় অনুসন্ধান করা ও বেশি নিশ্চিত হওয়া আবশ্যক।

>
[1]. ছ্বহীহ: তিরমিযী ১৭০৭।