রমযান মাসের ৩০ আসর ষোড়শ আসর শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রহঃ)

সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি পদস্খলন মিটিয়ে দেন ও উপেক্ষা করেন, ক্ষমা করেন আবোল-তাবোল কথা ও ছাড় দেন। যে কেউ তাঁর কাছে আশ্রয় চায় সে সফল হয়, যে কেউ তার সাথে লেন-দেন করে সেই লাভবান হয়, তিনি আকাশকে বিনা খুঁটি উপরে উঠিয়েছেন সুতরাং তুমি চিন্তা কর এবং খাঁটি ও স্বচ্ছ হও। তিনি নাযিল করেছেন বৃষ্টি ফলে ফসলাদিকে দেখা যায় পানিতে সাতরাতে। প্রাচুর্যও প্রদান করেন আবার দারিদ্র্যতাও দেন, কখনও কখনও দারিদ্র্যতা হয় বান্দার জন্য উপযোগী। এমন বহু প্রাচুর্যশীল রয়েছে, যার প্রাচুর্য তাকে গর্ব অহংকারের খুব নিকৃষ্টতম পর্যায়ে নিপতিত করেছে। এ তো ‘কারূন’ অনেক কিছুরই সে মালিক হয়েছিল, কিন্তু সে সামান্যের ব্যাপারে ছাড় দিতে রাযী ছিল না, তাকে সাবধান করা হয়েছিল কিন্তু সে জাগ্রত হয় নি, তাকে তিরস্কার করা হয়েছিল কিন্তু তিরস্কার তার কাজে আসে নি, বিশেষ করে যখন তার জাতির লোকেরা তাকে বলেছিল, ‘তুমি বেশি খুশি হয়ো না। আমি তাঁর প্রশংসা করি যতক্ষণ পর্যন্ত দিন গড়িয়ে বিকেল হবে, আর রাত পেরিয়ে হবে সকাল।

আর আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোনো সত্য ইলাহ নেই, তিনি অমুখাপেক্ষী, দানবীর, প্রশস্ত দান করার মাধ্যমে দয়া করেছেন এবং নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসূল, যিনি আল্লাহর জন্য তাঁর জান ও মাল ব্যয় করেছেন, সত্যকে করেছেন স্পষ্ট ও প্রকাশিত।

আল্লাহ তা‘আলা তাঁর উপর সালাত পেশ করুন, আর তার সাথী আবু বকরের উপর, যিনি সফরে ও অবস্থানস্থল সর্বদা তার সাথে ছিলেন, কখনও তাকে পরিত্যাগ করেন নি। অনুরূপ উমারের উপর, যিনি দিনের সম্মান ও প্রতিপত্তি বৃদ্ধিতে ছিলেন সদা সচেষ্ট। আর উসমানের উপর, যিনি আল্লাহর রাস্তায় বহু খরচ করেছেন এবং সংশোধন করেছেন। তদ্রূপ আলীর উপর, যিনি ছিলেন রাসূলের চাচাতো ভাই, তার ব্যাপারে যারা বাড়াবাড়ি কিংবা সম্মানহানি থেকে তাদের থেকে তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ মুক্ত; অনুরূপভাবে বাকী সাহাবীগণের উপর এবং যারা সুন্দরভাবে তাদেরকে অনুসরণ করেছেন তাদেরও উপর। আর আল্লাহ তাদের উপর যথাযথ সালামও পেশ করুন।

প্রিয় ভাইয়েরা!

* আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ وَمَآ أُمِرُوٓاْ إِلَّا لِيَعۡبُدُواْ ٱللَّهَ مُخۡلِصِينَ لَهُ ٱلدِّينَ حُنَفَآءَ وَيُقِيمُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَيُؤۡتُواْ ٱلزَّكَوٰةَۚ وَذَٰلِكَ دِينُ ٱلۡقَيِّمَةِ ٥ ﴾ [البينة: ٥]

‘তাদের এ মর্মে আদেশ করা হয়েছে যে, তারা নিবিষ্ট মনে একান্তভাবে শুধুমাত্র আল্লাহর ইবাদত করবে, সালাত প্রতিষ্ঠা করবে এবং যাকাত প্রদান করব। আর এটাই হলো সুপ্রতিষ্ঠিত দ্বীন।’ (সূরা আল-বায়্যিনাহ, আয়াত: ৫)

* আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:

﴿ وَأَقِيمُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتُواْ ٱلزَّكَوٰةَ وَأَقۡرِضُواْ ٱللَّهَ قَرۡضًا حَسَنٗاۚ وَمَا تُقَدِّمُواْ لِأَنفُسِكُم مِّنۡ خَيۡرٖ تَجِدُوهُ عِندَ ٱللَّهِ هُوَ خَيۡرٗا وَأَعۡظَمَ أَجۡرٗاۚ وَٱسۡتَغۡفِرُواْ ٱللَّهَۖ إِنَّ ٱللَّهَ غَفُورٞ رَّحِيمُۢ ٢٠ ﴾ [المزمل: ٢٠]

‘আর সালাত কায়েম কর, যাকাত দাও এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ দাও। আর তোমরা নিজদের জন্য মঙ্গলজনক যা কিছু অগ্রে পাঠাবে তোমরা তা আল্লাহর কাছে পাবে প্রতিদান হিসেবে উৎকৃষ্টতর ও মহত্তর রূপে। আর তোমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও। নিশ্চয় আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সূরা আল-মুযযাম্মিল, আয়াত: ২০)

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿وَمَآ ءَاتَيۡتُم مِّن رِّبٗا لِّيَرۡبُوَاْ فِيٓ أَمۡوَٰلِ ٱلنَّاسِ فَلَا يَرۡبُواْ عِندَ ٱللَّهِۖ وَمَآ ءَاتَيۡتُم مِّن زَكَوٰةٖ تُرِيدُونَ وَجۡهَ ٱللَّهِ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُضۡعِفُونَ ٣٩ ﴾ [الروم: ٣٩]

‘আর তোমরা যে সূদ দিয়ে থাক, মানুষের সম্পদে বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য তা মূলত আল্লাহর কাছে বৃদ্ধি পায় না। আর তোমরা যে যাকাত দিয়ে থাক আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে (তাই বৃদ্ধি পায়) এবং তারাই বহুগুণ সম্পদ প্রাপ্ত।’ (সূরা আর-রূম, আয়াত: ৩৯)

এ ছাড়াও যাকাত ফরয হওয়ার বিধান সম্পর্কে অনেক আয়াত রয়েছে।

হাদীসের আলোকে যাকাতের বিধান:

* ‘আব্দুল্লাহ ইবন ‘উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন:

«بُنِيَ الْإِسْلَامُ عَلَى خَمْسَةٍ، عَلَى أَنْ يُوَحَّدَ اللهُ، وَإِقَامِ الصَّلَاةِ، وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ، وَصِيَامِ رَمَضَانَ، وَالْحَجِّ» ، فَقَالَ رَجُلٌ: الْحَجُّ، وَصِيَامُ رَمَضَانَ، قَالَ: «لَا، صِيَامُ رَمَضَانَ، وَالْحَجُّ»

‘ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি, যথা- এ কথার সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো সত্যিকারের মাবুদ নেই। সালাত আদায় করা, যাকাত প্রদান করা, রমযানের সিয়াম পালন করা ও হজ আদায় করা। এ কথা শুনে একব্যক্তি বললেন, হজ তারপর কি রমযানের সিয়াম? তিনি বললেন, না বরং প্রথমে রমযানের সিয়াম তারপর হজ। এ ধারাবাহিকতায় আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি।’[1]

* অন্য বর্ণনায় রয়েছে: (ইসলামের ভিত্তি হলো) এ সাক্ষ্য প্রদান করা যে ‘এক আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো সত্য ইলাহ নেই, মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর রাসূল’। তারপর পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ।[2]

সুতরাং বোঝা গেল, যাকাত ইসলামের একটি রুকন ও মৌলিক ভিত্তিগুলোর একটি।

আর কুরআনের বহু জায়গায় সালাতের পাশাপাশি যাকাতের বিষয়টি আলোচিত হয়েছে।

ইজমা:

সকল মুসলিম অকাট্যভাবে একমত যে, যাকাত একটি ফরয বিধান। সুতরাং যাকাত ফরয জেনেও যদি কোনো ব্যক্তি তা অস্বীকার করে, তাহলে সে কাফের হয়ে যাবে।আর যে যাকাত প্রদানে কৃপণতা করবে বা পরিমানের চেয়ে কম দেবে, সে লাঞ্ছনা ও কঠিন শাস্তির উপযুক্ত হবে।

[1] মুসলিম: ১৬।

[2] বুখারী: ৮; মুসলিম: ১৬