আল্লাহ তাআলা মানব জাতিকে সঠিক পথে পরিচালনার জন্য সত্য দ্বীনসহ যুগে যুগে অগণিত নবী রাসূল প্রেরণ করেছেন। নির্ভেজাল তাওহীদই ছিল নবী-রাসূলদের দ্বীনের মূল বিষয়। পৃথিবীর মানুষেরা এই তাওহীদকে যখনই ভুলে গেছে, তখনই তা পুনরুদ্ধারের জন্য নতুন নতুন নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন। সেই ধারাবাহিকতায় আগমণ করেন সর্বশেষ নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তাঁর দাওয়াতের মূল বিষয়ও ছিল এই তাওহীদ। মক্কায় অবস্থান করে একটানা ১৩ বছর তিনি তাওহীদের দাওয়াত দিয়েছেন। অতঃপর মদীনায় হিজরত করে তাওহীদের দাওয়াত অব্যাহত রেখেছেন। উম্মতের সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তানগণ তাঁর এই দাওয়াত গ্রহণ করলো এবং তারা তাঁর সাহায্য করলো। আল্লাহ তাআলা অল্প সময়ের মধ্যেই তাঁর দ্বীনকে বিজয়ী করলেন। আরব উপদ্বীপসহ পৃথিবীর সর্বত্রই এই দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছে গেল। তাওহীদের মাধ্যমে তারা সমগ্র জাতির উপর যে গৌরব, সম্মান, শক্তি, প্রতিপত্তি এবং প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল। কিন্তু পরবর্তীতে বিভিন্ন কারণে মুসলিমগণ দুর্বল হয়ে পড়ে। মুসলিমদের শক্তির মূলভিত্তি এই নির্ভেজাল তাওহীদের উপর শির্ক ও কুসংস্কারের আবর্জনা পড়ে যাওয়াই মুসলিমদের বিপর্যস্তের প্রধান ও মূল কারণ।
ইসলামের এই মূলভিত্তি নির্ভেজাল তাওহীদ থেকে যখনই মুসলিম জাতি দূরে চলে গেছে, দ্বীনি লেবাসে বিভিন্ন সময় শির্ক, বিদআত, কুসংস্কার ও বিজাতীয় আচার-আচরণ মুসলিমদের মধ্যে অনুপ্রবেশ করেছে, তখনই নির্ভেজাল তাওহীদের দিকে জাতিকে ফিরিয়ে আনার জন্য এবং সকল প্রকার আবর্জনা থেকে তাওহীদকে পরিস্কার ও পরিশুদ্ধ করার জন্য ইসলামের স্বর্ণযুগের পরে আল্লাহ তাআলা বহু মর্দে মুজাহিদ প্রেরণ করেছেন। তারা পথহারা জাতিকে সুপথে ফিরিয়ে এনেছেন, তাওহীদের দাওয়াতকে পুনরুজ্জীবিত করেছেন এবং দ্বীনকে সকল প্রকার শির্ক-বিদআত থেকে সংস্কার ও সংশোধন করেছেন। তাদেরই ধারাবাহিকতায় হিজরী সপ্তম ও অষ্টম শতকে আগমণ করেন বিপ্লবী সংস্কারক শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়া রাহিমাহুল্লাহ। বহু প্রতিকূল পরিবেশ ও পরিস্থিতি মোকাবেলা করে এবং জেল-যুলুম সহ্য করে তাওহীদ পুনরুদ্ধার ও সংস্কারে তিনি যে অতুলনীয় অবদান ও খেদমত রেখে গেছেন, কিয়ামত পর্যন্ত মুসলিম জাতির জন্য তা দিশারী হয়ে থাকবে। তাঁর বরকতময় জীবনী, দাওয়াত ও সংস্কারের সকল দিক উল্লেখ করতে গেলে বড় মাপের একটি গ্রন্থ রচনা করা দরকার। তাই আমরা স্বল্প পরিসরে শাইখের সংক্ষিপ্ত পরিচয়, জীবনী ও সংস্কার আন্দোলনের কিছু দিক এখানে উল্লেখ করেছি।
নাম, জন্ম ও বংশ পরিচয়:
তিনি হলেন আবুল আববাস তকীউদ্দীন শাইখুল ইসলাম ইমাম আহমাদ বিন আব্দুল হালীম বিন আব্দুস সালাম ইবনে তাইমীয়া রাহিমাহুল্লাহ। ৬৬১ হিজরী সালের ১০ রবীউল আওয়াল মাসে তিনি বর্তমান সিরিয়ার হারান এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা আব্দুল হালীম ইবনে তাইমীয়া এবং দাদা আবুল বারাকাত মাজদুদ্দীন আব্দুস্ সালাম বিশিষ্ট মুহাদ্দিছ ও হাম্বলী ফিকাহবিদ ছিলেন। সে হিসাবে তিনি এমন একটি মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন, যার সকল সদস্যই ছিলেন আলেম ও দ্বীনদার। আলেম পরিবারে জন্মগ্রহণ করার কারণে শিশুকালেই তিনি ইলম অর্জনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেন। উল্লেখ্য যে, আলেমদের প্রসিদ্ধ মত অনুযায়ী তাইমীয়া ছিলেন শাইখের নানী। তিনি ওয়াজ-নসীহত ও ভাষণ-বক্তৃতা দানে খুবই পারদর্শী ছিলেন।