عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَجُلٌ يَا رَسُوْلَ اللهِ إِنَّ فُلَانَةَ تُذْكَرُ مِنْ كَثْرَةِ صَلَاتِهَا وَصِيَامِهَا وَصَدَقَتِهَا غَيْرَ أَنَّهَا تُؤْذِيْ جِيْرَانَهَا بِلِسَانِهَا قَالَ هِيَ فِي النَّارِ، قَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ فَإِنَّ فُلاَنَةَ تُذْكَرُ مِنْ قِلَّةِ صِيَامِهَا وَصَدَقَتِهَا وَصَلَاتِهَا وَإِنَّهَا تَصَدَّقُ بِالْأَثْوَارِ مِنْ الْأَقِطِ وَلَا تُؤْذِيْ بِلِسَانِهَا جِيْرَانَهَا قَالَ هِيَ فِي الْجَنَّةِ-
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, একদা জনৈক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! অমুক মহিলা অধিক ছালাত পড়ে, ছিয়াম রাখে এবং দান-ছাদাক্বাহ করার ব্যাপারে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। তবে সে নিজের মুখের দ্বারা স্বীয় প্রতিবেশীদেরকে কষ্ট দেয়। তিনি বললেন, সে জাহান্নামী। লোকটি আবার বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! অমুক মহিলা যার সম্পর্কে জনশ্রুতি আছে যে, সে কম ছিয়াম পালন করে, দান-ছাদাক্বাও কম করে এবং ছালাতও কম আদায় করে। তার দানের পরিমাণ হল পনীরের টুকরা বিশেষ। কিন্তু সে নিজের মুখ দ্বারা স্বীয় প্রতিবেশীদেরকে কষ্ট দেয় না। তিনি বললেন, সে জান্নাতী’ (আহমাদ, বায়হাক্বী, বাংলা মিশকাত হা/৪৭৭৫)।
উপরিউক্ত কুরআনের আয়াত ও হাদীছ সমূহ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, প্রতিবেশীর হক অত্যধিক। তাদের সাথে সদাচরণ করা প্রত্যেক মুমিনের অবশ্য কর্তব্য। তাদের কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকাও রাসূলের নির্দেশ। খাদ্য আদান-প্রদান ও উত্তম আচরণের মাধ্যমে তাদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা যরূরী। প্রতিবেশীর হক আদায় না করলে এবং তাদের সাথে ভাল ব্যবহার না করলে জান্নাত পাওয়া কঠিন।
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «خَيْرُ الْأَصْحَابِ عِنْدَ اللهِ خَيْرُهُمْ لِصَاحِبِهِ وَخَيْرُ الْجِيرَانِ عِنْدَ اللهِ خَيْرُهُمْ لِجَارِهِ» .
আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলার কাছে সে সঙ্গী-সাথী উত্তম, যে নিজের সঙ্গী-সাথীর কাছে উত্তম। আর আল্লাহর কাছে সে প্রতিবেশী উত্তম, যে নিজের প্রতিবেশীর কাছে উত্তম (তিরমিযী, দারেমী, মিশকাত হা/৪৯৮৭)।
عَنِ ابْنِ مَسْعُوْدٍ قَالَ قَالَ رَجُلٌ لِنَبِيِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يَا رَسُولَ اللهِ كَيْفَ لِي أَنْ أَعْلَمَ إِذَا أَحْسَنْتُ أَوْ إِذَا أَسَأْتُ؟ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " إِذَا سَمِعْتَ جِيرَانَكَ يَقُولُونَ: قَدْ أَحْسَنْتَ فَقَدْ أَحْسَنْتَ. وَإِذَا سَمِعْتَهُمْ يَقُولُونَ: قَدْ أَسَأْتَ فقد أَسَأْت ".
ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, এক ব্যক্তি রাসূল (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমি কি ভাবে জানতে পারব যে, আমি যা করেছি তা ভাল করেছি বা খারাপ করেছি? তিনি বললেন, যখন তোমার প্রতিবেশীদেরকে বলতে শুনবে যে, তুমি ভাল করেছ, তখন তুমি (বুঝতে পারবে যে) অবশ্যই ভাল কাজ করছ। আর যখন তাদেরকে বলতে শুনবে যে, তুমি খারাপ কাজ করছ, তখন তুমি (বুঝবে যে,) নিশ্চয় খারাপ কাজই করেছ (ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৪৯৮৮)।
عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ أَبِي قُرَادٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَوَضَّأَ يَوْمًا فَجَعَلَ أَصْحَابُهُ يَتَمَسَّحُونَ بِوَضُوئِهِ فَقَالَ لَهُمُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَا يَحْمِلُكُمْ عَلَى هَذَا؟ قَالُوا: حُبُّ اللهِ وَرَسُولِهِ. فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ سَرَّهُ أَنْ يُحِبَّ اللهَ وَرَسُوْلَهُ أَوْ يُحِبُّهُ اللهُ وَرَسُولُهُ فَلْيُصَدِّقْ حَدِيثَهُ إِذَا حَدَّثَ وَلْيُؤَدِّ أَمَانَتَهُ إِذَا أُؤْتُمِنَ وَلِيُحْسِنَ جِوَارَ مَنْ جَاوَرَهُ.
আব্দুর রহমান ইবনু আবু কুরাদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, একদিন রাসূল (ছাঃ) অযূ করলেন, তখন তাঁর ছাহাবীগণ অযূর পানি তাদের গায়ে মাখতে লাগলেন। তখন রাসূল (ছাঃ) তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, কিসে তোমাদেরকে ইহা করতে উদ্বুদ্ধ করছে? তারা বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ভালবাসা। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, যারা আন্তরিক বাসনা যে, সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালবাসবে অথবা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ছাঃ) যেন তাকে ভালবাসে সে যখন কথা বলে যেন সত্য কথাই বলে। যখন তার কাছে আমানত রাখা হয় সে যেন উক্ত আমানত আদায় করে। এবং প্রতিবেশীর সাথে যেন প্রতিবেশী সুলভ উত্তম আচরণ করে (বায়হাক্বী, মিশকাত হা/৪৯৯০)।
عَن أبي هُرَيْرَة أَنَّ رَجُلًا شَكَا إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَسْوَةَ قَلْبِهِ فَقَالَ امْسَحْ رَأْسَ الْيَتِيْمِ وَأطْعِمْ الْمِسْكِيْنَ.
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, একদা এক ব্যক্তি রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট এসে নিজের হৃদয়ের কাঠিন্য সম্পর্কে অভিযোগ করল। তিনি বললেন, ইয়াতীমের মাথায় হাত বুলাও এবং মিসকীনকে খানা খাওয়াও (আহমাদ, মিশকাত হা/৪৯৯১)।
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ السَّاعِى عَلَى الأَرْمَلَةِ وَالْمِسْكِيْنِ كَالْمُجَاهِدِ فِىْ سَبِيْلِ اللهِ وَأَحْسِبُهُ قَالَ يَشُكُّ الْقَعْنَبِىُّ كَالْقَائِمِ لاَ يَفْتُرُ وَكَالصَّائِمِ لاَ يُفْطِرُ-
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি বিধবা ও মিসকীনের দেখা-শুনা করে, সে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারীর মত এবং দিনে ছিয়াম পালনকারী ও রাতে তাহাজ্জুদ আদায়কারীর মত’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৯৫১)।
عَنْ سَهْلٍ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَنَا وَكَافِلُ الْيَتِيمِ فِي الْجَنَّةِ هَكَذَا وَأَشَارَ بِالسَّبَّابَةِ وَالْوُسْطَى وَفَرَّجَ بَيْنَهُمَا شَيْئًا.
সাহ্ল ইবনু সা‘দ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘আমি আর ইয়াতীম পালনকারী নিজের ইয়াতীম হোক অথবা অন্যের ইয়াতীম হোক- জান্নাতে এভাবে থাকব। তিনি তরজনী ও মধ্যমা আঙ্গুলের মধ্যে সামান্য ফাঁকা রেখে ইশারা করে দেখালেন’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৯৫২; বাংলা ৯ম খন্ড, হা/৪৭৩৫ ‘শিষ্টাচার’ অধ্যায়)।