(ক) বাইয়ে ইনা’র সংজ্ঞা :
কেউ তার কোনো পণ্য অপরের কাছে বাকিতে বিক্রি করে ক্রেতার হাতে পণ্য তুলে দিল। তারপর সে মূল্য পরিশোধের আগেই তার (ক্রেতার) কাছ থেকে বিক্রেতা ওই একই পণ্য নগদ মূল্যে কিনে নিল তার চেয়ে কম মূল্যে।[1]
যেমন- কেউ তার পণ্য অপর এক ব্যক্তির কাছে এক বছর সময় দিয়ে বাকিতে একশ’ টাকা মূল্যে বিক্রি করল। অতপর একই সময়ে বিক্রেতা তার সদ্য বেচা পণ্য ক্রেতার কাছ থেকে নগদ পঞ্চাশ টাকা মূল্যে কিনে নিল আর প্রথম ক্রেতার কাঁধে পুরো একশ টাকার ঋণ রয়ে গেল!
(খ) বাইয়ে ইনা’র নিন্দায় উচ্চারিত কিছু বক্তব্য :
আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- কে ইরশাদ করতে শুনেছি, তিনি বলেন- ‘যখন তোমরা পরস্পর বাইয়ে ইনা’র লেনদেন করবে আর জিহাদ ছেড়ে দিয়ে বলদের লেজ ধরে সন্তুষ্ট থাকবে কৃষিকাজ নিয়ে, আল্লাহ তাআলা তখন তোমাদের ওপর লাঞ্ছনা চাপিয়ে দিবেন। আল্লাহ এ লাঞ্ছনা তুলে নিবেন না যতক্ষণ তোমরা তোমাদের দীনের দিকে ফিরে আসবে।[2] হাদিসটি আরও কয়েকভাবে বর্ণিত হয়েছে।[3]
মালেক বিন আনাস, ইমাম আবু হানিফা, ইমাম আহমদ এবং কতিপয় শাফেয়ি প্রমুখ উলামায়ে কিরাম বাইয়ে ইনা'কে অবৈধ বলেছেন।
ইমাম শাওকানি রহ. বলেন, ‘ইনা’র লেনদেন যারা করে তারা এর নাম দেয় ক্রয়চুক্তি। অথচ আক্দ পুরা হওয়ার আগে এমনটি করা যে সুস্পষ্ট রিবার অন্তর্ভুক্ত সে ব্যাপারে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ে একমত। তারপর তারা এ চুক্তির নাম দেয় মোয়ামালা। আর একে রূপ দেয় বিক্রয় চুক্তির। অথচ মোটেও তাদের এ ইচ্ছে নেই। এ হচ্ছে তাদের হিলা-বাহানা আর আল্লাহর সঙ্গে নিষ্ফল প্রতারণা। বাইয়ে ইনা করতে ইচ্ছুক ব্যক্তি সবচে সহজ যে হিলা আবলম্বন করে তা হলো, সে তাকে (উদাহরণ স্বরূপ) এক টাকা কম এক হাজার টাকা কর্জ দেয়। অতপর তার কাছে এক দিরহাম মূল্যের এক টুকরো কাপড় বিক্রি করে পাঁচশ টাকায়।
এ ধরনের চালাকির মূলে কুঠারাঘাত করেছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর বিখ্যাত সে হাদিস ‘নিশ্চয় প্রত্যেক কাজের ফলাফল নিয়তের ওপর নির্ভরশীল।’[4] কারণ সে চায় এক হাজার টাকা দিয়ে দেড় হাজার টাকা কামাতে। তার কর্জ দেয়ার উদ্দেশ্যই হলো, অতিরিক্ত সুদ লাভ করা যেটাকে সে কাপড়ের মূল্য নাম দিয়ে হাসিল করতে চাইছে। প্রকৃতপক্ষে সে তাকে নগদ এক হাজার টাকা দিচ্ছে বাকিতে দেড় হাজার টাকার বিনিময়ে। আর কর্জ ও ক্রয়ের রূপ দিয়ে সে এ হারাম কাজ বৈধ করতে চাচ্ছে। আর এটা জানা কথা যে, এ ধরনের হিলা-বাহানা এর অবৈধতাকে রুখতে পারে না। সুদকে যেসব অকল্যাণের কারণে নিষিদ্ধ করা হয়েছে তাও দূর করতে পারে না। বরং তা বিভিন্নভাবে এর অপকারিতা বাড়িয়ে দেয়।[5]
[2]. আবু দাউদ : ৩৪৬২, আউনুল মাবুদ : ৯/৩৩৫
[3]. দেখুন মুসনাদে ইমাম আহমদ : ২/৮৪
[4]. বুখারি : ০১, মুসলিম : ১৯০৭
[5]. নাইলুল আওতার : ৬/৩৬৩