টিয়া পাখীর মত কুরআন মুখস্থ বা দেখে পড়লে সওয়াব হতে পারে, তবে বিশেষ লাভ নেই। কারণ কুরআন বুঝা ও তা নিয়ে জ্ঞান-গবেষণা করা তথা তার উপর আমল করা ওয়াজেব। মহান আল্লাহ বলেন,
أَفَلَا يَتَدَبَّرُونَ الْقُرْآنَ وَلَوْ كَانَ مِنْ عِنْدِ غَيْرِ اللَّهِ لَوَجَدُوا فِيهِ اخْتِلَافًا كَثِيرًا
অর্থাৎ, তারা কুরআনের প্রতি মনঃসংযোগ করে না কেন? যদি ওটা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নিকট হতে হতো, তাহলে তারা ওতে বহু মতানৈক্য প্রাপ্ত হতো।[1]
আসলে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে তা বুঝে তার দ্বারা উপদেশ গ্রহণ করার জন্যই। মহান আল্লাহ বলেন,
كِتَابٌ أَنْزَلْنَاهُ إِلَيْكَ مُبَارَكٌ لِيَدَّبَّرُوا آيَاتِهِ وَلِيَتَذَكَّرَ أُولُو الْأَلْبَابِ
অর্থাৎ, এ এক কল্যাণময় কিতাব, এটা আমি তোমার উপর অবতীর্ণ করেছি, যাতে মানুষ এর আয়াতসমূহ অনুধাবন করে এবং বোধশক্তিসম্পন্ন ব্যক্তিরা উপদেশ গ্রহণ করে। (সূরা স্বাদ ২৯ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
الَّذِينَ آتَيْنَاهُمُ الْكِتَابَ يَتْلُونَهُ حَقَّ تِلَاوَتِهِ أُولَئِكَ يُؤْمِنُونَ بِهِ وَمَنْ يَكْفُرْ بِهِ فَأُولَئِكَ هُمُ الْخَاسِرُونَ
অর্থাৎ, আমি যাদেরকে কিতাব দান করেছি, তারা তা যথার্থরূপে তিলাওয়াত করে। তারাই এর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে। আর যারা তা অবিশ্বাস করে ফলতঃ তারাই হল ক্ষতিগ্রস্ত।[2]
আর যথার্থরূপে (তিলাওয়াতের হক আদায় করে) তিলাওয়াত তখনই হবে, যখন তা শুদ্ধভাবে ও বুঝে পড়ে আমল করা হবে। তিনি নিজ বান্দার গুণ বর্ণনা করে বলেন,
وَالَّذِينَ إِذَا ذُكِّرُوا بِآيَاتِ رَبِّهِمْ لَمْ يَخِرُّوا عَلَيْهَا صُمًّا وَعُمْيَانًا
অর্থাৎ, আর যারা তাদের প্রতিপালকের আয়াত স্মরণ করিয়ে দিলে ওর প্রতি অন্ধ ও বধির সদৃশ আচরণ করে না।[3]
বলাই বাহুল্য যে, যারা না বুঝে কুরআন পড়ে এবং কুরআনের উপর আমল করে না, তারাই তার প্রতি অন্ধ ও বধির সদৃশ আচরণ করে।
সালাফে সালেহীনগণের অভ্যাস ছিল কুরআন বুঝে পড়ে তার নির্দেশ অনুযায়ী আমল করা। আবু আব্দুর রহমান সুলামী (রঃ) বলেন, ‘আমাদেরকে আমাদের ওস্তাদগণ বর্ণনা করেছেন যে, যাঁরা রসূল (ﷺ) এর ছাত্র ছিলেন তাঁরা দশটি আয়াত শিখলে ততক্ষণ পর্যন্ত আর আগে বাড়তেন না যতক্ষণ পর্যন্ত ঐ দশ আয়াতের বর্ণিত ইল্ম ও আমল শিক্ষা করেছেন। তাঁরা বলেছেন, আমরা ইল্ম ও আমল উভয়ই (একই সময়ে) শিক্ষা করেছি।’[4]
আল্লাহর কিতাব বুঝে পড়তে হয় বলেই তাড়াহুড়া করে তা খতম করা বিধেয় নয়। রাসুল (ﷺ) বলেন, ‘‘সে ব্যক্তি কুরআন বুঝে না, যে তিন দিনের কম সময়ে তা খতম করে।’’[5]
[2]. সূরা বাকারাহ-২:১২১
[3]. সূরা ফুরকান-২৫:৭৩
[4]. মুসনাদে আহমাদ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/ ২২৯৭১
[5]. আবূ দাঊদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ প্রমুখ, সহীহুল জা’মে হা/৭৭৪৩