উমার (রা)-এর সময় থেকেই রামাদানের কিয়ামুল্লাইলের জামা‘আত দীর্ঘ সময় ধরে আদায় করা হতো। সাধারণত শেষ রাতে সাহরীর সময়ে শেষ হতো। বর্তমান সময়ের হিসেবে রাত ৮/৯ টা থেকে ৩/৪ পর্যন্ত প্রায় ৬/৭ ঘণ্টা যাবত কিয়ামুল্লাইল আদায় করা হতো। ইমামগণ তিন-চার দিনে বা এক সপ্তাহে কুরআন খতম করতেন। কেউ কেউ রামাদানের কিয়ামুল্লাইলে দু-তিন খতম কুরআন পাঠ করতেন। রুকু সাজদাও দীর্ঘ করা হতো। এজন্য প্রতি চার রাকআত পর কিছুক্ষণ বিশ্রাম করার নিয়ম প্রচলিত হয়ে যায়। এ কারণে রামাদানের কিয়ামুল্লাইলকে ‘‘সালাতুত তারাবীহ’’, অর্থাৎ বিশ্রামের বা শিথিলায়নের সালাত বলা হতে থাকে।
সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, উমার (রা)-এর সময়ে ৮ রাকআত এবং ২০ রাকআত কিয়ামুল্লাইল আদায় করা হতো। ইমাম মালিক মুহাম্মাদ ইবন ইউসূফ থেকে, তিনি সাইব ইবন ইয়াযিদ (রা) থেকে উদ্ধৃত করেছেন যে, উমার (রা) ১১ রাকআত (বিতর-সহ) কিয়ামুল্লাইলের ব্যবস্থা করেন। তাঁরা শতশত আয়াত তিলাওয়াত করতেন এবং ফজরের সামান্য পূর্বে শেষ করতেন।[1] পক্ষান্তরে ইমাম আব্দুর রায্যাক সানআনী দাউদ ইবন কাইস ও অন্যান্যদের থেকে, তারা মুহাম্মাদ ইবন ইউসূফ থেকে, তিনি সাইব ইবন ইয়াযিদ (রা) থেকে, তিনি বলেন: উমার ২১ রাকআত (বিতর-সহ) কিয়ামুল্লাইলের ব্যবস্থা করেন।[2] ইমাম বাইহাকী ইয়াযিদ ইবন খাসীফার সূত্রে সাইব ইবন ইয়াযিদ থেকে উদ্ধৃত করেন: উমারের সময় তারা ২৩ রাকআত কিয়াম করতেন।[3] এগুলি সবই সহীহ হাদীস। হাদীসগুলোর রাবীগণ সকলেই সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমের রাবী। এছাড়াও অনেকগুলো সহীহ বা হাসান সনদে উমার (রা)-এর সময়ে ২০ রাকআত তারাবীহ আদায়ের কথা বর্ণিত হয়েছে।
মুহাদ্দিসগণ বলেন, সম্ভবত প্রথমে দীর্ঘ সময় ধরে ৮ রাকআত আদায় করা হতো। পরে সময়ের দৈর্ঘ ঠিক রেখে রাকআত ও বিশ্রামের সংখ্যা বাড়ানো হয়। ৬/৭ ঘণ্টা ধরে ৮ রাকআতের চেয়ে ২০ রাকআত আদায় সহজতর। পরবর্তীকালে অধিকাংশ স্থানে ২০ রাকআত এবং কোথাও ৩৮ রাকআত পর্যন্ত তারাবীহ আদায় করা হতো।
[2] আব্দুর রায্যাক, আল-মুসান্নাফ ৪/২৬০; ইবনু হাজার, ফাতহুল বারী ৪/২৫৩।
[3] বাইহাকী, আস-সুনানুল কুবরা ২/৪৯৬।