সমাজ-পরিবর্তন, সংস্কার, রাষ্ট্র-প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি বিষয়ক সমকালীন গবেষণার ক্ষেত্রে প্রায় সকলেই একটি বিশেষ ভুলের মধ্যে নিপতিত হন। তা হলে, তারা শূন্য থেকে শুরুর বিষয়ে চিন্তা করেন। তারা ধারণা করেন যে, ইসলামী সমাজ বা রাষ্ট্র বলতে কিছুই বিদ্যমান নেই; কাজেই আমাদেরকে শূন্য থেকে শুরু করতে হবে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যেমন একটি কাফির সমাজে দাওয়াত দিয়ে ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, আমাদেরকেও তেমনি একটি কাফির সমাজকে পরিবর্তন করতে হবে। পূর্বের আলোচনা থেকে আমরা বুঝেছি যে, এ সকল চিন্তার ভিত্তি আরেকটি ভুলের উপর, তা হলো পাপের কারণে মুসলিম ব্যক্তি, সমাজ রাষ্ট্রকে ‘‘অমুসলিম’’ বলে গণ্য করা। জেনে বা না-জেনে অসতর্কভাবে আমর এ ভুলের মধ্যে নিপতিত হই।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইসলামী দীন, সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিতরূপে আমাদের জন্য রেখে গিয়েছেন। তিনি বিভিন্ন হাদীসে বারংবার ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে, এ ব্যবস্থায় বিচ্যুতি আসবে, আবার কিছু ভাল হবে, আবার বিচ্যুতি আসবে। আবার কিছু ভাল হবে। কখনো হবে স্বৈরতান্ত্রিক রাজত্ব এবং কখনো হবে নুবুওয়াতের পদ্ধতিতে জনগণতান্ত্রিক খিলাফাত। এভাবেই চলতে থাকবে কিয়ামত পর্যন্ত। এ ব্যবস্থা একেবারে বিলীন হবে না, আবার খিলাফাতে রাশেদার মত পরিপূর্ণ ব্যবস্থাও আর আসবে না।
কাজেই বর্তমান সমাজগুলিকে মক্কার কাফির সমাজের মত কল্পনা করার কোনো সুযোগ নেই। বরং এ সকল সমাজ উমাইয়া, আববাসী, ফাতিমী, বাতিনী, কারামিতী, মোগল, তাতার ও অন্যান্য রাষ্ট্র ও সমাজের মত। এক্ষেত্রে দীনী দাওয়াত, পরিবর্তন বা সংস্কারের জন্য আমাদেরকে পূর্ববর্তী সমাজ ও রাষ্ট্রগুলিতে সাহাবী-তাবিয়ী ও পরবর্তী আলিমগণের কর্মধারা পর্যালোচনা করতে হবে। কুরআন-হাদীসের নির্দেশনার আলোকে এবং তাঁদের কর্মধারার ভিত্তিতে আমাদেরকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।