এ যুদ্ধ মুশরিকদের প্রকাশ্য পরাজয় এবং মুসলিমদের সুস্পষ্ট বিজয়ের উপর সমাপ্ত হয়। এতে চৌদ্দজন মুসলিম শহীদ হন, ছয় জন মুহাজির এবং আট জন আনসার। কিন্তু মুশরিকরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাদের সত্তর জন নিহত এবং সত্তর জন বন্দী হয়। এদের অধিকাংশই ছিল নেতৃস্থানীয় লোক।
যুদ্ধ শেষে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নিহতদের পাশে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘তোমরা তোমাদের নাবী (ﷺ)-এর কতই না নিকৃষ্ট গোষ্ঠী ও গোত্র ছিলে। তোমরা আমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছ। তোমরা আমাকে বন্ধুহীন ও সহায়কহীনরূপে ছেড়ে দিয়েছো যখন অন্যরা আমার পৃষ্ঠপোষকতা করেছে। তোমরা আমাকে বের করে দিয়েছ, যখন অন্যরা আমাকে আশ্রয় দিয়েছে।’ এরপর তাঁর নির্দেশক্রমে তাদের টেনে হেঁচড়ে বদরের একটি কূপে নিক্ষেপ করা হয়।
আবূ ত্বালহাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নাবী (ﷺ)-এর আদেশক্রমে বদরের দিন কুরাইশদের চবিবশ জন বড় বড় নেতার মৃত দেহ বদরের একটি নোংরা কূপে নিক্ষেপ করা হয়।
তাঁর নিয়ম ছিল যখন তিনি কোন কাওমের উপর বিজয় লাভ করতেন তখন তিন দিন পর্যন্ত যুদ্ধ ক্ষেত্রেই অবস্থান করতেন। সুতরাং যখন বদরে তৃতীয় দিবস সূচিত হল তখন তাঁর নির্দেশ অনুযায়ী তাঁর সওয়ারীর উপর হাওদা উঠিয়ে দেয়া হলো। তারপর তিনি পদব্রজে চলতে থাকলেন এবং তাঁর পিছনে পিছনে তাঁর সাহাবীগণও চললেন। অবশেষে তিনি কূপের ধারে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং তাদেরকে তাদের নাম ধরে ও তাদের পিতাদের নাম ধরে ডাকতে শুরু করলেন। (তিনি বললেন) হে অমুকের পুত্র অমুক, হে অমুকের পুত্র অমুক! তোমরা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (ﷺ)-এর আনুগত্য করতে এটা কি তোমাদের জন্য খুশীর বিষয় হতো না। কেননা, আমাদের প্রতিপালক আমাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আমরা তো তা সত্য পেয়েছি। আর তোমাদের প্রতিপালক তোমাদেরকে যা কিছু বলেছিলেন তা তোমরা সত্যরূপে পেয়েছ কি?’ উমার (রাঃ) তখন আরয করলেন ‘হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আপনি এমন দেহসমূহের সঙ্গে কথা বলছেন যে গুলোর আত্মা নেই, ব্যাপার কী?’ নাবী (ﷺ) উত্তরে বললেন, ‘যে সত্ত্বার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে তাঁর শপথ! আমি যা কিছু বলছি তা এদের চেয়ে বেশী তোমরা শুনতে পাওনা।’ রেওয়াইয়াতে রয়েছে যে, নাবী (ﷺ) বলেন, ‘তোমরা এদের চেয়ে বেশী শুনতে পাওনা। কিন্তু এরা উত্তর দিতে পারে না।[1]