হারাম ও কবিরা গুনাহ অবতরণিকা মোস্তাফিজুর রহমান বিন আব্দুল আজিজ আল-মাদানী

সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলার জন্য যিনি আমাদেরকে নিখাদ তাওহীদের দিশা এবং সুন্নাত ও বিদ‘আতের পার্থক্যজ্ঞান দিয়েছেন। অসংখ্য সালাত ও সালাম তাঁর জন্য যিনি আমাদেরকে তা-কিয়ামত সফল জীবন অতিবাহনের পথ বাতলিয়েছেন। তাঁর পরিবারবর্গ ও সাহাবাদের প্রতিও রইল অসংখ্য সালাম।

মানব সমাজে ধর্মীয় জ্ঞানশূন্যতার দরুন অনেক ধরনের হঠকারিতাই বিরাজমান। তম্মধ্যে লঘু পাপকে গুরু মনে করা এবং গুরু পাপকে লঘু মনে করা অন্যতম। অনেক তো এমনো রয়েছেন যে, যে কাজ পাপের নয় সে কাজকেও মহাপাপ বলে গণ্য করেন। অন্য দিকে মহাপাপকে কিচ্ছুই জ্ঞান করেন না। ঠিক এরই বিপরীতে কেউ কেউ সামান্য সাওয়াবের ব্যাপারকে ফরযের চাইতেও বেশি মূল্য দিয়ে থাকেন; অথচ অন্য দিকে তিনি ফরযেরই কোন ধার ধারেন না। যদ্দরুন শরীয়তের দৃষ্টিকোণে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ সাওয়াবের কাজ এমনো থেকে যাচ্ছে যে, আজো পর্যন্ত যা কোন না কোন মুসলিম সমাজে কারোর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে নি। অনেক তো এমনো রয়েছেন যে, কোন কোন গুনাহ্’র কাজকে তিনি মহা সাওয়াবের কাজ মনে করছেন এবং সেগুলো সমাজে প্রতিষ্ঠার জন্য বিশেষভাবে কসরত চালিয়ে যাচ্ছেন। কেউ দয়াপরবশ হয়ে সেগুলোর সঠিক রূপ ধরিয়ে দিতে চাইলে সে উক্ত সমাজের শয়তান প্রকৃতির মানুষ কর্তৃক ইসলামের শত্রু, গাদ্দার, বেঈমান, কাফির, মুনাফিক, মতলববাজ, বেয়াদব, বুযুর্গদের খাঁটি দুশমন ইত্যাদি বিশেষণে আখ্যায়িত হন। সুতরাং সঠিক বিবেচনার জন্য গুনাহ্’র পর্যায় ও স্তরগুলো সঠিকভাবে অনুধাবন করা আমাদের জন্য একেবারেই অত্যাবশ্যক এবং উক্ত উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই আমাদের এ ক্ষুদ্র প্রয়াস।

অত্যন্ত আনন্দের বিষয় হচ্ছে, এ পুস্তিকাটিতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পৃক্ত যতগুলো হাদীস উল্লিখিত হয়েছে সাধ্যমত উহার বিশুদ্ধতার প্রতি সযত্ন দায়িত্বশীল দৃষ্টি রাখা হয়েছে। এ ব্যাপারে নিদেনপক্ষে সর্বজন শ্রদ্ধেয় প্রখ্যাত হাদীস বিশারদ ‘আল্লামা নাসিরুদ্দীন আল্বানী সাহেবের হাদীস শুদ্ধাশুদ্ধনির্ণয়ন নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। এতদসত্ত্বেও সকল যোগ্য গবেষকদের পুনর্বিবেচনার সুবিধার্থে প্রতিটি হাদীসের সাথে তার প্রাপ্তিস্থাননির্দেশ সংযোজন করা হয়েছে। তবুও সম্পূর্ণরূপে নিরেট নির্ভুল হওয়ার জোর দাবি করার ধৃষ্টতা দেখাচ্ছি না।

শব্দ ও ভাষাগত প্রচুর ভুল-ভ্রান্তি বিজ্ঞ পাঠকবর্গের চক্ষুগোচরে আসা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে ভুল গুরুসামান্য যতটুকুই হোক না কেন লেখকের দৃষ্টিগোচর করলে চরম কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ থাকবো। যে কোন কল্যাণকর পরামর্শ দিয়ে দাওয়াতী স্পৃহাকে আরো বর্ধিত করণে সর্বসাধারণের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি। আল্লাহ্ তা‘আলা সবার সহায় হোন।

এ পুস্তিকা প্রকাশে যে কোন জনের যে কোন ধরনের সহযোগিতার জন্য সমুচিত কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনে এতটুকুও কোতাহী করছিনে। ইহপরকালে আল্লাহ্ তা‘আলা প্রত্যেককে তার আকাঙ্খাতীত কামিয়াব করুন তাই হচ্ছে আমার সর্বোচ্চ আশা। আমীন সুম্মা আমীন ইয়া রাববাল ‘আলামীন।

সর্বশেষে জনাব আব্দুল হামীদ ফায়যী সাহেবের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করে পারছিনে। যিনি অনেক ব্যস্ততার মাঝেও আমার আবেদনক্রমে পান্ডুলিপিটি আদ্যপান্ত অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দেখেছেন এবং তাঁর অতীব মূল্যবান মতামত ব্যক্ত করেছেন। আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁকে এর উত্তম প্রতিদান দিন, তাঁর জ্ঞান আরো বাড়িয়ে দিন এবং পরিশেষে তাঁকে জান্নাত দিয়ে দিন এ আশা রেখে এখানেই শেষ করলাম।

লেখক