খুৎবা শেষে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বেলালকে আযান দিতে বলেন। অতঃপর প্রথম এক্বামতে যোহরের ছালাত এবং দ্বিতীয় এক্বামতে আছরের ছালাত আদায় করেন। তিনি উভয় ছালাত দু’রাক‘আত করে জমা ও ক্বছর হিসাবে পড়েন।[1] এদিন আছরের ছালাত এগিয়ে যোহরের সময় মিলিয়ে পড়া হয়।[2] যাকে ‘জমা তাক্বদীম’ বলা হয়। উভয় ছালাতের মধ্যে কোন সুন্নাত-নফল পড়েননি।[3]
হাফেয ইবনুল ক্বাইয়িম বলেন, নিঃসন্দেহে এদিন মক্কাবাসীগণ রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে যোহর ও আছর জমা ও ক্বছর সহ আদায় করেন। তিনি তাদেরকে ছালাত পূর্ণ করতে বলেননি কিংবা জমা পরিত্যাগ করতে বলেননি’ (যাদুল মা‘আদ ২/২১৬)। এক্ষণে যিনি বলেন যে, এদিন রাসূল (ছাঃ) তাদের বলেছিলেন,يَا أَهْلَ الْبَلَدِ صَلُّوا أَرْبَعًا فَإِنَّا قَوْمٌ سَفْرٌ ‘হে শহরবাসীগণ! তোমরা চার রাক‘আত ছালাত পূর্ণ কর। কেননা আমরা মুসাফির’। কথাটি মারাত্মক ভুল। কেননা এটি তিনি মক্কা বিজয়ের দিন মক্কাবাসীদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন। কারণ তারা সেখানে মুক্বীম ছিলেন’।[4] অতএব এটিই বিদ্বানগণের বিশুদ্ধতম সিদ্ধান্ত যে, মক্কাবাসীগণ আরাফাতের ময়দানে জমা ও ক্বছরের সাথে ছালাত আদায় করবেন। যেমন তারা রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে করেছিলেন। এর দ্বারা একথাই প্রমাণিত হয় যে, সফরের জন্য নির্দিষ্ট দূরত্ব ও সময়কাল শর্ত নয়। কেবল সফরটাই শর্ত (যাদুল মা‘আদ ২/২১৬-১৭)। আর কুরআনেরও বক্তব্য সেটাই (নিসা ৪/১০১)।
ছালাত শেষে রাসূল (ছাঃ) সওয়ারীতে আরোহণ করে ওয়াদীয়ে নামেরাতে স্বীয় তাঁবুতে গমন করেন ও সূর্য অদৃশ্য হওয়া পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন। তিনি সবাইকে বলেন,عَرَفَةُ كُلُّهَا مَوْقِفٌ ‘পুরা আরাফাতের ময়দান হ’ল অবস্থানস্থল’ (মুসলিম হা/১২১৮ (১৪৯)। কেননা এটি ইবরাহীমের উত্তরাধিকার সমূহের অন্যতম’ (তিরমিযী হা/৮৮৩)। এ সময় নাজদবাসীদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন,الْحَجُّ عَرَفَةُ ‘হজ্জ হ’ল আরাফাহ’ (তিরমিযী হা/৮৮৯)। এখানে তিনি একাকী বুক পর্যন্ত হাত উঠিয়ে মিসকীনের ন্যায় আল্লাহর নিকট প্রার্থনা ও কান্নাকাটিতে রত থাকেন। তিনি বলেন,خَيْرُ الدُّعَاءِ دُعَاءُ يَوْمِ عَرَفَةَ ‘শ্রেষ্ঠ দো‘আ হ’ল আরাফার দো‘আ’।[5]
[2]. মুসলিম হা/১২১৮ (১৪৭); মিশকাত হা/২৫৫৫ ‘বিদায় হজ্জ’ অনুচ্ছেদ।
[3]. মুসলিম হা/১২১৮ (১৪৭); মিশকাত হা/২৫৫৫; মির‘আত শরহ মিশকাত হা/২৫৭৯-এর আলোচনা; আলবানী, মানাসিকুল হাজ্জ ওয়াল ওমরাহ (কুয়েত : ৩য় সংস্করণ ১৪০৩ হিঃ) পৃঃ ২৯-৩০।
[4]. আবুদাঊদ হা/১২২৯; আহমাদ হা/১৯৮৯১।
দুর্ভাগ্য আজকাল অনেক হাজী আরাফাতে জমা ও ক্বছর করেন না এবং ইমামের সাথে ছালাত আদায় করেন না। এমনকি অনেকে হারামে ছালাত শুদ্ধ নয় মনে করে সেখানে ছালাত পড়েন না। পড়লেও স্বীয় অবস্থানে গিয়ে পুনরায় ছালাত আদায় করেন। এগুলি স্রেফ মূর্খতা ও হঠকারিতা বৈ কিছুই নয়।
[5]. তিরমিযী হা/৩৫৮৫; মিশকাত হা/২৫৯৮; ছহীহাহ হা/১৫০৩।