৮৯. সারিইয়া খালেদ বিন অলীদ(سرية خالد بن وليد) : ৯ম হিজরীর রজব মাস। বিনা যুদ্ধে বিজয় শেষে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাবূকে অবস্থানকালেই পার্শ্ববর্তী দূমাতুল জান্দালের(دُومَةُ الْجَنْدَلِ) খ্রিষ্টান নেতা উকায়দিরের (أُكَيْدِر) বিরুদ্ধে খালেদকে প্রেরণ করেন। খালেদ বিন অলীদ তাকে বন্দী করে রাসূল (ছাঃ)-এর দরবারে আনেন এবং তার সাথে সন্ধিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।[1]
৯০. সারিইয়া উসামাহ বিন যায়েদ বিন হারেছাহ(سرية أسامة بن زيد بن الحارثة) :
১১ হিজরীর রবীউল আউয়াল মাস। রাসূল (ছাঃ) তাঁর মৃত্যুর দু’দিন পূর্বে শনিবার ওসামা বিন যায়েদের নেতৃতেব শামের দিকে সর্বশেষ সেনাদল প্রেরণ করেন এবং নিজ হাতে যুদ্ধের পতাকা বেঁধে তার হাতে তুলে দেন। অতঃপর তাকে ফিলিস্তীনের তুখূম, বালক্বা, দারূম প্রভৃতি এলাকা ঘোড়ার পায়ে পিষ্ট করার নির্দেশ দেন। এই দলে প্রথম যুগের মুহাজিরগণ ওসামার সাথে যোগ দেন। এটাই ছিল রাসূল (ছাঃ) প্রেরিত সর্বশেষ সেনাদল (ইবনু হিশাম ২/৬৪১-৪২)।
মুহাজির ও আনছারদের জ্যেষ্ঠ ছাহাবীদের উপরে (১৮ বছরের) তরুণ ওসামাকে নেতৃত্ব প্রদান করায় কেউ কেউ এর সমালোচনা করেন। তখন রাসূল (ছাঃ) অসুখের কষ্টের মধ্যেও মাথায় কাপড় বেঁধে বেরিয়ে আসেন ও মেম্বরে বসে হামদ ও ছানার পরে (ইবনু হিশাম ২/৬৫০) লোকদের উদ্দেশ্যে বলেন,
قَدْ بَلَغَنِى أَنَّكُمْ قُلْتُمْ فِى أُسَامَةَ وَإِنَّهُ أَحَبُّ النَّاسِ إِلَىَّ، إِنْ تَطْعُنُوا فِى إِمَارَتِهِ فَقَدْ كُنْتُمْ تَطْعُنُونَ فِى إِمَارَةِ أَبِيهِ مِنْ قَبْلُ. وَايْمُ اللهِ، إِنْ كَانَ لَخَلِيقًا لِلإِمَارَةِ، وَإِنْ كَانَ لَمِنْ أَحَبِّ النَّاسِ إِلَىَّ، وَإِنَّ هَذَا لَمِنْ أَحَبِّ النَّاسِ إِلَىَّ بَعْدَه
‘আমার কাছে খবর পৌঁছেছে যে, তোমরা ওসামার ব্যাপারে মন্তব্য করেছ। অথচ সে আমার নিকট সবচেয়ে প্রিয়। যদি তোমরা তার নেতৃত্বের সমালোচনা করে থাক, তবে তার পিতার নেতৃত্বের ব্যাপারেও তোমরা ইতিপূর্বে (মুতার যুদ্ধের সময়) সমালোচনা করেছিলে। অথচ আল্লাহর কসম! সে যোগ্য ছিল। সে আমার নিকটে সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত ছিল। তার পরে তার এই পুত্র আমার নিকটে সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত’।[2]
অতঃপর তিনি মেম্বর থেকে নেমে আসেন এবং লোকেরা দ্রুত প্রস্ত্ততি শুরু করে। অতঃপর ওসামা তার সেনাদল নিয়ে বেরিয়ে যান এবং ৪/৫ কি. মি. দূরে ‘জুরুফ’ (الْجُرْف) নামক স্থানে অবতরণ করেন। ইতিমধ্যে লোকেরা তার কাছে গিয়ে রাসূল (ছাঃ)-এর মরণাপন্ন অবস্থার খবর দেয়। তখন সকলে অপেক্ষায় থাকেন আল্লাহর ফায়ছালা কি হয় তা দেখার জন্য’ (ইবনু হিশাম ২/৬৫০)।
উসামা বিন যায়েদ বলেন, রাসূল (ছাঃ)-এর চরম অবস্থার খবর শুনে আমি এবং আমার সাথে অন্যেরা মদীনায় ছুটে আসি। অতঃপর আমি রাসূল (ছাঃ)-এর কক্ষে প্রবেশ করি। যখন সবাই চুপ ছিল। কেউ কথা বলছে না।
فَجَعَلَ يَرْفَعُ يَدَهُ إلَى السَّمَاءِ ثُمَّ يَضَعُهَا عَلَيَّ، فَأَعْرِفُ أَنَّهُ يَدْعُو لِي
‘অতঃপর রাসূল (ছাঃ) তার একটি হাত আকাশের দিকে উঁচু করলেন। অতঃপর সেটি আমার গায়ের উপর রাখলেন। তাতে আমি বুঝলাম, তিনি আমার জন্য দো‘আ করছেন’।[3]
মূলতঃ রোম সম্রাটের অহংকার চূর্ণ করা এবং সিরিয়ার বালক্বা ও ফিলিস্তীন অঞ্চল অশ্বারোহীদের দ্বারা পদদলিত করে রোমকদের ভীত করাই ছিল এ অভিযানের উদ্দেশ্য।
তাছাড়া উসামাকে সেনাপতি করার অন্যতম কারণ এটাও হ’তে পারে যে, প্রায় সোয়া দু’বছর পূর্বে মুতায় রোমকদের বিরুদ্ধে প্রথম যুদ্ধে সেনাপতি ছিলেন তার পিতা এবং তিনি সেখানেই শহীদ হয়েছিলেন। তাই পিতৃহত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার স্বাভাবিক স্পৃহাকে এর মাধ্যমে আল্লাহর পথে পরিচালিত করা হয়। যেজন্য তাকে রওয়ানা করার সময় তিনি শামের তুখূম, বালক্বা, দারূম প্রভৃতি এলাকা ঘোড়ার পায়ে পিষ্ট করার নির্দেশ দেন। যেখানে মুতার যুদ্ধ হয়েছিল এবং তার পিতাসহ তিনজন সেনাপতি শহীদ হয়েছিলেন।
উল্লেখ্য যে, সারিইয়া উসামা বিন যায়েদ সম্পর্কে ওয়াক্বেদীর সূত্রে বিভিন্ন সীরাত গ্রন্থে যেসব বর্ণনা এসেছে, তার কোনটাই বিশুদ্ধভাবে প্রমাণিত নয়। এ বিষয়ে বুখারী হা/৪৪৬৮-৬৯-এর ব্যাখ্যায় ফাৎহুল বারীতে যেসব বক্তব্য উদ্ধৃত হয়েছে, তার অধিকাংশ বিশুদ্ধতার মানে উন্নীত নয়।
[2]. বুখারী হা/৩৭৩০, ৪৪৬৮-৬৯; ইবনু ওমর (রাঃ) হ’তে। এখানে বর্ণিত হয়েছে যে, এ সময় রাসূল (ছাঃ) সকলের উদ্দেশ্যে বলেন, أَنْفِذُوا بَعْثَ أُسَامَةَ لَعَنَ اللهُ مَنْ تَخَلَّفَ عَنْهُ. وَكَرَّرَ ذَلِكَ- ‘তোমরা ওসামার বাহিনীকে চালু করে দাও। আল্লাহ ঐ ব্যক্তির উপর লা‘নত করুন, যে ব্যক্তি তার থেকে পিছিয়ে থাকবে। এ কথা তিনি বার বার বলতে থাকেন’। হাদীছটি ‘মুনকার’ বা যঈফ (সিলসিলা যঈফাহ হা/৪৯৭২)।
[3]. ইবনু হিশাম ২/৬৫১; আলবানী, ফিক্বহুস সীরাহ ৪৬৪ পৃঃ সনদ ‘ছহীহ’।