রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নিজের বাহিনীকে দ্রুত প্রস্ত্তত ও সারিবদ্ধ করে ফেললেন। এরি মধ্যে জনৈক সাউয়াদ ইবনু গাযিইয়াহ(سَوَّادُ بنُ غَزِيَّةَ) সারি থেকে কিছুটা আগে বেড়ে এল। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তার পেটে তীর দিয়ে টোকা মেরে পিছিয়ে যাবার ইঙ্গিত দিয়ে বললেন,اسْتَوِ يَا سَوَّادُ ‘সমান হয়ে যাও হে সাউয়াদ!’ সাথে সাথে সে বলে উঠলো, হে আল্লাহর রাসূল, আপনি আমাকে কষ্ট দিয়েছেন। বদলা দিন! রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তখন নিজের পেট আলগা করে দেন ও বদলা নিতে বলেন। তখন সে ছুটে এসে তাঁকে জড়িয়ে ধরে পেটে চুমু খেতে লাগলো’। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে বললেন, কিজন্য তুমি এরূপ করলে? সে বলল, আমাদের সামনে যে অবস্থা আসছে তাতো আপনি দেখছেন। সেজন্য আমি চেয়েছিলাম যে, আপনার সাথে আমার শেষ আদান-প্রদান যেন এটাই হয় যে, আমার দেহচর্ম আপনার দেহচর্মকে স্পর্শ করুক’। তার এ মর্মস্পর্শী কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তার জন্য কল্যাণের দো‘আ করলেন(دَعَا لَهُ بِخَيْرٍ)।[1] রাসূল (ছাঃ)-এর এ কাজের মধ্যে মানবিক সাম্যের এক উত্তম নমুনা রয়েছে, যা নিঃসন্দেহে এক ঈর্ষণীয় বিষয়।
অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাদেরকে বললেন, চূড়ান্ত নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত কেউ যুদ্ধ শুরু করবে না। ব্যাপকহারে তীরবৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত কেউ তীর ছুঁড়বে না এবং তোমাদের উপরে তরবারি ছেয়ে না যাওয়া পর্যন্ত তরবারি চালাবে না’। তিনি আরও বলেন, বনু হাশেমকে জোর করে যুদ্ধে আনা হয়েছে। তাদের সাথে আমাদের কোন যুদ্ধ নয়। অতএব তাদের কোন ব্যক্তি সামনে পড়ে গেলে তাকে যেন কেউ আঘাত না করে। আববাসকে যেন হত্যা না করা হয়। অনুরূপভাবে আবুল বাখতারী বিন হেশামকেও হত্যা করো না। কেননা এরা মক্কায় আমাদের কোনরূপ কষ্ট দিত না। বরং সাহায্যকারী ছিল।
উল্লেখ্য যে, বনু হাশিমের বিরুদ্ধে কুরায়েশদের বয়কটনামা যারা ছিঁড়ে ফেলেছিল, তাদের একজন ছিলেন আবুল বাখতারী। কিন্তু যুদ্ধে আবুল বাখতারী নিহত হয়েছিলেন তার নিজস্ব হঠকারিতার জন্য। তিনি তার সঙ্গী কাফের বন্ধুকে ছাড়তে চাননি। ফলে যুদ্ধে তারা উভয়ে নিহত হয়।[2] অতঃপর রাসূল (ছাঃ) ও আবুবকর (রাঃ) টিলার উপরে সামিয়ানার নীচে নিজ স্থানে চলে যান।
[2]. ইবনু হিশাম ১/৬২৮-৩০; সীরাহ ছহীহাহ ২/৩৬৭ পৃঃ।