এই বছর ভিন দেশের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ওমরাহ করার জন্য বা অন্য কোন উদ্দেশ্যে মক্কায় আসেন এবং শেষনবী আবির্ভাবের সংবাদ শুনে রাসূল (ছাঃ)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। যারা এ সময় ইসলাম কবুল করে ধন্য হন, তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন, ইয়াছরিবের আউস গোত্রের বিখ্যাত কবি ও উচ্চ সামাজিক মর্যাদার অধিকারী ও ‘কামিল’ লকবধারী সুওয়াইদ বিন ছামেত, একই গোত্রের ইয়াস বিন মু‘আয, ইয়াছরিবের বিখ্যাত ‘গেফার’ গোত্রের আবু যার গেফারী, ইয়ামনের যেমাদ আযদী প্রমুখ নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ’।[1] এই সকল ব্যক্তির মাধ্যমে তাদের স্ব স্ব এলাকায় ইসলামের বাণী দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং পরবর্তীতে দলে দলে লোক ইসলাম কবুল করে।
১. সুওয়াইদ বিন ছামেত (سُوَيْدُ بْنُ الصَّامِت): ১১ নববী বর্ষে ওমরার উদ্দেশ্যে মক্কায় আসেন এবং ইসলাম কবুল করেন। কিন্তু ফিরে যাওয়ার অব্যবহিত পরেই তিনি নিহত হন। সেকারণ তাঁর ইসলাম গ্রহণ সম্পর্কে কেউ কেউ সন্দেহ পোষণ করলেও ইবনু হাজার বলেন, যদি তাদের বক্তব্য সঠিক হ’ত, তবে তাঁকে ছাহাবীদের মধ্যে গণ্য করা হ’ত না (আল-ইছাবাহ, ক্রমিক ৩৮২২)।
২. ইয়াস বিন মু‘আয (إيَاسُ بْنُ مُعَاذٍ) : ইনি আবুল জালীস আনাস বিন রাফে‘ এবং বনু আব্দিল আশহালের কতিপয় যুবকের সাথে মক্কায় আসেন। আউস গোত্রের এ দলটি আগমনের উদ্দেশ্য ছিল খাযরাজ গোত্রের বিরুদ্ধে কুরায়েশদের মিত্রতা ও সহায়তা লাভ করা। তাদের আগমনের খবর পেয়ে রাসূল (ছাঃ) তাদের নিকট গিয়ে বললেন, আপনারা যে উদ্দেশ্যে এসেছেন তার চাইতে উত্তম বস্ত্ত গ্রহণ করবেন কি? তারা বলল, সেটা কি? তিনি বললেন, আমি আল্লাহর রাসূল। আল্লাহ তা‘আলা আমাকে তার বান্দাদের নিকটে এ উদ্দেশ্যে প্রেরণ করেছেন যে, আমি যেন তাদেরকে দাওয়াত দেই এ মর্মে যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তার সাথে কাউকে শরীক করো না। তিনি আমার উপর কিতাব অবতীর্ণ করেছেন। অতঃপর তিনি তাদের নিকট ইসলাম সম্পর্কে আলোচনা করলেন এবং কুরআন তেলাওয়াত করে শুনালেন’। এসময় যুবক ইয়াস বিন মু‘আয বলে উঠলেন, হে আমার সাথীরা! আল্লাহর কসম আমরা যে উদ্দেশ্যে এসেছি এটাতো তার চেয়ে অনেক উত্তম। তখন আনাস বিন রাফে‘ এক মুষ্টি কংকর নিয়ে ইয়াসের মুখে মারল। তারপর রাসূল (ছাঃ) উঠে গেলেন এবং তারা ইয়াছরিবে ফিরে গেল। এর কিছুদিন পর ইয়াস মৃত্যুবরণ করেন। রাবী বলেন, মৃত্যুর সময় তিনি তাসবীহ, তাহলীল, তাকবীর ও তাহমীদে রত ছিলেন। সেকারণ ইসলামের উপর তার মৃত্যু হয়েছিল বলে অনেকে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন’ (আহমাদ হা/২৩৬৬৮, সনদ হাসান)।
৩. আবূ যর গিফারী (أَبُو ذَرِّ الْغِفَارِىُّ): তাঁর ইসলাম কবুলের ঘটনা তাঁর যবানীতেই জানা যায়। তিনি বলেন, আমরা জানতে পারলাম যে, মক্কায় এক ব্যক্তি নিজেকে নবী বলে দাবী করছেন। আমি আমার ভাইকে বললাম, তুমি মক্কায় গিয়ে ঐ ব্যক্তির সাথে কথা বলে বিস্তারিত খোঁজ-খবর নিয়ে এস। সে রওয়ানা হয়ে গেল এবং মক্কায় তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ফিরে আসল। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, কি খবর নিয়ে এলে? সে বলল, আল্লাহর কসম! আমি এমন একজন ব্যক্তিকে দেখেছি যিনি সৎকাজের আদেশ দেন এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করেন। আমি বললাম, তোমার খবরে আমি সন্তুষ্ট হ’তে পারলাম না। অতঃপর আমি একটি ছড়ি ও এক থলি খাবার নিয়ে মক্কায় রওয়ানা হ’লাম। কিন্তু সেখানে গিয়ে আমি তাকে চিনতেও পারলাম না বা কারু কাছে তার কথা জিজ্ঞেস করাও সমীচীন মনে করলাম না। তাই আমি যমযমের পানি পান করে মসজিদে থাকতে লাগলাম।
একদিন সন্ধ্যায় আলী (রাঃ) আমার নিকট দিয়ে গমনকালে আমার দিকে ইঙ্গিত করে বললেন, মনে হয় লোকটি বিদেশী। আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, আমার সঙ্গে আমার বাড়িতে চলুন। তখন আমি তার সাথে তার বাড়িতে চললাম। পথে তিনি আমাকে কোন কিছু জিজ্ঞেস করেননি। আমিও ইচ্ছা করে কিছু বলিনি। অতঃপর তাঁর বাড়িতে রাত্রি যাপন করে ভোরবেলায় আবার মসজিদে এলাম ঐ ব্যক্তির খোঁজ নেওয়ার জন্য। কিন্তু ওখানে এমন কোন লোক ছিল না যে ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে কিছু বলবে। তিনি বলেন, ঐদিনও আলী (রাঃ) আমার নিকট দিয়ে চলার সময় বললেন, এখনো কি লোকটি তার গন্তব্যস্থল ঠিক করতে পারেনি? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, আমার সঙ্গে চলুন। পথিমধ্যে তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, বলুন তো আপনার উদ্দেশ্য কি? কিজন্য এ শহরে এসেছেন? আমি বললাম, যদি আপনি আমার বিষয়টি গোপন রাখার আশ্বাস দেন, তাহ’লে তা আপনাকে বলতে পারি। তিনি বললেন, নিশ্চয়ই আমি গোপন রাখব। আমি বললাম, আমরা জানতে পেরেছি যে, এখানে একজন ব্যক্তির আবির্ভাব হয়েছে যিনি নিজেকে নবী বলে দাবী করেন। আমি তাঁর সঙ্গে কথা বলার জন্য আমার ভাইকে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সে ফিরে গিয়ে আমাকে সন্তোষজনক কিছু বলতে পারেনি। তাই নিজে দেখা করার ইচ্ছা নিয়ে এখানে এসেছি। আলী (রাঃ) বললেন, আপনি সঠিক পথপ্রদর্শক পেয়েছেন। আমি এখনই তাঁর কাছে যাওয়ার জন্য রওয়ানা হচ্ছি। আপনি আমাকে অনুসরণ করুন এবং আমি যে গৃহে প্রবেশ করব আপনিও সে গৃহে প্রবেশ করবেন। রাস্তায় যদি আপনার জন্য বিপজ্জনক কোন লোক দেখতে পাই, তাহ’লে আমি জুতা ঠিক করার অজুহাতে দেয়ালের পার্শ্বে সরে দাঁড়াব, যেন আমি জুতা ঠিক করছি। আর আপনি চলতেই থাকবেন। অতঃপর আলী (রাঃ) পথ চলতে শুরু করলেন। আমিও তাঁর অনুসরণ করে চলতে লাগলাম। তিনি নবী (ছাঃ)-এর নিকট প্রবেশ করলে আমিও তাঁর পিছে পিছে প্রবেশ করলাম। আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বললাম, আমার নিকট ইসলাম পেশ করুন। তিনি পেশ করলেন। ফলে আমি তৎক্ষণাৎ ইসলাম কবুল করলাম।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, হে আবূ যর! এখনকার মত তোমার ইসলাম গোপন রেখে দেশে ফিরে যাও। অতঃপর যখন আমাদের বিজয়ের খবর জানতে পারবে তখন এসো। আমি বললাম, যে আল্লাহ আপনাকে সত্য সহ প্রেরণ করেছেন তাঁর শপথ করে বলছি, আমি কাফির-মুশরিকদের সামনে উচ্চৈঃস্বরে তাওহীদের বাণী ঘোষণা করব’।
রাবী ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, এ কথা বলে তিনি মাসজিদুল হারামে গমন করলেন। কুরাইশের লোকজন সেখানে উপস্থিত ছিল। তিনি বললেন, হে কুরায়েশগণ! আমি নিশ্চিতভাবে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মা‘বূদ নেই এবং আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল’। এ কথা শুনেই কুরায়েশরা বলে উঠল, ধর এই ‘ছাবেঈ’ (ধর্মত্যাগী)-টাকে। তারা আমার দিকে তেড়ে এল এবং আমাকে এমন নির্দয়ভাবে প্রহার করতে লাগল, যেন আমি মরে যাই। তখন আববাস (রাঃ) আমার নিকট পৌঁছে আমাকে ঘিরে রাখলেন এবং কুরায়েশদের উদ্দেশ্যে বললেন, তোমাদের ধ্বংস হৌক! তোমরা গিফার গোত্রের লোককে হত্যা করতে উদ্যত হয়েছ? অথচ তোমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের কাফেলা গিফার গোত্রের নিকট দিয়ে যাতায়াত করে থাকে? এ কথা শুনে তারা আমার থেকে সটকে পড়ল। পরদিন ভোরে কা‘বাগৃহে উপস্থিত হয়ে আগের দিনের মতই আমি আমার ইসলাম গ্রহণের কথা ঘোষণা দিলাম। কুরায়েশরা গতকালের মত আজও আমাকে মারধর করল। এ দিনও আববাস (রাঃ) এসে আমাকে রক্ষা করলেন এবং কুরায়েশদের উদ্দেশ্যে গতকালের মত বক্তব্য রাখলেন। রাবী ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, এটাই ছিল আবূ যর গেফারী (রাঃ)-এর ইসলাম গ্রহণের প্রথম ঘটনা’।[2] পরবর্তীতে বদর ও ওহোদ যুদ্ধ শেষে তিনি রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট আগমন করেন এবং মদীনায় থেকে যান (ইবনু সা‘দ ৪/১৬৮)। তিনি আছহাবে ছুফফাহ্র অন্তর্ভুক্ত হন (সীরাহ ছহীহাহ ১/২৬০)।
৪. যেমাদ আযদী (ضِمَادُ الْأَزْدِيُّ) : ইয়ামনের অধিবাসী যেমাদ আযদী ছিলেন ঝাড়-ফুঁকের মাধ্যমে জিন ছাড়ানো চিকিৎসক। মক্কাবাসীদের নিকট সবকিছু শুনে তিনি রাসূল (ছাঃ)-কে জিনে ধরা রোগী মনে করে তাঁর কাছে আসেন এবং বলেন, يَا مُحَمَّدُ إِنِّى أَرْقِى مِنْ هَذِهِ الرِّيحِ وَإِنَّ اللهَ يَشْفِى عَلَى يَدِى مَنْ شَاءَ فَهَلْ لَكَ؟ ‘হে মুহাম্মাদ! আমি এই ঝাড়-ফুঁকের মাধ্যমে চিকিৎসা করে থাকি। আল্লাহ আমার হাতে যাকে ইচ্ছা আরোগ্য দান করে থাকেন। অতএব আপনার কোন প্রয়োজন আছে কি?’ জবাবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে শুনিয়ে দেন খুৎবাতুল হাজতের সেই অমৃত বাণী সমূহ- যা প্রতিটি খুৎবা ও বক্তৃতার সূচনায় আবৃত্তি করা পরবর্তীতে সুন্নাতে পরিণত হয়। বক্তব্যটি ছিল নিম্নরূপ:
إِنَّ الْحَمْدَ لِلَّهِ نَحْمَدُهُ وَنَسْتَعِينُهُ مَنْ يَهْدِهِ اللهُ فَلاَ مُضِلَّ لَهُ وَمَنْ يُضْلِلْ فَلاَ هَادِىَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ، أَمَّا بَعْدُ:
‘নিশ্চয়ই সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য। আমরা তাঁর প্রশংসা করি ও তাঁর নিকটে সাহায্য প্রার্থনা করি। আল্লাহ যাকে হেদায়াত দান করেন, তাকে পথভ্রষ্টকারী কেউ নেই। আর তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তাকে হেদায়াতকারী কেউ নেই। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তিনি এক তাঁর কোন শরীক নেই এবং মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও তাঁর রাসূল’।
যেমাদ কথাগুলি শুনে গদগদ চিত্তে রাসূল (ছাঃ)-কে বারবার কথাগুলি বলতে অনুরোধ করেন। ফলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কথাগুলি তিনবার বলেন। অতঃপর যেমাদ বলে উঠলেন, لَقَدْ سَمِعْتُ قَوْلَ الْكَهَنَةِ وَقَوْلَ السَّحَرَةِ وَقَوْلَ الشُّعَرَاءِ فَمَا سَمِعْتُ مِثْلَ كَلِمَاتِكَ هَؤُلاَءِ وَلَقَدْ بَلَغْنَ نَاعُوسَ الْبَحْرِ هَاتِ يَدَكَ أُبَايِعْكَ عَلَى الإِسْلاَمِ فَبَايَعَهُ ‘আমি জ্যোতিষীদের, জাদুকরদের ও কবিদের কথা শুনেছি। কিন্তু আপনার উক্ত কথাগুলির মত কারুর কাছে শুনিনি। এগুলি সমুদ্রের গভীরে পৌঁছে গেছে। আপনি হাত বাড়িয়ে দিন! আমি আপনার নিকটে ইসলামের উপরে বায়‘আত করব’। অতঃপর তিনি বায়‘আত করেন।[3]
[2]. বুখারী হা/৩৫২২ ‘মানাক্বিব’ অধ্যায়, ‘আবূ যর গিফারীর ইসলাম গ্রহণের কাহিনী’ অনুচ্ছেদ-১১; মুসলিম হা/২৪৭৩-৭৪।
[3]. মুসলিম হা/৮৬৮; মিশকাত হা/৫৮৬০ ‘নবুঅতের নিদর্শন সমূহ’ অনুচ্ছেদ। নববী বলেন, মুসলিম ব্যতীত অন্যান্য হাদীছ গ্রন্থে نَاعُوسَ الْبَحْرِ এর বদলে قَامُوسُ البحر এসেছে (ঐ, শরহ নববী)। অর্থ একই।
(১) এখানে ইবনু ইসহাক বিনা সনদে আর একটি ঘটনা বর্ণনা করেছেন যে, হাবশায় ইসলামের খবর পৌঁছার পর সেখান থেকে ২০জন বা তার কিছু কম সংখ্যক খ্রিষ্টান মক্কায় আসেন। তারা এসে রাসূল (ছাঃ)-কে মাসজিদুল হারামে পেয়ে যান। অতঃপর তারা তাঁর সঙ্গে কথা বলেন ও বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করেন। এ সময় কুরায়েশ-এর একদল লোক কা‘বাগৃহের চারপাশে ছিল। খ্রিষ্টান প্রতিনিধি দলটি যখন রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট থেকে তাওহীদের দাওয়াত পেল এবং কুরআন শুনল, তখন তাদের চোখ দিয়ে অবিরল ধারে অশ্রু প্রবাহিত হ’ল। অতঃপর তারা ঈমান আনল ও ইসলাম কবুল করল। অতঃপর তারা যখন বেরিয়ে এল তখন আবু জাহল তার দলবল নিয়ে তাদের পথ রোধ করল এবং বলল, خَيَّبَكُمْ اللهُ ‘আল্লাহ তোমাদেরকে নিরাশ করুন!’ তোমাদের লোকেরা তোমাদেরকে পাঠিয়েছে এই লোকটির খবরাখবর নিয়ে তাদেরকে জানানোর জন্য। অথচ তোমরা তোমাদের দ্বীন পরিত্যাগ করলে এবং এই ব্যক্তির উপরে বিশ্বাস স্থাপন করলে। তোমাদের চাইতে কোন আহাম্মক কাফেলা আমরা দেখিনি’(مَا نَعْلَمُ رَكْبًا أَحْمَقَ مِنْكُمْ)। জবাবে তারা বললেন, আপনাদের উপরে সালাম। আমরা আপনাদেরকে জাহিল বলছি না। আমাদের বিষয়টি আমাদের এবং আপনাদের বিষয়টি আপনাদের। আমরা আমাদের কোন কল্যাণ লাভ থেকে বিরত হব না’ (ইবনু হিশাম ১/৩৯১-৯২)। খবরটি যঈফ (তাহকীক ইবনু হিশাম ক্রমিক ৩৭৬)।
(২) ইবনু ইসহাক এখানে আর একটি ঘটনা বর্ণনা করেছেন যা খুবই প্রসিদ্ধ। যেমন রুকানাহ বিন ‘আব্দে ইয়াযীদ বিন হাশেম বিন আব্দুল মুত্ত্বালিব ছিলেন মক্কার একজন প্রসিদ্ধ বীর, যাকে কেউ কখনো কুস্তিতে হারাতে পারত না। একদিন মক্কার কোন গলিপথে নিরিবিলি সাক্ষাৎ হ’লে রাসূল (ছাঃ) তাকে ইসলামের দাওয়াত দেন এবং বলেন, আমি যদি তোমাকে হারাতে পারি, তাহ’লে কি তুমি ঈমান আনবে? তিনি বলেন, হ্যাঁ। অতঃপর তিনি তাকে দু’বার হারিয়ে দেন। পরে রাসূল (ছাঃ) তাকে বলেন, এর চাইতে বিস্ময়কর বস্ত্ত আমি তোমাকে দেখাতে পারি, যদি তুমি আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর। অতঃপর তিনি নিকটবর্তী একটি বৃক্ষকে আহবান করলেন। তখন বৃক্ষটি তাঁর নিকটে এল। অতঃপর তাঁর হুকুমে বৃক্ষটি তার আগের স্থানে ফিরে গেল। এটি দেখে রুকানাহ তার কওমের কাছে ফিরে গিয়ে বলল, হে বনু ‘আব্দে মানাফ! তোমাদের এই লোকটির মাধ্যমে তোমরা সারা বিশ্ববাসীকে জাদু করতে পারবে। আল্লাহর কসম! এই ব্যক্তির চাইতে বড় জাদুকর আমি কাউকে দেখিনি’ (ইবনু হিশাম ১/৩৯০-৯১)। বর্ণনাটির সনদ যঈফ (তাহকীক ইবনু হিশাম ক্রমিক ৩৭৫)।