১. সর্বপ্রথম নাযিলকৃত সূরা ‘আলাক্বের প্রথম পাঁচটি আয়াতে পড়া ও লেখা এবং তার মাধ্যমে এমন জ্ঞান অর্জনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যা আধ্যাত্মিক ও বৈষয়িক উভয় জ্ঞানের সমন্বয় সাধন করে। আর সেটাই হ’ল প্রকৃত মানবীয় শিক্ষা।
২. আলাক্ব-এর চাহিদা পূরণে গৃহীত বস্ত্তগত শিক্ষা যেন মানুষকে তার খালেক-এর সন্ধান দেয় এবং তাঁর প্রতি দাসত্ব, আনুগত্য ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশে উদ্বুদ্ধ করে, সে বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
৩. সসীম মানবীয় জ্ঞানের সাথে অসীম এলাহী জ্ঞানের হেদায়াত যুক্ত না হওয়া পর্যন্ত মানুষ কখনোই প্রকৃত জ্ঞানী হ’তে পারে না এবং সে কখনোই প্রকৃত সত্য খুঁজে পাবে না- সেকথা স্পষ্টভাবে বলে দেওয়া হয়েছে। যেমন মানুষের নিজস্ব দৃষ্টিশক্তির সাথে চশমা, অনুবীক্ষণ বা দূরবীক্ষণ যন্ত্র যুক্ত হ’লে তার দৃষ্টিসীমা প্রসারিত হয়। বলা বাহুল্য তাওহীদের জ্ঞান অর্জনের আহবানই ছিল মানবজাতির প্রতি কুরআনের সর্বপ্রথম আহবান।
৪. কয়েকদিনের বিরতির পর সূরা মুদ্দাছছিরে নাযিলকৃত পাঁচটি আয়াতে পূর্বোক্ত অভ্রান্ত জ্ঞানের তথা তাওহীদের প্রচার ও প্রসারের গুরু দায়িত্ব ন্যস্ত করা হয়েছে এক অপূর্ব অলংকারসমৃদ্ধ ভাষায়। উঠো! ভোগবাদী মানুষকে শয়তানের ধোঁকা থেকে বাঁচাও। সর্বত্র আল্লাহর সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা কর। শিরকী জাহেলিয়াতের কলুষময় পোষাক ঝেড়ে ফেল এবং সকল অপবিত্রতা হ’তে মুক্ত হও। অর্থাৎ মানুষের মনোজগতে ও কর্মজগতে আমূল সংস্কার সাধনের প্রতিজ্ঞা নিয়ে হে চাদরাবৃত মুহাম্মাদ! উঠে দাঁড়াও!!
৫. যার পরপরই একই দরদভরা ভাষায় সূরা মুযযাম্মিল নাযিল করে রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবীগণের জন্য তাহাজ্জুদ ছালাত তথা নৈশ ইবাদতের নির্দেশ দেওয়া হয় (মুযযাম্মিল ৭৩/১-৪)। কেননা পরবর্তী সমাজ বিপ্লবের গুরুদায়িত্ব পালনের জন্য নৈতিক ও আধ্যাত্মিক শক্তি সম্পন্ন মানুষ তৈরী করাই ছিল প্রধান কাজ। আর আধ্যাত্মিক মানস গঠনে তাহাজ্জুদ ছালাতের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
৬. দুনিয়াপূজারী অধঃপতিত জাতিকে উদ্ধারের যে পথ মুহাম্মাদ (ছাঃ) তালাশ করছিলেন, তা তিনি পেয়ে গেলেন আল্লাহর অহি-র মাধ্যমে। আর তা হ’ল জীবনের লক্ষ্য পরিবর্তন। অর্থাৎ দুনিয়াপূজারী মানুষকে আল্লাহমুখী করা এবং সার্বিক জীবনে অহি-র বিধান অনুসরণের মাধ্যমে আখেরাতে মুক্তিই হবে মানুষের পার্থিব জীবনের একমাত্র লক্ষ্য। অন্য কোন পথে মানবতার মুক্তি নেই।
৭. সসীম জ্ঞানের ঊর্ধ্বে অসীম জ্ঞানের উৎস আল্লাহর সন্ধান পাওয়াই ছিল প্রথম নুযূলে অহি-র অমূল্য অবদান।
ইকবাল বলেন,
الله سے كرے دور تو تعليم بهى فتنہ + أملاك بهى اولاد بهى جاگير بهى فتنہ
ناحق كے لئے اٹهے تو شمشير بهى فتنہ + شمشير ہى كيا نعرۂ تكبير بهى فتنہ
(১) আল্লাহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে, সে শিক্ষা হ’ল ফিৎনা।
(২) সম্পদ, সন্তান এমনকি জাগীরও ফিৎনা।
(৩) অসত্যের জন্য যদি তরবারি ওঠে, তবে সেটিও ফিৎনা।
(৪) তরবারি কিসের, নারায়ে তাকবীরও ফিৎনা।