ফরয সালাত যেমন মুমিন জীবনের শ্রেষ্ঠতম ইবাদত, তেমনি নফল সালাতও সর্বশ্রেষ্ঠ নফল ইবাদত এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের অন্যতম উপায়। ফরযের অতিরিক্ত কর্মকে ‘‘নফল’’ বলা হয়। কিছু সময়ে কিছু পরিমাণ ‘‘নফল’’ সালাত পালন করতে রাসূলুল্লাহ ﷺ উৎসাহ দিয়েছেন, বা তিনি নিজে তা পালন করেছেন। এগুলোকে ‘সুন্নাত’ও বলা হয়। যে সকল নফল সালাতের বিষয়ে তিনি বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন সেগুলোকে ‘‘সন্নাতে মুয়াক্কাদাহ’’ বলা হয়। এ ধরনের কিছু সুন্নাত সালাত সম্পর্কে হাদীসে বেশি গুরুত্ব প্রদানের ফলে কোন ফকীহ তাকে ওয়াজিব বলেছেন।
বিভিন্ন সহীহ হাদীসে সাধারণভাবে যত বেশি পারা যায় নফল সালাত আদায়ের উৎসাহ দেয়া হয়েছে। এক সাহাবী প্রশ্ন করেন, আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় কর্ম কী? উত্তরে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন: ‘‘তুমি আল্লাহর জন্য বেশি বেশি সাজদা করবে (বেশি বেশি নফল সালাত আদায় করবে); কারণ তুমি যখনই আল্লাহর জন্য একটি সাজদা কর, তখনই তার বিনিময়ে আল্লাহ তোমার একটি মর্যাদা বৃদ্ধি করেন এবং তোমার একটি পাপ মোচন করেন।’’[1]
অন্য এক যুবক সাহাবী রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর কাছে আবেদন করেন যে, তিনি জান্নাতে তাঁর সাহচর্য চান। তিনি বলেন: ‘‘তাহলে বেশি বেশি সাজদা করে (নফল সালাত পড়ে) তুমি আমাকে তোমার বিষয়ে সাহায্য কর।’’[2]
অন্য হাদীসে আবু হুরাইরা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন : ‘‘সালাত সর্বশ্রেষ্ঠ বিষয়, কাজেই যার পক্ষে সম্ভব হবে সে যেন যত বেশি পারে সালাত আদায় করে।’’ হাদীসটি হাসান।[3]
সাধারণভাবে নফল সালাত ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে বা স্থানে বিশেষ সালাতের বিশেষ ফযীলতের কথাও সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। আমরা ইতোপূর্বে আল্লামা মাওসিলীর আলোচনা থেকে জানতে পেরেছি যে, সহীহ হাদীস থেকে নিম্নলিখিত বিশেষ সুন্নাত-নফল সালাতের কথা জানা যায়: ফরয সালাতের আগে পরে সুন্নাত সালাত, তারাবীহ, দোহা বা চাশত, রাতের সালাত বা তাহাজ্জুদ, তাহিয়্যাতুল মাসজিদ, তাহিয়্যাতুল ওযু, ইসতিখারার সালাত, কুসূফের সালাত, ইসতিসকার সালাত ও সালাতুত তাসবীহ। এছাড়া পাপ করে ফেললে দু রাক‘আত সালাত আদায় করে তাওবা করার কথাও হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে। একটি যয়ীফ হাদীসে ‘সালাতুল হাজাত’ বর্ণিত হয়েছে।
সুন্নাত-নফল সালাতের বিষয়ে এত সহীহ হাদীস থাকা সত্ত্বেও জালিয়াতগণ এ বিষয়ে অনেক জাল হাদীস প্রচার করেছে। অন্যান্য জাল হাদীসের মতই এগুলোতে অনেক আকর্ষণীয় অবান্তর সাওয়াবের কথা বলা হয়েছে। জালিয়াতগণ দুটি ক্ষেত্রে কাজ করেছে। প্রথম, সহীহ হাদীসে উল্লিখিত সুন্নাত-নফল সালাতগুলোর জন্য বানোয়াট ফযীলত, সূরা বা পদ্ধতি তৈরি করেছে। দ্বিতীয়, বিভিন্ন সময়, স্থান বা কারণের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতির সালাতের উদ্ভাবন করে সেগুলোর কাল্পনিক সাওয়াব, ফযীলত বা আসরের কাহিনী বানিয়েছে। আমাদের দেশে প্রচলিত এ বিষয়ক কিছু ভিত্তিহীন কথাবার্তা বা জাল হাদীস এখানে উল্লেখ করছি।
সহীহ হাদীসে প্রমাণিত সুন্নাত-নফল সালাত বিষয়ক জাল হাদীসগুলো বিস্তারিত আলোচনা করতে চাচ্ছি না। শুধুমাত্র এ সকল সালাত বিষয়ক মনগড়া পদ্ধতিগুলো আলোচনা করব। এরপর জালিয়াতগণ মনগড়াভাবে যে সকল সালাত ও তার ফযীলতের কাহিনী বানিয়েছে সেগুলো উল্লেখ করব।
[2] মুসলিম, আস-সহীহ ১/৩৫৩।
[3] তাবারানী, আল-মু’জামুল আউসাত ১/৮৪, হাইসামী, মাজমাউয যাওয়াইদ ২/২৪৯, আলবানী, সহীহুত তারগীব ১/২২৬।