রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন: ‘‘যখন তোমরা মুয়াযযিনকে আযান দিতে শুনবে, তখন সে যেরূপ বলে তদ্রূপ বলবে। এরপর আমার উপর সালাত পাঠ করবে ; কারণ যে ব্যক্তি আমার উপর একবার সালাত পাঠ করবে, আল্লাহ তাঁকে দশবার সালাত (রহমত) প্রদান করবেন। এরপর আমার জন্য ‘ওসীলা’ চাইবে ; কারণ ‘ওসীলা’ হলো জান্নাতের এমন একটি মর্যাদা যা আল্লাহর একজন মাত্র বান্দাই লাভ করবেন এবং আমি আশা করি আমিই হব সে বান্দা। যে ব্যক্তি আমার জন্য ‘ওসীলা’ প্রার্থনা করবে, তাঁর জন্য শাফায়াত প্রাপ্য হয়ে যাবে।’’[1]
অন্যান্য হাদীসে তিনি ‘ওসীলা’ প্রার্থনার নিম্নরূপ পদ্ধতি শিখিয়েছেন:
اللَّهُمَّ رَبَّ هَذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ وَالصَّلاَةِ الْقَائِمَةِ آتِ مُحَمَّدًا الْوَسِيلَةَ وَالْفَضِيلَةَ وَابْعَثْهُ مَقَاماً مَحْمُوْداً (الْمَقَامَ الْمَحْمُودَ) الَّذِي وَعَدْتَهُ
‘‘হে আল্লাহ, এই পরিপূর্ণ আহবান এবং আসন্ন সালাতের প্রতিপালক, আপনি প্রদান করুন মুহাম্মাদকে (ﷺ) ওসীলা এবং মহামর্যাদা এবং তাঁকে উঠান সম্মানিত অবস্থানে, যা আপনি তাঁকে ওয়াদা করেছেন।’’
তিনি বলেছেন, ‘‘মুয়াযযিনের আযান শুনে যে ব্যক্তি উপরের বাক্যগুলো বলবে, তাঁর জন্য কিয়ামতের দিন আমার শাফা’আত পাওনা হয়ে যাবে।’’[2]
ইমাম বুখারীসহ সকল মুহাদ্দিস এভাবেই দোয়াটি সংকলন করেছেন। আমাদের দেশে প্রচলিত আযানের দোয়ার মধ্যে দুটি বাক্য অতিরিক্ত রয়েছে, যা উপরের দোয়াটিতে নেই। প্রথম বাক্যটিতে (والفضيلة : ওয়াল ফাদীলাতা)-র পরে ‘والدرجة الرفيعة’(এবং সুঊচ্চ মর্যাদা) বলা এবং দ্বিতীয় বাক্যটি দোয়ার শেষে : ‘إنك لا تخلف الميعااد’ (নিশ্চয় আপনি ওয়াদা ভঙ্গ করেন না) বলা। দ্বিতীয় বাক্যটি একটি দুর্বল সনদে বর্ণিত হয়েছে।[3] আর প্রথম বাক্যটি (ওয়াদ-দারাজাতার রাফী’আহ) একেবারেই ভিত্তিহীন ও মিথ্যা হাদীস নির্ভর। ইবনু হাজার, সাখাবী, যারকানী, মোল্লা আলী কারী ও অন্যান্য মুহাদ্দিস বলেছেন যে, এই বাক্যটি (ওয়াদ-দারাজাতার রাফী’য়াহ) বানোয়াট।[4]
[2] সহীহ বুখারী ১/২২২, নং ৫৮৯, ৪/১৭৪৯, নং ৪৪৪২।
[3] বাইহাকী, আস-সুনানুল কুবরা ১/৪১০ (৬০৩-৬০৪)।
[4] ইবনু হাজার, তালখীসুল হাবীর ১/২১১, সাখাবী, আল-মাকাসিদ, পৃ. ২২২-২২৩, যারকানী, মুখতাসারুল মাকাসিদ, পৃ. ১০৭, মোল্লা আলী কারী আল-মাসনূ’, পৃ. ৭০-৭১, আল-আসরার, পৃ. ১২২, মুবারাকপুরী, তুহফাতুল আহওয়াযী, পৃ. ১/৫৩২।