যে ব্যক্তি নামায কাযা রেখে মারা যায়, সে ব্যক্তির অভিভাবক বা অন্য কেউ তার পক্ষ থেকে সে নামায আদায় করে দিতে পারে না। আর তার জন্য কোন কাফ্ফারা বা কোন ফিদ্য়্যাহ-জরিমানা নেই। তদনুরূপ যে ব্যক্তি রোযা রাখতে অক্ষম, সে ব্যক্তির তরফ থেকে তার জীবনে কেউ তার সেই রোযা রেখে দিতে পারে না। মহান আল্লাহ বলেন,
(وَأَنْ لَّيْسَ لِلإِنْسَانِ إِلاَّ مَا سَعَى)
অর্থাৎ, আর এই যে, মানুষ যা চেষ্টা করে, তাই সে পেয়ে থাকে। (কুরআনুল কারীম ৫৩/৩৯)
যদি কোন ব্যক্তি রমাযান মাস চলা অবস্থায় মারা যায়, তাহলে মাসের অবশিষ্ট দিনগুলির ব্যাপারে তার উপরে অথবা তার অভিভাবকের উপরে কোন কিছু ওয়াজেব নয়।[1]
কিন্তু কোন রোগী রোগে থাকা অবস্থায় (কিছু বা সম্পূর্ণ) রমাযান পার হয়ে মারা গেলে তার ব্যাপারে বিস্তারিত বিবরণ আছেঃ-
১। যে রোগীর আরোগ্যের আশা আছে, আরোগ্য পর্যন্ত তার উপর রোযা ওয়াজেব থাকবে। কিন্তু রোগ যদি থেকেই যায় এবং কাযা করার সুযোগ হওয়ার আগেই সে মারা যায়, তাহলে তার উপর কিছুই ওয়াজেব নয়। কারণ, তার উপর ওয়াজেব ছিল কাযা, আর তা করতে সে সুযোগই পায় নি।
২। এমন রোগী যার আরোগ্যের কোন আশা নেই। তার তরফ থেকে শুরু থেকেই মিসকীন খাওয়ানো ওয়াজেব; রোযা কাযার পরিবর্তে নয়। সে মারা গেলে তার তরফ থেকে প্রত্যেক রোযার বিনিময়ে একটি করে মিসকীন খাইয়ে দিলেই ওয়াজেব আদায় হয়ে যাবে। যেহেতু যার ওযর দূর হওয়ার মত নয় -যেমন, অথর্ব বৃদ্ধ এবং চিররোগা, তার তরফ থেকে ১টি রোযার বদলে ১টি মিসকীন খাওয়ানোই ওয়াজেব।
৩। এমন রোগী যার আরোগ্যের আশা ছিল, অতঃপর রমাযান পরে সে সুস্থও হয়েছে এবং কাযা করার সুযোগও পেয়েছে। কিন্তু কাযা করার আগেই সে মারা গেছে। এমন রোগীর তরফ থেকে তার নিকটাত্মীয় প্রত্যেক রোযার পরিবর্তে একটি করে মিসকীনকে খাদ্য দান করবে।[2]
অবশ্য যদি ঐ মৃতব্যক্তির কোন আত্মীয় তার তরফ থেকে রোযাগুলি কাযা রেখে দিতে চায়, তাহলে তাও কিছু উলামার নিকট শুদ্ধ হয়ে যাবে।[3] যেহেতু মা আয়েশা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি নিজের দায়িত্বে রোযা থাকা অবস্থায় মারা যাবে, তার তরফ থেকে তার অভিভাবক (ওয়ারেস) রোযা রাখবে।’’[4]
অন্য কিছু উলামা এই মতকে প্রাধান্য দেন যে, উক্ত হাদীস নযরের রোযার ব্যাপারে বিবৃত হয়েছে। পক্ষান্তরে রমাযানের ফরয রোযা বাকী রাখা অবস্থায় মারা গেলে, তার তরফ থেকে কারো রোযা রাখা চলবে না। বরং তার অভিভাবক বা ওয়ারেস তার তরফ থেকে প্রত্যেক দিনের পরিবর্তে ১টি করে মিসকীনকে খাদ্য দান করবে।[5] যেহেতু আমরাহ কর্তৃক বর্ণিত, তাঁর আম্মা রমাযানের রোযা বাকী রাখা অবস্থায় মারা যান। তিনি আয়েশা (রাঃ)কে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আমি কি তাঁর তরফ থেকে কাযা রেখে দেব?’ উত্তরে তিনি বললেন, ‘না। বরং তাঁর তরফ থেকে প্রত্যেক দিনের পরিবর্তে ১টি করে মিসকীনকে অর্ধ সা’ (মোটামুটি সওয়া ১ কিলো) খাদ্য দান কর।’[6]
ইবনে আববাস (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত যে, এক মহিলা আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট এসে জিজ্ঞাসা করল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমার মা মারা গেছেন। কিন্তু তাঁর যিম্মায় নযরের রোযা বাকী আছে। এখন আমি কি তাঁর তরফ থেকে রোযা রেখে দোব?’ উত্তরে তিনি বললেন, ‘‘তোমার মায়ের যিম্মায় কোন ঋণ বাকী থাকলে তা কি তুমি পরিশোধ করতে? তা কি তার তরফ থেকে আদায় করা হত?’’ মহিলাটি বলল, ‘জী হ্যাঁ।’ তিনি বললেন, ‘‘অতএব তুমি তোমার মায়ের তরফ থেকে রোযা রেখে দাও।’’[7]
ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, ‘যদি কোন লোক রমাযানে ব্যাধিগ্রস্ত হয়, অতঃপর সে মারা যায় এবং রোযা (কাযা করার সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও) রোযা না রেখে থাকে, তাহলে তার তরফ থেকে মিসকীন খাইয়ে দিতে হবে; তার জন্য রোযা কাযা নেই। কিন্তু যদি সে নযরের রোযা না রেখে মারা যায়, তাহলে তার অভিভাবক (বা ওয়ারেস) তার তরফ থেকে সেই রোযা কাযা করে দেবে।’[8]
বলা বাহুল্য, যে ব্যক্তি নযরের রোযা না রেখে মারা যাবে, তার তরফ থেকে তার ওয়ারেস রোযা রেখে দেবে। আর এই রোযা রেখে দেওয়ার মান হল মুস্তাহাব। কারণ, মহান আল্লাহ বলেন,
(وَلاَ تَزِرُ وَازِرَةٌ وِّزْرَ أُخْرَى)
অর্থাৎ, কেউ অপরের ভার বহন করবে না। (কুরআনুল কারীম ৬/১৬৪)
মৃতব্যক্তির তরফ থেকে রোযা রাখার সময় একাধিক রোযা হলে ওয়ারেসরা যদি আপোসে ভাগ করে রাখে, তাহলে তা বৈধ। কিন্তু এই ভাগাভাগি ‘যিহার’ কিংবা রমাযানের দিনে সঙ্গম করার কাফ্ফারার রোযায় চলবে না। কারণ, তাতে লাগাতার রোযা হওয়ার শর্ত আছে। আর ভাগাভাগি করে রাখলে নিরবচ্ছিন্নতা থাকে না। অতএব হয় মাত্র একজনই লাগাতার ৬০ রোযা রেখে দেবে। নতুবা ৬০টি মিসকীন খাইয়ে দেবে।[9]
[2] (আশ্শারহুল মুমতে’ ৬/৪৫২-৪৫৩)
[3] (আশ্শারহুল মুমতে’ ৬/৪৫৫-৪৫৬, সাবঊনা মাসআলাহ ফিস্-সিয়াম ২৯নং)
[4] (বুখারী ১৯৫২, মুসলিম ১১৪৭নং, প্রমুখ)
[5] (আহকামুল জানায়েয, আলবানী ১৭০পৃঃ, তামামুল মিন্নাহ, আল্লামা আলবানী ৪২৭-৪২৮পৃঃ দ্রঃ)
[6] (ত্বাহাবী, ইবনে হায্ম, আহকামুল জানায়েয, আলবানী ১৭০পৃঃ দ্রঃ)
[7] (আহমাদ, মুসনাদ ২/২১৬, বুখারী ১৯৫৩, মুসলিম ১১৪৮, আবূ দাঊদ ৩৩০৮নং প্রমুখ)
[8] (সহীহ আবূ দাঊদ ২১০১নং প্রমুখ)
[9] (আশ্শারহুল মুমতে’ ৬/৪৫৭-৪৫৮)