আল্লাহর নিকটে বৃষ্টি প্রার্থনার বিষয়ে নাবী (ﷺ) থেকে কয়েকটি পদ্ধতি বর্ণিত হয়েছে।
প্রথম পদ্ধতি: জুমআর দিন খুতবা প্রদান করা অবস্থায় মিম্বারে দাঁড়িয়ে তিনি বৃষ্টি প্রার্থনা করেছেন।
দ্বিতীয় পদ্ধতি: তিনি দিন নির্দিষ্ট করে মানুষের সাথে ময়দানে বের হওয়ার ওয়াদা করেছেন। সুতরাং ওয়াদা মোতাবেক তিনি সূর্য উদয়ের পর অত্যন্ত বিনীত ও কাকুতী-মিনতীকারী অবস্থায় ঈদগাহের উদ্দেশ্যে বের হতেন। ময়দানে পৌঁছে মিম্বারে আরোহন করতেন। ইবনুল কাইয়্যিম (রহঃ) বলেন- ঈদগাহে মিম্বারে আরোহনের ব্যাপারে বর্ণিত হাদীছের মধ্যে সন্দেহ রয়েছে। তিনি সেখানে গিয়ে খুতবার শুরুতে আল্লাহর প্রশংসা ও তাঁর গুণাগুণ বর্ণনা করতেন এবং আল্লাহর বড়ত্বের ঘোষণা দিতেন। বৃষ্টি প্রার্থনার সলাতের বিষয়ে তাঁর থেকে যে খুতবা ও দু’আ সংরক্ষিত হয়েছে তা নিম্নরূপ-
الْحَمْدُ لِلهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ مَلِكِ يَوْمِ الدِّينِ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ يَفْعَلُ مَا يُرِيدُ اللّٰهُمَّ أَنْتَ اللهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ تفعل ما تريد اللهم أنت الله لاإله إلا أنت أنت الْغَنِىُّ وَنَحْنُ الْفُقَرَاءُ أَنْزِلْ عَلَيْنَا الْغَيْثَ وَاجْعَلْ مَا أَنْزَلْتَ لَنَا قُوَّةً وَبَلاَغًا إِلَى حِينٍ
‘‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। তিনি জগৎ সমূহের প্রতিপালক এবং পরম করুণাময় ও অতি দয়ালু। তিনি প্রতিদান দিবসের এক মাত্র মালিক। আল্লাহ ব্যতীত সঠিক কোন উপাস্য নেই। তিনি যা ইচ্ছা তাই করেন। হে আল্লাহ্! তুমিই একমাত্র উপাস্য। তুমি ছাড়া অন্য কোন সত্য উপাস্য নেই। তুমি যা ইচ্ছা তাই করো। হে আল্লাহ! তুমিই একমাত্র সত্য উপাস্য। তুমি ছাড়া অন্য কোন সঠিক উপাস্য নেই। তুমি অমূখাপেক্ষী আর আমরা সকলেই তোমার রহমত ও অনুগ্রহের মুখাপেক্ষী। আমাদের জন্য বৃষ্টি বর্ষণ করুন। আর আমাদের জন্য যেই বৃষ্টি তুমি বর্ষণ কর তা দ্বারা আমাদের শক্তি বৃদ্ধি কর এবং উহাকে এক নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত আমাদের জীবন যাপনের উপকরণে পরিণত কর’’।[1] অতঃপর তিনি উভয় হাত উঠাতেন এবং কাকুতি-মিনতি ও অনুনয় বিনয়ের সাথে দু’আ করতেন। তিনি হাত এত উপরে উঠাতেন যে, তাঁর উভয় বগলের শুভ্রতা দেখা যেত। অতঃপর তিনি মানুষের দিকে পীঠ দিয়ে কিবলামুখী হতেন। এ সময় তিনি চাদর উল্টিয়ে পরিধাণ করতেন। ডান কাঁধের অংশ বাম কাঁধের উপর রাখতেন এবং বাম কাঁধের অংশ ডান কাঁধের উপর স্থাপন করতেন। সে সময় তাঁর গায়ে কালো চাদর থাকত। কিবলামুখী হয়ে তিনি দু’আ করতে থাকতেন। লোকেরাও তাই করত।
অতঃপর তিনি অবতরণ করে দুই ঈদের সলাতের ন্যায় আযান ও ইকামত ছাড়াই দুই রাকআত সলাত আদায় করতেন। প্রথম রাকআতে সূরা ফাতিহার পর তিনি সূরা আলা এবং দ্বিতীয় রাকআতে সূরা গাশিয়া পাঠ করতেন।
তৃতীয় পদ্ধতি: তিনি মদ্বীনার মিম্বারে দাঁড়িয়ে জুমআর দিন ছাড়াও অন্যান্য সময় বৃষ্টি প্রার্থনা করেছেন। মসজিদে বৃষ্টির জন্য সলাত পড়েছেন কি না- এ ব্যাপারে কিছুই বর্ণিত হয় নি।
চতুর্থ পদ্ধতি: তিনি মসজিদে বসে উভয় হাত উঠিয়ে বৃষ্টির জন্য আল্লাহ্ তা‘আলার কাছে দু’আ করেছেন।
পঞ্চম পদ্ধতি: তিনি মসজিদে নববীর দরজার বাইরে (বর্তমানে বাবুস্ সালামের পার্শ্বে) ‘যাওরা’ নামক স্থানে অবস্থান করে বৃষ্টি প্রার্থনা করেছেন।
ষষ্ঠ পদ্ধতি: কোন এক যুদ্ধে মুশরিকরা যখন মুসলিমদের আগেই ময়দানে অবস্থিত পানীর স্থানকে দখল করে নিল এবং মুসলিমগণ পিপাসায় কাতর হয়ে রসূল (ﷺ) এর কাছে অভিযোগ করলেন তখন তিনি বৃষ্টির জন্য আল্লাহর কাছে দু’আ করলেন। মুনাফিকরা তখন বলছিল- তিনি যদি সত্য নাবী হয়ে থাকেন, তাহলে মুসা (আঃ) যেমন তাঁর জাতির জন্য আল্লাহর কাছে পানি চেয়েছিলেন তেমনি তিনিও তার জাতির লোকদের জন্য অবশ্যই পানি প্রার্থনা করবেন। তাদের এই কথা যখন নাবী (ﷺ) এর কাছে পৌঁছল তখন তিনি বললেন- তারা কি তাই বলছে? আমি আশা করছি তোমাদের প্রতিপালক অচিরেই তোমাদেরকে পানি পান করাবেন। অতঃপর তিনি দুই হাত প্রসারিত করে দু’আ শুরু করলেন। আকাশে মেঘ তাদেরকে ছায়া দান করা এবং বৃষ্টি শুরু না হওয়া পর্যন্ত হাত নামান নি। এভাবে তিনি যখনই দু’আ করেছেন তখনই বৃষ্টি হয়েছে।
একবার তিনি বৃষ্টি প্রার্থনা করলেন। আবু লুবাবা (রাঃ) তখন বললেন- হে আল্লাহর রসূল! খোলা ময়দানে খেজুর পড়ে আছে। (সুতরাং এখন বৃষ্টি হলে তো আমার খেজুরগুলো ভিজে যাবে) তিনি বলতে থাকলেনঃ হে আল্লাহ! আবু লুবাবা উলঙ্গ হয়ে তার লুঙ্গি দিয়ে খেজুর শুকানোর জায়গায় পানি প্রবেশের নালা বন্ধ করতে বাধ্য হওয়া পর্যন্ত আমাদের জন্য বৃষ্টি বর্ষণ করো।[2] আল্লাহ্ তাঁর দু’আ কবুল করলেন এবং বৃষ্টি হতে থাকল। লোকেরা তখন আবু লুবাবার কাছে গিয়ে বলল- যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি উলঙ্গ হয়ে না দাঁড়াবে এবং লুঙ্গি দিয়ে তোমার খেজুর শুকানোর স্থানে পানি প্রবেশের পথ বন্ধ না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত বৃষ্টি বন্ধ হবেনা। সুতরাং তিনি তাই করলেন। অতঃপর বৃষ্টি বন্ধ হল।
[2]. প্রথমতঃ হাদীছ বিশুদ্ধ বলে শক্ত কোন প্রমাণ বিদ্যমান নেই। দ্বিতীয়তঃ যদি সাব্যস্ত হয়ও তবে আমার জানা মতে এটি একটি আরবদের বচন ভঙ্গি। সেকালে তারা এ রকম কথা নিজেদের ভাষায় ব্যবহার করতো। তার পরনের লুঙ্গি খুলে ফেলা দ্বারা এটি বুঝায় না যে তিনি লুঙ্গির বদলে অন্য কোন কাপড় পরেন নি। দুআকে শক্তিশালী করার জন্য রসূল সাঃ) কথাটি বলেছেন। কারণ রসূল সাঃ) এর দুআর মধ্যে আবু লুবাবা আপত্তি করেছিল এবং বলেছিল যে, এখনই বৃষ্টি হলে তো আমার খেজুর ভিজে যাবে। তাই তিনি আরও বেশী জোর দিয়ে আল্লাহর কাছে বৃষ্টি চেয়েছেন। দেখুনঃ মাযমায়ে দাওয়ায়েদ, সুনানে বায়হাকী, তাবরানী ও অন্যান্য। ইমাম তাবারানী বলেনঃ এই হাদীসের সনদে একজন অপরিচিত রাবী রয়েছে।