এ ছাড়া রসূল (ﷺ) যখন জুমআর খুতবায় দাঁড়াতেন তখন তাঁর চক্ষুদ্বয় লাল হয়ে যেতো, আওয়াজ উঁচু হতো এবং চেহারা মোবারকে ক্রোধের লক্ষণ পরিলক্ষিত হতো। মনে হতো তিনি যেন কোন সেনাবাহিনীর আক্রমণের ভয় দেখাচ্ছেন এবং বলছেনঃ হে লোক সকল! প্রত্যুষে কিংবা সন্ধ্যায় তোমাদের উপর শত্রুরা ঝাপিয়ে পড়বে। তিনি খুতবায় আম্মা বাদ বলতেন। খুতবা সংক্ষিপ্ত করতেন এবং সলাত দীর্ঘ করতেন। তিনি খুতবায় ইসলামের মূলনীতি ও শরীয়তের হুকুম-আহকাম বর্ণনা করতেন। কখনও কোন বিষয়ে মুসলিমদেরকে আদেশ বা নিষেধ করার প্রয়োজন পড়লে তিনি খুতবায় তা করতেন। যেমন খুতবার সময় প্রবেশকারী এক ব্যক্তিকে দুই রাকআত সলাত আদায়ের আদেশ করেছেন। সময়ের দাবি অনুপাতে তিনি খুতবা দিতেন। মুসলিমদের মধ্যে অভাব-অনটন দেখা দিলে দান-খয়রাত করার আদেশ দিতেন এবং সাদকাহ করার প্রতি তাদেরকে উৎসাহ দিতেন।
খুতবায় দু’আ করার সময় কিংবা আল্লাহর যিকির করার সময় শাহাদত আঙ্গুল দিয়ে ইঙ্গিত করতেন।
অনাবৃষ্টি দেখা দিলে এবং বৃষ্টির প্রয়োজন অনুভব করলে তিনি খুতবাতেই বৃষ্টির জন্য দু’আ করতেন। মসজিদে লোকেরা একত্রিত হয়ে গেলেই তিনি বের হয়ে আসতেন। মসজিদে প্রবেশ করেই সালাম দিতেন। মিম্বারে আরোহন করে উপস্থিত মুসল্লিদের দিকে মুখ ফিরিয়ে আরেকবার সালাম দিতেন। তারপর মিম্বারে বসতেন। এরই মধ্যে বিলাল (রাঃ) আযান দেয়া শুরু করতেন। আযান শেষ হলে তিনি দাঁড়িয়ে খুতবা শুরু করতেন। খুতবা প্রদানকালে তিনি লাঠি বা ধনুকের উপর ভর দিয়ে দাঁড়াতেন। তাঁর মিম্বারে তিনটি সিঁড়ি ছিল। মিম্বার নির্মাণের পূর্বে তিনি খেজুর গাছের একটি গোড়ার উপর দাঁড়াতেন। মসজিদের মাঝখানে মিম্বার স্থাপিত হয়নি; বরং পশ্চিম পার্শ্বে স্থাপিত হয়েছিল। মিম্বার ও দেয়ালের মাঝে মাত্র একটি ছাগল চলাচলের দূরত্ব ছিল।
তিনি যখন জুমআ ছাড়া অন্যান্য সময় মিম্বারে বসতেন কিংবা জুমআর দিন খুতবা দেয়ার জন্য মিম্বারে দাঁড়াতেন তখন সাহাবীগণ তাঁর দিকে মুখ ফিরিয়ে বসতেন। তিনি দাঁড়িয়ে খুতবা দিতেন। তারপর সামান্য সময় বসতেন। অতঃপর দাঁড়িয়ে দ্বিতীয় খুতবা দিতেন। খুতবা শেষ করলেই বিলাল (রাঃ) ইকামত দেয়া শুরু করতেন।
তিনি মুসলিমদেরকে খুতবার সময় ইমামের নিকটবর্তী হওয়ার আদেশ দিতেন এবং চুপ থাকতে বলতেন। তিনি বলতেন- জুমআর দিন খুতবার সময় যে ব্যক্তি তার পাশের ব্যক্তিকে বলবেঃ চুপ থাকো, সে অনর্থক কাজ করল। আর যে ব্যক্তি অনর্থক কাজ করবে তার জুমআ বাতিল হয়ে যাবে।
জুমআর সলাত শেষে তিনি স্বীয় ঘরে প্রবেশ করতেন এবং দুই রাকআত জুমআর সুন্নাত সলাত আদায় করতেন। তিনি জুমআর সলাতের পর চার রাকআত সুন্নাত পড়ারও আদেশ দিয়েছেন।
শাইখুল ইসলাম আল্লামা ইবনে তাইমীয়া (রহঃ) বলেন- মসজিদে পড়লে চার রাকআত পড়বে আর ঘরে পড়লে দুই রাকআত পড়বে।