সফওয়ান বিন আসসাল (রাঃ) এর হাদীসে পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে-
كَانَ يَأْمُرُنَا إِذَا كُنَّا سَفَرًا أَوْ مُسَافِرِينَ أَنْ لَا نَنْزِعَ خِفَافَنَا ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ وَلَيَالِيهِنَّ، إِلَّا مِنْ جَنَابَةٍ، وَلَكِنْ مِنْ غَائِطٍ وَبَوْلٍ وَنَوْمٍগ্ধ
অর্থাৎ: ‘‘আমরা যখন সফরে থাকতাম, তখন রাসূল (ﷺ) আমাদেরকে জানাবাতের অপবিত্রতা ছাড়া তিন দিন ও তিন রাত আমাদের মোজা না খুলতে নির্দেশ দিতেন। তবে পেশাব-পায়খানা ও ঘুমের কারণে কোন সমস্যা হত না’’। সুতরাং, বুঝা গেল, নিমেণর কারণগুলো সংঘটিত হলে মোজার উপর মাসাহ করা বৈধ হবে না-
১। জানাবাত ও এ জাতীয় বিষয় যা গোসল ওয়াজিব করে। যেমন হায়েয ও নিফাস থেকে পবিত্রতা অর্জন।
২। মাসাহ এর সময়সীমা শেষ হলে।
৩। মোজা খুলে ফেললে এবং মোজা পরিধানের পূর্বেই পবিত্রতা নষ্ট হলে:
যদি কেউ মোজা খুলে ফেলে, যদিও তা সময়সীমা শেষ হওয়ার পূর্বে হয় অতঃপর পবিত্রতা নষ্ট হয়, তাহলে তার জন্য তা পরিধান করা বৈধ হবে না ও তা উপর মাসাহ করা বৈধ হবে না। কেননা এ সময় সে পবিত্র অবস্থায় তার পায়ে মোজা পরিধান করেনি। উল্লেখিত ৩টি বিষয়ের যে কোন একটি সংঘটিত হলে মোজার উপর মাসাহ করা বৈধ হবে না। বরং যখন পবিত্রতা নষ্ট হবে তখন তার জন্য ওযূ করে পা ধৌত করা আবশ্যক। এর পর পূর্বোলেস্নখিত নিয়ম অনুযায়ী মোজা পরিধান করে তার উপর মাসাহ করবে।
সতর্কবাণী: মাসাহ এর বিধান বাতিল হলে ওযূ নষ্ট হয় না:
যে ব্যক্তি মোজার উপর মাসাহ করার পর তা খুলে ফেলল। কিন্তু সে অপবিত্র হলো না, তাহলে এরূপ ক্ষেত্রে তার বিধানের ব্যাপারে বিদ্বানদের মাঝে ৪টি অভিমত পরিলক্ষিত হয়।
১ম: এ অবস্থায় তাকে পুনরায় ওযূ করতে হবে: এটি নাখঈ আওযায়ী, আহমাদ ও ইসহাক (রাহি.) এর অভিমত।[1] পুরাতন একটি মত অনুযায়ী ইমাম শাফেঈও এমত প্রকাশ করেছেন। তারা বলেন, মাসাহ হল ধৌত করার স্থলাভিষিক্ত। সুতরাং যখন মাসাহকে দূর করা হবে তখন দু’পায়ের পবিত্রতা বতিল হয়ে যাবে। এ দ্বারা সমস্ত পবিত্রতা বাতিল বলে গণ্য হবে। কেননা এর ফলে পবিত্রতা যথেষ্ট হয় না।
২য়: তার জন্য শুধু দু’পা ধৌত করা আবশ্যক: এটা সাওরী, আবূ হানীফা ও তার অনুসারী এবং আবূ সাওর এর অভিমত। নতুন মত অনুযায়ী ইমাম শাফেঈ (রাহি.) এ মত পেশ করেছেন।[2]
৩য়: তার জন্য মোজা খুলার পর দ্রুত দু’পা ধৌত করা আবশ্যক। যদি দেরী হয়ে যায় তাহলে তাকে পুনরায় ওযূ করতে হবে: এটা ইমাম মালিক ও লাইস এর অভিমত।[3]
৪র্থ: তাকে ওযূ করতে হবে না এবং দু’পাও ধৌত করতে হবে না:
এটা নাখঈ এর একটি বর্ণনা। হাসান বসরী, আত্বা ও ইবনে হাযম (রাহি.) এ মত ব্যক্ত করেছেন। ইমাম নববী, ইবনে মুনযির ও ইবনে তাইমিয়াহ এ মতটিকে পছন্দ করেছেন।[4] এটাই বিশুদ্ধ অভিমত। কেননা মোজা পরিহীত পা পবিত্র এবং তা প্রতিষ্ঠিত সুন্নাহ দ্বারা পরিপূর্ণ পবিত্রতার আওতাধীন। সুতরাং সুন্নাহ ও ইজমার প্রমাণ ছাড়া ‘‘মোজা খুললেই ওযূ নষ্ট হবে’’ এমনটি বলা বৈধ নয়। যারা পুনরায় ওযূ করতে বলেন অথবা দু’পা ধৌত করতে বলেন তাদের কোন প্রমাণ নেই। বরং এর সমর্থনে আবূ যিবইয়ান এর হাদীসটি প্রণিধানযোগ্য-
عن أبي ظبيان أنه رأى عليا رضي الله عنه بال قائما ، ثم دعا بماء ، فتوضأ ومسح على نعليه ، ثم دخل المسجد ، فخلع نعليه ، ثم صلى
আবূ জিবয়্যান হতে বর্ণিত, তিনি আলী (রাঃ) কে দেখলেন যে, তিনি দাঁড়িয়ে পেশাব করলেন ও পানি নিয়ে ডাকলেন, অতঃপর তিনি ওযূ করলেন ও দুই জুতার উপর মাসাহ করলেন, এর পর মাসজিদে প্রবেশ করে জুতা খুলে সালাত আদায় করলেন।[5]
আবার কিয়াস করে বলা যেতে পারে যে, যে ব্যক্তি চুল মাসাহ করে মাথা মুণ্ডন করল, এ ক্ষেত্রে তারা তো পুনরায় মাথা মাসাহ করতে অথবা পুনরায় ওযূ করতে বলেন না! এ মাসআলটির ক্ষেত্রে এ যুক্তিটি খুবই যুক্তিযুক্ত। সুতরাং, যদি মোজা খুলার পর অপবিত্র না হয় তাহলে ওযূ নষ্ট না হওয়া পর্যন্ত যত ইচ্ছা সালাত আদায় করা যাবে। আল্লাহ্ই ভাল জানেন।
[2] ‘ইখতিলাফুল উলামা’ (৩১ পৃ.) আল-আওসাত্ব (১/৪৫৮)।
[3] আল-মাদূনাহ (১/৪১)।
[4] আল-মুহালস্না (২/১০৫), আল-আওসাত্ব, (১/৪৬০), আল-মাজমূ’ (১/৫৫৮) আল-ইখতিয়ারাত (১৫ পৃ.)।
[5] এ হাদীসের সনদ সহীহ; বাইহাক্বী (১/২৮৮), ত্বাহাবী (১/৫৮), তাবামুল মিন্না (১১৫ পৃ.)।