এ নামাযে সূরা ফাতিহার পর যে কোন সূরা পড়া যায়। তবে মুস্তাহাব হল, প্রথম রাকআতে সূরা আ’লা, দ্বিতীয় রাকআতে সূরা কাফিরুন এবং তৃতীয় রাকআতে সূরা ইখলাস পড়া। (আহমাদ, মুসনাদ, নাসাঈ, সুনান, দারেমী, সুনান,হাকেম, মুস্তাদরাক, মিশকাত ১২৭০-১২৭২নং)
মহানবী (ﷺ) কখনো কখনো তৃতীয় রাকআতে সূরা ইখলাসের সাথে সূরা নাস ও ফালাকও পাঠ করতেন। (আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান,হাকেম, মুস্তাদরাক ১/৩০৫)
বিতরের কুনূত :
মহানবী (ﷺ) হযরত হাসান বিন আলী (রাঃ)-কে নিম্নের দুআ বিত্র নামাযে ক্বিরাআত শেষ করার পর (রুকূর আগে) পড়তে শিখিয়েছিলেন:-
اَللّهُمَّ اهْدِنِيْ فِيْمَنْ هَدَيْتَ وَعَافِنِيْ فِيْمَنْ عَافَيْتَ وَتَوَلَّنِيْ فِيْمَنْ تَوَلَّيْتَ وَبَارِكْ لِيْ فِيْمَا أَعْطَيْتَ وَقِنِيْ شَرَّ مَا قَضَيْتَ فَإِنَّكَ تَقْضِيْ وَلاَ يُقْضى عَلَيْكَ إِنَّهُ لاَ يَذِلُّ مَنْ وَّالَيْتَ وَلاَ يَعِزُّ مَنْ عَادَيْتَ تَبَارَكْتَ رَبَّنَا وَتَعَالَيْتَ لاَ مَنْجَا مِنْكَ إِلاَّ إِلَيْكَ (وَصَلَّى اللهُ عَلى نَبِيِّنَا مُحَمَّدٍ)।
উচ্চারণ:- আল্লা-হুম্মাহ্দিনী ফী মানহাদাইত। অআ-ফিনী ফীমান আ ফাইত। অতাওয়াল্লানী ফী মান তাওয়াল্লাইত। অবা-রিকলী ফী মা আ’ত্বাইত। অকি¸নী শার্রামা ক্বাযাইত। ফাইন্নাকা তাক্বয্ব অলা ইউক্বযা আলাইক। ইন্নাহু লা য়্যাযিল্লু মাঁ উওয়া-লাইত। অলা য়্যাইযযু মান আ’-দাইত। তাবা-রাকতা রাব্বানা অতাআ’-লাইত। লা মানজা মিনকা ইল্লা ইলাইক। (অ স্বাল্লাল্লাহু আলা নাবিয়িনা মুহাম্মাদ।)
অর্থ - হে আল্লাহ! তুমি আমাকে হেদায়াত করে তাদের দলভুক্ত কর যাদেরকে তুমি হেদায়াত করেছ। আমাকে নিরাপদে রেখে তাদের দলভুক্ত কর যাদেরকে তুমি নিরাপদে রেখেছ, আমার সকল কাজের তত্তাবধান করে আমাকে তাদের দলভুক্ত কর যাদের তুমি তত্তাবধান করেছ। তুমি আমাকে যা কিছু দান করেছ তাতে বরকত দাও। আমার ভাগ্য তুমি যা ফায়সালা করেছ তার মন্দ থেকে রক্ষা কর। কারণ তুমিই ফায়সালা করে থাক এবং তোমার উপর কারো ফায়সালা চলে না। নিশ্চয় তুমি যাকে ভালোবাস সে লাঞ্জিত হয় না এবং যাকে মন্দ বাস সে সম্মানিত হয় না। তুমি বরকতময় হে আমাদের প্রভু এবং তুমি সুমহান। তোমার আযাব থেকে তুমি ছাড়া কোন আশ্রয়স্থল নেই। আর আমাদের নবীর উপর আল্লাহ রহ্মত বর্ষণ করেন। (আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, নাসাঈ, সুনান, আহমাদ, মুসনাদ, বায়হাকী, ইবনে মাজাহ্, সুনান, মিশকাত ১২৭৩নং, ইর: ২/১৭২)
প্রকাশ থাকে যে, দুআর শেষে দরুদের উল্লেখ উক্ত হাদীস সমূহে না থাকলেও সলফদের আমল শেষে দরুদ পড়ার কথা সমর্থন করে। আর সে জন্যই দুআর শেষে এখানে যুক্ত করা হয়েছে। (তামামুল মিন্নাহ্, আলবানী ২৪৩পৃ:, সিফাতু স্বালাতিন নাবী (ﷺ), আলবানী)
হযরত আলী (রাঃ) বলেন মহানবী (ﷺ) তাঁর বিতরের শেষ (রাকআতের রুকূর আগে কুনূতে) এই দুআ বলতেন,
اَللّهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِرِضَاكَ مِنْ سَخَطِكَ وَبِمُعَافَاتِكَ مِنْ عُقُوْبَتِكَ وَ أَعُوْذُ بِكَ مِنْكَ لاَ أُحْصِيْ ثَنَاءً عَلَيْكَ أَنْتَ كَمَا أَثْنَيْتَ عَلى نَفْسِكَ।
উচ্চারণ- আল্লা-হুম্মা ইন্নী আঊযু বিরিযা-কা মিন সাখাতিক, অবিমুআফা-তিকা মিন উক্ববাতিক, অ আঊযু বিকা মিন্কা লা উহ্সী ষানা-আন আলাইকা আন্তা কামা আসনাইতা আলা নাফসিক।
অর্থ- হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি তোমার সন্তুষ্টির অসীলায় তোমার ক্রোধ থেকে, তোমার ক্ষমাশীলতার অসীলায় তোমার শাস্তি থেকে এবং তোমার সত্তার অসীলায় তোমার আযাব থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমি তোমার উপর তোমার প্রশংসা গুনে শেষ করতে পারি না, যেমন তুমি নিজের প্রশংসা নিজে করেছ। (সুনানু আরবাআহ (আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ ও ইবনে মাজাহ্), মিশকাত ১২৭৬নং, ইর: ২/১৭৫)
প্রকাশ থাকে যে, অনেকে বলেছেন, উক্ত দু'আটি বিতরের নামাযের শেষে অর্থাৎ, সালাম ফিরার পর পড়া মুস্তাহাব। (আউনুল মা’বূদ ৪/২১৩, তুহ্ফাতুল আহওয়াযী ১০/৯, ফিকহুস সুন্নাহ্ আরবী ১/১৭৪, ফিকহুস সুন্নাহ্ উর্দু১৮৫পৃ: দ্র:)
পক্ষান্তরে মানারুস সাবীল (১/১০৮) আসসালসাবীল (১/১৬২) প্রভৃতি ফিকহের কিতাবে উক্ত দুআকে দুআয়ে কুনূত বলেই প্রথমোক্ত দুআর পাশাপাশি উল্লেখ করা হয়েছে। আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ্ প্রভৃতি হাদীস গ্রন্থের পরিচ্ছেদের শিরোনাম বাঁধার ভাবধারায় বুঝা যায় যে, এ দুআ বিতরের কুনূতে পঠনীয়। নাসাঈ শরীফের উক্ত হাদীসের টীকায় আল্লামা সিন্ধী বলেন, ‘হতে পারে তিনি উক্ত দুআ কিয়ামের শেষাংশে (রুকূর আগে) বলতেন। সুতরাং ওটাও একটি দুআয়ে কুনূত; যেমন গ্রন্থকার (নাসাঈর) কথা দাবী করে। আবার এও হতে পারে যে, তিনি (বিতরের) তাশাহহুদের বৈঠকে (সালাম ফিরার পূর্বে) উক্ত দুআ পড়তেন। আর শব্দের বাহ্যিক অর্থও তাই।’ (নাসাঈ, সুনান ১৭৪৬নং, ২/২৭৫) অাল্লাহু আ’লাম।
বিতরের কুনূতকে কুনূতে গায়র নাযেলাহ্ বলা হয়। আর তা সব সময় প্রত্যেক রাত্রে বিত্র নামাযে পড়া হয়। অবশ্য কুনূতের দুআ পড়া মুস্তাহাব; জরুরী নয়। সুতরাং কেউ ভুলে ছেড়ে দিয়ে সিজদায় গেলে সহু সিজদা লাগে না। যেমন প্রত্যেক রাত্রে তা নিয়মিত না পড়ে মাঝে মাঝে ত্যাগ করা উচিৎ। (সিফাতু স্বালাতিন নাবী (ﷺ), আলবানী ১৭৯পৃ:, আলমুমতে’, শারহে ফিক্হ, ইবনে উষাইমীন ৪/২৭)
প্রকাশ থাকে যে, বিতরের কুনূত (দুআ) মুখস্থ না থাকলে তার বদলে তিনবার ‘ক্বুল’ বা ‘রাব্বানা আতেনা’ পড়ে কাজ চালানো শরীয়ত-সম্মত নয়। মুখস্থ না থাকলে করতে হবে। আর ততদিন কুনূত না পড়ে এমনিই কাজ চলবে।
বিতরের দুআয় ইমাম সাহেব বহুবচন শব্দ ব্যবহার করবেন। এরুপ করা বিধেয়। এটা নিষিদ্ধ নববী শব্দ পরিবর্তনের আওতাভুক্ত নয়। কারণ, এটা কেবলমাত্র শব্দের বচন পরিবর্তন। পক্ষান্তরে হাদীসের কোন কোন বর্ণনায় বিতরের দুআ বহুবচন শব্দেও বর্ণিত হয়েছে। (ত্বাবারানী, মু’জাম কাবীর ২৭০০নং, শারহুস সুন্নাহ্, বাগবী ৩/১২৯, সাতা: ইবনে বায ৪১পৃ:, মুখতাসারু মুখালাফাতু ত্বাহারাতি অসস্বালাহ, আব্দুল আযীয সাদহান ১৭১পৃ: দ্র:)