হাদীসে এসেছে: আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন,
«سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: «لَمْ يَبْقَ مِنَ النُّبُوَّةِ إِلَّا المُبَشِّرَاتُ» قَالُوا: وَمَا المُبَشِّرَاتُ؟ قَالَ: «الرُّؤْيَا الصَّالِحَةُ»
“আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, নবুওয়াতে আর কিছু অবশিষ্ট নেই, বাকী আছে কেবল মুবাশশিরাত (সুসংবাদ)। সাহাবীগণ প্রশ্ন করলেন, মুবাশশিরাত কী? তিনি বললেন: ভালো স্বপ্ন”।[1]
এ হাদীস থেকে আমরা যা জানতে পারলাম:
এক. স্বপ্ন নবুওয়াতের একটি অংশ। নবী ও রাসূলদের কাছে জিবরীল যেমন সরাসরি অহী নিয়ে আসতেন, তেমনি স্বপ্নের মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলার নবী ও রাসূলদের কাছে প্রত্যাদেশ পাঠাতেন।
দুই. মুসলিম জীবনে স্বপ্ন শুধু একটি স্বপ্ন নয়। এটা হতে পারে মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে স্বপ্নদ্রষ্টার প্রতি একটি বার্তা।
তিন. আল মুবাশশিরাত অর্থ সুসংবাদ। সঠিক স্বপ্ন যা আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে হয়ে থাকে, তা স্বপ্ন দ্রষ্টার জন্য একটি সুসংবাদ। হাদীসে এসেছে, আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا اقْتَرَبَ الزَّمَانُ لَمْ تَكَدْ تَكْذِبُ، رُؤْيَا المُؤْمِنِ وَرُؤْيَا المُؤْمِنِ جُزْءٌ مِنْ سِتَّةٍ وَأَرْبَعِينَ جُزْءًا مِنَ النُّبُوَّةِ»
“দিন যত যেতে থাকবে, কিয়ামত নিকটে হবে, মুমিনদের স্বপ্নগুলো তত মিথ্যা হতে দূরে থাকবে। ঈমানদারের স্বপ্ন হল নবুওয়াতের ছিচল্লিশ ভাগের একভাগ”।[2]
অন্য এক বর্ণনায় এসেছে,
وَأَصْدَقُكُمْ رُؤْيَا أَصْدَقُكُمْ حَدِيثًا
“তোমাদের মধ্যে যে লোক যত বেশি সত্যবাদি হবে তার স্বপ্ন তত বেশি সত্যে পরিণত হবে”।[3]
এ হাদীস থেকে আমরা জানতে পারলাম:
এক. মুমিনের জীবনে স্বপ্ন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেয়ামত যত নিকটে আসবে ঈমানদারের স্বপ্ন তত বেশি সত্য হতে থাকবে।
দুই. ঈমানদারের জীবনে স্বপ্ন এত গুরুত্ব রাখে যে, তাকে নবুওয়াতের ছিচল্লিশ ভাগের এক ভাগ বলা হয়েছে।
তিন. মানুষ যত বেশি সততা ও সত্যবাদিতার চর্চা করবে সে ততবেশি সত্য স্বপ্ন দেখতে পাবে।
চার. যদি কেউ চায় সে সত্য স্বপ্ন দেখবে, সে যেন সৎ, সততা ও সত্যবাদিতার সাথে জীবন যাপন করে। হাদীসে এসেছে, আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি:
«مَنْ رَآنِي فِي الْمَنَامِ فَسَيَرَانِي فِي الْيَقَظَةِ، أَوْ لَكَأَنَّمَا رَآنِي فِي الْيَقَظَةِ، لَا يَتَمَثَّلُ الشَّيْطَانُ بِي»
“যে নিদ্রার মধ্যে আমাকে দেখে সে যেন বাস্তবেই আমাকে দেখেছে। কারণ, শয়তান আমার আকৃতি ধারণ করতে পারে না”।[4]
এ হাদীস থেকে আমরা জানতে পারলাম:
এক. যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে স্বপ্নে দেখবে সে সত্যি সত্যিই তাকে দেখেছে।
দুই. শয়তানের কুমন্ত্রণা ও প্রভাবে মানুষ স্বপ্ন দেখে থাকে। শয়তান মানুষকে বিভিন্ন স্বপ্ন দেখাতে পারে। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আকৃতি ধরে ধোকা দিতে পারে না।
তিন. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে স্বপ্নে দেখা একটি সৌভাগ্য। খুব কম ঈমানদারই আছেন, যারা এ সৌভাগ্যটি অর্জন করেছেন।
[2] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৯৯৪
[3] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২২২৩
[4] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৯৯৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২২৬৬