যীশু বলেন: “For John the Baptist came neither eating bread nor drinking wine; and ye say, He hath a devil. The Son of man is come eating and drinking; and ye say, Behold a gluttonous man, and a winebibber...: বাপ্তিস্মদাতা যোহন এসে রুটি খেলেন না এবং মদ পানও করলেন না বলে তোমরা বলছ, ‘তাকে ভূতে পেয়েছে’। আর মানুষের পুত্র এসে খেলেন ও পান করলেন বলে তোমরা বলছ, দেখ, একজন পেটুক মানুষ ও একজন জাত মাতাল।’’(লূক ৭/৩৩-৩৪)
প. বা.-২০০০: ‘‘বাপ্তিস্মদাতা যোহন এসে রুটি বা আংগুর-রস (wine) খেলেন না বলে আপনার বলছেন, ‘তাকে ভূতে পেয়েছে’। আর মনুষ্যপুত্র এসে খাওয়া-দাওয়া করলেন বলে আপনারা বলছেন, ‘দেখ, এই লোকটা পেটুক ও মদখোর।’’
কি. মো.-২০০৬: ‘‘তরিকাবন্দীদাতা ইয়াহিয়া এসে রুটি বা আংগুর-রস খেলেন না বলে আপনারা বলছেন, ‘তাকে ভূতে পেয়েছে’। আর ইবনে আদম এসে খাওয়া-দাওয়া করলেন বলে আপনারা বলছেন, ‘দেখ, এই লোকটা পেটুক ও মদখোর।’’
কি. মো.-২০১৩: ‘‘বাপ্তিস্মদাতা ইয়াহিয়া এসে রুটি খান নি, আঙ্গুর-রসও পান করেন নি, তাই তোমরা বল, ‘তাকে বদ-রূহে পেয়েছে’। আর ইবনুল ইনসান এসে ভোজন পান করেন, আর তোমরা বল, ‘ঐ দেখ, এক জন পেটুক ও মদ্যপায়ী।’’
এখানে কিং জেমস ভার্শনের পাঠ: ‘a gluttonous man, and a winebibber’: ‘‘একজন পেটুক ও এক জন জাত মাতাল’’। রিভাইজড স্টান্ডার্ড ভার্শনের পাঠ: ‘a glutton and a drunkard’ ‘‘একজন পেটুক ও একজন মাতাল’’।
আমরা দেখছি যে, ইঞ্জিলের ভাষায় বা যীশুর নিজের ভাষাতেই তাঁর সমাজের লোকেরা তাঁকে পেটুক বলতেন। উপরন্তু তাঁকে ‘জাত মাতাল’ বা ‘মাতাল’ বলতেন। না খাওয়ার কারণে ভূতগ্রস্ত অপবাদ পাওয়া অতিভোজনের কারণে পেটুক অপবাদ পাওয়ার চেয়ে সহজতর। তবে ‘মাতাল’ উপাধি মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। ইহুদি ধর্মে মদ নিষিদ্ধ নয়। সমাজের সকলেই কমবেশি মদ পান করতেন। সাধারণের চেয়ে লক্ষণীয় মাত্রায় বেশি মদ না খেলে তাকে মাতাল বলার প্রশ্ন উঠে না। কী পরিমাণ মদ পান করলে এরূপ মদে অভ্যস্ত সমাজের মানুষ কোনো মানুষকে ‘winebibber’ অর্থাৎ ‘জাত মাতাল’ বা drunkard অর্থাৎ ‘মাতাল’ বলতে পারে তা সহজেই অনুমেয়।
অন্যত্র যীশু বলেন: ‘‘পুরাতন মদ পান করে কেউ টাট্কা চায় না, কেননা সে বলে, পুরাতনই ভাল (No man also having drunk old wine straightway desireth new: for he saith, The old is better)।’’ (লূক ৫/৩৯, মো.-১৩)
আমরা প্রথম অধ্যায়ে অনুবাদ প্রসঙ্গে ‘wine’ বা ‘মদ’ শব্দটার অনুবাদের রকমফের দেখেছি। আমরা দেখেছি যে, ওয়াইন অর্থ আঙুর থেকে তৈরি করা মাদক পানীয়। মাদকমুক্ত আঙুরের রসকে কেউই ওয়াইন বলেন না। বাংলা বাইবেলে এখানে ওয়াইন অর্থ ‘আঙুর-রস’ বা ‘দ্রাক্ষারস’ লেখা হয়েছে: ‘‘পুরাতন দ্রাক্ষারস/ আঙ্গুর-রস পান করে কেউ টাট্কা চায় না, কেননা সে বলে, পুরাতনই ভাল।’’
এরূপ অনুবাদের ফলে যীশুর মূল বক্তব্যই বিকৃত হয়েছে। আঙুর রস’ (grape juice)-এর ক্ষেত্রে পুরাতনের চেয়ে টাট্কা-ই ভাল। তবে মদের বিষয় সম্পূর্ণ ভিন্ন। মদ যত পুরাতন হয় মদপায়ীদের কাছে তা তত বেশি সমাদৃত হয় এবং মদের দামও বয়স অনুপাতে বাড়ে। এজন্য যীশুর এ বক্তব্য থেকে প্রতীয়মান হয় যে, যীশু মদের মূল্যায়ন বিষয়ে অভিজ্ঞ ছিলেন। গ্যারি ডাভিন্সি এ প্রসঙ্গে লেখেছেন:
What? Who, right here, is accused of being a drunkard? Jesus is accused of being a glutton and a drunkard? What a reputation? Obviously, Jesus loved His wine. ... Luke 5:39 Jesus said: No one who has been drinking old wine desires new, for Jesus says: The old is good. This strongly suggests that Jesus desired old wine - the good stuff?
‘‘কী হল? এখানে কাকে মাতাল বলে অভিযুক্ত করা হল? যীশুকে পেটুক ও মাতাল বলে অভিযুক্ত করা হল? এ কেমন খ্যাতি? বাহ্যত যীশু মদ ভালবাসতেন ... লূক ৫/৩৯ যীশু বলেছেন: যে ব্যক্তি পুরাতন মদ পান করছিল সে নতুন মদ চাইবে না; কারণ- যীশু বলেন- পুরাতনই উত্তম। এ কথা শক্তভাবে নির্দেশ করে যে, যীশু পুরাতন মদই পছন্দ করতেন। ভাল কথা?’’[1]
নিস্তারপর্ব প্রসঙ্গে যোহন (১৩/৪-৫) লেখেছেন: “He riseth from supper, and laid aside his garments; and took a towel, and girded himself. After that he poureth water into a bason, and began to wash the disciples’ feet, and to wipe them with the towel wherewith he was girded.” ‘‘তিনি ভোজ থেকে উঠলেন এবং নিজের পোশাকাদি খুলে রাখলেন; আর একটা গামছা নিয়ে কোমর বাঁধলেন। এরপর তিনি একটি পাত্রে পানি ঢাললেন ও শিষ্যদের পা ধুয়ে দিতে লাগলেন, এবং যে গামছা তিনি কোমরে বেঁধেছিলেন তা দিয়ে মুছে দিতে লাগলেন।’’
কি. মো.-২০১৩: ‘‘তিনি ভোজ থেকে উঠলেন এবং উপরের কাপড় খুলে রাখলেন, আর একখানি গামছা নিয়ে কোমর বাঁধলেন। পরে তিনি পাত্রে পানি ঢাললেন ও সাহাবীদের পা ধুয়ে দিতে লাগলেন এবং যে গামছা দ্বারা কোমর বেঁধেছিলেন তা দিয়ে মুছে দিতে লাগলেন।’’
সমালোচকরা বলেন, এ কথা থেকে মনে হয়, যীশু এ সময়ে এমন মাতাল হয়েছিলেন যে, তিনি কী করছিলেন তা তিনি নিজেই বুঝতে পারছিলেন না। কারণ পা ধোয়ানোর জন্য তো পোশাকাদি খুলে নগ্ন হওয়া লাগে না।
উল্লেখ্য যে, বাইবেলে মদ নিষিদ্ধ নয়, তবে নিন্দিত। হারোণ ও তাঁর সন্তানদের জন্য সমাগম-তাম্বু, জমায়েত-তাম্বু বা মিলন-তাম্বুতে (tabernacle) প্রবেশের সময় মদপান করা চিরস্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ (লেবীয় ১০/৮-৯)। শামাউন বা শিমশোনের মাতাকে ফেরেশতারা গর্ভকালীন সময়ে মদপান করতে নিষেধ করেন; যেন মায়ের পান করা মদের অশুচিতা তার গর্ভস্থ সন্তানকে স্পর্শ না করে। (বিচারকতৃগণ ১৩/৪-১৪) যিশাইয় মদপানকারীর নিন্দা করেছেন এবং উল্লেখ করেছেন যে, নবী ও ইমামরা মদ পানের কারণে বিভ্রান্ত ও ধর্মচ্যুত হয়েছেন। (যিশাইয় ৫/১১, ২২, ২৮/৭)।
হিতোপদেশ বা মেসাল (Proverbs) পুস্তকে ২৩ অধ্যায়ে ‘wine’ বা মদের নিন্দায় অনেক কথা বলা হয়েছে। এ অধ্যায়ের কিছু কথা নিম্নরূপ: ‘‘কে হায় হায় করে? কে বিলাপ করে? কে ঝগড়া করে? কে বকবক করে? কে অকারণে আঘাত পায়? কার চোখ লাল হয়? যারা অনেকক্ষণ ধরে মদ (wine) খায় তাদেরই এই রকম হয়; তারা মিশানো মদ (mixed wine) খেয়ে দেখবার জন্য তার খোঁজে যায়। মদের (wine) দিকে তাকায়ো না যদিও তা লাল রংয়ের, যদিও তা পেয়ালায় চক্মক্ করে, যদিও তা সহজে গলায় নেমে যায়; শেষে তা সাপের মত কামড়ায়, আর বিষাক্ত সাপের মত কামড় দেয়....।’’ (হিতোপদেশ/ মেসাল ২৩/২৯-৩২: মো.-০৬)
প্রশ্ন হল, পবিত্র পুস্তকে যা এরূপ নিন্দিত কীভাবে যীশু ও শিষ্যরা এভাবে তা পান করতেন? তাঁরা কি কিতাবুল মুকাদ্দসের এ সকল নির্দেশ জানতেন না?