কিয়ামতের এ দিন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসারী মুসলিমদের বিশেষভাবে সম্মানিত করবেন। সকল পূর্ববর্তী জাতিগুলোকে দাঁড় করিয়ে রেখে মুসলিম জাতির হিসাব-নিকাশ বিচার ফয়সালা করে দিবেন। যদিও মুসলিম জাতি দুনিয়াতে আভির্ভাবের দিক দিয়ে অন্যান্য জাতিগুলোর পরে এসেছে কিন্তু কিয়ামতের দিন তাদের নিষ্পত্তি আগে করা হবে। এটি উম্মতে এক বিশাল সম্মান ও পুরস্কার।
হাদীসে এসেছে: আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«نَحْنُ الآخِرُونَ السَّابِقُونَ يَوْمَ القِيَامَةِ، بَيْدَ أَنَّهُمْ أُوتُوا الكِتَابَ مِنْ قَبْلِنَا، ثُمَّ هَذَا يَوْمُهُمُ الَّذِي فُرِضَ عَلَيْهِمْ، فَاخْتَلَفُوا فِيهِ، فَهَدَانَا اللَّهُ، فَالنَّاسُ لَنَا فِيهِ تَبَعٌ اليَهُودُ غَدًا، وَالنَّصَارَى بَعْدَ غَدٍ»
“আমরা শেষে এসেছি কিন্তু কিয়ামতের দিন সকলের আগে থাকবো। যদিও অন্য সকল জাতিগুলো (ইয়াহূদী ও খৃষ্টান) কে গ্রন্থ দেওয়া হয়েছে আমাদের পূর্বে, আমাদের গ্রন্থ দেওয়া হয়েছে তাদের পরে। অতঃপর জেনে রাখো এই (জুমু‘আর) দিনটি আল্লাহ আমাদের দান করেছেন। তিনি এ ব্যাপারে আমাদের সঠিক পথে দিশা দিয়েছেন। আর অন্য লোকেরা এ ব্যাপারে আমাদের পিছনে আছে। ইয়াহূদীরা জুমার পরের দিন (শনিবার) উদযাপন করে আর খৃষ্টানেরা তার পরের দিন (রবিবার) উদযাপন করে”। [1]
এ হাদীসটি থেকে আমরা যা শিখতে পারলাম:
এক. মুসলিম জাতির মর্যাদা। ইয়াহূদী ও খৃষ্টানদের চেয়ে মুসলমানদের মর্যাদা আল্লাহর কাছে অনেক বেশি। ইসলামের বর্তমানে ইয়াহূদী খৃষ্টানেরা তো কাফির বা অবিশ্বাসী। তাদের চেয়ে মুসলিম উম্মাহ শ্রেষ্ঠ এতে কোনো সন্দেহ নেই। আর ইসলামপূর্ব যুগের ইয়াহূদী খৃষ্টানেরা যারা কাফির ছিল না, তাদের চেয়েও মুসলিম উম্মাহ শ্রেষ্ঠ। এটি এ হাদীস দিয়েও প্রমাণিত হলো।
দুই. জুমার দিনের ফযীলত জানা গেল। মুলত হাদীসটি জুমার দিনে ফযীলত সম্পর্কিত। উদ্দেশ্য হলো সাপ্তাহিক প্রার্থনার দিন নির্বাচনে ইয়াহূদী ও খৃষ্টানেরা যেমন আমাদের পিছনে পড়ে গেছে তেমনি কিয়ামত দিবসেও তারা আমাদের পিছনে থাকবে। ইয়াহূদীরা শুক্রবারের পরের দিন সাপ্তাহিক প্রার্থনা করে থাকে। আর খৃষ্টানের শুক্রবারের দু’দিন পর সাপ্তাহিক প্রার্থনা পালন করে থাকে।
আবু হুরায়রা ও হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে আরেকটি বর্ণনায় এসেছে: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«نَحْنُ الْآخِرُونَ مِنْ أَهْلِ الدُّنْيَا، وَالْأَوَّلُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، الْمَقْضِيُّ لَهُمْ قَبْلَ الْخَلَائِقِ».
“পৃথিবীতে বসবাসকারী জাতিগুলোর মধ্যে আমাদের আগমন সর্বশেষে আর কিয়ামতের দিনে আমাদের ফয়সালা করা হবে সকল সৃষ্টি জীবের পূর্বে”।[2]
হাদীসে আরো এসেছে: ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«نَحْنُ آخِرُ الْأُمَمِ، وَأَوَّلُ مَنْ يُحَاسَبُ، يُقَالُ: أَيْنَ الْأُمَّةُ الْأُمِّيَّةُ، وَنَبِيُّهَا؟ فَنَحْنُ الْآخِرُونَ الْأَوَّلُونَ »
“আমরা হলাম জাতিসমূহের সর্বশেষ। কিন্তু কেয়ামতে আমাদের হিসাব সর্ব প্রথম করা হবে। তখন বলা হবে: উম্মী (আসল) জাতি ও তাদের নবী কোথায়? তাই আমরা সর্বশেষ অথচ (মর্যাদায়) প্রথম”।[3]
[2] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮৫৬।
[3] ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৪২৯০, আলবানী রহ. সহীহ আল জামে গ্রন্থে হাদীসটিকে সহীহ বলে উল্লেখ করেছেন।