প্রধানত: দুই শ্রেণীর লোকের জানাযা পড়া ফরজ নয়, তবে ফরজ না হলেও তাদের জানাযা পড়া সুন্নাত। তারা হলো
১. অপ্রাপ্ত বয়স্ক অর্থাৎ নাবালেগ সন্তান। (আবু দাউদ: ৩১৮৭) আর মাতৃগর্ভে যদি চার মাস পুরা হওয়ার আগেই গর্ভপাত হয়ে যায় তাহলে তার জানাযা নেই। কেননা, ৪ মাসের আগে এ ভ্রূণের মধ্যে রূহ আসে না। আর এই বয়স এর বেশি হলে জানাযা পড়া যাবে অর্থাৎ তার জানাযা পড়া সুন্নাত। মৃত প্রসব হয়েছে এমন শিশুরও জানাযা পড়া জায়েয।
২. জিহাদের ময়দানে নিহত শহীদ: উহুদ যুদ্ধে নিহত শহীদ রাসূলের (সা.) চাচা হামযাহ (রা.)-এর জানাযা তিনি নিজেই পড়েছেন নয় তাকবীরে।(তাহাওয়ী- ১/২৯০) আরো যেসব প্রকার লোকের জানাযা দেওয়া ফরয না হলেও তাদের জানাযা পড়া জায়েয আছে, তারা হলো
(ক) যে লোককে অপরাধের কারণে শরী'আতের আইনের মাধ্যমে হত্যা করা হয়েছে: যেমন, মানুষ খুন করা বা জেনা-ব্যাভিচারের অপরাধে শাস্তি বিধান কার্যকরে যাকে করা হয়েছে। (মুসলিম: ৩২০৯)
(খ) কবীরা গুনাহে জড়িত মৃত ব্যক্তি যেমন সুদখোর, মদখোর, ঘুষখোর, জেনাকারী, বেনামাযী, যাকাত অনাদায়ী ও পাপী বান্দাদেরও জানাযা পড়া জায়েয আছে।(আহমাদ: ২১৫১৩)
(গ) আত্মহত্যাকারী: তবে রাসূল (সা.) নিজে আত্মহত্যাকারীর জানাযা পড়েননি। (আবু দাউদ: ৩১৮৫) তাই এসব লোকের জানাযা আলেম যা ইমামগণ না পড়ে শুধু সাধারণ লোকেরা পড়বে।
(ঘ) ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি: প্রথমদিকে ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির জানাযাও রাসূলুল্লাহ (সা.) পড়েননি, কিন্তু পরবর্তীতে পড়েছেন। তবে ঋণ পরিশোধের পরে ইমাম-আলেম সবাই মাইয়্যেতের জানাযা পড়তে পারে।
(ঙ) যারা জানাযা পায়নি: তারা দাফনের পর কবরকে সামনে রেখে জামাআতে বা একাকী জানাযা পড়তে পারবে। অথবা যার দাফন হয়েছে জানাযা ছাড়া তার জানাযাও দাফনের পর পড়া যাবে। যে ব্যক্তি একবার জানাযা পড়েছে সে লোক একই ব্যক্তির দ্বিতীয় জানাযায় আর ইমামতি করতে পারবে না।
(চ) গায়েবানা জানাযা- ১. মারা যাওয়ার জায়গায় জানাযা না হলে, ২. সেখানে জানাযা পড়ার মতো লোক না থাকলে বা ৩. ঐখানে যেতে না পারলে অথবা ৪. লাশ পাওয়া না গেলে সেক্ষেত্রে গায়েবানা জানাযা পড়া যাবে।রাসূলুল্লাহ (সা.) হাবাশার (বর্তমান ইথিওপিয়ার) তৎকালীন বাদশাহ নাজ্জাসীর গায়েবানা জানাযা পড়েছিলেন সাহাবীদেরকে নিয়ে। (বুখারী: ১২৪৫, ১৩১৮) কিন্তু এক জায়গায় জানাযা হয়েছে, দূরের লোকেরা সেই ব্যক্তির আবার গায়েবানা জানাযা পড়া অনেক আলেম জায়েয মনে করেন না।
(ছ) জারজ সন্তান: জেনার কারণে কোন সন্তান হলে এটাকে জারজ সন্তান বলে। মৃত এ জারজ সন্তানেরও জানাযার সালাত আদায় করা যাবে।(দেখুন ফতহুল বারী: ১৩৫৮ নং হাদীসের ব্যাখ্যা)। তবে কাফের ও মুনাফিকদের জানাযা পড়া, তাদের জন্য দু'আ করা, ক্ষমা চাওয়া হারাম। সরাসরি কুরআনে এর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।(সূরা ৯; তাওবাহ ৮৪)