গর্ভবতী নারী সন্তান প্রসবের পূর্বে, প্রসবের সময় বা পরে, যা ইচ্ছে তাই দো‘আ করতে পারে। এ সময়ের জন্য নির্দিষ্ট কোনো দো‘আ নেই। আবার এ সময় দো‘আ কবুল হয় এমন ওয়াদাও নেই। তবে সন্তান প্রসব কঠিন বা ঝুঁকিপূর্ণ বিধায় প্রসব বেদনা-কাতর নারী নিরুপায় ও মুসিবতগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত, সে হিসেবে বলা যায় এটা তার দো‘আ কবুল হওয়ার মুহূর্ত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿أَمَّن يُجِيبُ ٱلۡمُضۡطَرَّ إِذَا دَعَاهُ وَيَكۡشِفُ ٱلسُّوٓءَ ﴾ [النمل: ٦٢]
“বরং (আল্লাহ) তিনি, যিনি নিরুপায়ের ডাকে সাড়া দেন এবং বিপদ দূরীভূত করেন।” [সুরা আন-নামল, আয়াত: ৬২]
উল্লেখ্য, কুরআনের আয়াত বা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস দ্বারা প্রসবকালীন নির্দিষ্ট কোনো দো‘আ বা আমল প্রমাণিত নেই। এ ক্ষেত্রে সাধারণ দো‘আই যথেষ্ট। যেমন, যাকারিয়া আলাইহিস সালাম সন্তানের জন্য দো‘আ করেছিলেন,
﴿رَبِّ لَا تَذَرۡنِي فَرۡدٗا وَأَنتَ خَيۡرُ ٱلۡوَٰرِثِينَ فَٱسۡتَجَبۡنَا لَهُۥ وَوَهَبۡنَا لَهُۥ يَحۡيَىٰ وَأَصۡلَحۡنَا لَهُۥ زَوۡجَهُۥٓۚ﴾ [الانبياء: ٨٩، ٩٠]
“হে আমার রব! আমাকে একা রেখো না, তুমি তো শ্রেষ্ঠ মালিকানার অধিকারী। অতঃপর আমরা তার আহ্বানে সাড়া দিয়েছিলাম এবং তাকে দান করেছিলাম ইয়াহইয়া। আর তার জন্য তার স্ত্রীকে উপযোগী করেছিলাম। [সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত: ৮৯-৯০]
মারইয়াম আলাইহাস সালামের প্রসব প্রসঙ্গ উল্লেখ করে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿فَأَجَآءَهَا ٱلۡمَخَاضُ إِلَىٰ جِذۡعِ ٱلنَّخۡلَةِ قَالَتۡ يَٰلَيۡتَنِي مِتُّ قَبۡلَ هَٰذَا وَكُنتُ نَسۡيٗا مَّنسِيّٗا ٢٣ فَنَادَىٰهَا مِن تَحۡتِهَآ أَلَّا تَحۡزَنِي قَدۡ جَعَلَ رَبُّكِ تَحۡتَكِ سَرِيّٗا ٢٤ وَهُزِّيٓ إِلَيۡكِ بِجِذۡعِ ٱلنَّخۡلَةِ تُسَٰقِطۡ عَلَيۡكِ رُطَبٗا جَنِيّٗا ٢٥ فَكُلِي وَٱشۡرَبِي وَقَرِّي عَيۡنٗاۖ﴾ [مريم: ٢٣، ٢٦]
“অতঃপর প্রসব-বেদনা তাকে খেজুর গাছের কাণ্ডের কাছে নিয়ে এলো। সে বলল, হায়! এর আগেই যদি আমি মরে যেতাম এবং সম্পূর্ণরূপে বিস্মৃত হতাম। তখন তার নিচ থেকে সে তাকে ডেকে বলল যে, তুমি চিন্তা করো না। তোমার রব তোমার নিচে একটি ঝর্ণা সৃষ্টি করেছেন। আর তুমি খেজুর গাছের কাণ্ড ধরে তোমার দিকে নাড়া দাও, তাহলে তা তোমার উপর তাজা-পাকা খেজুর ফেলবে। অতঃপর তুমি খাও, পান কর এবং চোখ জুড়াও”। [সূরা মারইয়াম, আয়াত: ২৩-২৬]
এ থেকে অনেকে বলেছেন, প্রসবের পূর্বে তাজা-পাকা খেজুর খাওয়া, পানীয় দ্রব্য পান করা ও আগত সন্তানের কথা স্মরণ করে শান্ত, শঙ্কামুক্ত ও প্রসন্ন থাকা, অন্তরে কোনো ধরনের ভয়-ভীতি বা পেরেশানী স্থান না দেওয়া সহজে প্রসব হওয়ার ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা রাখে।
সুস্থ ও সুন্দরভাবে বাচ্চা প্রসব হলে মা নিজেকে ধন্য মনে করেন। নতুন জীবন নিয়ে কলিজার টুকরা দুনিয়ার আলো-বাতাস দেখছে ভেবে খুব আনন্দিত হন। ভূমিষ্ঠ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মা অতি আদরে তার বাচ্চাকে কাছে টেনে নেন এবং নিজ বুকের সাথে জড়িয়ে ধরেন। এটাই স্বাভাবিক, হাসপাতালের নার্স কিংবা দাত্রীদের তাই করা উচিত। তারা সর্ব প্রথম মার হাতে তার সন্তান তুলে দেবেন। অনেকে বলেন, এ সময় মার বুকের স্পর্শ সন্তানের ওপর বিরাট প্রভাব ফেলে এবং পরবর্তীতে মা-সন্তানের সম্পর্কে বিরাট ভূমিকা রাখে। এর ফলে বাচ্চা সুন্দরভাবে বেড়ে উঠতে সক্ষম হয়, উভয়ের মাঝে মধুর ঘনিষ্টতা সৃষ্টি হয়। অন্যথায় মা-সন্তানের মাঝে সম্পর্কের টানাপোড়েন কিংবা ভিন্ন তিক্তার জন্ম হতে পারে।
﴿رَبَّنَا هَبۡ لَنَا مِنۡ أَزۡوَٰجِنَا وَذُرِّيَّٰتِنَا قُرَّةَ أَعۡيُنٖ وَٱجۡعَلۡنَا لِلۡمُتَّقِينَ إِمَامًا﴾ [الفرقان: ٧٣]
“হে আমাদের রব, আপনি আমাদেরকে এমন স্ত্রী ও সন্তানাদি দান করুন, যারা আমাদের চক্ষু শীতল করবে। আর আপনি আমাদেরকে মুত্তাকিদের নেতা বানিয়ে দিন।” [সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ৭৪]
﴿رَبِّ ٱجۡعَلۡنِي مُقِيمَ ٱلصَّلَوٰةِ وَمِن ذُرِّيَّتِيۚ رَبَّنَا وَتَقَبَّلۡ دُعَآءِ ٤٠﴾ [ابراهيم: ٤٠]
“হে আমাদের রব, আমাকে সালাত কায়েমকারী বানান এবং আমার বংশধরদের মধ্য থেকেও, হে আমাদের রব, আমার দো‘আ কবুল করুন।” [সুরা ইবরাহীম, আয়াত: ৪০]