রাজ‘আ (الرجعة) বা পুনর্জন্মের আকিদা:

শাইখ আব্বাস আল-কুমী তার ‘মুন্তাহাল আমাল’ (منتهى الأمال) নামক গ্রন্থের মধ্যে ফারসি ভাষায় উল্লেখ করেন, যার অনুবাদ হল:

“আস-সাদিক আ. বলেন: যে ব্যক্তি আমাদের পুনর্জন্মে বিশ্বাস করে না এবং মুত‘আ বিয়ের বৈধতাকে স্বীকৃতি দেয় না, সে ব্যক্তি আমাদের দলভুক্ত নয়।”[1]

আল্লামা মুহাম্মদ বাকের আল-মজলিসী ফারসি ভাষায় বলেন, যার অনুবাদ হল:

“ইবনু বাবুইয়া ‘এলালুশ শারায়ে‘ (علل الشرائع) নামক গ্রন্থে বর্ণনা করেন, ইমাম মুহাম্মদ বাকের আ. বলেন: যখন ইমাম মাহাদী আত্মপ্রকাশ করবে, তখন তিনি অতিসত্বর আয়েশাকে জীবিত করবেন এবং তার উপর শাস্তির বিধান (হদ) কায়েম করবেন।”[2]

মকবুল আহমদ আশ-শি‘য়ী তার ‘তরজুমাতুল কুরআন’-এর মধ্যে উর্দু ভাষায় বর্ণনা করেন, যার অনুবাদ হল:

“ইমাম মুহাম্মদ বাকের আ. থেকে তাফসীরুল কুমী ও তাফসীরুল ‘আয়াশী’র মধ্যে বর্ণিত আছে যে, এই আয়াতের মধ্যে "الأخرة" দ্বারা উদ্দেশ্য হল, الرجعة বা পুনর্জন্ম। আর الرجعة বা পুনর্জন্ম মানে- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও ইমামগণ কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার পূর্বে বিশেষ করে মুমিন ও কাফিরদের মধ্য থেকে ব্যক্তিবিশেষ দুনিয়ায় ফিরিয়ে আনবেন যাতে ভাল ও ঈমানকে সমুন্নত করা যায় এবং কুফর এবং পাপকে ধ্বংস করে দেয়া যায়।”[3]

মোল্লা মুহাম্মদ বাকের আল-মজলিসী ‘হক্কুল ইয়াকীন’ (حق اليقين) নামক গ্রন্থে ফারসি ভাষায় দীর্ঘ আলোচনা পেশ করেন, যার সারকথা হল: যখন মাহাদী আ. (কিয়ামতের অল্প কিছুদিন পূর্বে) আত্মপ্রকাশ করবেন, তখন অতি শীঘ্রই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবরের দেয়াল ভেঙ্গে যাবে এবং তিনি আবূ বকর ও ওমরকে তাদের কবর থেকে বের করে নিয়ে আসবেন; অতঃপর তাদেরকে জীবিত করবেন এবং তাদেরকে ক্রুশবিদ্ধ করে হত্যা করবেন (না‘উযুবিল্লাহ)।

অতঃপর তিনি মাহদী’র ব্যাপারে ফারসি ভাষায় আরও উল্লেখ করেন, যার অনুবাদ হল: অতঃপর তিনি মানবজাতিকে একত্রিত হওয়ার নির্দেশ দিবেন; তারপর বিশ্ব জগতের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যত যুলুম (নির্যাতন) ও কুফরী প্রকাশ পেয়েছে, ঐসব যুলুম ও কুফরীর সকল পাপ তাদের (অর্থাৎ আবূ বকর ও ওমরের) আমলনামায় লিখা হবে। যে কোন যুগেই মুহাম্মদের বংশধরের মধ্যে যে রক্তপাত হয়েছে, বরং অন্যায়ভাবে যত রক্তপাত হয়েছে, যত অবৈধ মিলন হয়েছে, যত সুদী মাল অথবা যত অবৈধ সম্পদ খাওয়া হয়েছে এবং মাহাদী আগমনের পূর্ব পর্যন্ত যত পাপ ও অন্যায়-অত্যাচার সংঘটিত হয়েছে, নিশ্চিভাবে ঐসব কিছুই অচিরেই তাদের আমলনামায় হিসাব (গণনা) করা হবে।[4]

আল্লামা মুহাম্মদ বাকের আল-মজলিসী তার পরে আরও বর্ণনা করেন:

“নুমানী ইমাম মুহাম্মদ বাকের আ. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: যখন ইমাম মাহদী আত্মপ্রকাশ করবে, তখন যে ব্যক্তি তার নিকট সর্বপ্রথম বায়‘আত (আনুগত্যের শপথ) গ্রহণ করবে, তিনি হলেন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (না‘উযুবিল্লাহ); অতঃপর আলী আ. এবং আল্লাহ তা‘আলা তাকে ফেরেশতাদের দ্বারা সাহায্য করবেন। আর শাইখ আল-তুসী ও নুমানী ইমাম রেজা আ. থেকে বর্ণনা করেন যে, মাহদীর আগমনের অন্যতম নিদর্শন হল সে উলঙ্গ অবস্থায় সূর্যের সামনে আত্মপ্রকাশ করবে এবং আহ্বান করে বলবে এই হলেন আমীরুল মুমিনীন (মৃত্যুর পর) পুনরায় ফিরে এসেছেন যালিমদেরকে ধ্বংস করার জন্য।”[5]

আর এটা হল শিয়াদের বড় বড় মিথ্যাসমূহের মধ্যে অন্যতম, যা ইসলাম ও ইসলামী জীবন বিধান যার উপর প্রতিষ্ঠিত তার পরিপন্থী। আর সকল আসমানী ধর্ম এই ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ যে, নিশ্চয় সকল মানুষ এই দুনিয়ায় আমল করবে, অতঃপর মৃত্যুবরণ করবে, অতঃপর কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলার সামনে সমবেত হবে এবং সেখানে আল্লাহ তাদের সকল কৃতকর্মের হিসাব নেবেন। কিন্তু শিয়াগণ পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা অপবাদের মাধ্যমে মাহদীকে সৃষ্টির হিসাব গ্রহণকারীর আসনে সমাসীন করেছে।

এই বর্ণনাসমূহ বাতিল ও অসার হওয়া সত্ত্বেও এর কারণে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাইয়্যেদুনা আলী ইবন আবি তালিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর চরম অসম্মান হয়; কারণ, তারা উভয়জনকে ঐ মাহদীর নিকট বায়‘আত গ্রহণকারী হিসেবে আখ্যায়িত করে, যিনি অচিরেই তাদের সন্তান হিসেবে আগমন করবেন। অতঃপর মাহদীর আত্মপ্রকাশ উলঙ্গ ও একেবারে কাপড় বিহীন হওয়া (তাও তার শানে চরম অপমানকর কথা)। তাছাড়া সম্মানিত শায়খাইন আবূ বকর ও ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমার তারা যে জঘন্য শত্রুতা ও বিদ্বেষ প্রকাশ করেছে, তা সমালোচনা ও পর্যালোচনার প্রয়োজন হয় না। কারণ, তা কুরআন ও সুন্নাহ থেকে উদ্ধৃত দলিল এবং যুক্তিভিত্তিক দলিলের পরিপন্থী। কেননা, কিভাবে সুস্থ বিবেক মেনে নেবে যে, ব্যক্তি তার পূর্ববর্তীদের পাপের বোঝা বহন করবে। সুতরাং সে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী নয়; বরং বক্ষস্থিত হৃদয় প্রতিবন্ধী।

>
[1] শাইখ আব্বাস আল-কুমী, মুন্তাহাল আমাল (منتهى الأمال), ২য় খণ্ড, পৃ. ৩৪১

[2] আল্লামা মুহাম্মদ বাকের আল-মজলিসী, হক্কুল ইয়াকীন (حق اليقين), পৃ. ৩৪৭

[3] তরজুমাতু মকবুল আহমদ (ترجمة مقبول أحمد), পৃ. ৫৩৫

[4] মোল্লা মুহাম্মদ বাকের আল-মজলিসী, হক্কুল ইয়াকীন (حق اليقين), পৃ. ৩৬০

[5] মোল্লা মুহাম্মদ বাকের আল-মজলিসী, হক্কুল ইয়াকীন (حق اليقين), পৃ. ৩৪৭