মুহাম্মদ ইবন ইয়াকুব আল-কুলাইনী তার ‘উসুলুল কাফী’ গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখ করেছেন:
আবূ আবদিল্লাহ আ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আলী আ. যা কিছু নিয়ে এসেছেন, তা তিনি গ্রহণ করব এবং যা থেকে নিষেধ করেছেন, তা থেকে তিনি বিরত থাকব। তিনি (আলী) মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মত মর্যাদাসম্পন্ন। আর মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মর্যাদা আল্লাহর সকল সৃষ্টির উপর স্বীকৃত। কেউ আলীর কথার উপর কথা বলা যেন আল্লাহ ও তার রাসূলের উপর কথা বলা। আর আলীর কোন কথার বিরুদ্ধাচারণ করা আল্লাহর সাথে শির্ক করার পর্যায়ে। ...... অনুরূপভাবে এ বিধান বহাল থাকবে ক্রমান্বয়ে আগত হেদায়াতের ইমামদের বেলায়ও[1]; আল্লাহ তাদেরকে যমিনের খুঁটি বানিয়েছেন, যাতে যমিন তার অধিবাসীদের নিয়ে স্থিতিশীল থাকতে পারে এবং যমিনের উপরে ও নীচে যারা আছেন, তাদের জন্য তাঁর পরিপূর্ণ দলিল বানিয়েছেন। আর আমীরুল মুমিনীন আ. বেশি বেশি বলতেন: জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যে আমি আল্লাহর বণ্টনকারী; আমি সত্য-মিথ্যার বড় পার্থক্যকারী; আমি লাঠি ও লৌহযন্ত্রের অধিকারী। আর আমাকে স্বীকৃতি দিয়েছে সকল ফেরেশতা, জিবরাঈল এবং রাসূলগণ, যেমনিভাবে তারা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে স্বীকৃতি দিয়েছেন। আর আমি তার (দায়িত্বের) বোঝার মতই বোঝা বহন করেছি; আর সেই বোঝাটি হল রব তথা প্রতিপালকের বোঝা।[2]
কুলাইনী আরও উল্লেখ করেন, ইমাম জাফর সাদিক বলেন: আমরা আল্লাহর জ্ঞানভাণ্ডার; আমরা আল্লাহর আদেশের ব্যাখ্যা; আমরা নিষ্পাপ জাতি। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের আনুগত্য করতে নির্দেশ দিয়েছেন এবং আমাদের বিরুদ্ধাচরণ করতে নিষেধ করেছেন। আমরা আসমানের নীচে এবং যমিনের উপরে আল্লাহর পরিপূর্ণ দলিল।[3]
কুলাইনী আরও উল্লেখ করেন যে, আমি আবূ আবদিল্লাহ আ.-কে বলতে শুনেছি: ইমামগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সমান মর্যাদা সম্পন্ন; কিন্তু তারা নবী নন। আর তাদের জন্য বেশী নারী বিয়ে করা বৈধ নয়, যেমনিভাবে নবীর জন্য বৈধ ছিল। সুতরাং এটা ছাড়া তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সমান মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব।[4]
কুলাইনী "باب ما نص الله عز و جل و رسوله على الأئمة عليهم السلام واحدا فواحدا" (এক এক করে ইমাম আ.-দের ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূলের বক্তব্যের অধ্যায়)-এ উল্লেখ করেন: আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
﴿ ٱلنَّبِيُّ أَوۡلَىٰ بِٱلۡمُؤۡمِنِينَ مِنۡ أَنفُسِهِمۡۖ وَأَزۡوَٰجُهُۥٓ أُمَّهَٰتُهُمۡۗ وَأُوْلُواْ ٱلۡأَرۡحَامِ بَعۡضُهُمۡ أَوۡلَىٰ بِبَعۡضٖ فِي كِتَٰبِ ٱللَّهِ مِنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ وَٱلۡمُهَٰجِرِينَ﴾ [سورةالأحزاب:6]
“নবী মুমিনদের নিকট তাদের নিজেদের অপেক্ষা ঘনিষ্ঠতর এবং তার স্ত্রীগণ তাদের মাতা। আল্লাহর বিধান অনুসারে মুমিন ও মুহাজির অপেক্ষা— যারা আত্মীয় তারা পরস্পরের নিকটতর।” — (সূরা আল-আহযাব: ৬); —প্রসঙ্গে আবূ জাফর আ. থেকে বর্ণিত যে, জিজ্ঞাসা করা হল, কাদের ব্যাপারে এই আয়াত নাযিল হয়েছে? তখন তিনি বললেন: এই আয়াত নাযিল হয়েছে আমীর বা ইমামদের ব্যাপারে; এই আয়াতটি হোসাইন আ.-এর পরে তার সন্তানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। সুতরাং আমরা ইমামত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর পরিবার-পরিজনের ব্যাপারে মুমিন, মুহাজির ও আনসারদের চেয়ে ঘনিষ্ঠতর। আমি বললাম, এর মধ্যে জাফরের সন্তানদের[5] কোন অংশ আছে কি?[6] তিনি বললেন: না; অতঃপর আমি বললাম: এর মধ্যে আব্বাসের সন্তানদের কোন অংশ আছে কি? তিনি বললেন: না; অতঃপর আমি বনী আবদুল মুত্তালিবের মধ্যকার একজন একজন করে তার নিকট জিজ্ঞাসা করলাম, এর মধ্যে তাদের কোন অংশ আছে কিনা? তিনি প্রত্যেকের ব্যাপারে না বললেন। আর আমি হাসান আ.-এর সন্তানের কথা ভুলে গেছি; অতঃপর তার নিকট আবার হাজির হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম: হাসানের সন্তানের জন্য এর মধ্যে কোন অংশ আছে কি? তিনি বললেন: না[7], আল্লাহর শপথ করে বলছি হে আবদুর রহীম! এর মধ্যে আমরা ব্যতীত কোন মুহাম্মদী’র জন্য কোন অংশ নেই।[8]
[2] উসুলুল কাফী (أصول الكافي), হুজ্জত অধ্যায়, পৃ. ১১৭
[3] উসুলুল কাফী (أصول الكافي), পৃ. ১৬৫
[4] উসুলুল কাফী (أصول الكافي)
[5] উদ্দেশ্য, আপনাদের মত জা‘ফর তাইয়ার ও তার বংশধরদের জন্য কোন বৈশিষ্ট্য আছে কি ? কারণ জা‘ফর তো আলী রা. এর ভাই আর তার সন্তানরাও আলী রা. এরই ভ্রাতুষ্পুত্র।
[6] অর্থাৎ তারা কি ইমাম হওয়ার যোগ্য? তাদের বংশধরদের কেউ কি ইমাম হওয়ার দাবী করতে পারে?
[7] হাসানের বংশধরদের কেউ শিয়াদের নিকট ইমাম নয়। এর কোনো যৌক্তিক ব্যাখ্যা তারা দিতে পারবে না। তবে সম্ভবত এটা এজন্যে যে, হাসান পারস্য রাজকুমারী বিয়ে করেন নি, যেমনটি হুসাইন করেছিলেন !!!। [সম্পাদক]
[8] উসুলুল কাফী (أصول الكافي), পৃ. ১৭৭