বিভিন্ন মুসলিম রাষ্ট্রগুলিতে - যেমন, সিরিয়া, ইরাক, মিসর প্রভৃতি দেশে যে সব দুর্গা আমরা দেখতে পাই তা ইসলামী শিক্ষা ও নির্দেশের পরিপন্থী। যেহেতু নবী (সা.) ঐক্ত কবরের উপর ইমারত নির্মাণ করতে নিষেধ করেছেন। সহীহ হাদীসে বর্ণিত, “রসূল (সা.) কবর চুনকাম করা, তার উপর বসা এবং তার উপর ইমারত নির্মাণ করা হতে নিষেধ করেছেন।” (মুসলিম)
যে কোন প্রকার রং দ্বারা রঞ্জিত করা চুনকামের পর্যায়ভুক্ত।। তিরমিযীর এক সহীহ বর্ণনায় আরো বলা হয়েছে যে, “এবং কবরের উপর (কুরআনের আয়াত, কবিতা ইত্যাদি) লিখা হতেও তিনি নিষেধ করেছেন।”
১। এই মাযারসমূহের বেশীর ভাগই ঝুটা ও অলীক। সুতরাং হুসাইন বিন আলী ৬ ইরাকে শহীদ হন। তিনি (বা তার শবদেহ) মিসর পৌঁছেননি। অতএব মিসরে তাঁর কবর সত্য নয়। আর একথার বড় দলীল এই যে, ইরাক, মিসর ও সিরিয়ায় তার কবর বর্তমান! এবং দ্বিতীয় দলীল এই যে, সাহাবাগণ। মসজিদে কোন মৃত সমাধিস্থ করতেন না। কারণ রসূল (সা.) বলেন,“আল্লাহ
ইয়াহুদকে ধ্বংস করুন, তারা তাদের আম্বিয়াগণের কবর সমুহকে মসজিদরূপে গ্রহণ করেছে।” (বুখারী ও মুসলিম)
আর এর পশ্চাতে হিকমত ও যুক্তি এই যে, এতে মসজিদসমূহ শির্ক হতে মুক্ত থাকবে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَأَنَّ الْمَسَاجِدَ لِلَّهِ فَلَا تَدْعُوا مَعَ اللَّهِ أَحَدًا
অর্থাৎ, মসজিদসমূহ আল্লাহর জন্য। সুতরাং তোমরা আল্লাহর সহিত অন্য কাউকেও আহবান করো না। (সূরা জিন ১৮ আয়াত)
প্রমাণসিদ্ধ যে, রসূল (সা.) তার স্বগৃহে সমাধিস্থ হয়েছেন, মসজিদে তাকে দাফন করা হয়নি। কিন্তু উমাবীরা যখন মসজিদ প্রশস্ত করেন তখন কবরকে মসজিদে শামিল করে নেন। হায়! যদি তারা একাজ না করতেন!
হুসাইন (রাঃ)-এর কবর বর্তমানে মসজিদের ভিতরে। কিছু লোক তার তওয়াফ করে এবং তার নিকট তাদের প্রয়োজন ভিক্ষা করে; যা আল্লাহ ব্যতীত আর কারো নিকট চাওয়া যায় না। যেমন, রোগ নিরাময়, সঙ্কট দূরীকরণ প্রভৃতি। আমাদের দ্বীন আমাদেরকে এসব কিছু কেবল আল্লাহরই নিকট যাজ্ঞা করতে এবং শুধু কা’বারই তওয়াফ করতে আদেশ করে। আল্লাহ তাআলা বলেন, (وَلْيَطَّوَّفُوا بِالْبَيْتِ الْعَتِيقِ) অর্থাৎ, এবং তারা যেন প্রাচীন গৃহের তওয়াফ করে। (সূরা হজ ২৯ আয়াত)
২। মিসর ও দামেস্কে সাইয়েদা যয়নাব বিনতে আলীর দর্গা সত্য নয়। কারণ তাঁর মুত্যু না মিসরে হয়েছে না সিরিয়ায়। এর দলীল এই যে, উভয় স্থানেই তার দর্গা বিদ্যমান রয়েছে!!
৩। কবরের উপর গম্বুজ বা কুব্বা নির্মাণে এবং সত্যি হলেও মসজিদের ভিতর কবর দেওয়ায় ইসলাম স্বীকৃতি জানায় না। যেমন ইরাকে হুসাইনের, বাগদাদে আব্দুল কাদের জীলানীর, মিসরের শাফেয়ীর কবর রয়েছে, যাতে ইসলামের অনুমতি নেই। যেহেতু এ বিষয়ে সাধারণ নিষেধাজ্ঞা এসেছে - যেমন পুর্বেই উল্লেখিত হয়েছে।
এক সত্যবাদী আমাকে বর্ণনা করেন যে, তিনি এক ব্যক্তিকে কেবলার পরিবর্তে জীলানীর কবরের প্রতি সম্মুখ করে নামায পড়তে দেখলে তাঁকে নসীহত করেন। কিন্তু লোকটি তা উপেক্ষা করে তাকে বলে, তুমি ওয়াহাবী!’ যেন সে রসূল (সা.)-এর এই বাণী শুনেনি, “তোমরা কবরের উপর উপবেশন করো না এবং তার প্রতি সম্মুখ করে নামায পড়ো না।” (মুসলিম)
৪। মিসরের অধিকাংশ দর্গাসমূহকে ফাতেমিয়্যাহ[১] নামক সরকার নির্মাণ করেছে। ইবনে কাসীর তাঁর গ্রন্থ আল-বিদায়াহ অন নিহায়াহ’ ১১খন্ডের ৩৪৬ পৃষ্ঠায় তাদের প্রসঙ্গে বলেন, “(ফাতেমী শাসকগোষ্ঠী) কাফের, ফাসেক, পাপাচার, ধর্মধ্বজী, ধর্মদ্রোহী, আল্লাহর সিফাত (গুণাবলী) অস্বীকারকারী ও ইসলাম অস্বীকারকারী মজুসী ধর্ম-বিশ্বাসী ছিল।”
ঐ কাফেরদল তখন শঙ্কিত হল যখন দেখল যে, সমস্ত মসজিদ নামাযীতে পরিপূর্ণ হচ্ছে অথচ তারা নিজেরা নামায পড়ে না, হজ্জ করে না এবং মুসলিমদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে। তাই তারা মানুষকে মসজিদ হতে বিমুখ করার জন্য ফন্দী আঁটল। নির্মাণ করল বহু গম্বুজ, দুর্গা এবং মিথ্যা মাযার; ধারণা করল যে, ঐ সবে হুসাইন বিন আলী এবং যয়নাব বিনতে আলী আছেন। দুর্গার দিকে মানুষকে আকর্ষণের উদ্দেশ্যে সেখানে বিভিন্ন অনুষ্ঠান (উরস, মেলা প্রভৃতি) উদ্যাপন আরম্ভ করল। এবং নিজেদের প্রতি মানুষকে আকৃষ্ট করার উদ্দেশ্যে গুপ্ত থেকে নিজেদের নাম ‘ফাতেমী’ রাখল। অতঃপর মুসলিমরা তাদের নিকট হতে ঐ সমস্ত বিদআত গ্রহণ করল, যা তাদেরকে শির্কে নিপতিত করল এবং ঐ সবের পশ্চাতে প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে লাগল। অথচ তাদের দ্বীন ও সম্ভ্রমের প্রতিরক্ষার জন্য অস্ত্র-শস্ত্র ক্রয় করতে ঐ অর্থ তাদের একান্ত প্রয়োজনীয় ছিল।।
৫। মুসলিমরা যে অর্থ দৰ্গা, মাযার, আস্তানা প্রভৃতি নির্মাণের উদ্দেশ্যে খরচ করে থাকে তা মৃত (সমাধিস্থ) ব্যক্তির কোন উপকার সাধন করে না। অথচ ঐ অর্থ যদি তারা দরিদ্রদেরকে দান করত, তাহলে জীবিত ও মৃত সকলেই উপকৃত হত। পরন্তু বিদিত যে, কবরের উপর ইমারত নির্মাণকে ইসলাম হারাম ঘোষণা করেছে; যেমন পুর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে।
মহানবী (সা.) আলী (রাঃ)-কে সম্বোধন করে বলেছিলেন, “কোনও মুর্তি না ভেঙ্গে এবং কোন উচু কবর (ভূমি) বরাবর না করে ছেড়ো না।” (মুসলিম) (অর্থাৎ কোন সুউচ্চ কবর না ভেঙ্গে এবং ভূমি বরাবর সমান না করে ছেড়ো।) অবশ্য চেনার জন্য কবরকে বিঘত পরিমাণ উঁচু করতে ইসলাম অনুমতি দিয়েছে।।
৬। যে সমস্ত ন্যর-নিয়ায মৃতদের নামে পেশ করা হয় তা শির্কে আকবর। দর্গার খাদিমরা তা ভক্ষণ করে। হয়তো বা পাপাচারে ও প্রবৃত্তি পূজাতেও তা ব্যয় করে থাকে। যাতে ন্যর পেশকারী ও দাতা ঐ খাদিমের পাপের ভাগী হয়।
পক্ষান্তরে যদি সে ঐ অর্থ সকার নামে গরীবদেরকে দান করে, তাহলে মৃত ও জীবিত সকলেই উপকৃত হয় এবং সদকাদাতারও প্রয়োজন পূর্ণ হয়।
হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে সত্যকে সত্যরূপে দেখাও এবং তার অনুসরণ করার প্রেরণা দাও ও তার প্রতি আমাদের মাঝে প্রেম সৃষ্টি কর। আর বাতিলকে বাতিলরূপে দেখাও এবং তা বর্জন করার প্রেরণা দাও ও তার প্রতি আমাদের মাঝে ঘৃণা সৃষ্টি কর।