জান্নাতের হকদার সেই মুমিনগণ, যারা কোনদিন কোন কিছুকে আল্লাহর সাথে শরীক করেনি। অর্থাৎ, শির্ক করেনি। অথবা শির্ক করার পর তওবা না করে শির্ক নিয়ে মারা যায়নি।
পক্ষান্তরে যারা শির্ক করে, শির্ক নিয়ে মারা যায়, কুফরী করে, ঈমানের কোন বিষয়কে অস্বীকার বা মিথ্যাজ্ঞান করে, তাদের জন্য জান্নাত হারাম। কুরআন-কারীমে যেখানেই জান্নাতের হকদারদের কথা বলা হয়েছে, সেখানেই কারণ স্বরূপ ঈমান ও নেক আমলকে উল্লেখ করা হয়েছে। কোথাও কোথাও সেই নেক আমলের বিস্তারিত বিবরণও এসেছে। তার কিছু নিম্নরূপঃ
وَبَشِّرِ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ أَنَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ ۖ كُلَّمَا رُزِقُوا مِنْهَا مِن ثَمَرَةٍ رِّزْقًا ۙ قَالُوا هَٰذَا الَّذِي رُزِقْنَا مِن قَبْلُ ۖ وَأُتُوا بِهِ مُتَشَابِهًا ۖ وَلَهُمْ فِيهَا أَزْوَاجٌ مُّطَهَّرَةٌ ۖ وَهُمْ فِيهَا خَالِدُونَ
অর্থাৎ, যারা বিশ্বাস করে ও সৎকর্ম করে তাদের শুভ সংবাদ দাও যে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত, যখনই তাদের ফলমূল খেতে দেয়া হবে, তখনই তারা বলবে, আমাদের (পৃথিবীতে অথবা জান্নাতে) পূর্বে জীবিকারূপে যা দেওয়া হত, এ তো তাই। তাদেরকে পরস্পর একই সদৃশ ফল দান করা হবে এবং সেখানে তাদের জন্য পবিত্র সহধর্মিণীগণ রয়েছে, অধিকন্তু তারা সেখানে চিরস্থায়ী হবে (বাক্বারাহঃ ২৫)
وَالَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ سَنُدْخِلُهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا لَهُمْ فِيهَا أَزْوَاجٌ مُطَهَّرَةٌ وَنُدْخِلُهُمْ ظِلًّا ظَلِيلًا
অর্থাৎ, যারা বিশ্বাস করে ও ভাল কাজ করে তাদেরকে বেহেশ্তে প্রবেশ করাব; যার পাদদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত, সেখানে তারা চিরকাল থাকবে, সেখানে তাদের জন্য পবিত্র সঙ্গিনী আছে এবং তাদেরকে চিরস্নিগ্ধ ঘন ছায়ায় স্থান দান করব। (নিসাঃ ৫৭)
وَالَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ سَنُدْخِلُهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا وَعْدَ اللَّهِ حَقًّا وَمَنْ أَصْدَقُ مِنَ اللَّهِ قِيلًا
অর্থাৎ, যারা বিশ্বাস করে ও সৎকাজ করে, তাদেরকে বেহেশ্তে প্রবেশাধিকার দান করব; যার পাদদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত, সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য। আর কে আছে আল্লাহ অপেক্ষা অধিক সত্যবাদী? (নিসাঃ ১২২)
وَالَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ أُولَئِكَ أَصْحَابُ الْجَنَّةِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ
অর্থাৎ, পক্ষান্তরে যারা বিশ্বাস করেছে (মু’মিন হয়েছে) এবং সৎকাজ করেছে, তারাই হবে জান্নাতের অধিবাসী; তারা সেখানে চিরকাল থাকবে। (বাক্বারাঃ ৮২)
إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَأَخْبَتُوا إِلَى رَبِّهِمْ أُولَئِكَ أَصْحَابُ الْجَنَّةِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ
অর্থাৎ, নিশ্চয় যারা বিশ্বাস করেছে এবং সৎকার্যাবলী সম্পন্ন করেছে, আর নিজেদের প্রতিপালকের কাছে বিনত হয়েছে, তারাই হবে জান্নাতবাসী; তাতে তারা অনন্তকাল থাকবে। (হুদঃ ২৩)
وَعَدَ اللَّهُ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا وَمَسَاكِنَ طَيِّبَةً فِي جَنَّاتِ عَدْنٍ وَرِضْوَانٌ مِنَ اللَّهِ أَكْبَرُ ذَلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ
অর্থাৎ, আল্লাহ বিশ্বাসী পুরুষ ও বিশ্বাসী নারীদেরকে এমন উদ্যানসমূহের প্রতিশ্রুতি দিয়ে রেখেছেন, যেগুলোর নিম্নদেশে বইতে থাকবে নদীমালা, সেখানে তারা অনন্তকাল থাকবে। আরও (প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন) চিরস্থায়ী উদ্যানসমূহে (জান্নাতে আদনে) পবিত্র বাসস্থানসমূহের। আর আল্লাহর সন্তুষ্টি হচ্ছে সর্বাপেক্ষা বড় (নিয়ামত)। এটাই হচ্ছে অতি বড় সফলতা। (তাওবাঃ ৭২)
إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ يَهْدِيهِمْ رَبُّهُمْ بِإِيمَانِهِمْ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهِمُ الْأَنْهَارُ فِي جَنَّاتِ النَّعِيمِ
অর্থাৎ, নিশ্চয়ই যারা বিশ্বাস করেছে এবং ভাল কাজ করেছে, তাদের প্রতিপালক তাদের বিশ্বাসের কারণে তাদেরকে পথ প্রদর্শন করবেন, শান্তির উদ্যানসমূহে তাদের (বাসস্থানের) তলদেশ দিয়ে নদীমালা প্রবাহিত থাকবে। (ইউনুসঃ ৯)
إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ إِنَّا لَا نُضِيعُ أَجْرَ مَنْ أَحْسَنَ عَمَلًا ٭ أُولَئِكَ لَهُمْ جَنَّاتُ عَدْنٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهِمُ الْأَنْهَارُ يُحَلَّوْنَ فِيهَا مِنْ أَسَاوِرَ مِنْ ذَهَبٍ وَيَلْبَسُونَ ثِيَابًا خُضْرًا مِنْ سُنْدُسٍ وَإِسْتَبْرَقٍ مُتَّكِئِينَ فِيهَا عَلَى الْأَرَائِكِ نِعْمَ الثَّوَابُ وَحَسُنَتْ مُرْتَفَقًا
অর্থাৎ, যারা বিশ্বাস রাখে ও সৎকর্ম করে, আমি তাদেরকে পুরস্কৃত করি। যে ভালো কর্ম করে, আমি তার কর্মফল নষ্ট করি না। তাদেরই জন্য আছে স্থায়ী জান্নাত; যার নিম্নদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত। সেথায় তাদেরকে স্বর্ণ-কঙ্কণে অলঙ্কৃত করা হবে, তারা পরিধান করবে সূক্ষ্ণ ও স্থূ্ল রেশমের সবুজ বস্ত্র ও সমাসীন হবে সুসজ্জিত আসনে; কত সুন্দর সে পুরস্কার ও কত উত্তম সে আশ্রয়স্থল। (কাহ্ফঃ ৩০-৩১)
وَمَنْ يَأْتِهِ مُؤْمِنًا قَدْ عَمِلَ الصَّالِحَاتِ فَأُولَئِكَ لَهُمُ الدَّرَجَاتُ الْعُلَا * جَنَّاتُ عَدْنٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا وَذَلِكَ جَزَاءُ مَنْ تَزَكَّى
অর্থাৎ, আর যারা তাঁর নিকট বিশ্বাসী হয়ে ও সৎকর্ম করে উপস্থিত হবে, তাদের জন্য আছে সমুচ্চ মর্যাদাসমূহ। স্থায়ী জান্নাত যার নিচে নদীমালা প্রবাহিত; সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। আর এই পুরস্কার তাদেরই যারা পবিত্র। (ত্বাহাঃ ৭৫-৭৬)
বলে রাখা ভাল যে, আমল নেল, কর্ম সৎ বা কাজ ভাল তখন হয় যখন সে কাজে আল্লাহ খুশি হন, তা বিশুদ্ধচিত্তে আল্লাহরই জন্য এবং মুহাম্মাদী তরীকা অনুযায়ী করা হয়। এই তিনটের মধ্যে যে কোন একটি কোন কাজে না পাওয়া গেলে সে কাজ ভাল কাজ নয়।
কখনো জান্নাত যাওয়ার কারণ স্বরূপ বলা হয়েছে, তারা মুসলমান ছিল।
يَا عِبَادِ لَا خَوْفٌ عَلَيْكُمُ الْيَوْمَ وَلَا أَنْتُمْ تَحْزَنُونَ ٭ الَّذِينَ آمَنُوا بِآيَاتِنَا وَكَانُوا مُسْلِمِينَ ٭ ادْخُلُوا الْجَنَّةَ أَنْتُمْ وَأَزْوَاجُكُمْ تُحْبَرُونَ
অর্থাৎ, হে আমার দাসগণ! আজ তোমাদের কোন ভয় নেই এবং তোমরা দুঃখিতও হবে না। যারা আমার আয়াতে বিশ্বাস করেছিলে এবং আত্মসমর্পণকারী (মুসলিম) ছিলে। তোমরা এবং তোমাদের সহধর্মিণীগণ সানন্দে জান্নাতে প্রবেশ কর। (যুখরূফঃ ৬৮-৭০)
কখনো এর কারণ স্বরূপ বলা হয়েছে, তারা আল্লাহ্র ইবাদতে আন্তরিক ছিল অথবা তাঁরা আল্লাহ্র খাঁটি বান্দা ছিল।
إِلَّا عِبَادَ اللَّهِ الْمُخْلَصِينَ ٭ أُولَئِكَ لَهُمْ رِزْقٌ مَعْلُومٌ ٭ فَوَاكِهُ وَهُمْ مُكْرَمُونَ ٭ فِي جَنَّاتِ النَّعِيمِ
অর্থাৎ, তবে যারা আল্লাহর বিশুদ্ধ-চিত্ত দাস, তারা নয়। তাদের জন্য আছে নির্ধারিত রুযী। বহু ফলমূল এবং তারা হবে সম্মানিত, সুখময় বাগানসমূহে। (স্বা-ফফাতঃ ৪০-৪৩)
কখনো জান্নাতের হকদারদের বিভিন্ন ইবাদতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
إِنَّمَا يُؤْمِنُ بِآيَاتِنَا الَّذِينَ إِذَا ذُكِّرُوا بِهَا خَرُّوا سُجَّدًا وَسَبَّحُوا بِحَمْدِ رَبِّهِمْ وَهُمْ لَا يَسْتَكْبِرُونَ ٭ تَتَجَافَى جُنُوبُهُمْ عَنِ الْمَضَاجِعِ يَدْعُونَ رَبَّهُمْ خَوْفًا وَطَمَعًا وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُونَ ٭ فَلَا تَعْلَمُ نَفْسٌ مَا أُخْفِيَ لَهُمْ مِنْ قُرَّةِ أَعْيُنٍ جَزَاءً بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ
অর্থাৎ, কেবল তারাই আমার আয়াতসমূহ বিশ্বাস করে, যাদেরকে ওর দ্বারা উপদেশ দেওয়া হলে তারা সিজদায় লুটিয়ে পড়ে এবং তাদের প্রতিপালকের সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে এবং অহংকার করে না। তারা শয্যা ত্যাগ করে আকাঙ্ক্ষা ও আশংকার সাথে তাদের প্রতিপালককে ডাকে এবং আমি তাদেরকে যে রুযী প্রদান করেছি, তা হতে তারা দান করে। কেউই জানে না তার জন্য তার কৃতকর্মের বিনিময় স্বরূপ নয়ন-প্রীতিকর কি (পুরস্কার) লুকিয়ে রাখা হয়েছে। (সাজদাঃ ১৫-১৭)
কখনো আপদে-বিপদে ও বালা-মসীবতে ধৈর্য ও আল্লাহ্র উপর ভরসা রাখার বিনিময়ে জান্নাত লাভের কথা বলা হয়েছে,
وَالَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَنُبَوِّئَنَّهُمْ مِنَ الْجَنَّةِ غُرَفًا تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا نِعْمَ أَجْرُ الْعَامِلِينَ ٭ الَّذِينَ صَبَرُوا وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ
অর্থাৎ, যারা বিশ্বাস করে ও সৎকাজ করে, আমি অবশ্যই তাদেরকে জান্নাতের সুউচ্চ প্রাসাদসমূহে স্থান দান করব; যার নিচে নদীমালা প্রবাহিত থাকবে, সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। সৎকর্মপরায়ণদের পুরস্কার কত উত্তম! যারা ধৈর্য অবলম্বন করে ও তাদের প্রতিপালকের ওপর নির্ভর করে। (আনকাবুতঃ ৫৮-৫৯)
কখনো ঈমান ও দ্বীনের উপর সুপ্রতিষ্ঠিত ও অটল থাকার বিনিময়ে জান্নাত লাভের কথা বলা হয়েছে।
إِنَّ الَّذِينَ قَالُوا رَبُّنَا اللَّهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوا تَتَنَزَّلُ عَلَيْهِمُ الْمَلَائِكَةُ أَلَّا تَخَافُوا وَلَا تَحْزَنُوا وَأَبْشِرُوا بِالْجَنَّةِ الَّتِي كُنتُمْ تُوعَدُونَ (30) نَحْنُ أَوْلِيَاؤُكُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الْآخِرَةِ ۖ وَلَكُمْ فِيهَا مَا تَشْتَهِي أَنفُسُكُمْ وَلَكُمْ فِيهَا مَا تَدَّعُونَ (31) نُزُلًا مِّنْ غَفُورٍ رَّحِيمٍ (32)
অর্থাৎ, নিশ্চয় যারা বলে, ‘আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ’ তারপর তাতে অবিচলিত থাকে, তাদের নিকট ফিরিশতা অবতীর্ণ হয় (এবং বলে), ‘তোমরা ভয় পেয়ো না, চিন্তিত হয়ো না এবং তোমাদেরকে যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল তার সুসংবাদ নাও। ইহকালে আমরা তোমাদের বন্ধু এবং পরকালেও; সেখানে তোমাদের জন্য সমস্ত কিছু রয়েছে যা তোমাদের মন চায়, যা তোমরা আকাঙ্ক্ষা কর। চরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু আল্লার পক্ষ হতে এ হবে আপ্যায়ন। (হা-মীম সাজদাহঃ ৩০-৩২)।
إِنَّ الَّذِينَ قَالُوا رَبُّنَا اللَّهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوا فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ (13) أُولَٰئِكَ أَصْحَابُ الْجَنَّةِ خَالِدِينَ فِيهَا جَزَاءً بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ (14)
অর্থাৎ, নিশ্চয় যারা বলে, ‘আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ’ অতঃপর এই বিশ্বাসে অবিচলিত থাকে, তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না। তারাই জান্নাতের অধিবাসী; সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। --এটাই তাদের কর্মফল। (আহক্বাফঃ ১৩-১৪)
কখনো বিনীত হওয়ার বিনিময়ে জান্নাত লাভের কথা বলা হয়েছে।
إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَأَخْبَتُوا إِلَى رَبِّهِمْ أُولَئِكَ أَصْحَابُ الْجَنَّةِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ
অর্থাৎ, নিশ্চয় যারা বিশ্বাস করেছে এবং সৎকার্যাবলী সম্পন্ন করেছে, আর নিজেদের প্রতিপালকের কাছে বিনত হয়েছে, তারাই হবে জান্নাতবাসী; তাতে তারা অনন্তকাল থাকবে। (হুদঃ ২৩)
কখনো আল্লাহ-ভীতিকে জান্নাত-লাভের কারণ বলা হয়েছে।
وَلِمَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِ جَنَّتَانِ
অর্থাৎ, আর যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের সামনে উপস্থিত হওয়ার ভয় রাখে, তার জন্য রয়েছে দু’টি (জান্নাতের) বাগান। (রাহমানঃ ৪৬)
অনুরূপভাবে কাফেরদের সাথে অন্তরঙ্গতা না করা এবং নিকটাত্মীয় হলেও তাদের সাথে ভালোবাসা না রাখা জান্নাত যাওয়ার একটি কারণ। (মুজাদালাহঃ ২২)
একই সঙ্গে একাধিক সর্মকে জান্নাত যাওয়ার অসীলা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। (রা’দঃ ১৯-২৪, মু'মিনুনঃ ১-১১, মাআরিজঃ ২২-৩৫)।
হাদীসেও স্পষ্টভাবে কোন কোন কাজের কাজীকে জান্নাতী বলা হয়েছে। অবশ্য প্রত্যেক কাজের সাথে ঈমান হল পূর্বশর্ত। উদাহরণ স্বরূপ যেমনঃ
“হে মানুষ! তোমরা সালাম প্রচার কর, অন্নদান কর, জ্ঞাতি-বন্ধন অক্ষুন্ন রাখ এবং লোকেরা যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন তোমরা নামায পড়। তাহলে তোমরা নির্বিঘ্নে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।” (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, হাকেম, সহীহ তারগীব ৬১০নং)
“জান্নাতী হল তিন প্রকার ব্যক্তি; ন্যায়পরায়ণ দানশীল তওফীকপ্রাপ্ত শাসক, দয়াবান এবং প্রত্যেক আত্মীয় তথা মুসলিমের প্রতি কোমল-হৃদয়। আর (অশ্লীলতা ও যাচ্ঞা) থেকে পবিত্র সন্তানবান ব্যক্তি।” (মুসলিম)
“আল্লাহ সুবহানাহু অতাআলা ঐ দুটি লোককে দেখে হাসেন, যাদের মধ্যে একজন অপরজনকে হত্যা করে এবং দুজনই জান্নাতে প্রবেশ করবে। নিহত ব্যক্তিকে আল্লাহর পথে যুদ্ধ করা অবস্থায় কোন কাফের কর্তৃক) হত্যা করে দেওয়া হল। পরে আল্লাহ তাআলা হত্যাকারী কাফেরকে তওবা করার তাওফীক প্রদান করেন। ফলে সে ইসলাম গ্রহণ করে আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হয়ে যায়।” (বুখারী-মুসলিম)
“তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তোমাদের পাঁচ ওয়াক্তের (ফরয) নামায পড়, তোমাদের রমযান মাসের রোযা রাখ, তোমাদের মালের যাকাত আদায় কর এবং তোমাদের নেতা ও শাসকগোষ্ঠীর আনুগত্য কর (যদি তাদের আদেশ শরীয়ত বিরোধী না হয়), তাহলে তোমরা তোমাদের প্রভুর জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (তিরমিযী)
“একদা এক ব্যক্তি পথে চলছিল। তাকে খুবই পিপাসা লাগল। অতঃপর সে একটি কূপ পেল। সুতরাং সে তাতে নেমে পানি পান করল। অতঃপর বের হয়ে দেখতে পেল যে, (ওখানেই) একটি কুকুর পিপাসার জ্বালায় জিভ বের করে হাঁপাচ্ছে ও কাদা চাটছে। লোকটি (অন্তরে) বলল, পিপাসার তাড়নায় আমি যে পর্যায়ে পৌছেছিলাম, কুকুরটিও সেই পর্যায়ে পৌঁছেছে। অতএব সে কূপে নামল তারপর তার চামড়ার মোজায় পানি ভর্তি করল। অতঃপর সে তা মুখে ধরে উপরে উঠল এবং কুকুরটিকে পানি পান করাল। আল্লাহ তাআলা তার এই আমলকে কবুল করলেন এবং তাকে ক্ষমা করে দিলেন।” সাহাবাগণ বললেন, হে আল্লাহর রসূল (ﷺ)! চতুষ্পদ জন্তুর প্রতি দয়া প্রদর্শনেও কি আমাদের সওয়াব হবে? তিনি বললেন, “প্রত্যেক জীবের প্রতি দয়া প্রদর্শনে নেকী রয়েছে।”
বুখারীর অন্য এক বর্ণনায় আছে, “আল্লাহ তাআলা তার এই আমলকে কবুল করলেন অতঃপর তাকে ক্ষমা করে জান্নাতে প্রবেশ করালেন।”
‘“আমি এক ব্যক্তিকে জান্নাতে ঘোরাফেরা করতে দেখলাম। যে (পৃথিবীতে) রাস্তার মধ্য হতে একটি গাছ কেটে সরিয়ে দিয়েছিল, যেটি মুসলিমদেরকে কষ্ট দিচ্ছিল।” (মুসলিম)।
“যে ব্যক্তি দুই ঠাণ্ডা (অর্থাৎ, ফজর ও আসরের নামায পড়বে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (বুখারী-মুসলিম)।
“চল্লিশটি সৎকর্ম আছে তার মধ্যে উচ্চতম হল, দুধ পানের জন্য (কোন দরিদ্রকে) ছাগল সাময়িকভাবে দান করা। যে কোন আমলকারী এর মধ্য হতে যে কোন একটি সৎকর্মের উপর প্রতিদানের আশা করে ও তার প্রতিশ্রুত পুরস্কারকে সত্য জেনে আমল করবে, তাকে আল্লাহ তার বিনিময়ে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।” (বুখারী)।
“যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কাউকে অংশীদার করবে না, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যক্তি তার সাথে কোন জিনিসকে অংশীদার করবে (এবং তওবা না করে ঐ অবস্থাতেই সে মৃত্যুবরণ করবে) সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।” (মুসলিম)।
“যে ব্যক্তির শেষ কথা 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ হবে (অর্থাৎ এই কলেমা পড়তে পড়তে যার মৃত্যু হবে), সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (আবু দাউদ, হাকেম)।
এক ব্যক্তি নিবেদন করল, “হে আল্লাহর রসূল! আমি এই (সুরা) কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ’ ভালবাসি।” তিনি বললেন, “এর ভালবাসা তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে।” (তিরমিযী, বুখারী বিচ্ছিন্ন সনদে)
একটি লোক নবী (ﷺ)-কে বলল, আমাকে এমন একটি আমল বলুন, যা আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে।' তিনি বললেন, “আল্লাহর বন্দেগী করবে, আর তাঁর সাথে কোন কিছুকে অংশীদার স্থির করবে না। নামায কায়েম করবে, যাকাত দেবে এবং আত্মীয়তার বন্ধন অটুট রাখবে।” (বুখারী, মুসলিম)।
“যে ব্যক্তিকে আল্লাহ তার দুই চোয়ালের মধ্যস্থিত অঙ্গ (জিহ্বা) ও দুপায়ের মাঝখানের অঙ্গ (লজ্জাস্থান)এর ক্ষতি থেকে মুক্ত রাখবেন, সে জান্নাত প্রবেশ করবে।” (তিরমিযী হাসান)।
“আমার প্রত্যেকটি উম্মত বেহেস্তে প্রবেশ করবে, তবে সে নয় যে, (বেহেশ্তে প্রবেশে) অস্বীকার করবে।” বলা হল, অস্বীকার আবার কে করবে হে আল্লাহর রসূল?!” তিনি বললেন, “যে ব্যক্তি আমার অনুসরণ করবে, সে বেহেশ্তে প্রবেশ করবে। আর যে আমার নাফরমানি করবে, সেই আসলে (বেহেশ্তে প্রবেশে) অস্বীকার করবে।” (বুখারী ৭২৮০নং)
একদা এক ব্যক্তি নবী (ﷺ) এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রসুল! আমাকে এমন আমল শিখিয়ে দেন; যা করলে আমি জান্নাত প্রবেশ করতে পারব।” তিনি বললেন, “তুমি আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক (অংশী) করো না; যদিও তোমাকে সে ব্যাপারে শাস্তি দেওয়া হয় এবং পুড়িয়ে মেরে ফেলা হয়। তোমার মাতা-পিতার আনুগত্য কর; যদিও তারা তোমাকে তোমার ধন-সম্পদ এবং সমস্ত কিছু থেকে দূর করতে চায়। আর ইচ্ছাকৃত নামায ত্যাগ করো না; কারণ, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত নামায ত্যাগ করে তার উপর থেকে আল্লাহর দায়িত্ব উঠে যায়।” (ত্বাবরাণীর আউসাত্ব, সহীহ তারগীব ৫৬৬ নং)
“যে ব্যক্তি নিয়মনিষ্ঠভাবে দিরাত্রে বারো রাকআত নামায পড়বে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে; যোহরের (ফরয নামাযের) পুর্বে (এক সালামে) চার রাকআত ও পরে দুই রাকআত, মাগরেবের পর দুই রাকআত, এশার পর দুই রাকআত এবং ফজরের (ফরযের) পূর্বে দুই রাকআত।” (নাসাঈ, এবং শব্দগুলি তারই, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, সহীহ তারগীব ৫৭৭নং)
“মহিলা যখন তার পাঁচ ওয়াক্তের নামায আদায় করে, তার রম্যান মাসের রোযা পালন করে, (অবৈধ যৌনাচার থেকে) তার যৌনাঙ্গকে সংযত রাখে এবং তার স্বামীর কথা ও আদেশমত চলে, তখন তাকে বলা হয়, জান্নাতের যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা তুমি সেই দরজা দিয়েই জান্নাতে প্রবেশ কর।” (ইবনে হিব্বান, সহীহুল জামে’ ৬৬০ নং)