জানাযা দর্পণ মুখবন্ধ আবদুল হামীদ ফাইযী

إن الحمد لله نحمده ونستعينه ، ونعوذ بالله من شرور أنفسنا ومن سيئات أعمالنا من يهده الله فلا مضل له ومن يضلل فلا هادي له ، وأشهد أن لا إله إلا الله وحده لا شريك له وأشهد أن محمدا عبده ورسوله صلى الله عليه وعلى آله وأصحابه وسلم تسليما كثيرا

يَأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلا تَمُوتُنَّ إِلا وَأَنْتُمْ مُسْلِمُونَ

يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ مِنْ نَفْسٍ وَاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالًا كَثِيرًا وَنِسَاءً وَاتَّقُوا اللَّهَ الَّذِي تَسَاءَلُونَ بِهِ وَالْأَرْحَامَ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيبًا

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَقُولُوا قَوْلًا سَدِيدًا يُصْلِحْ لَكُمْ أَعْمَالَكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَمَنْ يُطِعِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ فَازَ فَوْزًا عَظِيمًا

ইসলাম যাদের জীবন, কুরআন ও সুন্নাহর আলো-বাতাসে যাদের প্রাণ সজীব তারা নিশ্চয়ই চায় যে, তাদের ঐ ইহকালের শেষজীবন সমাপ্ত এবং পারলৌকিক মধ্যজগতের শুভজীবন আরম্ভ হোক সেই সৌরভময় আলোবাতাসের মনোরম পরিবেশের মাধ্যমেই। তাইতো সলফগণ তাঁর পরিজনবর্গকে সুন্নাহ ভিত্তিক জানাযাকার্য সমাধা করতে অসিয়ত করতেন। সা’দ বিন আবী অক্কাস (রাঃ) তাঁর মৃত্যুশয্যায় বলেন, 'আমার জন্য বগলী কবর খনন করো এবং কাঁচা ইট থাকিয়ে দিও। যেমন রসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর জন্য করা হয়েছিল।' (মুসলিম ৬০৬ক, নাসাঈ ১৯৮০ক, বাইহাকী) আবু মূসা (রাঃ) তার শেষ শয্যায় বলেন, 'যখন তোমরা আমার জানাযা নিয়ে যাবে তখন শীঘ্রতার সাথে চলো। (আগর কাষ্ঠ জ্বালাবার পাত্র) ধুনুচি নিয়ে। আমার অনুগমন করো না, কবরের ভিতর আমার লাশ ও মাটির মাঝে কোন বস্তুর অন্তরাল রেখো না, আমার কবরের উপর (গৃহাদি) নির্মাণ করো না। আর আমি তোমাদেরকে সাক্ষী রাখছি যে, আমি প্রত্যেক (মসীবত ও শোকের সময়) কেশ মুন্ডনকারিণী, উচ্ছরোলে বিলাপকারিণী এবং বস্ত্র বিদীর্ণকারিণী হতে সম্পর্কহীন। লোকেরা বলল, আপনি এ ব্যাপারে কিছু শুনেছেন কি?' তিনি বললেন, হ্যাঁ, রসূল (ﷺ) এর নিকট শুনেছি।” (মুসনাদে আহমাদ ১৮৭২৬ক, বাইহাকী ৩/৩৯৫)

হুযাইফাহ (রাঃ) বলেন, আমি মারা গেলে কাউকে খবর দিও না। কারণ, আমি আশঙ্কা করছি যে, তা মৃত্যু সংবাদ ঘোষণার পর্যায়ভুক্ত হবে। আর আমি রসূল (ﷺ)-কে মৃত্যু সংবাদ ঘোষণা নিষেধ করতে শুনেছি। (তিরমিযী ৯০৭ক, ইবনে মাজাহ ১৪৬৫ক, আহমাদ ২২৩৫৮, সহীহ তিরমিযী ৭৮৬নং)

আমর বিন আল-আস (রাঃ) তার অসিয়তে বলেন, 'আমি মারা গেলে যেন আমার জানাযার সাথে কোন মাতমকারিণী এবং কোন প্রকারের আগুন না থাকে।' (মুসলিম, আহমাদ)

আবু হুরাইরা (রাঃ) তার অন্তিম বিদায়ের সময় বলেন, 'আমার কবরের উপর যেন তাবু স্থাপন করো না এবং ধুনুচি (বা আগুন) সহ আমার অনুগমন করো।” (মুসনাদে আহমাদ)।

সুতরাং অনুরূপ অসিয়ত তাদের অনুসারীদেরও করা উচিত। যাতে তাদের জানাযার কাজ সহীহ সুন্নাহ ভিত্তিক সম্পন্ন হয় এবং কোন প্রকারের কুসংস্কার ও বিদআত যেন এই কাজে স্থান না পায়।

এই পুস্তিকা লিখে আমি নিজের জন্য এবং সকল মুসলিম ভাইদের জন্য, সকল মুসলিম ভাইদের উদ্দেশ্যে সেই অসিয়ত করারই প্রয়াস পেয়েছি। আর আশা করছি যে, পাঠক মাত্রই এই অসিয়ত পালনে কার্পণ্য ও কুণ্ঠাবোধ করবেন না।

আল হামদুলিল্লাহ! মানুষ এখন বড় সচেতন। ধর্মীয় চেতনা এবং সঠিক ও সত্য জানার একান্ত অনুপ্রেরণা প্রায় সকলের মনে। তাইতো বিনা হাওয়ালার বই-পুস্তক পড়তে ও মানতে চান না। কিন্তু ফেঁসে যান সেখানেই, যেখানে গলদ, অচল, দুর্বল প্রভৃতি হাওয়ালা মানতে বাধ্য হন। কারণ এসব চেনার ক্ষমতা সকলের নেই। সুতরাং ব্যক্তিত্বের উপর বিশ্বাস ও ভরসা রাখতেই হচ্ছে।

আরব জাহানের সত্যানুসন্ধিৎসা সকলের মনে। গবেষণা কেন্দ্রও সেখানে আধুনিক পদ্ধতিতে দ্বীনী রিসার্চ বহু সত্যের সন্ধান দেয়, বহু রহস্য উদঘাটন করে এবং সংস্কারের নামে বহু কুসংস্কারের পর্দা উম্মোচন করে। দুটি পরস্পর-বিরোধী হাদীসের কোনটি মান্য, পরস্পর-বিরোধী ইমাম ও উলামাদের কোন কথাটি বলিষ্ঠ, যুক্তিযুক্ত ও আমলযোগ্য ইত্যাদি বিষয়ে সঠিক অভিমত প্রদান করে। যেহেতু ইসলামী শরীয়তে বিশেষ করে আহকামে বহু মতানৈক্য সেই সাহাবা দের যামানা থেকেই চলে আসছে। এর মধ্যে কোনটি রহিত, কোনটি নির্দিষ্ট বা বিশিষ্ট, কোটি রূপক, কোন্ হাদীসটি জাল বা দুর্বল, একজন দুর্বল ও অপরজন সবল বললে ন্যায় ও যুক্তির মানদন্ডে কার কথাটি বলিষ্ঠ ইত্যাদি বিবেচনা করে নতুন নতুন গ্রন্থাদি প্রণয়ন করা হচ্ছে। যা ঘাড় পেতে মেনে নিতে সাধারণ মুসলমানদের আর কোন দ্বিধা থাকতে পারে না। এবং যশ ও পদ-লোভ ছাড়া আর কোন বাধা থাকতে পারে না। সত্যের উত্তাপ পাওয়ার পরও আর কারো অন্ধানুকরণে ‘ফ্রোজেন’ থাকা সাজে না।

এই সংস্কারকে আমরা সাদর স্বাগত জানাই এবং মনে করি যে, এই সংস্কার সাধনেই রয়েছে মুক্তি, অনৈক্য ও বিচ্ছিন্নতা থেকে মুক্তি। আল্লাহর গযব ও আযাব থেকে মুক্তি।

আমাদের জ্ঞান সীমিত হলেও জেনে পৌছে দেওয়ার দায়িত্বভার মস্তক উপরে। যা হাল্কা করা অনিবার্য কর্তব্য। তাই তো আমাদের এই পদক্ষেপ। বহু কিছু নতুন লাগলেও তা না জানার কারণে নতুন, অনেক কিছু অবান্তর লাগলেও সেটাই নতুন গবেষণায় সত্য ও বাস্তব।

এ কথা মেনে নেওয়ার জন্যই উদারচিত্ত ও উন্মুক্ত মনের সুধীজনদের নিকট আমাদের পুনঃপুনঃ আবেদন। তাই ছোট-খাট বিতর্কিত বিষয়ে ইজতিহাদী (বুঝার ফের নিয়ে) বিতর্ক থেকে গেলেও তা মুক্ত মনে গ্রহণ করা অথবা তাকে বিরাট আকার দান করে সে প্রসঙ্গে মূল্যবান সময় ব্যয় না করাই সকলের কর্তব্য। অত্র পুস্তিকা সেই সত্যানুসন্ধানী মনীষীদের মেহনতেরই সুপক্ক ফল, যা আমি তাদের পুস্তক বাগিচা হতে চয়ন করে আমার এই পুস্তিকা ডালিতে সংগ্রহ করেছি। এতে যে সমস্ত হাদীসের হাওয়ালা দেওয়া হয়েছে তার সবগুলিই সহীহ। যয়ীফ হলে তা ইঙ্গিত করা হয়েছে। তাঁদের হাদীসলব্ধ জ্ঞান ও মতামতের স্থানে তাদের পুস্তকের হাওয়ালা দেওয়া হয়েছে। প্রায় সকল স্থানেই হাওয়ালায় খন্ড-পৃষ্ঠা ও হাদীস-নং ব্যবহার করা হয়েছে। অবশ্য শুরুর দিকে অধিকাংশ হাদীসের হাওয়ালায় কম্পিউটারে ব্যবহৃত নম্বরের অর্থে (ক) ব্যবহার করা হয়েছে। সময়ের অভাবেই এই আধুনিক যন্ত্রের সাহায্য নেওয়া হয়েছে।

অত্র পুস্তিকা দ্বারা জরাজীর্ণ সমাজে মৃত্যু ও জানাযা বিষয়ক কর্মাকর্মে নব জাগরণ ও সংস্কার এলে শ্রম সার্থক হবে। আল্লাহর নিকট আশা রাখি যে, তিনি যেন এই পুস্তিকার উদ্যোক্তা (শ্রদ্ধেয় ভাই মাষ্টার সিরাজুল হক সাহেব), প্রকাশক এবং আমার মেহনতকে কিয়ামতে নেকীর পাল্লায় রাখেন এবং এর। দ্বারা মুসলিম সমাজকে সম্যক উপকৃত করেন।

বিনীত - আব্দুল হামীদ ফাইযী
আল-মাজমাআহ
সউদী আরব
৭/৯/১৯৯৬