জুবাইর বিন মুতইম রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ
«جَاءَ أَعْرَابِيٌّ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ نُهِكَتِ الأَنْفُسُ وَجَاعَ الْعِيَالُ وَهَلَكَتِ الأَمْوَالُ فَاسْتَسْقِ لَنَا رَبَّكَ ، فَإِنَّا نَسْتَشْفِعُ بِاللَّهِ عَلَيْكَ وَبِكَ عَلَى اللَّهِ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سُبْحَانَ اللَّهِ ، سُبْحَانَ اللَّهِ فَمَا زَالَ يُسَبِّحُ حَتَّى عُرِفَ ذَلِكَ فِي وُجُوهِ أَصْحَابِهِ ، ثُمَّ قَالَ : وَيْحَكَ أَتَدْرِي مَا اللَّهُ ، إِنَّ شأْنَهُ أَعْظَمُ مِنْ ذَلِكَ ، إِنَّهُ لا يُسْتَشْفَعُ بِهِ عَلَى أَحَدٍ»
‘‘এক গ্রাম্য লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর নিকট এসে বললঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! লোকেরা দুর্বল ও ক্লান্ত হয়ে গেছে, শিশু-পরিবার ক্ষুধার্ত হয়েছে, সম্পদ ধ্বংস প্রাপ্ত হয়েছে। অতএব আপনার রবের কাছে বৃষ্টির প্রার্থনা করুন। আমরা আপনার কাছে আল্লাহর সুপারিশ করছি, আর আল্লাহর কাছে আপনার সুপারিশ পেশ করছি। এ কথা শুনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বার বার বলতে লাগলেনঃ সুবহানাল্লাহ্! সুবহানাল্লাহ্! এভাবে তিনি আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করতেই থাকলেন। তাঁর সাহাবায়ে কেরামের চেহারায় রাগের প্রভাব দেখা গেল। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ তোমার ধ্বংস হোক, আল্লাহর মর্যাদা কত বড়, তা কি তুমি জানো? তুমি যা মনে করছো আল্লাহর মর্যাদা এর চেয়ে অনেক বেশী। কোনো সৃষ্টির কাছেই আল্লাহর সুপারিশ পেশ করা যায়না। ইমাম আবু দাউদ এই হাদীছ বর্ণনা করেছেন।[1]
ব্যাখ্যাঃ জুবাইর বিন মুতইম থেকে শাইখ যে শব্দে হাদীছটি বর্ণনা করেছেন, আবু দাউদের বর্ণনা এর চেয়ে আরো অধিক পরিপূর্ণ এবং তাতে আরো অধিক শব্দ রয়েছে। আবু দাউদের শব্দগুলো ঠিক এ রকমঃ জুবাইর বিন মুতইম রাযিয়াল্লাহু আনহু তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন যে,
«جَاء أَعْرَابِىٌّ إِلَى النَّبِّي صلى الله عليه وسلم فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ جُهِدَتِ الأَنْفُسُ وَضَاعَتِ الْعِيَالُ وَنُهِكَتِ الأَمْوَالُ وَهَلَكَتِ الأَنْعَامُ فَاسْتَسْقِ اللَّهَ لَنَا فَإِنَّا نَسْتَشْفِعُ بِكَ عَلَى اللَّهِ وَنَسْتَشْفِعُ بِاللَّهِ عَلَيْكَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم «وَيْحَكَ أَتَدْرِى مَا تَقُولُ» وَسَبَّحَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَمَا زَالَ يُسَبِّحُ حَتَّى عُرِفَ ذَلِكَ فِى وُجُوهِ أَصْحَابِهِ ثُمَّ قَالَ « وَيْحَكَ إِنَّهُ لاَ يُسْتَشْفَعُ بِاللَّهِ عَلَى أَحَدٍ مِنْ خَلْقِهِ شَأْنُ اللَّهِ أَعْظَمُ مِنْ ذَلِكَ وَيْحَكَ أَتَدْرِى مَا اللَّهُ إِنَّ عَرْشَهُ عَلَى سَمَوَاتِهِ لَهَكَذَا» وَقَالَ بِأَصَابِعِهِ مِثْلَ الْقُبَّةِ «وَإِنَّهُ لَيَئِطُّ بِهِ أَطِيطَ الرَّحْلِ بِالرَّاكِبِ» قَالَ ابْنُ بَشَّارٍ فِى حَدِيثِهِ «إِنَّ اللَّهَ فَوْقَ عَرْشِهِ وَعَرْشُهُ فَوْقَ سَمَوَاتِهِ»
‘‘এক গ্রাম্যলোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর নিকট এসে বললঃ ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! লোকেরা দুর্বল ও ক্লান্ত হয়ে গেছে, শিশুরা মারা যাচ্ছে, সম্পদ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে এবং চতুষ্পদ জন্তুগুলো মারা যাচ্ছে। অতএব আপনি আল্লাহর কাছে আমাদের জন্য বৃষ্টির প্রার্থনা করুন। আমরা আল্লাহর কাছে আপনাকে সুপারিশকারী বানাচ্ছি আর আপনার কাছে আল্লাহর সুপারিশ পেশ করছি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেনঃ অকল্যাণ হোক তোমার! তুমি কি জানো কী বলছো? তিনি সুবহানাল্লাহ্ বললেন এবং বার বার সুবহানাল্লাহ্ বলতেই থাকলেন। এমনকি তাঁর সাহাবায়ে কেরামের চেহারায় রাগের প্রভাব দেখা গেল। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ তোমার ধ্বংস হোক, কোনো সৃষ্টির কাছেই আল্লাহর সুপারিশ পেশ করা যায় না। আল্লাহর মর্যাদা এর অনেক উর্ধ্বে। আফসোস তোমার জন্য! আল্লাহ কত বড়, তা কি তুমি জানো? আল্লাহর আরশ আসমান সমূহের উপর এই রকম। এই বলে তিনি হাতের আঙ্গুলসমূহকে তাঁবুর মত বানিয়ে দেখালেন। আরোহী এবং আরোহীদের মালপত্রের ভারে যানবাহন যেমন (কড়কড়) আওয়াজ করতে থাকে, আল্লাহ্ তাআলার ভারে আরশও সেরকম আওয়াজ করতে থাকে।
হাদীছের অন্যতম বর্ণনাকারী ইবনে ইয়াসার বলেনঃ আল্লাহ আরশের উপরে। আর আরশ আসমান সমূহের উপরে’’।
وَيْحَكَ ধ্বংস হোক তোমারঃ এটি এমন বাক্য, যা দ্বারা ধমক দেয়া উদ্দেশ্য হয়।
أَتَدْرِى مَا اللَّهُ তুমি কি জানো আল্লাহ কত বড়ঃ এখানে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, ঐ গ্রাম্যলোকটি আল্লাহর বড়ত্ব এবং মর্যাদা সম্পর্কে অবগত ছিলনা।
إِنَّهُ لاَ يُسْتَشْفَعُ بِاللَّهِ عَلَى أَحَدٍ مِنْ خَلْقِهِকোনো সৃষ্টির কাছেই আল্লাহর সুপারিশ পেশ করা যায়নাঃ কেননা আল্লাহর হাতেই রয়েছে সকল বিষয়। সৃষ্টির হাতে কোন কিছুই নেই। আল্লাহ যা দান করেন, কেউ তা প্রতিহত করতে পারেনা। আল্লাহ যা প্রতিহত করেন, কেউ তা দিতে পারেনা। আল্লাহ তাআলা সকলের উপরে এবং তিনি সকল দোষ-ত্রুটি হতে মুক্ত।
এই হাদীছে জাহমীয়াদের প্রতিবাদ করা হয়েছে এবং সেই সাথে আল্লাহ তাআলার জন্য সিফাতে উলু অর্থাৎ তিনি যে সকল মাখলুকের উপরে তা সাব্যস্ত করা হয়েছে।
ইমাম আবু দাউদ (রঃ) এই হাদীছ বর্ণনা করেছেন এবং তাঁর তরীকা অনুযায়ী হাদীছটিকে সহীহ কিংবা হাসানের মর্যাদা দিয়ে চুপ থেকেছেন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর জীবদ্দশায় তাকে সুপারিশকারী বানানোর অর্থ এই যে, সাহাবীগণ তাঁর কাছে আল্লাহর নিকট দুআ করার আবেদন জানাতেন এবং তিনি তাদের জন্য দুআ করতেন। তাঁর দুআ কবুল করা হতো। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর তাঁকে সুপারিশকারী বানানো জায়েয নেই। শাফাআত অধ্যায়ে এবং তার পূর্বেও বিষয়টির বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
আল্লাহ্ তাআলা কুরআনের অনেক আয়াতেই আল্লাহ ছাড়া অন্যকে সুপারিশকারী হিসাবে গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন এবং যে ব্যক্তি আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যের কাছে শাফাআত চাইবে, তার সেই শাফাআতকে তিনি অস্বীকার করেছেন। এ অধ্যায় থেকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জানা যায়
১) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঐ ব্যক্তির প্রতি বিরক্তি প্রকাশ করেছেন, যে বলেছিল আমরা আপনার কাছে আল্লাহর সুপারিশ পেশ করছি।
২) তার ঐ কথাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এত ক্রোধান্বিত হয়েছিলেন, যার প্রভাব সাহাবীদের চেহারাতেও প্রকাশিত হয়েছিল।
৩) তবে লোকটি যখন এই কথা বলেছিল, فإنا نستشفع بك على الله ‘‘আমরা আল্লাহর কাছে আপনার সুপারিশ কামনা করছি’’, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার কথার প্রতিবাদ করেন নি। কেননা এর অর্থ হচ্ছে আপনি আমাদের জন্য আল্লাহর কাছে দুআ করুন।
৪) এখানে ‘সুবহানাল্লাহ’এর ব্যখ্যার প্রতিও সতর্ক করা হয়েছে। অর্থাৎ অশোভনীয় এবং আশ্চর্যজনক কিছু শুনে ও দেখে এই বাক্য পাঠ করা উচিত।
৫) মুসলিমগণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর মাধ্যমে আল্লাহর নিকট বৃষ্টির জন্য দুআ করাতেন।