উত্তরঃ কুরআন যে একটি চিরন্তন মু’জিযা তার দলীল এই যে, তা দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে নাযিল হচ্ছিল এবং মানব জাতির ইতিহাসে শ্রেষ্ট সাহিত্যিক, যুক্তি-তর্কে পারদর্শী, সর্বশ্রেষ্ট অলঙ্কার শাস্ত্রবিদ এবং উচ্চাঙ্গের ভাষণ প্রদানে পারদর্শীদেরকে চ্যালেঞ্জ করে আসছিল। আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
فَلْيَأْتُوا بِحَدِيثٍ مِثْلِهِ إِنْ كَانُوا صَادِقِينَ
‘‘যদি তারা সত্যবাদী হয়ে থাকে, তবে তারা কুরআনের মত একটি বাণী তৈরী করে নিয়ে আসুক’’। (সূরা তুরঃ ৩৪) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
أَمْ يَقُولُونَ افْتَرَاهُ قُلْ فَأْتُوا بِعَشْرِ سُوَرٍ مِثْلِهِ مُفْتَرَيَاتٍ وَادْعُوا مَنْ اسْتَطَعْتُمْ مِنْ دُونِ اللَّهِ إِنْ كُنتُمْ صَادِقِينَ
‘‘তারা কি বলেঃ ওটা (কুরআন) সে এই নিজেই তৈরী করেছে? আপনি চ্যালেঞ্জ করে দিন যে, তাহলে কুরআনের ন্যায় দশটি সূরা তৈরী করে আন এবং আল্লাহ্ ছাড়া যাকে ইচ্ছা ডেকে নাও। যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক’’। (সূরা হুদঃ ১৩) আল্লাহ তাআ’লা আরও বলেনঃ
أَمْ يَقُولُونَ افْتَرَاهُ قُلْ فَأْتُوا بِسُورَةٍ مِثْلِهِ وَادْعُوا مَنْ اسْتَطَعْتُمْ مِنْ دُونِ اللَّهِ إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِين
‘‘তারা কি এরূপ বলে যে, ওটা (কুরআন) সে এই নিজেই তৈরী করেছে? আপনি বলে দিন যে, তোমরা এর অনুরূপ সূরার একটি সূরা তৈরী করে আন এবং আল্লাহ ছাড়া যাকে ইচ্ছা ডেকে নাও। যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক’’। (সূরা ইউনুসঃ ৩৮) তারা কুরআনের মত একটি আয়াতও রচনা করে আনতে পারে নি। আনতে চেষ্টাও করে নি। অথচ কুরআনের মুকাবিলা করার জন্য সম্ভাব্য সকল প্রকার প্রচেষ্টাই চালিয়েছে। কুরআনের অক্ষরসমূহ ও শব্দসমূহ তাদের ঐ ভাষার অন্তর্ভূক্ত ছিল যার মাধ্যমে তারা পরস্পর কথা বলত, যাতে পরস্পর প্রতিযোগিতা করত এবং পরস্পর গর্ব করত। শুধু তাই নয়, কুরআন বলিষ্ঠ ভাষায় তাদের অপরাগতার কথা ঘোষণাও করেছে এবং নিজের মু’জিযা প্রকাশ করেছে। আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ
قُلْ لَئِنِ اجْتَمَعَتِ الْإِنْسُ وَالْجِنُّ عَلَى أَنْ يَأْتُوا بِمِثْلِ هَذَا الْقُرْآنِ لاَ يَأْتُونَ بِمِثْلِهِ وَلَوْ كَانَ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ ظَهِيرًا
‘‘হে নবী আপনি ঘোষণা করে দিনঃ যদি মানব ও জিন এই কুরআনের অনুরূপ রচনা করে আনয়নের জন্য জড়ো হয় এবং তারা পরস্পরের সাহায্যকারী হয়; তবুও তারা কখনও এর অনুরূপ রচনা করে আনতে পারবে না’’। (সূরা বনী ইসরাঈলঃ ৮৮) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
(مَا مِنَ الأَنْبِيَاءِ مِنْ نَبِيٍّ إِلاَّ قَدْ أُعْطِيَ مِنَ الآيَاتِ مَا مِثْلُهُ آمَنَ عَلَيْهِ الْبَشَرُ وَإِنَّمَا كَانَ الَّذِي أُوتِيتُ وَحْيًا أَوْحَى اللَّهُ إِلَيَّ فَأَرْجُو أَنْ أَكُونَ أَكْثَرَهُمْ تَابِعًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ)
‘‘যত নবী এসেছেন তাদের প্রত্যেককেই এমন কিছু নিদর্শন দেয়া হয়েছে, যাতে মানুষেরা ঈমান আনয়ন করেছে। আর আমাকে যে মু’জিযা দেয়া হয়েছে তা হচেছ কুরআন, যা অহীর মাধ্যমে আল্লাহ্ আমার নিকট প্রেরণ করেছেন। আমার আশা কিয়ামতের দিন আমার অনুসারীর সংখ্যা হবে সবচেয়ে বেশী’’।[1]
আলেমগণ ঈজাযুল কুরআন তথা কুরআননের মুজেযার বিভিন্ন দিক নিয়ে গ্রন্থ রচনা করেছেন। কুরআনের মু’জিযার দিকগুলো হচ্ছেঃ
(১) কুরআনের শব্দগুচ্ছ ঠিক সেভাবেই সাজানো, যেভাবে হারের মধ্যে মণি-মুক্তা সাজানো হয়। এমন সুন্দর শব্দের সমাহার পৃথিবীর কোন গ্রন্থের মধ্যে পাওয়া যাবে না।
(২) অর্থের দিক থেকেও কুরআন একটি চিরন্তন মু’জিযা। কুরআনের অর্থের মধ্যে কোন প্রকার বিরোধ ও দ্বন্দ্ব নেই। যা মানব রচিত গ্রন্থের মধ্যে পাওয়া যায়। কুরআনের তথ্য সম্পূর্ণ নির্ভুল। মানব রচিত কোন গ্রন্থই ভুলের উর্ধে নয়।
(৩) অতীতের খবরাদি বর্ণনার ক্ষেত্রেও কুরআনের তথ্য সম্পূর্ণ নির্ভুল। যা কোন মানুষের দ্বারা রচনা করা সম্ভব নয়। (৪) কুরআন ভবিষ্যতের যেসমস্ত সংবাদ পরিবেশন করেছে তার অধিকাংশই হুবহু বাস্তবায়িত হয়েছে। যেটুকু বাস্তবে পরিণত হয়নি, তা অদূর ভবিষ্যতে অবশ্যই বাস্তবায়িত হবে। তবে একটি চড়ুই যেমন বিশাল সমুদ্র থেকে তার ঠোঁট দিয়ে কেবল সামান্য পানি উঠাতে করতে পারে, আলেমগণ কুরআনের মুজেযা থেকে ঠিক সে পরিমাণই বর্ণনা করতে পেরেছে।