যিকর দুই প্রকার;
১। আল্লাহ তাআলার সুন্দরতম নামাবলী এবং মহত্তম গুণাবলীর যিকর করা, এসব দ্বারা তার প্রশংসা ও গুণগান করা এবং আল্লাহর জন্য যা উপযুক্ত নয় তা থেকে তাকে পাক ও পবিত্র মনে করা। এই যিকরও আবার দুই প্রকারের ;
ক - আল্লাহর নাম ও গুণাবলী দ্বারা তার প্রশংসা রচনা করা। যেমন “সুবহা-নাল্লা-হ’, ‘আলহামদু লিল্লা-হ’, ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’, ‘আল্লাহু আকবার’ প্রভৃতি।
খ- আল্লাহর নাম ও গুণাবলীর অর্থ ও আহকাম উল্লেখ করা। যেমন বলা যে, আল্লাহ তাআলা বান্দার সমস্ত শব্দ শুনেন, সকল স্পন্দন দেখেন তাঁর নিকট কোন কর্মই গুপ্ত থাকে না, বান্দার মাতা-পিতা অপেক্ষা তিনিই বান্দার উপর অধিক দয়াশীল। তিনি সর্ব বিষয়ে সর্বশক্তিমান--ইত্যাদি।
কিন্তু এ ক্ষেত্রে সতর্কতার বিষয় এই যে, যিকরকারী যেন সেই নাম ও গুণের কথাই উল্লেখ করে, যার দ্বারা আল্লাহ পাক নিজের প্রশংসা করেছেন অথবা তার রসূল যার দ্বারা তাঁর গুণগান করেছেন। এতে যেন কোন প্রকারের হেরফের ও দৃষ্টান্ত বা উপমা বর্ণনা না করা হয় এবং গুণের দলীলকে নিরর্থক বা আল্লাহকে ঐ গুণহীন মনে না করা হয়। যেমন ঐ সকল নাম ও সিফাতের কোন দুর-ব্যাখ্যা করাও বৈধ নয়।
পক্ষান্তরে এই যিকর আবার তিন প্রকারের; হাদ, সানা এবং মাজদ। সন্তোষ ও ভক্তির সাথে আল্লাহর সিফাতে-কামাল উল্লেখ করে প্রশংসা করাকে হামদ’ বলা হয়। গুণের পর আরো গুণগ্রামের উল্লেখ করে প্রশংসা করাকে ‘সানা’ বলা হয়। এবং আল্লাহ তাআলার মাহাত্ম ও শান-শওকত এবং মহিমা ও সার্বভৌমত্বের গুণাবলী দ্বারা প্রশংসা করাকে ‘মাজদ’ বলা হয়। এই তিন প্রকার প্রশংসা সূরা ফাতিহার প্রারম্ভে একত্রিত হয়েছে। অতএব বান্দা যখন নামাযে বলে (الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ) অর্থাৎ, সমস্ত প্রশংসা বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহর নিমিত্তে তখন আল্লাহ বলেন, 'বান্দা আমার প্রশংসা করল। যখন বলে, (الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ) অর্থাৎ যিনি অনন্ত করুণাময়, পরম দয়ালু’ তখন আল্লাহ বলেন, 'বান্দা আমার স্তুতি বর্ণনা করল। আর বান্দা যখন বলে, (مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ) অর্থাৎ বিচার দিনের অধিপতি’ তখন আল্লাহ তাআলা বলেন, বান্দা আমার গৌরব বর্ণনা করল।' (মুঃ ৩৯৫)।
২। আল্লাহর আদেশ, নিষেধ এবং বিভিন্ন অনুশাসনের যিকর (স্মরণ) করা। এটিও দুই রকম;
ক - আল্লাহর বিধান উল্লেখ ও জ্ঞাপন করে তাঁর স্মরণ করা। যেমন বলা যে, আল্লাহ এই করতে আদেশ করেছেন, অমুক করতে নিষেধ করেছেন, তিনি এই কাজে সন্তুষ্ট, ঐ কাজে রাগান্বিত ইত্যাদি।
খ – তার বিধান ও অনুশাসন পালন করে তার যিকর (স্মরণ করা, যেমন, যে কাজ তিনি আদেশ করেছেন সত্বর তা পালন করে তাঁর যিকর করা, যা নিষেধ করেছেন সত্বর তা বর্জন করে তার স্মরণ করা। এই সকল যিকর যদি যিকরকারীর নিকট একত্রিত হয়, তবে তার যিক শ্রেষ্ঠতম যিকর। যিকরের আরো এক প্রকার যিকর, আল্লাহ পাকের দেওয়া সম্পদ, দান অনুগ্রহ, সাহায্য ইত্যাদির স্থান ও কাল প্রভৃতি উল্লেখ করে যিকর (শুকর) করা। এটাও এক উত্তম যিকর।
সুতরাং উক্ত পাঁচ প্রকার যিকর, যা কখনো অন্তর ও রসনা দ্বারা হয় এবং এটাই সর্বশ্রেষ্ঠ যিক। আবার কখনো কেবল অন্তর দ্বারা হয়, যা দ্বিতীয় পর্যায়ের এবং কখনো বা কেবল রসনা দ্বারা হয়, যা তৃতীয় পর্যায়ের। ২ নং যিকর হলে অন্যান্য অঙ্গ দ্বারা। কার্যে পরিণত করাও যিকর হয়। অতএব মুমিনের সারা জীবন ও জীবনের প্রতি মুহূর্তটাই যিকরের স্থল। যেমন রসূল (ﷺ)-এর যিকরে আমরা বুঝতে পারব।
উল্লেখ্য যে, দুআ অপেক্ষা যিকর উত্তম। যেহেতু যিকরে আল্লাহ তাআলার সুন্দরতম নাম, মহিমময় গুণ ইত্যাদির সাথে তার প্রশংসা করা হয়। কিন্তু দুআতে বান্দা নিজের প্রয়োজন আল্লাহর নিকট জানিয়ে তার পূরণভিক্ষা করে থাকে। যে দুইয়ের মাঝে রয়েছে। বিরাট পার্থক্য। আবার যিকর অপেক্ষা কুরআন তেলাঅত উত্তম। কিন্তু যথােপযুক্ত সময়কালে তেলাঅত, যিকর ও দুআ স্ব-স্ব স্থানে শ্রেষ্ঠ। (বিস্তারিত দ্রষ্টব্য আল ওয়াবিলুস সইয়্যেব)।