১৯. নিজ থেকে তার প্রতি ইনসাফ করা এবং তার সাথে এমন ব্যবহার করা, যে ব্যবহার সে নিজে অন্যের কাছ থেকে আশা করে; কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« لا يَستكمِلُ العبدُ الإيمانَ حتى يكونَ فيه ثَلاثُ خِصَالٍ : الإِنْفَاقُ مِنَ الإِقْتَارِ ، وَالإِنْصَافُ مِنْ نَفْسِهِ ، وَبَذْلُ السَّلامِ » . (رواه البخاري و أحمد).
“বান্দা ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমানকে পরিপূর্ণ করতে পারবে না, যতক্ষণ না তার মধ্যে তিনটি বৈশিষ্ট্যের সমাবেশ ঘটবে: ১. অভাবগ্রস্ত অবস্থায়ও দান করা, ২. নিজ থেকে ইসনাফ করা, এবং ৩. সালামের প্রচলন করা।”[1] তিনি আরও বলেন:
« مَنْ سَرَّهُ أَنْ يُزَحْزَحَ عَنْ النَّارِ ، وَيُدْخَلَ الْجَنَّةَ فَلْتَأْتِهِ مَنِيَّتُهُ وَهُوَ يَشهَدُ أن لا إله إلا الله وأن محمدًا عَبْدُهُ و رسُولُهُ ، وَلْيَأْتِ إِلَى النَّاسِ الَّذِي يُحِبُّ أنْ يُؤْتَى إِلَيْهِ » . (رواه الخرائطى و الطبرانى).
“যে ব্যক্তি মনে প্রাণে জাহান্নাম থেকে মুক্ত হতে এবং জান্নাতে প্রবেশ করতে চায়, তার যেন মৃত্যু হয় এমন অবস্থায় যে, সে সাক্ষ্য দিচ্ছে যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসূল এবং মানুষের সাথে এমন ব্যবহার করে, যে ব্যবহার সে নিজে অন্যের কাছ থেকে আশা করে।”[2]
২০. তার ভুল-ভ্রান্তি ক্ষমা করা ও অভ্যন্তরীণ বিষয় গোপন রাখা এবং তার গোপন কথা কান পেতে না শুনা; কেননা, আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
فَٱعۡفُ عَنۡهُمۡ وَٱصۡفَحۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ يُحِبُّ ٱلۡمُحۡسِنِينَ
“কাজেই তাদেরকে ক্ষমা করুন এবং উপেক্ষা করুন। নিশ্চয়ই আল্লাহ মুহসিনদেরকে ভালবাসেন।”[3] আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
فَمَنۡ عُفِيَ لَهُۥ مِنۡ أَخِيهِ شَيۡءٞ فَٱتِّبَاعُۢ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَأَدَآءٌ إِلَيۡهِ بِإِحۡسَٰنٖۗ
“তবে তার ভাইয়ের পক্ষ থেকে কোনো ক্ষমা প্রদর্শন করা হলে যথাযথ বিধির অনুসরণ করা ও সততার সাথে তার রক্ত-বিনিময় আদায় করা কর্তব্য।”[4] তিনি আরও বলেন:
وَلۡيَعۡفُواْ وَلۡيَصۡفَحُوٓاْۗ أَلَا تُحِبُّونَ أَن يَغۡفِرَ ٱللَّهُ لَكُمۡۚ
“তারা যেন ওদেরকে ক্ষমা করে এবং ওদের দোষ-ত্রুটি উপেক্ষা করে। তোমরা কি চাও না যে, আল্লাহ্ তোমাদেরকে ক্ষমা করুন?।”[5] তিনি আরও বলেন:
إِنَّ ٱلَّذِينَ يُحِبُّونَ أَن تَشِيعَ ٱلۡفَٰحِشَةُ فِي ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمٞ فِي ٱلدُّنۡيَا وَٱلۡأٓخِرَةِۚ
“নিশ্চয় যারা মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে, তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়া ও আখেরাতে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।”[6] তাছাড়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« وَمَا زَادَ اللهُ عَبْداً بِعَفْوٍ إِلاَّ عِزّاً » . (رواه مسلم).
“আর আল্লাহ যে বান্দাকে ক্ষমার গুণে সমৃদ্ধ করেন, তাকে অবশ্যই সম্মান দ্বারা ধন্য করেন।”[7] তিনি আরও বলেন:
« وَ أنْ تَعْفُو عَمَّنْ ظَلَمَكَ » . (رواه الحاكم).
“আর তোমার প্রতি যে যুলুম করে, তাকে তুমি ক্ষমা করা।”[8] তিনি আরও বলেন:
« لاَ يَسْتُرُ عَبْدٌ عَبْدًا فِى الدُّنْيَا إِلاَّ سَتَرَهُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ » . (رواه مسلم).
“যে কোনো বান্দা দুনিয়াতে অন্য বান্দার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবেন।”[9] তিনি আরও বলেন:
« يَا مَعْشَرَ مَنْ آمَنَ بِلِسَانِهِ ، وَلَمْ يَدْخُلِ الإِيمَانُ فِى قَلْبِهِ ! لاَ تَغْتَابُوا الْمُسْلِمِينَ ، وَلاَ تَتَّبِعُوا عَوْرَاتِهِمْ ، فَإِنَّهُ مَنْ يَتَّبِعْ عَوْرَةَ أَخِيهِ الْمُسْلِمِ يَتَّبِعِ اللَّهُ عَوْرَتَهُ ، وَ مَنْ يَتَّبِعِ اللَّهُ عَوْرَتَهُ يَفْضَحْهُ ولَوْ كَانَ فِى جَوْفِ بَيْتِهِ » . (رواه الترمذي و أحمد و أبو داود).
“হে যারা মুখে ঈমান এনেছ, অথচ অন্তরে ঈমান প্রবেশ করেনি! তোমরা মুসলিমগণের গীবত করো না এবং তাদের গোপন বিষয়ের অনুসরণ করো না; কারণ, যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের গোপন বিষয় খোঁজাখুঁজি করবে, আল্লাহ তা‘আলাও তার গোপন বিষয়ের পিছনে লাগবেন; আর আল্লাহ যার গোপন বিষয়ের পিছনে লাগবেন, সে তার ঘরের মধ্যে অবস্থান করলেও তিনি তা ফাঁস করে দিবেন।”[10] নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:
« وَمَنْ اسْتَمَعَ إِلَى حَدِيثِ قَوْمٍ وَهُمْ لَهُ كَارِهُونَ ، صُبَّ فِي أُذُنِهِ الْآنُكُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ » . (رواه البخاري).
“আর যে ব্যক্তি কোনো সম্প্রদায়ের কথার দিকে কান লাগাল, অথচ তারা তা অপছন্দ করে, কিয়ামতের দিন তার কানে সীসা ঢেলে দেয়া হবে।”[11]
২১. তার কোনো প্রয়োজনে তাকে সহযোগিতা করা এবং তার কোনো প্রয়োজন পূরণে সম্ভব হলে তার জন্য সুপারিশ করা; কেননা, আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
وَتَعَاوَنُواْ عَلَى ٱلۡبِرِّ وَٱلتَّقۡوَىٰۖ
“আর নেককাজ ও তাক্ওয়ায় তোমরা পরস্পর সাহায্য করবে।”[12] আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
مَّن يَشۡفَعۡ شَفَٰعَةً حَسَنَةٗ يَكُن لَّهُۥ نَصِيبٞ مِّنۡهَاۖ
“কেউ কোনো ভাল কাজের সুপারিশ করলে তাতে তার অংশ থাকবে।”[13] আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« مَنْ نَفَّسَ عَنْ مُؤْمِنٍ كُرْبَةً مِنْ كُرَبِ الدُّنيَا ، نَفَّسَ الله عَنْهُ كُربَةً مِنْ كُرَبِ يَوْمِ القِيَامَةِ ، وَمَنْ يَسَّر عَلَى مُعْسِرٍ يَسَّرَ الله عَلَيهِ في الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ ، وَمَنْ سَتَرَ مُسْلِماً سَتَرَهُ الله في الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ ، والله في عَونِ العَبْدِ مَا كَانَ العَبْدُ في عَونِ أخِيهِ » . (رواه مسلم).
“যে ব্যক্তি কোনো মুসলিম ব্যক্তির পার্থিব কষ্টসমূহের মধ্য থেকে একটি কষ্ট দূর করে দেয়, আল্লাহ তা‘আলা তার কিয়ামতের দিনের কষ্টসমূহের মধ্য থেকে একটি কষ্ট দূর করে দিবেন; আর যে ব্যক্তি কোনো অভাবীর অভাবের কষ্ট লাঘব করে দেয়, আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়া ও আখিরাতে তার অভাবের কষ্ট লাঘব করে দিবেন; আর যে ব্যক্তি কোনো মুসলিম ব্যক্তির দোষ-ত্রুটি গোপন করবে, আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষ-ত্রুটি গোপন করে রাখবেন; আর বান্দা যতক্ষণ তার মুসলিম ভাইয়ের সাহায্য করতে থাকে, আল্লাহও ততক্ষণ তার সাহায্য-সহযোগিতা করতে থাকেন।”[14] তিনি আরও বলেন:
« اشْفَعُوا تُؤْجَرُوا ، وَيَقْضِي الله عَلَى لِسَانِ نَبِيِّهِ مَا شَاءَ » . (مُتَّفَقٌ عَلَيهِ).
“তোমরা সুপারিশ কর, প্রতিদান পাবে; আর আল্লাহ যা চান, তিনি তাঁর নবীর মুখ দিয়ে তা প্রকাশ করান।”[15]
২২. সে যখন আল্লাহর নামে আশ্রয় চাইবে, তখন তাকে আশ্রয় দেওয়া; যখন তার কাছে আল্লাহর নামে সাহায্য চাইবে, তখন তাকে দান করা; তার ভালো কাজের জন্য তাকে পুরস্কার দেওয়া অথবা তার জন্য দো‘য়া করা; কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« مَنْ اسْتَعَاذَ بِاللَّهِ فَأَعِيذُوهُ ، وَمَنْ سَأَلَكُمْ بِاللَّهِ فَأَعْطُوهُ ، وَمَنْ دَعَاكُمْ فَأَجِيبُوهُ ، وَمَنْ صَنَعَ إِلَيْكُمْ مَعْرُوفًا فَكَافِئُوهُ ، فَإِنْ لَمْ تَجِدُوا مَا تُكَافِئُونَهُ ، فَادْعُوا لَهُ حَتَّى تَرَوْا أَنَّكُمْ قَدْ كَافَأْتُمُوهُ » . (رواه أحمد ، وأبو داود ، والنسائى ، والحاكم ).
“যে ব্যক্তি আল্লাহর নামে আশ্রয় চাইবে, তোমরা তাকে আশ্রয় দাও; আর যে ব্যক্তি তোমাদের কাছে আল্লাহর নামে সাহায্য চাইবে, তোমরা তাকে দান কর; আর যে ব্যক্তি তোমাদেরকে আহ্বান করবে, তোমরা তার ডাকে সাড়া দাও; আর যে ব্যক্তি তোমাদের উপকার করবে, তোমরা তাকে প্রতিদান দাও; আর যদি তাকে পুরস্কার দেওয়ার মত কিছু না পাও, তাহলে তোমরা তার জন্য এমনভাবে দো‘য়া কর, যাতে তোমাদের মনের তৃপ্তি হয় যে, তোমরা তাদের প্রতিদান দিতে পেরেছ।”[16]
>[2] খারায়েত্বী ও ত্ববারানী।
[3] সূরা আল-মায়িদা, আয়াত: ১৩
[4] সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৭৮
[5] সূরা আন-নূর, আয়াত: ২২
[6] সূরা আন-নূর, আয়াত: ১৯
[7] মুসলিম, হাদিস নং- ৬৭৫৭
[8] হাকেম।
[9] মুসলিম, হাদিস নং- ৬৭৬০
[10] তিরমিযী, আহমাদ আবূ দাউদ।
[11] বুখারী, হাদিস নং- ৬৬৩৫
[12] সূরা আল-মায়িদা, আয়াত: ২
[13] সূরা আ-নিসা, আয়াত: ৮৫
[14] মুসলিম, হাদিস নং- ৭০২৮
[15] বুখারী, হাদিস নং- ১৩৬৫; মুসলিম, হাদিস নং- ৬৮৫৮
[16] আহমাদ, আবূ দাউদ, নাসায়ী ও হাকেম এবং সনদটি ‘হাসান’ পর্যায়ের।