‘তাসমিয়া’ শব্দের মূল অর্থ নামকরণ করা। মুসলিম ব্যক্তি যে কোনো কাজ আল্লাহর নাম নিয়েই শুরু করেন, তাই আল্লাহর নাম নেওয়া বা বিসমিল্লাহ বলার ক্ষেত্রেও শব্দটি প্রয়োগ হয়। এভাবে ‘খতমে তাসমিয়া’ বিসমিল্লাহ এর খতমকে বুঝানো হয়ে থাকে। একলক্ষ পঁচিশ হাজার বার ‘‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’’ পাঠের মাধ্যমে এই খতম করতে হয়। এই খতমের বিবরণে লেখা হয়েছে:

‘‘এই পাক কালাম একলক্ষ পঁচিশ হাজার বার পাঠ করাকে ‘‘খতমে তাসমিয়া’’ বলে। কোনো কঠিন বিপদ হতে রক্ষা পাওয়ার জন্য অথবা কোনো মনোবাসনা পূর্ণ হওয়ার জন্য এই খতম অত্যন্ত ফলপ্রদ। অনেক লোক একত্রিত হয়ে একই বৈঠকে এই খতম পাঠ করিয়া আল্লাহর দরবারে মোনাজাত করলে আল্লাহ তাআলা নিশ্চয় তাহাকে সেই বিপদ হইতে রক্ষা করেন বা তাহার বাসনা পূর্ণ করেন।’’[1]

যে কোনো কাজ আল্লাহর নামে শুরু করা ইসলামের মৌলিক শিক্ষার অন্যতম। ‘‘পড় তোমার রাবব্ এর নামে যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন’’[2] বলে ওহির সুচনাতেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এই শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জীবনের সকল ক্ষেত্রে এই শিক্ষার বাস্তবায়ন করেছেন। ‘বিসমিল্লাহ’ ব্যবহারের মাধ্যমে এর বাস্তব প্রয়োগের সাথে সাথে সাহাবায়ে কেরামদেরকেও এর নির্দেশ দিয়েছেন। সাহাবায়ে কেরাম তাদের জীবনের সর্বক্ষেত্রে এই শিক্ষার বাস্তবায়ন ঘটিয়েছেন। এছাড়া ‘বিসমিল্লাহ’ বলে রোগের ঝাড় ফুঁকের আমলও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে পাওয়া যায়। সাহাবী উসমান ইবন আবিল ‘আস আস-সাক্বাফী একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে তাঁর শরীরের একটি ব্যথার অভিযোগ করলেন। ইসলাম গ্রহণের পর থেকেই তিনি তাঁর শরীরে এই ব্যথা অনুভব করছেন বলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আরয করলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন:

« ضع يدك على الذى تألم من جسدك وقل باسم الله. ثلاثا. وقل سبع مرات أعوذ بالله وقدرته من شر ما أجد وأحاذر ». ( صحيح مسلم، باب استحباب وضع يده على موضع الألم مع الدعاء، رقم:5867)

‘‘তোমার শরীরের যে জায়গায় ব্যথা রয়েছে সেখানে হাত রাখ এবং তিনবার ‘بِاسْمِ اللَّه’ বল। আরো সাতবার বল:

‘‘أَعُوذُ بِاللَّهِ وَقُدْرَتِهِ مِنْ شَرِّ مَا أَجِدُ وَأُحَاذِرُ’’ (আমি যে ব্যথা অনুভব করছি এবং যে ভয় পাচ্ছি তা থেকে আল্লাহ ও তার কুদরতের আশ্রয় প্রার্থনা করছি)’’[3] এই হলো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন থেকে ‘বিসমিল্লাহ’ এর শিক্ষা। সাহাবা, খাইরুল ক্বুরুন সবার জীবনেও এই একই শিক্ষা দেখতে পাবেন। এর বাইরে খতম নামে যা কিছু বলা হয়ে থাকে তা সম্পূর্ণ মনগড়া ও ভিত্তিহীন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বা সাহাবিদের জীবনে এই তাসমিয়া খতমের কোনো দৃষ্টান্ত নেই, কল্যাণের সাক্ষ্যপ্রাপ্ত কোনো যুগেই এর কোনো নজীর নেই। এ সবকিছু তাদের যুগের অনেক পরের উদ্ভাবন। এছাড়া এই খতমের ফযিলতে যা কিছু বলা হয় সবই মনগড়া বানানো। আল্লাহ আমাদেরকে এ সমস্ত মনগড়া কর্ম থেকে রক্ষা করুন। ‘বিসমিল্লাহ’ এর মৌলিক শিক্ষায় আমাদের জীবন গড়ার তওফিক দান করুন। আমীন।

>
[1] মোকছুদুল মো’মিনীন বা বেহেশ্তের পুঞ্জী, আলহাজ্ব হযরত মাওলানা মোহাম্মদ নাজমুল হক, পঞ্চদশ খণ্ড, ১৭৮ পৃষ্ঠা। সাদনান পাবলিকেশন।

[2] সূরা আলাক্ব, আয়াত: ১।

[3] সহীহ মুসলিম, সালাম অধ্যায়, ব্যথায় আক্রান্ত স্থানে দো‘আর সহিত হাত রাখা মুস্তাহাব পরিচ্ছেদ, নং:৫৮৬৭।