অতীব দুঃখের বিষয় হলো, এ সকল বিদ‘আতী অনুষ্ঠান পালন করা হয় মুসলিমদের দ্বারাই, তারা তাদের নিজস্ব মতবাদে বিশ্বাসী হয়ে রাসূলের মহব্বতে তা করছে। যারা এরকম বলছে তাদেরকে বলব, আপনি যদি সুন্নী হন এবং রাসূলের পুরোপুরি অনুসরণ করেন তাহলে কি রাসূল তা কখনো করেছেন? বা তাঁর কোনো সাহাবী অথবা কোনো তাবে‘ঈ করেছেন? নাকি তা ইসলামের শত্রু ইয়াহূদী ও খৃষ্টান এবং তাদের মত আরও যারা আছে তাদের অন্ধ অনুকরণ-অনুসরণ?
রাসূলের মহব্বত শুধু তাঁর জন্মোৎসব পালনের মাধ্যমে প্রকাশ হয় না বরং তিনি যে নির্দেশ দিয়েছেন তার অনুসরণ অনুকরণের মাধ্যমে, তাঁর দেওয়া সংবাদ বিশ্বাসের মাধ্যমে, তাঁর নিষেধাবলী থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে এবং তার শিখানো পদ্ধতিতে আল্লাহর দেওয়া শর‘ঈ বিধানের মাধ্যমে ইবাদত করার দ্বারাই তা প্রকাশ পায়। এমনিভাবে তাঁর নাম উল্লেখ হওয়ার পর, সালাতের মধ্যে এবং প্রত্যেক সময়ে ও সর্বক্ষেত্রে তাঁর উপর দুরুদ পাঠ করা তাঁর মহব্বতের বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু এ সকল বিদ‘আতী কাজের নিন্দা করা ওয়াহাবী নয় যেমনটি পত্রিকার লেখক বলেছেন। বরং ওয়াহাবী বলে যাদের বলা হচ্ছে, তাদের আকীদা-বিশ্বাস হলো: আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের সুন্নাতকে পুরোপুরি আঁকড়ে ধরা, তাঁর দিক নির্দেশনার উপর চলা, খোলাফায়ে রাশেদীন এবং তাবে‘ঈদের পথে চলা, সালফে সালেহীন ও ইমামগণ যে পথে চলেছেন সে পথে চলা, আল্লাহকে জানার ব্যাপারে, তার সিফাত বা গুণাগুণের ক্ষেত্রে ও তার প্রশংসার ক্ষেত্রে কুরআন এবং হাদীস যেভাবে সাব্যস্ত করেছে এবং সাহাবীগণ যেভাবে তা গ্রহণ করেছে সেভাবে সাব্যস্তের ক্ষেত্রে মুফতি ও ফকিহদের পথে চলা। এগুলো যেভাবে এসেছে তারা তা সেভাবেই সাব্যস্ত করে এবং বিশ্বাস করে, কোনো ধরনের পরিবর্তন পরিবর্ধন, রহিতকরণ এবং বিনা উদাহরণে তা সাব্যস্ত করে। তাবে‘ঈ, জ্ঞানী, পরহেযগার, ঈমানদার এবং তাবে তাবে‘ঈসহ এ উম্মাতের সালাফ ও ইমামগণ যার উপর চলেছেন তা-ই তারা আঁকড়ে ধরে আছে।
তারা এ বিশ্বাস করে যে, ঈমানের ভিত্তি ও নীতি হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলার একত্ববাদ ও মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তার রাসূল হিসাবে সাক্ষ্য দেওয়া, আর এটিই এক আল্লাহর প্রতি ঈমানের মূল ভিত্তি এবং তা ঈমানের শাখার মধ্যে সর্বোত্তম শাখা। তারা এও জানে যে, এ ভিত্তির জন্য সকল মুসলিমের ঐক্যমতে ঈমান, আমল ও মুখের স্বীকৃতির প্রয়োজন হয়, তা প্রমাণ করে যে এক আল্লাহর ইবাদত করা ও তার সাথে কাউকে অংশিদার না করা এবং তিনি ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত করা থেকে বেঁচে থাকা প্রত্যেকের উপর ওয়াজিব। আর এটিই জ্বীন ও মানব সৃষ্টি, নবী রাসূল প্রেরণ এবং কিতাব অবতীর্ণ করার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। তা এক আল্লাহর জন্য পরিপূর্ণ বশ্যতা ও ভালোবাসার স্বীকৃতি, এমনিভাবে পরিপূর্ণ অনুকরণ ও সম্মানের অন্তর্ভুক্ত। এটি সেই দ্বীন যা ব্যতীত অন্য কোনো দ্বীন আল্লাহ গ্রহণ করবেন না, না পূর্ববর্তীদের নিকট থেকে আর না পরবর্তীদের থেকে। কারণ সকল নবীই ইসলামের উপর থেকে এর দাওয়াত নিয়ে এসেছেন এবং যা আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণের অন্তর্ভুক্ত তার দাওয়াত নিয়ে এসেছেন। কাজেই যে ব্যক্তি তাঁর নিকট আত্মসমর্পনের সাথে সাথে অন্যের নিকটও আত্মসমর্পণ করবে ও তাকে এবং অন্যকে ডাকবে সে মুশরিকদের মধ্যে গণ্য হবে, আর যে ব্যক্তি তার নিকট আত্মসমর্পণ করবে না সে তার ইবাদত থেকে অহংকারী বলে গণ্য হবে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلَقَدۡ بَعَثۡنَا فِي كُلِّ أُمَّةٖ رَّسُولًا أَنِ ٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ وَٱجۡتَنِبُواْ ٱلطَّٰغُوتَ﴾ [النحل: ٣٦]
“অবশ্যই আমরা প্রত্যেক জাতির নিকট রাসূল প্রেরণ করেছি এ প্রত্যাদেশ দিয়ে যে তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাগুতকে পরিহার কর। [সূরা নাহল/৩৬]
তাদের আক্বীদা হলো: মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল হওয়ার উপর সাক্ষ্য প্রদান করা এবং বিদ‘আত, কুসংস্কার ও রাসূলের আনীত শরীয়তের পরিপন্থী প্রতিটি বিষয় ত্যাগ করা। আর এটাই শাইখ মুহাম্মদ ইবন আব্দুল ওয়াহহাব রাহিমাহুল্লাহ এর আক্বীদা। এ আক্বীদার দ্বারাই তিনি আল্লাহর দ্বীন পালন করেন এবং এর দিকে তিনি মানুষকে আহ্বান করেন। আর যে ব্যক্তি এ আক্বীদার পরিপন্থী কোনো মাস্আলা মাসায়েল বা মতবাদ তার দিকে সম্পর্কযুক্ত করবে তা হবে ডাহা মিথ্যা, প্রাকশ্য অপবাদ এবং বিনা জ্ঞানে কথা বলা। এ সকল অপবাদীদেরকে আল্লাহ তার অঙ্গিকারানুযায়ী বদলা দিবেন। ইখলাস ও তাওহীদ, আল্লাহর একত্ববাদের সাক্ষ্য দেওয়া এবং আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য কারো ইবাদতের বিষয়টি রহিত করে শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য তা পরিপূর্ণভাবে সাব্যস্ত করার ক্ষেত্রে কুরআন, হাদীস ও ইজমা যা প্রমাণ করে তার উপর তিনি তার মূল্যবান প্রতিবেদন, গবেষণা এবং গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থাদি প্রকাশ করেছেন। তার প্রকাশিত গ্রন্থাদি, প্রসিদ্ধ দাওয়াত ও কাজকর্ম এবং তার বড় বড় জ্ঞানী সহচরবৃন্দ ও ছাত্রদের মতামত সম্পর্কে যে ব্যক্তি জানতে পারবে সে বুঝতে পারবে যে এক আল্লাহর ইবাদত করার সাথে সাথে বিদ‘আত ও কুসংস্কার রহিতের ক্ষেত্রে তিনি সালাফ তথা উম্মতের উত্তম পূর্বসূরী ও সম্মানিত ইমামদের তরিকায় আছেন। আর এর উপরই সৌদী হুকুমত বা শাসন রয়েছে এবং সৌদী আলেমগণও এর উপরই চলেছেন। সৌদী হুকুমত ও আলেমগণ যাবতীয় বিদ‘আত, কুসংস্কার এবং সকল প্রকার বাড়াবাড়ি, যা থেকে রাসূল নিষেধ করেছেন, তার বিরুদ্ধে জোরালো ভূমিকা রাখছেন।
সৌদী মুসলিম জনগণ এবং সরকার প্রতিটি মুসলিমকে যথাযথ সম্মান করে থাকে এবং সে যে কোনো জায়গার বা যে কোনো দিকেরই হোক না কেন তাদেরকে ভালোবাসা এবং সম্মানের দৃষ্টিতে দেখে। আর যারা বিদ‘আত, কুসংস্কার, বিদ‘আতী উৎসব পালনের মত ভ্রান্ত মতবাদ নিয়ে আছে, যার অনুমতি আল্লাহ ও রাসূল দেননি, তাদেরকে তারা ঘৃণা করেন এবং তা করতে নিষেধ করেন, কারণ তা নব আবিষ্কৃত জিনিস, আর প্রতিটি নব আবিষ্কৃত জিনিসই বিদ‘আত। বস্তুত মুসলিমগণকে রাসূলের অনুসরণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কোনো বিদ‘আত সৃষ্টির জন্য নয়, কারণ ইসলাম একটি পরিপূর্ণ দ্বীন, আল্লাহ এবং রাসূল যা শরীয়ত হিসাবে দিয়েছেন এবং সম্মানিত সাহাবী ও তাবে‘ঈগণ যা গ্রহণ করেছেন এবং যারা তাদের অনুসরণ করেন তা-ই যথেষ্ট।
রাসূলের জন্মোৎসবের বিদ‘আতী অনুষ্ঠান পালন এবং এতে যে সকল বাড়াবাড়ি বা শির্ক ইত্যাদি হয়, তার বাধা প্রদান করা অনৈসলামিক কাজ নয় বা রাসূলের অসম্মান নয়, বরং এটাই রাসূলের অনুসরণ-অনুকরণ এবং তাঁর নির্দেশ বাস্তবায়ন। যেমন তিনি বলেছেন,
«إياكم والغلو في الدين فإنما أهلك من كان قبلكم الغلو في الدين»
“তোমরা দ্বীনের মধ্যে অধিক বাড়াবাড়ি করা থেকে বেঁচে থাক, কেননা দ্বীনের মধ্যে অধিক বাড়াবাড়িই তোমাদের পূর্ববর্তী লোকজনকে ধ্বংস করেছে।”
তিনি আরও বলেন:
«لا تطروني كما أطرت النصارى ابن مريم، إنما أنا عبد فقولوا عبد الله ورسوله» أخرجه البخاري في صحيحه
“তোমরা আমার প্রশংসায় সীমালঙ্ঘন করো না যেমন খৃষ্টানগণ ঈসা (আলাইহিস সালাম) এর ব্যাপারে করেছে, বরং আমি কেবল একজন বান্দা, কাজেই তোমরা বল যে আমি আল্লাহর বান্দা ও তার রাসূল।”
উল্লেখিত প্রবন্ধ সম্পর্কে এ সতর্কতাই দিতে চেয়েছি। আল্লাহ আমাদের এবং সকল মুসলিমকে যেন দ্বীন সম্পর্কে বুঝার ও এর উপর দৃঢ় থাকার তাওফীক দান করেন এবং সুন্নাতকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরা ও বিদ‘আত থেকে বেচে থাকার উপর অনুগ্রহ করেন। নিশ্চয়ই তিনি অনুগ্রহশীল করুনাময়।
وصلى الله وسلم على نبينا محمد وآله وصحبه