কোন নারী কোনো পুরুষের সাথে একান্তে থাকবে না

নারী-পুরুষের কোনো নির্জন স্থানে একাকী বাস, কিছুক্ষণের জন্যও লোক-চক্ষুর অন্তরালে, ঘরের ভিতরে, পর্দার আড়ালে একান্তে অবস্থান শরীয়তে হারাম। যেহেতু তা ব্যভিচার না হলেও ব্যভিচারের নিকটবর্তী করে, ব্যভিচারের ভূমিকা অবতারণায় সহায়িকা হয়। আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

لاَ يَخْلُوَنَّ رَجُلٌ بِامْرَأَةٍ إِلاَّ كَانَ ثَالِثَهُمَا الشَّيْطَانُ،

“কোন পুরুষ যেন কোনো নারীর সাথে একান্তে গোপনে অবস্থান না করে। কারণ, শয়তান উভয়ের কুটনি হয়”।[1]

এ ব্যাপারে সমাজে অধিক শৈথিল্য পরিলক্ষিত হয় দেওর-ভাবী ও শালী-বুনাই-এর ক্ষেত্রে। অথচ এদের মাঝেই বিপর্যয় ঘটে অধিক। কারণ ‘পর চোরকে পার আছে, ঘর চোরকে পার নাই।’ তাই তো আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলাদের পক্ষে তাদের দেওরকে মৃত্যুর সাথে তুলনা করেছেন।” উকবা ইব্ন আমের রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

إِيَّاكُمْ وَالدُّخُولَ عَلَى النِّسَاءِ، فَقَالَ رَجُلٌ مِنَ الأَنْصَارِ: يَا رَسُولَ اللهِ، أَفَرَأَيْتَ الحَمْوَ، قَالَ: الحَمْوُ الْمَوْتُ.

“তোমরা নারীদের কাছে প্রবেশ করা হতে বিরত থাক। এ কথা বলার পর একজন আনসারী ব্যক্তি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল দেবরের বিষয়ে আপনি কি বলেন, আল্লাহর রাসূল বলেন, দেবর হল মৃত্যু সমতুল্য”।[2]

অতএব দেওরের সাথে মায়ের বাড়ি, ডাক্তারখানা, অনুরূপ বুনাই-এর সাথে বোনের বাড়ি, ডাক্তারখানা বা কোনো বিলাস-বিহারে যাওয়া-আসা এক মারাত্মক বিস্ফোরক প্রথা বা ফ্যাশন।

তদনুরূপ তাদের সাথে কোনো কামরা বা স্থানে নির্জনতা অবলম্বন, বাড়ির দাসী বা দাসের সাথে গৃহকর্তা বা কর্ত্রী অথবা তাদের ছেলে-মেয়ের সাথে নিভৃত বাস, বাগদত্তা বরকনের একান্তে আলাপ বা গমন, বন্ধু-বান্ধবীর একত্রে নির্জন বাস, লিফটে কোনো বেগানা যুবক-যুবতীর একান্তে উঠা-নামা, ডাক্তার ও নার্সের একান্তে চেম্বারে অবস্থান, টিউটর ও ছাত্রীর একান্তে নির্জন-বাস ও পড়াশোনা, স্বামীর অবর্তমানে কোনো বেগানা আত্মীয় বা বন্ধুর সাথে নির্জন-বাস, ট্যাক্সি ড্রাইভারের সাথে বা রিক্সায় রিকশাচালকের সাথে নির্জনে গমন, তথাকথিত পীর ও তথাকথিত মহিলা মুরিদের একান্তে বয়াত ও তা‘লীম[3] প্রভৃতি একই পর্যায়ের; যাদের মাঝে শয়তান কুটনি সেজে অবৈধ বাসনা ও কামনা জাগ্রত করে কোনো পাপ সংঘটিত করতে চেষ্টা করে।

বারুদের নিকট আগুন রাখা হলে বিস্ফোরণ তো হতেই পারে। যেহেতু মানুষের মন বড় মন্দ প্রবণ এবং দুর্নিবার কামনা ও বাসনা মানুষকে অন্ধ ও বধির করে তোলে। তা ছাড়া নারীর মাঝে রয়েছে মনোরম কমনীয়তা, মোহনীয়তা এবং চপলতা। আর শয়তান তো মানুষকে অসৎ কাজে ফাঁসিয়ে দিয়ে আনন্দ বোধ করে থাকে। অনুরূপ কোনো বেগানা মহিলার সাথে নির্জনে নামায পড়াও বৈধ নয়।

তালাক প্রাপ্তা স্ত্রীর নিকট নিজের সন্তান দেখতে গিয়ে বা কোনো কাজে গিয়ে তার সাথে নির্জনতাও অনুরূপ। কারণ, সে আর স্ত্রী নেই। আর এমন মহিলার সাথে বিপদের আশঙ্কা বেশী। শয়তান তাদেরকে তাদের পূর্বের স্মৃতিচারণ করে ফাঁসিয়ে দিতে পারে।

বৃদ্ধ-বৃদ্ধার একান্তে বা তাদের সাথে যুবতী-যুবকের নির্জন বাস, কোনো হিজরে বা খাসি করা নারী-পুরুষের আপসে বা তাদের সাথে যুবক-যুবতীর, একাধিক মহিলার সাথে কোনো একটি যুবক অথবা একাধিক পুরুষের সাথে এক মহিলার, কোনো সুশ্রী কিশোরের সাথে যুবকের নির্জন বাসও অবৈধ। প্রয়োজন হলে এবং মহিলার মাহরাম না পাওয়া গেলে কোনো মহিলার জামাতে একজন পুরুষ থেকে সফর করায় অনেকের নিকট অনুমতি রয়েছে। প্রকাশ যে, মহিলার সাথে কোনো নাবালক শিশু থাকলে নির্জনতা কাটে না।

ব্যভিচার থেকে সমাজকে দূরে রাখার জন্যই ইসলামে নারী-পুরুষে অবাধ মেলা-মেশা, নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একই অফিসে, মেসে, ক্লাসরুমে, বিয়ে ও মরা বাড়িতে, হাসপাতালে, বাজারে প্রভৃতি ক্ষেত্রে উভয় জাতির একত্রে অবাধ মেলা-মেশা করা অবৈধ।

মুসলিম নারীর শিক্ষার অর্থ এই নয় যে, তাকে বড় ডিগ্রী, সুউচ্চ পদ, মোটা টাকার চাকুরী পেতে হবে। তার শিক্ষা জাতি গঠনের জন্য, সমাজ গড়ার জন্য, মুসলিম দেশ ও পরিবেশ গড়ার জন্য যতটুকু দরকার ততটুকু শিখতে পারলেই যথেষ্ট; যদিও তা ঘরে বসেই হয়। তাছাড়া পৃথক গার্লস স্কুল-কলেজ না থাকলে মিশ্র শিক্ষাঙ্গনে মুসলিম নারীর শিক্ষায় ‘জল খেতে গিয়ে ঘটি হারিয়ে যাওয়ার ঘটনাই অধিক ঘটে থাকে; যে সব শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে শিক্ষিত হওয়া যায় ঠিকই, কিন্তু আদর্শ মুসলিম হওয়া যায় না। নারীর স্বনির্ভরশীলা হয়ে জীবন-যাপন করায় গর্ব আছে ঠিকই, কিন্তু সুখ নেই। প্রকৃতির সাথে লড়ে আল্লাহর আইনকে অবজ্ঞা করে নানান বিপত্তি ও বাধাকে উল্লঙ্ঘন করে অর্থ কামিয়ে স্বাধীনতা আনা যায় ঠিকই; কিন্তু শান্তি আনা যায় না। শান্তি আছে স্বামীর সোহাগে, স্বামীর প্রেম, ভালোবাসা ও আনুগত্যে। পরিত্যক্তা বা নিপীড়িতা হলে এবং দেখার কেউ না থাকলে মুসলিম রাষ্ট্র ও সমাজে তার কালাতিপাত করার যথেষ্ট সহজ উপায় আছে। যেখানে নেই সেখানকার কথা বিরল। অবশ্য দ্বীন ও দুনিয়ার প্রকৃত মূল্যায়ন করতে পারলে এ সমস্যার সমাধান সহজ হয়ে উঠবে। যারা পরকালের চিরসুখে বিশ্বাসী তারা জাগতিক কয়েকদিনের সুখ-বিলাসের জন্য দ্বীন ও ইজ্জত বিলিয়ে দেবে কেন?

>
[1] তিরমিযি, হাদিস: ১১৭১

[2] বুখারি, ৫২৩২, মুসলিম, হাদিস: ২১৭২ তিরমিযি, হাদিস ১১৭১

[3] যদিও পীর-মুরিদী প্রথা হারাম। এখানে শুধু উদাহরণের জন্য আনা হয়েছে। [সম্পাদক]