হে আল্লাহর বান্দা, হে মুসলিম ভাই! জেনে রাখুন যে, আল-কুরআনের এসব আয়াত ও নবীর হাদীসে পাপরাশি ক্ষমার সাথে সংশ্লিষ্ট আমলের ব্যাপারে ব্যাপক উৎসাহ দিয়েছে, কিন্তু বান্দার জন্য উচিৎ হলো তার উপর নির্ভরশীল হয়ে বসে না থাকা। এমন যেন না হয় যে গুনাহ ও মন্দ কাজে জড়িয়ে যাওয়ার ব্যাপারে নিজের নফসের লাগামকে ছেড়ে দেবে এবং এই বাজে ধারণা করবে যে, সে গুনাহ করলেও যখনই এ জাতীয় আমল করবে তখনই তা তার সকল গুনাহ মাফের নিশ্চয়তা বিধান করবে।
নিশ্চয়ই এ ধরনের কল্পনা চরম মূর্খতা ও বোকামির বহিঃপ্রকাশ; কারণ, হে প্রতারিত ব্যক্তি! তুমি কিভাবে জানতে পারবে যে, আল্লাহ তা‘আলা তোমার আমল কবুল করেছেন এবং তোমার গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন? আল্লাহ সুবহানহু ওয়া তা‘আলা বলেন:
إِنَّمَا يَتَقَبَّلُ ٱللَّهُ مِنَ ٱلۡمُتَّقِينَ
“আল্লাহ তো কেবল মুত্তাকীদের পক্ষ হতে কবুল করেন।”[1]
ঐসব মুত্তাকী বান্দগণ সৎকাজ করে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করার ব্যাপারে যথাসাধ্য চেষ্টা করে এবং পাপকাজ থেকে বিরত থাকে, আর সাথে সাথে এই আশঙ্কাও করে যে, তাদের আমলসমূহ বাতিল করে দিয়ে তাদের কাছে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয় কিনা এবং তাদের মুখের উপর ছুড়ে মারা হয় কিনা:
﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ هُم مِّنۡ خَشۡيَةِ رَبِّهِم مُّشۡفِقُونَ ٥٧ وَٱلَّذِينَ هُم بَِٔايَٰتِ رَبِّهِمۡ يُؤۡمِنُونَ ٥٨ وَٱلَّذِينَ هُم بِرَبِّهِمۡ لَا يُشۡرِكُونَ ٥٩ وَٱلَّذِينَ يُؤۡتُونَ مَآ ءَاتَواْ وَّقُلُوبُهُمۡ وَجِلَةٌ أَنَّهُمۡ إِلَىٰ رَبِّهِمۡ رَٰجِعُونَ ٦٠ ﴾ [المؤمنون: ٥٧، ٦٠]
“নিশ্চয় যারা তাদের রব-এর ভয়ে সন্ত্রস্ত, আর যারা তাদের রব-এর নিদর্শনাবলীতে ঈমান আনে, আর যারা তাদের রব-এর সাথে শির্ক করে না, আর যারা যা দেওয়ার তা দেয় ভীত-কম্পিত হৃদয়ে, এজন্য যে তারা তাদের রব-এর কাছে প্রত্যাবর্তনকারী।”[2]
হ্যাঁ, এরাই হলেন সত্যিকার মুমিন।[3]
আর এই মহান অর্থের দিকেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘উসমান ইবন ‘আফ্ফান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত হাদিসে ইঙ্গিত করেছেন, যাতে তিনি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের অযুর পদ্ধতি বর্ণনা করেছেন; অতঃপর তিনি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন:
« مَنْ تَوَضَّأَ مِثْلَ هَذَا الْوُضُوءِ , ثُمَّ أَتَى الْمَسْجِدَ , فَرَكَعَ رَكْعَتَيْنِ , ثم جلس , غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ , قَالَ وَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : «لَا تَغْتَرُّوا» . ( رواه البخاري) .
“যে ব্যক্তি এই অযূর ন্যায় অযূ করবে, অতঃপর মাসজিদে এসে দুই রাকা‘য়াত সালাত করবে, তার অতীতের সব গুনাহ্ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। তিনি বললেন: নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন যে, তোমরা ধোঁকায় পড়ো না।”[4]
হে আমার ভাই! আপনি আরও জেনে রাখবেন যে, যেসব অপরাধ জনগণের হক বা অধিকারের সাথে সংশ্লিষ্ট, এসব আয়াত ও হাদিস তা অন্তর্ভুক্ত করে না; বরং ওয়াজিব হলো ঐ হক বা অধিকার তার মালিকের নিকট ফিরেয়ে দেওয়া; তার দলীল হলো ঐ হাদিস, যা শহীদের ঋণ ব্যতীত সকল গুনাহ্ মাফের কথা বর্ণনা করে।[5]
সুতরাং হে আমার ভাই! সতর্ক ও সাবধান হও— আল্লাহ তোমাকে তাঁর পক্ষ থেকে প্রাণশক্তির মাধ্যমে সাহায্য করবেন। আর জেনে রাখবে যে, শয়তানের পথ অনেকগুলো এবং তার পাতানো ফাঁদগুলো অনেক বড়; সুতরাং এই দরজা দিয়ে সে তোমার কাছে অনুপ্রবেশ করবে— সে ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করবে।
سبحان الله وبحمده سبحانك اللهم وبحمدك أشهد أن لا إله إلا أنت أستغفرك وأتوب إليك (আল্লাহরই পবিত্রতা ঘোষণা করছি এবং তাঁর প্রশংসা করছি; হে আল্লাহ! আপনারই পবিত্রতা ঘোষণা করছি এবং আপনার প্রশংসা করছি। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ (মা‘বুদ) নেই, আমি আপনার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তাওবা করছি)।
>[2] সূরা আল-মু’মিনুন, আয়াত: ৫৭ - ৬০
[3] এই বিষয়টি আমি আমার ‘মুবতিলাতুল আ‘মাল’ ( مبطلات الأعمال ) নামক পুস্তিকার মধ্যে ‘খাওফুস সালফিস সালিহ রহ. মিন আন তাহবাতা আ‘মালুহুম ওয়াহুম লা ইয়াশ‘উরুন’ ( خوف السَّلف الصالح ـ رحمهم الله ـ من أن تحبط أعمالهم و هم لا يشعرون) [পূর্ববর্তী সৎ বান্দগণের আশংকা যে, তাদের অজান্তেই তাদের আমলসমূহ নষ্ট হয়ে যাবে] নামক শিরোনামে অন্তর্ভুক্ত করেছি; প্রকাশক: দারু ইবনিল কায়্যিম, দাম্মাম।
[4] বুখারী, হাদিস নং- ৬০৬৯
[5] মুসলিম, হাদিস নং- ৪৯৮৮ ও ৪৯৯২