স্বর্ণের নিসাব: স্বর্ণের নিসাব বিশ দিরহাম স্বর্ণ, যা ওজন করলে ৮৫ গ্রাম স্বর্ণ হয়। কারও মালিকানাধীন যদি ৮৫ গ্রাম বা ততোধিক স্বর্ণ থাকে, ক্যারেট যাই হোক, তার ওপর হিজরী এক বছর পূর্ণ হলে যাকাত ওয়াজিব হবে। যাকাতের পরিমাণ এক-দশমাংশের এক চতুর্থাংশ, অর্থাৎ মোট স্বর্ণের ২.৫ পার্সেন্ট।
যাকাত দেওয়ার নিয়ম: ব্যক্তির মালিকানায় যে ক্যারেট স্বর্ণ রয়েছে সেই ক্যারেটের একগ্রাম স্বর্ণের বাজার দর জানবে প্রথম। যদি একাধিক ক্যারেটের স্বর্ণ থাকে, যে ক্যারেট স্বর্ণ বেশি আছে তার বাজার দর জানবে, অতঃপর একগ্রাম স্বর্ণের মূল্যকে তার নিকট যে ক’গ্রাম স্বর্ণ রয়েছে তার সংখ্যা দিয়ে পূরণ দিবে। এভাবে স্বর্ণের গ্রামকে মুদ্রায় পরিণত করবে, অতঃপর ক্যালকুলেটর দিয়ে মোট মূল্য থেকে ২.৫% বের করবে, যে অংক আসবে তাই স্বর্ণের যাকাত।
উদাহরণ: কেউ ২১ ক্যারেট ১০০ গ্রাম স্বর্ণের মালিক, সে তার যাকাত বের করার জন্য প্রথম ২১ ক্যারেট স্বর্ণের বাজার দর জানবে, যদি একগ্রাম স্বর্ণের দাম হয় ১০,০০০ টাকা, যাকাতের হিসেব হবে নিম্নরূপ: ১০০ (গ্রাম-স্বর্ণ)* ১০,০০০ (টাকা, যা একগ্রাম স্বর্ণের মূল্য)* ২.৫% (যাকাত) অর্থাৎ ১০০* ১০,০০০* ২.৫%=২৫০০০ টাকা।
রূপার নিসাব: ২০০ দিরহাম রূপা, যা ওজন করলে ৫৯৫ গ্রাম হয়। কারও মালিকানায় যদি ২০০ দিরহাম বা তার চেয়ে বেশি রূপা থাকে এবং তার ওপর হিজরী এক বছর পূর্ণ হয়, তবেই তাতে যাকাত ফরয হবে। যাকাতের পরিমাণ: এক-দশমাংশের এক-চতুর্থাংশ, অর্থাৎ মোট রূপার ২.৫%।
যাকাত বের করার নিয়ম: যে ক্যারেট রূপা তার কাছে রয়েছে, প্রথম তার বাজার দর জানবে, আর যদি একাধিক ক্যারেটের রূপা থাকে, যে ক্যারেট রূপা বেশি রয়েছে তার বাজার দর জানবে। অতঃপর যত গ্রাম রূপা তার মালিকানায় রয়েছে তার সংখ্যা দিয়ে একগ্রাম রূপার বাজার দরকে গুণ দিবে, গুণফল থেকে ২.৫% যাকাত বের করবে, যে অংক বের হবে সেটি ৫৯৫ গ্রাম রূপার যাকাত।
উদাহরণ: কেউ ৬০০ গ্রাম রূপার মালিক, সে যখন তার যাকাত বের করার ইচ্ছা করবে প্রথম একগ্রাম ৮০ ক্যারেট রূপার বাজার দর জানবে। যদি মনে করি একগ্রাম রূপার মূল্য ১০০ টাকা, নিম্নের নিয়মে যাকাত বের করবে: ৬০০ (গ্রাম-রূপা)* ১০০ (টাকা, যা একগ্রাম-রূপার মূল্য)* ২.৫% = ১৫০০ টাকা। অর্থাৎ একগ্রাম রূপার মূল্য যদি হয় ১০০ টাকা, ৬০০ গ্রাম রূপার যাকাত আসবে ১৫০০ টাকা।
জ্ঞাতব্য: স্বর্ণ-রূপা দ্বারা উদ্দেশ্য খালিস স্বর্ণ-রূপা, সেটি মুদ্রা হতে পারে, যেমন স্বর্ণের জুনাই বা পরিশোধিত স্বর্ণও হতে পারে, যা দিয়ে এখনো গহনা তৈরি করা হয় নি। অনুরূপ আকরিক অর্থাৎ অশোধিত স্বর্ণ-রূপার বিধান।
মাসআলা: কেউ স্বর্ণ-রূপা দু’টি বস্তুর মালিক, একটিও নিসাব বরাবর নয়, সে কি স্বর্ণ-রূপা জমা করবে? অর্থাৎ স্বর্ণ ও রূপার বাজার দর যোগ করে যদি দেখে শুধু স্বর্ণ বা শুধু রূপার নিসাব বরাবর হয়, তার কি যাকাত দেওয়া ওয়াজিব?
আহলে ইলমদের বিশুদ্ধ মত মোতাবেক এই অবস্থায় স্বর্ণের সাথে রূপা যোগ করা জরুরি নয়, স্বর্ণ বা রূপা কারও ওপর যাকাত ওয়াজিব হবে না, যতক্ষণ না স্বতন্ত্রভাবে স্বর্ণ বা রূপা যাকাতের নিসাব বরাবর হবে। কেননা বিশুদ্ধতম অভিমত হচ্ছে, স্বর্ণ ও রূপা স্বতন্ত্র দু’টি বস্তু, একটির সাথে অপরটি যোগ করে নিসাব পূর্ণ করার কোনও দলীল নেই।
এ কথা নগদ অর্থের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়, অর্থাৎ কেউ যদি নগদ অর্থের মালিক হয়, যাকাতের নিসাব পূর্ণ করার জন্য স্বর্ণ বা রূপা বা ব্যবসায়ী পণ্যের সাথে নগদ অর্থ যোগ করা জরুরি। কারণ, যাকাতের সম্পদ বলতে যা বুঝানো হয়, অলঙ্কার, নগদ অর্থ ও ব্যবসায়ী পণ্য তার অন্তর্ভুক্ত। এ কথার অর্থ স্বর্ণের যাকাত টাকা দিয়ে, টাকার যাকাত স্বর্ণ দিয়ে আদায় করা বৈধ। কারণ, একটি অপরটির প্রতিনিধিত্ব করে। অতএব, কারও নিকট যদি নগদ অর্থ ও স্বর্ণ থাকে, একটির সাথে অপরটি যোগ করা জরুরি। অর্থাৎ স্বর্ণকে টাকার অংকে নিয়ে আসবে, অতঃপর নগদ অর্থ ও স্বর্ণের মূল্য হিসেব করবে, যদি নিসাব পরিমাণ হয় উভয়ের যাকাত দিবে, অর্থাৎ যৌথভাবে স্বর্ণ ও নগদ অর্থের যাকাত দিবে, যদি তার ওপর হিজরী এক বছর পূর্ণ হয়। অনুরূপ কারও নিকট যদি নগদ অর্থ ও রূপা থাকে অথবা নগদ অর্থ, স্বর্ণ ও রূপা থাকে, সে স্বর্ণ-রূপার মূল্য ও নগদ অর্থ যোগ করে যাকাত দিবে, তবে একটি বিষয় স্মরণ রাখবে যে, এক বস্তু থেকে একই বছর দু’বার যাকাত গ্রহণ করা যাবে না।