হে ভাইসব!

আল্লাহ তা‘আলার নিকট উপকৃত হওয়ার আবেদন সংবলিত এ ভূমিকার পরে আমরা আমাদের নির্ধারিত আলোচনার দিকে ধাবিত হচ্ছি এবং বলছি:

আপনাদের অনেকের নিকট এটা স্পষ্ট যে, ইসলামের পূর্বে নারীকে পরিত্যক্ত সম্পদ বলে গণ্য করা হত এবং তাকে জীবন্ত কবর দেওয়া হত। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿وَإِذَا بُشِّرَ أَحَدُهُم بِٱلۡأُنثَىٰ ظَلَّ وَجۡهُهُۥ مُسۡوَدّٗا وَهُوَ كَظِيمٞ ٥٨ يَتَوَٰرَىٰ مِنَ ٱلۡقَوۡمِ مِن سُوٓءِ مَا بُشِّرَ بِهِۦٓۚ أَيُمۡسِكُهُۥ عَلَىٰ هُونٍ أَمۡ يَدُسُّهُۥ فِي ٱلتُّرَابِۗ أَلَا سَآءَ مَا يَحۡكُمُونَ ٥٩﴾ [النحل: ٥٨، ٥٩]

“আর যখন তাদের কাউকে কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেওয়া হয়, তখন তার মুখমণ্ডল মলিন হয়ে যায় এবং সে অসহনীয় মনস্তাপে ক্লিষ্ট হয়। তাকে যে সংবাদ দেওয়া হয়, তার গ্লানির কারণে সে নিজ সম্প্রদায় থেকে আত্মগোপন করে। সে চিন্তা করে, হীনতা সত্ত্বেও সে ওকে রেখে দিবে, না মাটিতে পুঁতে ফেলবে! সাবধান! ওরা যা সিদ্ধান্ত করে তা কত নিকৃষ্ট”। [সূরা আন-নাহল, আয়াত: ৫৮–৫৯]

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:

﴿وَإِذَا ٱلۡمَوۡءُۥدَةُ سُئِلَتۡ ٨ بِأَيِّ ذَنۢبٖ قُتِلَتۡ ٩﴾ [التكوير: ٨، ٩]

“আর যখন জীবন্ত সমাধিস্থ কন্যাকে জিজ্ঞেস করা হবে। কী অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছিল”। [সূরা আত-তাকবীর, আয়াত: ৮–৯]

আর জোর-যবরদস্তি করে তার (নারীর) উত্তরাধিকার বা মালিকানা লাভ করা হত, অতঃপর ইসলাম এটাকে নিষিদ্ধ করেছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا يَحِلُّ لَكُمۡ أَن تَرِثُواْ ٱلنِّسَآءَ كَرۡهٗاۖ ﴾ [النساء: ١٩]

“হে ঈমানদারগণ! যবরদস্তি করে নারীদের উত্তরাধিকারী হওয়া তোমাদের জন্য বৈধ নয়”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৯]

আর নারী কোনো সম্পদের উত্তরাধিকারী হত না, অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাকে মীরাসের অধিকার প্রদান করেছেন। তিনি বলেছেন:

﴿لِّلرِّجَالِ نَصِيبٞ مِّمَّا تَرَكَ ٱلۡوَٰلِدَانِ وَٱلۡأَقۡرَبُونَ وَلِلنِّسَآءِ نَصِيبٞ مِّمَّا تَرَكَ ٱلۡوَٰلِدَانِ وَٱلۡأَقۡرَبُونَ مِمَّا قَلَّ مِنۡهُ أَوۡ كَثُرَۚ نَصِيبٗا مَّفۡرُوضٗا ٧﴾ [النساء: ٧]

“পিতা-মাতা এবং আত্মীয়-স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে পুরুষের অংশ আছে এবং পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে নারীরও অংশ আছে, সেটা অল্পই হোক বা বেশিই হোক, এক নির্ধারিত অংশ”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৭]

আর নারী ও তার অবস্থা দেখাশুনা করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করে আল-কুরআনের বহু বক্তব্য এসেছে; আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:

﴿وَلَهُنَّ مِثۡلُ ٱلَّذِي عَلَيۡهِنَّ بِٱلۡمَعۡرُوفِۚ﴾ [البقرة: ٢٢٨]

“আর নারীদের তেমনি ন্যায়সঙ্গত অধিকার আছে, যেমন আছে তাদের ওপর পুরুষদের”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২২৮]

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:

﴿وَعَاشِرُوهُنَّ بِٱلۡمَعۡرُوفِۚ﴾ [النساء: ١٩]

“আর তোমরা তাদের সাথে সৎভাবে জীবন যাপন করবে”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৯]

আর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«اسْتَوْصُوا بِالنِّسَاءِ خَيْرًا».

“তোমরা নারীদের সাথে উত্তম ব্যবহারের নসীহত গ্রহণ কর।”[1]

তিনি আরও বলেন:

«الدُّنْيَا مَتَاعٌ وَخَيْرُ مَتَاعِ الدُّنْيَا الْمَرْأَةُ الصَّالِحَةُ».

“দুনিয়া হচ্ছে উপভোগের বস্তু। আর দুনিয়ার উপভোগের বস্তুসমূহের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হলো পূণ্যবতী স্ত্রী।”[2]

আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করা হলো: আমাদের কোনো ব্যক্তির ওপর তার স্ত্রীর কী অধিকার আছে? জবাবে তিনি বললেন:

«أن تُطعِمَها إِذا طَعِمتَ، وتكسوَها إِذا اكْتَسَيتَ، ولا تضرِبِ الوجهَ ، ولا تُقبِّحْ، ولا تَهْجُرْ إِلا في البيت».

“তুমি যখন আহার করবে, তখন তাকেও আহার করাবে, আর তুমি যখন বস্ত্র পরিধান করবে, তখন তাকেও পরিধান করাবে। আর তার চেহারা তথা মুখমণ্ডলে প্রহার করো না, আর অশ্লীল ভাষায় গালি দিয়ো না এবং ঘরের মধ্যে ছাড়া তার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ো না।”[3]

আর ইসলাম নারীর যত্নে এবং তার সম্মান ও মর্যাদা রক্ষায় যা নিয়ে এসেছে, তার অন্যতম হলো তাকে উত্তম চরিত্র অবলম্বনের নির্দেশ দেওয়া, আর উত্তম চরিত্র মানে ঐ চরিত্র, যা দিয়ে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নবী ও রাসূল হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছে; লজ্জার চরিত্র, যাকে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈমানের অঙ্গ বলে আখ্যায়িত করেছেন এবং তাকে ঈমানের অন্যতম একটি শাখা বলে উল্লেখ করেছেন। আর কেউই এটা অস্বীকার করবে না যে, শরী‘আত প্রবর্তকের পক্ষ থেকে এবং সামাজিকভাবে লজ্জাশীলতার ব্যাপারে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে নারীর শালীনতা রক্ষার জন্য এবং সে লজ্জাকে তার চারিত্রিক ভূষণ হিসেবে গ্রহণ করবে, যা তাকে ফিতনার জায়গা ও সন্দেহপূর্ণ স্থানসমূহ থেকে দূরে সরিয়ে রাখবে।

আর কোনো সন্দেহ নেই যে, তার চেহারা ও আকর্ষণীয় স্থানসমূহ ঢেকে রাখার দ্বারা তার পর্দা পালনের বিষয়টি তার জন্য বড় ধরনের শালীনতা ও জীবনের অলংকার, যার মধ্যে রয়েছে তার ব্যক্তিত্বের সুরক্ষা এবং ফিতনা-ফাসাদ থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করার ব্যবস্থা। আর যেই পর্দা নারীর জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, সে তা এমনভাবে গ্রহণ করবে, যাতে সে তার স্বামী ও একান্ত আপন (মাহরাম) লোক ছাড়া অন্যান্য পুরুষদের থেকে তার গোটা শরীরকে ঢেকে রাখার ব্যবস্থা করবে। কেননা, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّبِيُّ قُل لِّأَزۡوَٰجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَآءِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ يُدۡنِينَ عَلَيۡهِنَّ مِن جَلَٰبِيبِهِنَّۚ ذَٰلِكَ أَدۡنَىٰٓ أَن يُعۡرَفۡنَ فَلَا يُؤۡذَيۡنَ﴾ [الاحزاب: ٥٩]

“হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে ও মুমিনদের নারীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিছু অংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজতর হবে, ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না”। [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৫৯]‘জিলবাব’ (الجلباب) হলো এমন বোরকা বা প্রশস্ত চাদর, যা গোটা দেহকে আচ্ছাদিত করে। সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নবীকে নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তিনি তার স্ত্রী, কন্যা ও মুমিন নারীগণকে বলে দেন, তারা যেন তাদের চাদরের কিছু অংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়, যাতে তাদের চেহারা ও বুকের উপরিভাগ ঢেকে যায়।

>
[1] সহীহ বুখারী, হাদীস নং- ৪৮৯০; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ৩৭২০

[2] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ৩৭১৬

[3] আবু দাউদ, হাদীস নং- ২১৪৪