আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِنَّمَا ٱلۡخَمۡرُ وَٱلۡمَيۡسِرُ وَٱلۡأَنصَابُ وَٱلۡأَزۡلَٰمُ رِجۡسٞ مِّنۡ عَمَلِ ٱلشَّيۡطَٰنِ فَٱجۡتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ ٩٠﴾ [المائ‍دة: ٩٠]

“নিশ্চয় মদ, জুয়া, মূর্তি ও ভাগ্য নির্ণয়কারী তীর বা লটারী অপবিত্র শয়তানী কাজ ছাড়া আর কিছু নয়। সুতরাং তোমরা এগুলো থেকে বিরত থাক। আশা করা যায় তোমরা সফলকাম হবে”। [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৯০]

মদ্যপান থেকে বিরত থাকার আদেশ প্রদান তা হারাম হওয়ার অন্যতম শক্তিশালী দলীল। আল্লাহ তা‘আলা অত্র আয়াতে মদের সঙ্গে মূর্তির কথা উল্লেখ করেছেন। মূর্তি কাফেরদের উপাস্য ও দেব-দেবীর সাধারণ নাম। মূর্তিপূজা হারাম হেতু মদ্যপানও হারাম। তাই উক্ত আয়াতে আল্লাহ উল্লিখিত জিনিসগুলো হারাম করেন নি; বরং বিরত থাকতে বলেছেন বলে এত্থেকে গা বাঁচানোর কোনো উপায় নেই।

মদ্যপান সম্পর্কে হাদীসেও কঠোর সতর্কবাণী উচ্চারিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«إِنَّ عَلَى اللهِ عَزَّ وَجَلَّ عَهْدًا لِمَنْ يَشْرَبُ الْمُسْكِرَ أَنْ يَسْقِيَهُ مِنْ طِينَةِ الْخَبَالِ» قَالُوا: يَا رَسُولَ اللهِ، وَمَا طِينَةُ الْخَبَالِ؟ قَالَ: «عَرَقُ أَهْلِ النَّارِ» أَوْ «عُصَارَةُ أَهْلِ النَّارِ»

“যে ব্যক্তি মদ্যপান করে তার জন্য আল্লাহর অঙ্গীকার হলো, তিনি তাকে ‘ত্বীনাতুল খাবাল’ পান করাবেন। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘ত্বীনাতুল খাবাল’ কী? তিনি বললেন, জাহান্নামীদের ঘাম অথবা পুঁজ-রক্ত”।[1]

ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«مَنْ لَقِيَ اللَّهَ مُدْمِنَ خَمْرٍ لَقِيَهُ كَعَابِدِ وَثَنٍ»

“শরাবপানে অভ্যস্তরূপে যে মারা যাবে, (কিয়ামতে) সে একজন মূর্তিপূজকের ন্যায় আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে”।[2]

আমাদের যুগে হরেক রকম মদ ও নেশা জাতীয় দ্রব্যাদি বেরিয়েছে। তাদের নামও আরবী, আজমী বিভিন্ন প্রকার রয়েছে। যেমন-বিয়ার, হুইস্কি, চুয়ানি, তাড়ি ভদকা, শ্যাম্পেন, কোডিন, মরফিন, প্যাথেড্রিন, হেরোইন, ড্রাগ ইত্যাদি। অনুরূপভাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে ভবিষ্যদ্বাণী করে বলেছেন,

«لَيَشْرَبَنَّ نَاسٌ مِنْ أُمَّتِي الْخَمْرَ يُسَمُّونَهَا بِغَيْرِ اسْمِهَا»

‘নিশ্চয় আমার উম্মতের কিছু লোক মদ পান করবে, তারা সেটার ভিন্ন নামকরণ করে নেবে”।[3] রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী উক্ত নাম পাল্টিয়ে মদ পানকারী মুসলিমও বর্তমান যামানায় প্রকাশ পেয়েছে। তারা উহার নাম দিয়েছে ‘রূহানী টনিক’ বা ‘জীবনী সুধা’। অথচ এটা নিছক মিথ্যার ওপর প্রলেপ প্রদান ও প্রতারণা মাত্র। এ সমস্ত প্রতারকদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,

﴿ يُخَٰدِعُونَ ٱللَّهَ وَٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَمَا يَخۡدَعُونَ إِلَّآ أَنفُسَهُمۡ وَمَا يَشۡعُرُونَ ٩﴾ [البقرة: ٩]

“তারা আল্লাহ ও ঈমানদারদের সাথে প্রতারণা করে অথচ তারা যে নিজেদের সাথেই প্রতারণা করছে তা তারা অনুধাবন করতে পারছে না”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ৯]

মদ কী এবং তার বিধান কী হবে শরী‘আতে তার পরিপূর্ণ নীতিমালা তুলে ধরা হয়েছে, যাতে ফিৎনা ও দ্বন্দ্বের মূলোৎপাটন করা যায়। এ নীতিমালা হলো-

«كُلُّ مُسْكِرٍ خَمْرٌ، وَكُلُّ مُسْكِرٍ حَرَامٌ»

“প্রত্যেক নেশার দ্রব্যই ‘খামর’ বা মদ এবং প্রত্যেক নেশার দ্রব্যই হারাম”।[4]

সুতরাং যা কিছু মস্তিষ্কের সঙ্গে মিশে জ্ঞান-বুদ্ধিকে নেশাগ্রস্ত করে তোলে তাই হারাম। চাই তা কম হোক বা বেশি হোক[5]; তরল পদার্থ হোক কিংবা কঠিন পদার্থ হোক। এসব নেশার দ্রব্যের নাম যাই হোক মূলতঃ এগুলো সবই এক এবং এসবের বিধানও এক।

পরিশেষে মদ্যপায়িদের উদ্দেশ্যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি নসীহত তুলে ধরা হলো। তিনি বলেছেন,

«مَنْ شَرِبَ الْخَمْرَ وَسَكِرَ، لَمْ تُقْبَلْ لَهُ صَلَاةٌ أَرْبَعِينَ صَبَاحًا، وَإِنْ مَاتَ دَخَلَ النَّارَ، فَإِنْ تَابَ تَابَ اللَّهُ عَلَيْهِ، وَإِنْ عَادَ، فَشَرِبَ، فَسَكِرَ، لَمْ تُقْبَلْ لَهُ صَلَاةٌ أَرْبَعِينَ صَبَاحًا، فَإِنْ مَاتَ دَخَلَ النَّارَ، فَإِنْ تَابَ، تَابَ اللَّهُ عَلَيْهِ، وَإِنْ عَادَ، فَشَرِبَ، فَسَكِرَ، لَمْ تُقْبَلْ لَهُ صَلَاةٌ أَرْبَعِينَ صَبَاحًا، فَإِنْ مَاتَ دَخَلَ النَّارَ، فَإِنْ تَابَ تَابَ اللَّهُ عَلَيْهِ، وَإِنْ عَادَ، كَانَ حَقًّا عَلَى اللَّهِ، أَنْ يَسْقِيَهُ مِنْ رَدَغَةِ الْخَبَالِ، يَوْمَ الْقِيَامَةِ» قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَا رَدَغَةُ الْخَبَالِ؟ قَالَ: «عُصَارَةُ أَهْلِ النَّارِ»

“যে ব্যক্তি মদ পান করে ও নেশাগ্রস্ত হয় তার চল্লিশ দিনের সালাত কবুল হবে না। যদি সে ঐ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে তাহলে জাহান্নামে যাবে। আর যদি তওবা করে তবে আল্লাহ তার তওবা কবুল করবেন। পুনরায় যদি সে মদ পান করে ও নেশাগ্রস্থ হয় তবে তার চল্লিশ দিনের সালাত কবুল হবে না। যদি সে ঐ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে তাহলে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। পুনরায় সে যদি মদ পান করে ও নেশাগ্রস্ত হয় তবে তার চল্লিশ দিনের সালাত কবুল হবে না। যদি সে ঐ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে তাহলে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। পুনরায় যদি সে মদ পান করে তবে তাকে কিয়ামত দিবসে রাদগাতুল খাবাল’ পান করানো আল্লাহর জন্য কর্তব্য হয়ে দাঁড়াবে। সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! রাদগাতুল খাবল কী? তিনি বললেন, জাহান্নামীদের দেহ নিঃসৃত পূঁজ-রক্ত”।[6]

>
[1] সহীহ মুসলিম; মিশকাত, হাদীস নং ৩৬৩৯।

[2] মুসনাদে আহমদ; মিশকাত, হাদীস নং ৩৬৫৬, সনদ হাসান।

[3] সুনান আবু দাউদ; ইবন মাজাহ; মিশকাত, হাদীস নং ৪২৯২।

[4] সহীহ মুসলিম; মিশকাত, হাদীস নং ৩৬৩৮।

[5] সুনান আবু দাউদ; মিশকাত, হাদীস নং ৩৬৪৫।

[6] ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩৩৭৭; সহীহুল জামে‘, হাদীস নং ৬৩১৩।