بسم الله الرحمن الرحيم
সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, আমরা তাঁর প্রশংসা করি, তাঁর নিকট সাহায্য ও ক্ষমা প্রার্থনা করি এবং তাঁর নিকট তাওবা করি, আর আমাদের নফসের জন্য ক্ষতিকর এমন সকল খারাপি এবং আমাদের সকল প্রকার মন্দ আমল থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই। আল্লাহ যাকে পথ প্রদর্শন করেন, তাকে পথভ্রষ্ট করার কেউ নেই আর যাকে তিনি পথহারা করেন, তাকে পথ প্রদর্শনকারীও কেউ নেই। আর আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই, যিনি তাঁর সম্মানিত কিতাবে বলেছেন:
﴿وَلَن تَرۡضَىٰ عَنكَ ٱلۡيَهُودُ وَلَا ٱلنَّصَٰرَىٰ حَتَّىٰ تَتَّبِعَ مِلَّتَهُمۡۗ ﴾ [البقرة: ١٢٠]
“আর ইয়াহূদী ও নাসারারা আপনার প্রতি কখনো সন্তুষ্ট হবে না, যতক্ষণ না আপনি তাদের মিল্লাতের অনুসরণ করেন”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১২০]
আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল, যিনি বলেছেন:
«لتتبعن سنن من كان قبلكم شبرا بشبر وذراعا بذراع حتى لو دخلوا جُحرَ ضب لتبعتموهم , قلنا : يا رسول الله اليهود والنصارى؟ قال : فمن؟».
“তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তীদের রীতিনীতি পুরোপুরি অনুসরণ করবে, প্রতি বিঘতে বিঘতে এবং প্রতি গজে গজে। এমনকি তারা যদি ষাণ্ডার গর্তেও প্রবেশ করে থাকে, তবে তোমরাও তাতে প্রবেশ করবে। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি ইয়াহূদী ও নাসারাদের কথা বলেছেন? জবাবে তিনি বললেন: তবে আর কার কথা বলছি”?[1]
যিনি আরও বলেছেন:
«من تشبه بقوم فهو منهم».
“যে ব্যক্তি কোনো জাতির অনুকরণ, অনুসরণ ও সামঞ্জস্য বিধান করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে”।[2]
অতঃপর.......
হে সম্মানিত ভাইসব! কাফিরদের অনুকরণ, অনুসরণ ও তাদের সামঞ্জস্য বিধান করার বিষয়টি নিঃসন্দেহে মারাত্মক বিষয়সমূহের অন্তর্ভুক্ত একটি বিষয়, যা ইসলাম সীমাহীন গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করেছে। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, যিনি তার আমানত যথাযথভাবে পৌঁছিয়ে দিয়েছেন, রিসালাতের দায়িত্ব পূর্ণভাবে আদায় করেছেন এবং উম্মতের কল্যাণ কামনা করেছেন, তিনি উম্মতকে বহু হাদীসে এবং বিভিন্ন সময় ও সুযোগে কাফিরদের অনুকরণ করার ব্যাপারে কখনও সার্বিকভাবে আবার কখনও কখনও সবিস্তারে সতর্ক করে দিয়েছেন। অথচ এ উম্মতের মধ্য থেকে কতিপয় দল ও গোষ্ঠী এ অনুসরণ-অনুকরণ করার কাজে জড়িত হয়ে পড়েছে, যদিও তাদের তাতে জড়িত হওয়ার পর্যায় ভিন্ন ভিন্ন স্তরের। আবার সময়ে সময়ে এ কাজের ভয়াবহতাও ভিন্ন ভিন্ন পর্যায়ের, তবে সম্ভবত আমার পক্ষ থেকে বাড়িয়ে বলা হবে না যদি এটা বলি যে, এ যুগের মুসলিমগণ যে হারে কাফিরদের অনুসরণ-অনুকরণ করছে, তা অতীতের যে কোনো সময়ে (উম্মত কর্তৃক কাফিরদের) অনুসরণ-অনুকরণ করার চেয়ে অত্যধিক ভয়ঙ্কর পর্যায়ের।
এ বিষয়টির ভয়াবহতা সত্ত্বেও আমি দেখছি গুণীজন ও জ্ঞানী সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে বিষয়টিকে খুব কমই গুরুত্ব দিতে। তাই আমি মনে করি যে, মুসলিমগণের জন্য এখন তার বর্ণনা করাটা অতীব জরুরি, যা জ্ঞান অনুসন্ধানকারী ব্যক্তিবর্গের অন্যতম দায়িত্ব ও কর্তব্যের অন্তর্ভুক্ত।
এটাই বলতে চেয়েছি, অচিরেই আমি কাফিরদের অনুকরণ করার বিষয়টির কয়েকটি দিক আলোচনায় আনব। কারণ, বিষয়টি বিভিন্ন শাখায় বিভক্ত ও প্রলম্বিত; কিন্তু আমাদের জন্য জরুরি হচ্ছে এ বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট কিছু অতীব প্রয়োজনীয় মূলনীতি ও জরুরি নিয়ম-কানূন অনুধাবন করা, যার জ্ঞান রাখা প্রত্যেক মুসলিমের ওপর কর্তব্য, যাতে সে আকীদা-বিশ্বাস অথবা ইবাদত অথবা আচার-আচরণ অথবা রীতি-নীতির ক্ষেত্রে কাফিরদের অনুসরণ-অনুকরণে লিপ্ত হওয়া থেকে সাবধান হতে পারে। সম্ভবত আমি সময়ের প্রতি লক্ষ্য রেখে সামান্য কিছু বিষয়ের মধ্যেই আমার আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখব।[3]
[2] ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ: ২/৫০; আবু দাউদ রহ. বর্ণনা করেছে উৎকৃষ্ট সনদে, হাদীস নং-৪০৩১; আর আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন, ‘সহীহ আল-জামে‘ আস-সাগীর’, হাদীস নং-৬০২৫।
[3] মূলত এ বিষয়টি ছিল একটি বক্তব্য, যা আমি রিয়াদস্থ ‘মাসজিদে না‘য়ীম’ এর মধ্যে পেশ করেছি; পরবর্তীতে কিছু সংখ্যক শুভাকাঙ্খী তা বই আকারে প্রকাশ করার জন্য আমাকে পীড়াপীড়ি করল; ফলশ্রুতিতে কিছু টীকা সম্পাদন ও ঈষৎ পরিবর্তন করার পর আমি (তা প্রকাশ করতে) সম্মত হয়েছি।
‘তাশাব্বুহ’ শব্দের আভিধানিক অর্থ:
‘তাশাব্বুহ’ শব্দটি ‘মুশাবাহাহ’ শব্দ থেকে গৃহীত। তার অর্থ হলো: ‘মুমাসালাহ’ বা সাদৃশ্য গ্রহণ, মিল করা; অনুরূপ অপর অর্থ ‘মুহাকাত’ বা অনুকরণ করা, নকল করা; তদ্রূপ অন্য অর্থ হচ্ছে, তাকলীদ বা অন্ধ অনুসরণ করা।
আর ‘তাশবীহ’ মানে হলো: তামসীল বা দৃষ্টান্ত স্থাপন, সাদৃশ্য নির্ধারণ।
পক্ষান্তরে ‘মুতাশাবিহাত’ মানে হলো: ‘মুতামাসিলাত’ বা সাদৃশ্যপূর্ণ বিষয়াদি। যেমন, বলা হয়,
أشبه فلان فلانا أي ماثله وحاكاه وقلده
“অমুক ব্যক্তি অমুক ব্যক্তির মতো হয়েছে, অর্থাৎ সে তার সাদৃশ্য গ্রহণ করেছে, তার অনুকরণ করেছে এবং সে তাকে অন্ধভাবে অনুসরণ করেছে।
পরিভাষায় যে ‘তাশাব্বুহ’ তথা অনুসরণ-অনুকরণ করা নিষিদ্ধ করে কুরআন ও সুন্নায় বক্তব্য এসেছে, তা হলো: যে কোনো প্রকার কাফিরদের আকীদা-বিশ্বাস, তাদের পূজা-পার্বন, তাদের রীতি-নীতি, তাদের আচার-আচরণের অনুরূপ কাজ করা, যা একান্তভাবেই তাদের বৈশিষ্ট্যসমূহের অন্তর্ভুক্ত বলে স্বীকৃত।
অনুরূপভাবে অসৎ ব্যক্তিদের অনুকরণ করা, যদিও তারা মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত হোক না কেন। যেমন, ফাসিক (পাপচারী), জাহিল (অজ্ঞ) ও বেদুইন বা যাযাবরগণ, যাদের দীন পরিপূর্ণ হয় নি, যেমন খুব শীঘ্রই তার বিবরণ আসছে।
অতএব, আমরা মোটামুটিভাবে সংক্ষেপে বলতে পারি, যা কাফিরদের বৈশিষ্ট্য, আকীদা-বিশ্বাস, আচার-আচরণ ও পূজা-পার্বনসমূহের অন্তর্ভুক্ত নয় এবং যা শরী‘আতের বক্তব্য বা মূলনীতির সাথে সাংঘর্ষিক নয় আর তার ওপর ভিত্তি করে কোনো গোলযোগেরও উদ্ভব হয় না, তা ‘তাশাব্বুহ’ বা ‘অনুসরণ-অনুকরণ’ এর অন্তর্ভুক্ত হবে না আর এটাই হলো সংক্ষিপ্ত মূলনীতি।
শুরুতেই আমাদেরকে ইসলামের মূলনীতি সম্পর্কে বুঝতে হবে- নিশ্চয় দীনের মূলভিত্তি হলো ‘কায়মনোবাক্যে মেনে নেওয়া’। আল্লাহ তা‘আলার নিকট জন্য সবকিছু মেনে নেওয়া এবং রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সবকিছু মেনে নেওয়া।
আর ‘মেনে নেওয়া’ এর অর্থ: আল্লাহ তা‘আলার কর্তৃক প্রদত্ত সংবাদকে সত্য বলে স্বীকার করা, তাঁর নির্দেশ মেনে নেওয়া এবং তাঁর নিষেধকৃত বস্তু পরিত্যাগ করা। অনুরূপভাবে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক প্রদত্ত সংবাদকে সত্য বলে স্বীকার করা, তাঁর নির্দেশ মেনে নেওয়া, তাঁর নিষেধ করা বস্তু বা বিষয় থেকে দূরে থাকা এবং তাঁর আদর্শ মেনে চলা।
সুতরাং যখন আমরা এ মূলনীতি সম্পর্কে জানতে পারব, তখন প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তির জন্য উচিৎ হবে:
প্রথমত: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট থেকে যা কিছু এসেছে, তার সবকিছুকে মেনে নেওয়া।
দ্বিতীয়ত: তাঁর আনুগত্য করা এবং কাফিরদের সামঞ্জস্য বিধান করার ব্যাপারে তাঁর পক্ষ থেকে যে নিষেধাজ্ঞা এসেছে, তা মান্য করা।
তৃতীয়ত: আল্লাহর বাণী ও তাঁর শরী‘আতের প্রতি পূর্ণ আত্মসমর্পণ, সেগুলোর প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন এবং সেগুলোকে মেনে নেওয়ার পর তার জন্য (শরী‘আতের বিধি-বিধানের) কারণসমূহ অনুসন্ধান করতে কোনো বাধা নেই।
তাই আমরা বলতে পারি যে, কাফিরদের অনুসরণ-অনুকরণ করার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞার কারণসমূহ অনেক; যার অধিকাংশই সুস্থ বিবেক ও সঠিক স্বভাব-প্রকৃতিসম্পন্ন ব্যক্তিগণ খুব সহজে বুঝতে পারেন।
প্রথমত: কাফিরদের কর্মসমূহের ভিত্তিই হচ্ছে ভ্রষ্টতা ও ফাসাদের ওপর, বিষয়ের ওপর। এটাই হচ্ছে কাফিরদের কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে মূলনীতি। চাই সেসব কর্ম তোমাকে মুগ্ধ করুক অথবা নাই করুক; সেগুলো ফেতনা-ফাসাদপূর্ণ হওয়ার বিষয়টি প্রকাশ্য হউক বা অপ্রকাশ্য হউক; কারণ, কাফিরদের আকীদা-বিশ্বাস, আচার-আচরণ, পূজা-পার্বন, উৎসব ও রীতিনীতিসমূহের সাথে সংশ্লিষ্ট তাদের কর্মসমূহ হয়ে থাকে ভ্রষ্টতা, বিকৃতি ও অন্যায়ের ওপর ভিত্তি করে। তাদের দ্বারা যে সব সৎকর্ম হয়ে থাকে তা হচ্ছে ব্যতিক্রম। সুতরাং যখন তাদের মাঝে কোনো সৎকর্ম দেখতে পাবে, তখন তোমাদের জানা থাকা উচিত যে, এগুলো এমন কর্মের অন্তর্ভুক্ত যার ব্যাপারে তাদের কাউকে কোনো প্রতিদান দেওয়া হবে না; যেমনটি আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿وَقَدِمۡنَآ إِلَىٰ مَا عَمِلُواْ مِنۡ عَمَلٖ فَجَعَلۡنَٰهُ هَبَآءٗ مَّنثُورًا ٢٣﴾ [الفرقان: ٢٣]
“আর আমরা তাদের কৃতকর্মের প্রতি অগ্রসর হয়ে সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করব”। [সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ২৩]
দ্বিতীয়ত: কাফিরদের অনুকরণ করার বিষয়টি মুসলিমগণকে তাদের অনুসারী বানিয়ে ছাড়বে। আর এর মধ্যে আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিরুদ্ধাচরণ করা এবং অবিশ্বাসীদের পথ অনুসরণ করার বিষয় রয়েছে। আর এ ব্যাপারে কঠিন হুমকি প্রদান করা হয়েছে; আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَمَن يُشَاقِقِ ٱلرَّسُولَ مِنۢ بَعۡدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ ٱلۡهُدَىٰ وَيَتَّبِعۡ غَيۡرَ سَبِيلِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ نُوَلِّهِۦ مَا تَوَلَّىٰ وَنُصۡلِهِۦ جَهَنَّمَۖ وَسَآءَتۡ مَصِيرًا ١١٥﴾ [النساء: ١١٥]
“আর কারো নিকট সৎপথ প্রকাশ হওয়ার পর সে যদি রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মুমিনদের পথ ছাড়া অন্য পথ অনুসরণ করে, তবে যেদিকে সে ফিরে যায়, সে দিকেই তাকে আমরা ফিরিয়ে দেব এবং তাকে জাহান্নামে দগ্ধ করাব, আর তা কতই না মন্দ আবাস”! [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১১৫]
তৃতীয়ত: অনুসরণকারী ব্যক্তি ও অনুসৃত ব্যক্তির সাদৃশ্যপূর্ণ হওয়া, যা অনুসরণকারী ব্যক্তি ও অনুসৃত ব্যক্তির মাঝে কোনো না কোনো সামঞ্জস্য সৃষ্টি করবে। অর্থাৎ পরস্পরের কাঠামোগত সম্পৃক্ততা, আন্তরিক আকর্ষণ এবং কথায় ও কাজে পারস্পরিক মিল -এগুলো হলো এমন বিষয়, যা ঈমান বিনষ্টকারী; তাতে লিপ্ত হওয়া কোনো মুসলিম ব্যক্তির জন্য উচিত নয়।
চতুর্থত: অনুকরণ করার বিষয়টি অধিকাংশ ক্ষেত্রে কাফিরদের প্রতি মুগ্ধ বা তুষ্ট থাকার নীতি সৃষ্টি করবে। সেখান থেকে যেমন, তাদের ধর্ম, আচার-আচরণ, রীতি-নীতি, কর্মকাণ্ড এবং তারা যে অন্যায় ও বিশৃঙ্খলার ওপর প্রতিষ্ঠিত আছে, তার প্রতি মুগ্ধ থাকা, আর এ তুষ্টি অপরিহার্যভাবে সুন্নাতসমূহ এবং সত্য ও হিদায়াত প্রতি তাচ্ছিল্য প্রদর্শন করতে বাধ্য করবে, যা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিয়ে এসেছেন এবং যার ওপর পূর্ববর্তী সৎকর্মশীল ব্যক্তিগণ প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। কারণ, যে ব্যক্তি কোনো জাতির অনুকরণ করে, সে ব্যক্তি তাদের মতো হয়ে যায় এবং সে তাদের কর্মকাণ্ডের প্রতি সন্তুষ্ট থাকে; আর এটা তাকে মুগ্ধ ও তুষ্ট করে; আর অপরদিকে বিপরীত কথা ও কাজ তখন আর তাকে আনন্দ দিবে না।
পঞ্চমত: পরস্পরের অনুকরণের বিষয়টি সম্প্রীতি ও ভালবাসা এবং অনুকরণকারীদের মাঝে পারস্পরিক বন্ধুত্বের সৃষ্টি করে; কারণ, মুসলিম ব্যক্তি যখন কাফিরের অনুসরণ করবে, তখন আবশ্যকীয়ভাবে তার মনের মাঝে তার জন্য বন্ধুত্বের আকর্ষণ পাওয়া যাবে আর এ অন্তরঙ্গতাই নিশ্চিতভাবে মুমিন, সৎকর্মশীল, মুত্তাকী, সুন্নাহর অনুসারী ও দীনের ওপর সুদৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিবর্গকে বাদ দিয়ে অন্যদের জন্য ভালোবাসা, সন্তুষ্টি ও পারস্পরিক বন্ধুত্বের জন্ম দিবে; আর এটা আবশ্যকীয়ভাবেই একটি স্বভাবসুলভ ব্যাপার, যা প্রত্যেক বিবেকবান ব্যক্তিই অনুভব করতে পারে; বিশেষ করে যখন অনুসরণকারী নিজে একাকিত্ব অনুভব করে অথবা অনুসরণকারী ব্যক্তি মানসিকভাবে পর্যুদস্ত থাকে, এ কারণে সে যখন অন্যকে অনুসরণ করে, তখন সে অনুসৃত ব্যক্তির মহত্ব, তার প্রতি ভালোবাসা ও বন্ধুত্ব এবং উভয়ের মধ্যকার মিল অনুভব করে। এটা যদি কেবল বাহ্যিক মিলেই সীমাবদ্ধ থাকতো তবুও তা হারাম হওয়ার জন্য যথেষ্ট হতো, অথচ বাহ্যিক মিল, অভ্যাসের মিল, চাল-চলনে মিল থাকা আবশ্যকীয়ভাবে অভ্যন্তরীণ মিল-মহব্বত সৃষ্টি করে। আর এটা এমন এক বিষয়, যা এমন প্রত্যেক ব্যক্তিই অনুধাবন করতে পারে, মানুষের চালচলনের ক্ষেত্রে এ ধরনের বিষয়সমূহ নিয়ে যে চিন্তাভাবনা করে।
এখানে আমি পরস্পর পরস্পরের অনুকরণকারীদের মাঝে বিদ্যমান সম্পর্ক, মহব্বত (ভালোবাসা) ও বন্ধুত্বের ব্যাপারে একটি দৃষ্টান্ত পেশ করছি:
যদি কোনো মানুষ ভিন্ন দেশে গমন করে, তবে সে তাতে একাকিত্ব অনুভব করতে থাকে, ফলে সে যদি তার মতো কোনো মানুষকে তার পোষাকের মতো পোষাক পরিধান করে বাজারে চলাফেরা করতে এবং তার ভাষায় কথা বলতে দেখে, তাহলে সে অবশ্যই তার কেন্দ্রিক অনেক বেশি পরিমাণে ভালোবাসা ও হৃদ্যতা অনুভব করবে। আর এ ভালোবাসা ও হৃদ্যতার পরিমাণ তখন সে অবস্থার চেয়ে বেশি দেখা দিবে যদি এ লোকটিকে সে তার নিজ দেশে প্রত্যক্ষ করত।
অতএব, মানুষ যখন অনুভব করে যে, সে অপরের অনুসারী, তখন এ অনুকরণ মনের মধ্যে তার জন্য নিশ্চিতভাবে প্রভাব তৈরি করবে; এটা হচ্ছে স্বাভাবিক অবস্থায়। কিন্তু যদি কোনো মুসলিম কোনো কাফিরের প্রতি মুগ্ধ হয়ে তার অনুকরণ করে, তাহলে তার অবস্থা কেমন হবে তা সহজেই অনুমেয়! আর এটাই হলো আসল কথা। কারণ কোনো মুসলিম ব্যক্তির পক্ষ থেকে কোনো কাফির ব্যক্তির অনুসরণ-অনুকরণ করার বিষয়টি কেবল তখনই সংঘটিত হবে, যখন সে তার প্রতি মুগ্ধ হয়ে যায়, তার অনুসরণকে নিজের জন্য গৌরবের বিষয় মনে করে, তার মত চাল-চলনকে মনে স্থান দিবে, তার ভালোবাসায় মজে যাবে। আর এটাই তাদের পরস্পরের মাঝে অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব ও ভালোবাসার সৃষ্টি করবে। যেমনটি আমরা ইউরোপিয়ান সভ্যতায় অভ্যস্ত মুসলিমগণের মাঝে লক্ষ্য করে থাকি।
ষষ্ঠত: আমাদেরকে (কাফিরদের) অনুকরণ করা থেকে নিষেধ করা হয়েছে; কারণ, মুসলিম কর্তৃক কাফিরের অনুকরণ করার বিষয়টি অধিকাংশ ক্ষেত্রে আবশ্যকীয়ভাবে মুসলিমকে নীচ-অপমানিত ও দুর্বল অবস্থানে ফেলবে। ফলে সে নিজেকে হীন ও পরাজিত মনে করতে থাকবে। আর বর্তমানে কাফিরদেরকে অনুসরণকারীদের অনেকেই এ পরিস্থিতির মাঝেই আছে।
প্রথম মূলনীতি: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর এমন সত্য ও বাস্তব সংবাদ পরিবেশন করেছেন, যা কখনো না ঘটে থাকতে পারে না। (আর তা হলো) এ উম্মাত অবশ্যই তাদের পূর্ববর্তী উম্মাতগণের রীতি-নীতির অনুসরণ করবে। আর আমাদের পূর্ববর্তী জাতিদের অনুসরণ সংক্রান্ত হাদিসটি বিশুদ্ধ হাদিস, যা ‘সহীহ’ ও ‘সুনান’ গ্রন্থসমূহে বর্ণিত হয়েছে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী:
«لتتبعن سنن من قبلكم شبرا بشبر وذراعا بذراع».
“তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তীদের রীতিনীতি পুরোপুরি অনুসরণ করবে, প্রতি বিঘতে বিঘতে এবং প্রতি গজে গজে”।[1]
আর এ হাদীসটি ছাড়াও আরও অনেক হাদীস রয়েছে, যেগুলো দৃঢ় সিদ্ধান্তে পৌঁছায় যে, এ উম্মাতের অনেক গোষ্ঠী ও দল কাফিরদের অনুসরণে লিপ্ত হবে। আর তাদের যেসব রীতি-নীতির কথা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সেগুলো আকীদা (মৌলিক বিশ্বাস), ইবাদত, বিধি-বিধান, স্বভাব-চরিত্র, আচার-আচরণ ও যাবতীয় উৎসবকেই অন্তর্ভুক্ত করে, যেমনটি আলেমগণ বলেছেন।
এখানে আমাদের পূর্ববর্তীগণ বলতে যাদেরকে বুঝানো হয়েছে, সে বিষয়ে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত অপরাপর হাদীসসমূহে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এখানে সেগুলো বর্ণনা করার অবকাশ নেই, তবে সেসব হাদীসের কোনো কোনোটিতে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে ব্যাখ্যা করেছেন এ বলে যে, তারা হলো পারস্য ও রোমবাসী। আবার কোনো কোনোটিতে তিনি তাদেরকে ব্যাখ্যা করেছেন এ বলে যে, তারা হলো ইয়াহূদী ও খ্রিষ্টানগণ, আবার কোনো কোনোটিতে তিনি তাদেরকে সাধারণভাবে ব্যাখ্যা করেছেন এ বলে যে, তারা হলো কাফির এবং কোনোটিতে তিনি তাদেরকে ব্যাখ্যা করেছেন এ বলে যে, তারা হলো মুশরিক। বস্তুত হাদীসের এসব ভাষ্যের এক অংশ অপর অংশকে সমর্থন করে।
অনুরূপভাবে এটা জানাও আবশ্যক যে, উম্মাতের মধ্য থেকে যারা কাফিরদের রীতি-নীতি অনুসরণ করবে, তারা হবে কিছু ফির্কা বা সম্প্রদায়; কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানিয়ে দিয়েছেন যে, অবশ্যই এ উম্মাতের মধ্য থেকে একটি দল কিয়ামত পর্যন্ত সত্যের ওপর স্পষ্টভাবে অবশিষ্ট (অটল) থাকবে, তারা সাহায্যপ্রাপ্ত দল, তারা সত্য প্রচার করবে, সৎকাজের আদেশ করবে, অসৎকর্ম থেকে নিষেধ করবে, যে ব্যক্তি তাদেরকে অপমানিত করবে সে তাদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারবে না এবং যে ব্যক্তি তাদের সাথে শত্রুতা করবে, সেও তাদের ক্ষতি করতে পারবে না। আর এসব লোকজনই হলো মুক্তিপ্রাপ্ত দল। এ দলের মুক্তিপ্রাপ্ত হওয়ার জন্য এবং সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকার জন্য অন্যতম আবশ্যকীয় বিষয় হলো, তাদের দ্বারা কাফিরদের অনুসরণ-অনুকরণ না ঘটা।
সুতরাং এর ওপর ভিত্তি করে উম্মাত সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক ‘তারা অবশ্যই ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতিসমূহের রীতিনীতির অনুসরণ করবে’ বলে যে সংবাদ প্রদান করেছেন, তার মানে হলো এ উম্মাতের কিছু গোষ্ঠী ও দল, তারা বিচ্ছিন্ন কিছু দল, যারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত থেকে পৃথক হয়ে গেছে।
দ্বিতীয় মূলনীতি: নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আমাদেরকে কাফিরদের রীতি-নীতির অনুকরণ বা অনুসরণ করার ব্যাপারে সংবাদ দিয়েছেন, তখন তিনি এ ব্যাপারে কঠোরভাবে সতর্ক করেছেন।
প্রথমত: এ ব্যাপারে তাঁর সংবাদ পরিবেশন করাটা সতর্ক করাকে অন্তর্ভুক্ত করে।
দ্বিতীয়ত: নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে কাফিরদের বেশভূষা ধারণ করা (অনুকরণ করা) থেকে সতর্কবাণী উচ্চারণ করা হয়েছে, কখনও সংক্ষিপ্তভাবে আবার কখনও বিস্তারিতভাবে।
- সংক্ষিপ্তভাবে, যেমন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী:
«من تشبه بقوم فهو منهم».
“যে ব্যক্তি কোনো জাতির সাথে সামঞ্জস্য বিধান করে চলবে, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে”।[2]
আরও যেমন, এ হাদীসের মতো যা পূর্বে অতিবাহিত হয়েছে, যাতে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«لتتبعن سنن من قبلكم ...».
“তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তীদের রীতিনীতি পুরোপুরি অনুসরণ করবে ...।”[3] সুতরাং এটা হলো সতর্ক করার দৃষ্টিভঙ্গিতে এবং অনুসরণ-অনুকরণ সংঘটিত হওয়ার বিষয়ে সংবাদ প্রদানের পন্থায়।
অনুরূপভাবে হাদীসের অনেক ভাষ্যে বর্ণিত হয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: «خالفوا المشركين» (তোমরা মুশরিকদের বিরুদ্ধাচরণ কর)।[4]«خالفوا اليهود» (তোমরা ইয়াহূদীগণের বিরুদ্ধাচরণ কর)।[5]«خالفوا المجوس» (তোমরা অগ্নিপূজকদের বিরুদ্ধাচরণ কর)।[6] হাদীসের এসব ভাষ্যসমূহ সাধারণভাবে এসেছে।
- আর বিস্তারিতভাবে, অচিরেই ইনশাআল্লাহ অষ্টম বিষয়ের আলোচনায় এমন কিছু কর্মকাণ্ডের নমুনা আসবে, যাতে সংবাদ প্রদান ও সতর্ক করার দৃষ্টিভঙ্গিতে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণনা করেছেন যে, অচিরেই মুসলিমগণের কেউ কেউ কাফিরদের অনুসরণ ও অনুকরণে লিপ্ত হবে।
তৃতীয় মূলনীতি: নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক সংবাদ প্রদান করা যে, তাঁর উম্মাতের মধ্য থেকে একটি দল কিয়ামত পর্যন্ত সত্যকে আঁকড়ে ধরে টিকে থাকবে; যে ব্যক্তি তাদেরকে অপমানিত করবে, সে তাদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারবে না এবং যে ব্যক্তি তাদের সাথে শত্রুতা করবে, সেও তাদের ক্ষতি করতে পারবে না।
তবে অনুকরণ-অনুসরণের বিষয়ে দৃষ্টি দেওয়ার সময় এ মূলনীতিগুলোর এক অংশকে অপর অংশ থেকে আলাদা করে দেখা সম্ভব নয়; কারণ, আমরা যদি (হাদীসের) এসব ভাষ্যসমূহের এক অংশকে অপর অংশ থেকে আলাদা করি, তাহলে জনগণের কেউ কেউ ধারণা করবে যে, মুসলিমগণের সকলেই (কাফিরদের) অনুকরণ করার মধ্যে ডুবে যাবে। আর এটা কখনও সম্ভব নয়; কারণ, এটা দীন সংরক্ষণ করার বিপরীত ভূমিকা পালন করবে, অথচ আল্লাহ তা‘আলা তা (দীন) সংরক্ষণ করার দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন।
তাছাড়া এটা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক প্রদত্ত ঐ তথ্যের বিপরীত, যাতে তিনি বলেছেন: তাঁর উম্মাতের মধ্যে একটি দল রয়েছে, যারা সত্যের ওপরে স্পষ্টত অটল থাকবে।
যেমনিভাবে আমরা যদি অপর এ হাদিসটিকে গ্রহণ করি, আর তা হলো: «ستبقي طائفة» (নিশ্চয় একটি দল অবশিষ্ট থাকবে...) এবং যদি প্রথম হাদীসটিকে গ্রহণ না করি, আর তা হলো:«لتتبعن سنن كان من قبلكم...» (তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তীদের রীতি-নীতি পুরোপুরি অনুসরণ করবে), তাহলে জনগণের কেউ কেউ ধারণা করবে যে, এ উম্মাত (জাতি) কাফিরদের অনুকরণ করার মতো কাজে জড়িয়ে পড়া থেকে মুক্ত।
আর প্রকৃত বিষয় এটা বা ওটা কোনোটাই নয়, বরং নিশ্চিতভাবে মধ্যমপন্থী উম্মাত হিসেবে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত অবিশিষ্ট থাকবে, যারা (কাফির ও মুশরিকদের) অনুকরণ না করে সুন্নাতের ওপর অটল থাকবে। আর অপরাপর জাতি বা গোষ্ঠীসমূহ, যারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, বস্তুত কাফির ও মুশরিকদের অনুসরণ-অনুকরণে জড়িয়ে পড়ার কারণেই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত থেকে তারা বিচ্ছিন্ন হয়েছে; সুতরাং যখনই কোনো গোষ্ঠী বা দল সুন্নাহ থেকে বের হয়ে যাবে তখনই তারা ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতিসমূহের রীতি-নীতিগুলোর কোনো কিছুতে জড়িয়ে পড়বে। এর কিছু নমুনা অচিরেই বর্ণনা করা হবে।
[2] ইমাম আহমাদ, আল-মুসনাদ: ২/৫০; আবু দাউদ রহ. বর্ণনা করেছে উৎকৃষ্ট সনদে, হাদীস নং- ৪০৩১; আর আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন, ‘সহীহ আল-জামে‘ আস-সাগীর’, হাদীস নং- ৬০২৫।
[3] হাদীসটি ইমাম বুখারী ও মুসলিম রহ. বর্ণনা করেছেন; ‘ফতহুল বারী’: ১৩/৩০০; মুসলিম, হাদীস নং- ২৬৬৯।
[4] অচিরেই তার তথ্যসূত্রের বিবরণ আসছে।
[5] অচিরেই তার তথ্যসূত্রের বিবরণ আসছে।
[6] অচিরেই তার তথ্যসূত্রের বিবরণ আসছে।
অনুসরণ-অনুকরণ সংক্রান্ত সকল বিধান বিস্তারিতভাবে অনুসন্ধান ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে একত্রিত করা সম্ভব নয়। কারণ, অনুসরণ-অনুকরণ করার প্রত্যেকটি অবস্থার জন্য একটি বিধান রয়েছে, যা আলেম ও দীনের জ্ঞানে অভিজ্ঞ ব্যক্তিগণের পক্ষ থেকে হাদীসের বক্তব্য ও শরী‘আতে মূলনীতিসমূহের সামনে পেশ করে গ্রহণ করতে হয়।
কিন্তু এমন কতিপয় সাধারণ বিধান রয়েছে, যা অনুসরণ-অনুকরণের সকল প্রকারকে বিস্তারিতভাবে না হলেও মোটামুটিভাবে বিন্যস্ত করে। যেমন,
প্রথমত: কাফিরদের অনুসরণ-অনুকরণ করার মধ্যে এমন কিছু প্রকার রয়েছে, যা শির্ক অথবা কুফরী; যেমন, আকীদার ক্ষেত্রে অনুসরণ বা অনুকরণ করা এবং কোনো কোনো ইবাদতের ক্ষেত্রে অনুকরণ করা। যেমন তাওহীদ তথা আল্লাহর একত্ববাদ ও আকীদা বিনষ্টকারী বিষয়সমূহের ক্ষেত্রে ইয়াহূদী, খ্রিষ্টান ও অগ্নিপূজকের সাথে সামঞ্জস্য বিধান করা। উদাহরণত: ‘তা‘ত্বীল’ নীতিতে বিশ্বাস করা। আর তা হচ্ছে, আল্লাহ তা‘আলার নাম ও গুণাবলীকে অস্বীকার করা এবং তাতে বক্রপন্থা অবলম্বন করা। আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক সৃষ্ট কোনো ব্যক্তির মধ্যে তাঁর অবস্থান করার এবং সৃষ্টির সাথে তাঁর মিশে যাওয়ার আকীদা পোষণ করা। নবী ও সৎ ব্যক্তিগণের পবিত্রতা বর্ণনায় গুণাগুণ করা, তাদের পূজা করা এবং আল্লাহ ব্যতীত তাদেরকে আহ্বান করা, আর মানব রচিত আইন-কানূন ও বিধিবিধানকে সালিস মানা -এসব কিছু হয় শির্ক, না হয় কুফরী।
দ্বিতীয়ত: কাফেরদের অনুসরণ-অনুকরণ করার মধ্যে এমন কিছু বিষয় রয়েছে, যা অবাধ্যতা ও ফাসেকী (পাপাচারিতা) হিসেবে গণ্য। যেমন, কোনো কোনো প্রথা ও আচার-আচরণের ক্ষেত্রে কাফিরদের অনুসরণ করা। উদাহরণত, বাম হাতে খাওয়া ও পান করা, পুরুষগণ কর্তৃক স্বর্ণের আংটি ও গহনা ব্যবহার করা, দাঁড়ি মুণ্ডন করা, নারীগণ কর্তৃক পরুষদের (বেশভূষার) অনুকরণ করা এবং পুরুষগণ কর্তৃক নারীদের অনুকরণ করা ইত্যাদি।
তৃতীয়ত: যা মাকরূহ বা অপছন্দনীয়: আর তা হলো এমন বিষয়, যাতে সিদ্ধান্ত পেশ করার সময় হালাল ও হারামের মাঝে হুকুম দেওয়ার প্রশ্নে অস্পষ্টতার কারণে দ্বিধাদ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয় অর্থাৎ কোনো কোনো অভ্যাস ও চাল-চলন ও পার্থিব বিষয়াদির ব্যাপারে মাকরূহ (অপছন্দনীয়) ও মুবাহ (বৈধ) হওয়ার মাঝে দ্বিধাদ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়, তখন মুসলিমগণ কর্তৃক (কাফিরদের) অনুকরণে জড়িয়ে যাওয়ার বিষয়টিকে প্রতিরোধ করার জন্য তার হুকুমটি মাকরূহ হিসেবে অবশিষ্ট থাকবে।
আর একটি প্রশ্ন অবশিষ্ট থেকে যায়: কাফিরদের এমন কোনো কাজ আছে কিনা, যা বৈধ?
জবাবে আমি বলব: পার্থিব কর্মকাণ্ডসমূহের মধ্য থেকে যা তাদের বিশেষ বৈশিষ্ট্যের অন্তর্ভুক্ত নয়, তা বৈধ বলে গণ্য হবে। অর্থাৎ যার মধ্যে এমন কোনো লক্ষণ নেই, যা তাদেরকে বিশেষ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী করে এবং তাদেরকে সৎকর্মশীল মুসলিমগণের মধ্য থেকে আলাদা করে দেয়।
আরও বৈধ বলে গণ্য হবে তা, যা মুসলিমগণের ওপর বড় ধরনের কোনো বিপর্যয় টেনে আনবে না অথবা যা কাফিরদের জন্য এমন কোনো সুবিধা টেনে আনবে না, যা মুসলিমগণকে অপদস্থ করার দিকে ধাবিত করে এবং এইরূপ অন্যান্য বিষয়াদি।
অনুরূপভাবে কাফেরদের দ্বারা উৎপাদিত বা প্রস্তুতকৃত নির্ভেজাল বস্তুও বৈধ, যাতে তাদের অনুসরণ বা অনুকরণ করার ক্ষেত্রে মুসলিমগণ কোনো প্রকার ক্ষতির শিকার হবে না।
তদ্রূপ শুধু দুনিয়াবী জ্ঞান-বিজ্ঞান, যা আকীদা ও নৈতিক চরিত্রকে আক্রান্ত করে না, তা বৈধ কর্মের অন্তর্ভুক্ত হবে।
আবার কখনও কখনও কাফিরদের নিকট যে নির্ভেজাল দুনিয়াবী জ্ঞান-বিজ্ঞান রয়েছে, তা থেকে ফায়দা হাসিল করা মুসলিমগণের ওপর আবশ্যকও হয়ে যায়। এখানে ‘নির্ভেজাল’ শব্দের দ্বারা উদ্দেশ্য হলো: এমন জ্ঞান, যাতে তাদের এমন কোনো দৃষ্টিভঙ্গি অথবা নিদর্শন পাওয়া যায় না, যা (কুরআন ও সুন্নাহর) বক্তব্যসমূহে অথবা শরী‘আতের মূলনীতিমালায় আঘাত করে অথবা মুসলিমগণকে অপমান ও লাঞ্ছনার মধ্যে নিক্ষেপ করে। এগুলো ছাড়া বাকি সব বৈধ বিষয়সমূহের অন্তর্ভুক্ত হবে।[1]
অতএব, আকীদা-বিশ্বাস, ইবাদত ও উৎসবসমূহের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে কাফেরদের অনুসরণ-অনুকরণ হারাম হওয়ার বিষয়টি অকাট্য! অর্থাৎ এসব ক্ষেত্রে কাফিরদের অনুকরণ করা হারাম হওয়ার বিষয়টি অকাট্যভাবে সাব্যস্ত! এগুলোর নিম্ন পর্যায়ে যা রয়েছে, সেটি হয় তাদের প্রথার শ্রেণিভুক্ত হবে। তখন যদি দেখা যায় যে, তা তাদের বৈশিষ্ট্যের অন্তর্ভুক্ত, তাহলে তা হারাম বলে গণ্য হবে! আর যদি তা তাদের বৈশিষ্ট্যের অন্তর্ভুক্ত না হয়, তাহলে সে ক্ষেত্রে বিধানটি হারাম (নিষিদ্ধ), মাকরূহ (অপছন্দনীয়) ও মুবাহ (বৈধ) হওয়ার মাঝামাঝি অবস্থানে থাকে। আর তা যদি সাধারণ শিল্প ও অস্ত্র শিল্প প্রভৃতির মতো বিজ্ঞান ও স্রেফ পার্থিব বিষয়াদির পর্যায়ভুক্ত হয়, তাহলে এ ধরনের বিষয় বৈধ বলে গণ্য হবে, যখন তাকে পূর্বে উল্লিখিত শর্তসমূহের সাথে শর্তযুক্ত করা হবে।
শরী‘আতের বক্তব্যসমূহ যথাযথ পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার মাধ্যমে আমরা এসব শ্রেণির অধিকাংশ সম্পর্কে জানতে পারব, যদিও এর মাধ্যমে পূর্ণ জ্ঞান অর্জিত হবে না, বরং কাছাকাছি পর্যায়ের জ্ঞান অর্জিত হবে।
প্রথম শ্রেণি: সাধারণভাবে সকল কাফির
সুতরাং কোনো প্রকার বিশিষ্টকরণ ছাড়াই সাধারণভাবে সব ধরনের কাফিরদের অনুসরণ-অনুকরণের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। এর ওপর ভিত্তি করে এ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত হবে, সকল মুশরিক, ইয়াহূদী, খ্রিষ্টান, অগ্নিপূজক, সাবেয়ী (তারকা-নক্ষত্র পূজক), নাস্তিক এবং তাদের মতো অন্যান্য ব্যক্তিগণ। সুতরাং ইবাদাত, আচার-আচরণ ও পোষাক-পরিচ্ছদের ক্ষেত্রে যা কিছু কাফিরদের বৈশিষ্ট্যের অন্তর্ভুক্ত হয়, এমন প্রত্যেক বিষয় থেকে আমাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে। যেমন, যখন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবদুল্লাহ ইবন ‘আমর ইবনুল ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর গায়ে হলুদ বর্ণ বিশিষ্ট কাপড় দেখতে পেলেন, তখন তিনি তাকে লক্ষ্য করে বললেন:
«إن هذه من ثياب الكفار فلا تلبسها».
“নিশ্চয় এগুলো কাফিরদের পোষাক-পরিচ্ছদের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং তুমি তা পরিধান করো না।”[1] এর দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, পোষাক-পরিচ্ছদ যখন কাফিরদের বৈশিষ্ট্যের অন্তর্ভুক্ত হবে, তখন মুসলিম ব্যক্তির জন্য তা পরিধান করা বৈধ হবে না।[2]
দ্বিতীয় শ্রেণি: মুশরিকগণ
মুশরিকদের পূজা, উৎসব ও কর্মকাণ্ডসমূহ অনুকরণ করার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। যেমন, শিস দেওয়া ও হাততালি দেওয়া। অনুরূপভাবে দুনিয়াতে আল্লাহ তা‘আলার নিকট সৃষ্টির মাধ্যমে সুপারিশ প্রার্থনা করা এবং সৃষ্টিরাজিকে মাধ্যমরূপে ব্যবহার করা, কবরের নিকট মান্নত করা ও (পশু-পাখি) যবাই করা ইত্যাদি। তদ্রূপ মুশরিকদের যেসব কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে তন্মধ্যে অন্যতম হলো: সূর্যাস্তের পূর্বে ‘আরাফাত’ এর ময়দান থেকে প্রত্যাবর্তন করা।
পূর্ববর্তী সালাফে সালেহীন মুশরিকদের যাবতীয় বৈশিষ্ট্য ও তাদের সকল কর্মকাণ্ডকে অপছন্দ করতেন, যেমনটি আবদুল্লাহ ইবন ‘আমর ইবনিল ‘আস রাদিয়াল্লাহ ‘আনহুমা এবং অন্যান্য সাহাবীগণ বলেছেন:
«من بنى ببلاد المشركين وصنع نيروزهم ومهرجانهم وتشبه بهم حتى يموت , حشر معهم يوم القيامة».
“যে ব্যক্তি মুশরিকদের দেশে গৃহ নির্মাণ করে, তাদের ‘নওরোজ’ (নববর্ষ) ও ‘মেহেরজান’ (জাতীয় দিবস) এর উৎসব পালন করে এবং এ অবস্থায় মারা যায়, কিয়ামতের দিনে তাদের সাথে তার হাশর হবে”।[3]
আর আবদুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা মসজিদের উপর বিশেষ কক্ষ বানানোকে অপছন্দ করতেন এবং বেশ কয়েকবার তিনি এ ব্যাপারে সরাসরি নিষেধ করেছেন। কারণ, তিনি এটাকে মুশরিকদের প্রতিমা সদৃশ মনে করতেন।[4]
তৃতীয় শ্রেণি: আহলে কিতাব
আহলে কিতাব দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, ইয়াহূদী ও নাসারা সম্প্রদায়। আমাদেরকে এমন প্রত্যেক বিষয় থেকে নিষেধ করা হয়েছে, যা ইয়াহূদী ও নাসারা অথবা তাদের কোনো এক গোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্য হিসেবে গণ্য। তাদের ইবাদাত, আচার-আচরণ, পোষাক-পরিচ্ছদ ও উৎসবসমূহের অন্তর্ভুক্ত। যেমন, কবরের উপর ঘর নির্মাণ করা, কবরকে মসজিদ বানানো, ছবি উত্তোলন করা, নারীদের দ্বারা ফেতনায় পতিত হওয়া, সাহরী না খাওয়া, শুভ্র চুলে রং না করা, ক্রুশ উত্তোলন করা এবং তাদের উৎসবসমূহ উদযাপন করা অথবা তাতে তাদের সাথে অংশগ্রহণ করা ইত্যাদি।
চতুর্থ শ্রেণি: অগ্নিপূজক
অগ্নিপূজকদের বৈশিষ্ট্যসমূহের মধ্য থেকে অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো আগুনের দিকে ফিরে পূজা করা, অগ্নিপূজা করা, রাজা ও বাদশাহদেরকে পবিত্র বলে ঘোষণা করা, মাথার সামনের অংশ বাদ দিয়ে পিছনের অংশের চুল কর্তন করা, দাঁড়ি মুণ্ডন করা, মোচ লম্বা করা, শিস দেওয়া এবং স্বর্ণ ও রৌপ্যের পাত্র ব্যবহার করা।
পঞ্চম শ্রেণি: পারস্য ও রোমের অধিবাসী
এ শ্রেণিটি আহলে কিতাব, অগ্নিপূজক ও অন্যান্যদেরকে শামিল করে। ইবাদাত, আচার-আচরণ ও ধর্মীয় উৎসব উদযাপন করার ক্ষেত্রে পারস্য ও রোমবাসীর বৈশিষ্ট্যসমূহ অনুকরণ করা থেকেও আমাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে। যেমন, বয়স্ক ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদেরকে মহৎ ও পবিত্র জ্ঞান করা। এমন সব পণ্ডিত ও সন্ন্যাসীদের অনুসরণ করা, যারা সে সব বিধিবিধান রচনা করে, যা আল্লাহ তা‘আলা অনুমোদন করেন নি এবং দীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি ও কঠোরতা প্রদর্শন করা।
ষষ্ঠ শ্রেণি: অনারব অমুসলিমগণ
আর এটা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথার ওপর ভিত্তি করেই বলা হচ্ছে। কারণ হাদীসে এসেছে,
«نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ... أَنْ يَجْعَلَ الرَّجُلُ فِى أَسْفَلِ ثِيَابِهِ حَرِيرًا مِثْلَ الأَعَاجِمِ أَوْ يَجْعَلَ عَلَى مَنْكِبَيْهِ حَرِيرًا مِثْلَ الأَعَاجِمِ».
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো পুরুষ ব্যক্তি কর্তৃক অনারবদের মতো তার পোষাকের নিচের অংশে রেশম ব্যবহার করতে অথবা কাঁধের উপরের অংশে অনারবদের মতো রেশম ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন”।[5]
অনুরূপভাবে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকজন কর্তৃক কোনো ব্যক্তিকে সম্মান প্রদর্শনের জন্য দাঁড়াতেও নিষেধ করেছেন; বরং তিনি কোনো সমস্যার কারণে বসা অবস্থায় সালাত আদায়কারী ইমামের মুক্তাদিকে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন এ আশঙ্কায় যে, কেউ এ দাঁড়ানোটিকে ইমামের সম্মানার্থে বলে মনে করবে। আবার কেউ কেউ বলেছেন, উক্ত হাদীসে আগত এ নিষেধাজ্ঞার কারণ হচ্ছে, এটি অনারবদের কর্মকাণ্ডের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হয়ে যায়। কেননা, তারা তাদের নেতৃবৃন্দ ও বয়স্কজনদের নিকট কেবল দাঁড়িয়েই থাকত। বস্তুত এটা নিষিদ্ধ; কারণ তা অনারব কাফিরদের অনুকরণ-অনুসরন বৈ কিছু নয়[6]।
উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে সাব্যস্ত আছে যে, তিনি ভিনদেশী তথা অনারব ও মুশরিকগণের সাজসজ্জা গ্রহণ করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন আর পূর্ববর্তী আলেমগণের অনেকেই অনুরূপ ইঙ্গিত করেছেন।
সপ্তম শ্রেণি: জাহেলিয়াত ও তার অনুসারীগণ
জাহেলিয়াতের সকল কর্মকাণ্ড, আচার-আচরণ, পূজাপার্বণ, স্বভাব-চরিত্র ও বিশেষ নিদর্শনসমূহের ব্যাপারে ইসলামী শরী‘আতে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। যেমন, বেপর্দা হওয়া, নারীদের সৌন্দর্য প্রদর্শন করা, হজ ও উমরার ইহরামে প্রবেশ করার পর সূর্যের উত্তাপ থেকে ছায়া গ্রহণ না করা, অথবা এমন কাজ করা যাতে ছায়া গ্রহণ না করতে হয়। যেমনটি আজকের দিনের শিয়া-রাফেযীরা করে থাকে। কারণ, এগুলো জাহেলী যুগের ও মুশরিকগণের কর্মকাণ্ডের অন্তর্ভুক্ত। অনুরূপভাবে লজ্জাস্থান বা তার অংশবিশেষ প্রকাশ করা, জাতীয়তাবাদ ভিত্তিক পক্ষপাতিত্ব, বংশ মর্যাদা নিয়ে গর্ব করা, অন্য বংশের প্রতি কটাক্ষ করা, মৃত ব্যক্তির জন্য বিলাপ করা এবং গ্রহ-নক্ষত্রের মাধ্যমে বৃষ্টি প্রার্থনা করা। কারণ, যখন ইসলাম আগমন করেছে, তখন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাহেলিয়াতের সকল অবস্থা, রীতিনীতি, আচার-আচরণ, প্রথা বা ঐতিহ্য, নিয়ম-কানূন, যাবতীয় মেলা, সৌন্দর্য প্রদর্শন করা, নারী-পুরুষে মেলামেশা এবং সুদ প্রথাকে বাতিল ঘোষণা করেছেন।
অষ্টম শ্রেণি: শয়তান
যাদেরকে অনুসরণ করার ব্যাপারে আমাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে, তন্মধ্যে অন্যতম হলো শয়তান। সুতরাং নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম শয়তানের কতিপয় কর্মকাণ্ডের কথা উল্লেখ করেছেন এবং তার থেকে তিনি নিষেধ করেছেন; যেমন, বাম হাতে খাওয়া ও পান করা। ইমাম মুসলিম রহ. প্রমুখ বর্ণনা করেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«لاَ يَأْكُلَنَّ أَحَدٌ مِنْكُمْ بِشِمَالِهِ، وَلاَ يَشْرَبَنَّ بِهَا، فَإِنَّ الشَّيْطَانَ يَأْكُلُ بِشِمَالِهِ وَيَشْرَبُ بِهَا».
“তোমাদের কেউ যেন কখনও বাম হাতে পানাহার না করে। কারণ, শয়তান তার বাম হাত দ্বারা খায় এবং পান করে”।[7]
অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হয় যে, মুসলিমগণের অনেকেই খুব সহজেই অথবা হকের (সত্যের) প্রতি অহঙ্কার বশতঃ এবং কাফির ও ফাসিকগণের মধ্য থেকে শয়তানের বন্ধুদের অনুকর করত এ অভ্যাসে জড়িয়ে গেছে।
নবম শ্রেণি: বেদুইন বা যাযাবর শ্রেণি যাদের দীন পূর্ণ হয় নি
তারা হলো জাহিল বা মূর্খ বেদুইন। কারণ, বেদুইন বা যাযাবরগণ অনেক রীতি-নীতি ও ঐতিহ্যের জন্ম দিয়েছে, ইসলামের নিয়মনীতির সাথে যেগুলোর কোনো সম্পর্ক নেই; তার কিছু এসেছে উত্তরাধিকার সূত্রে জাহেলিয়াত থেকে। অভদ্র বেদুইনগণ তাদের চালচলন, রীতি-নীতি, প্রথা ও পরিভাষার ক্ষেত্রে ছিল শরী‘আত পরিপন্থী। এর দৃষ্টান্ত হলো: জাহেলিয়াতের পক্ষপাতিত্ব করা, বংশ মর্যাদা নিয়ে গর্ব করা, অন্য বংশের প্রতি কটাক্ষ করা, মাগরিবের সালাতকে ‘ইশা’ বলে নামকরণ করা, এশার সালাতকে ‘আতামা’ বলে নামকরণ করা, তালাকের মাধ্যমে শপথ করা, তালাককে কর্মের সাথে সম্পর্কযুক্ত করা; চাচার কন্যাকে (চাচাতো বোনকে) অন্যের জন্য হারাম করে দেওয়া; যাতে করে সে কন্যা তার চাচাতো ভাই ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করতে না পারে। ইত্যাদি আরও বিবিধ জাহেলী রীতি-নীতি।
[2] পোষাক-পরিচ্ছদ থেকে অন্যতম একটি পোষাক হলো প্যান্ট, যাকে আজকের দিনের কাফিরগণের বৈশিষ্ট্য ও বিশেষ নিদর্শনের অন্তর্ভুক্ত বলে মনে করা হয়, মুসলিমদের দেশে তা পরিধান করা বৈধ হবে না। যদিও আমরা দেখতে পাই যে, এ্যাংলো-ইউরোপীয়ান সভ্যতার ধ্বজাধারীদের মধ্যে তা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। বস্তুত মুসলিম দেশে এ শ্রেণির লোকের সংখ্যাই বেশি। কিন্তু তাদের এ অবস্থাটি বিবেচনায় আনা হবে না, বিবেচনায় আসবে সঠিক ও দীনের ব্যাপারে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের অবস্থা, প্যান্ট পরিধান করা সৎ লোকদের চিহ্ন নয়। তাছাড়া প্রচলিত প্যান্ট লজ্জা নিবারণেও পর্যাপ্ত নয়। কারণ, তা লজ্জাস্থানকে প্রকাশ করে দেখায়। আর এটাও জানা আবশ্যক যে, কোনো কোনো নিদর্শন কাফেরদের বিশেষ অবস্থার অন্তর্ভুক্ত। যেমন, ইয়াহূদীদের বিশেষ টুপি এবং খ্রিষ্টানদের ক্রুশ ইত্যাদি।
[3] সুনানুল বায়হাকী, ৯/২৩৪
[4] দেখুন: ইবন আবি শায়বা, আল-মুসান্নাফ: ১/৩০৯; ইবন তাইমিয়্যাহ, ইকতিদাউস সিরাতিল মুসতাকীম: ১/৩৪৪ (তাহকীকসহ)।
[5] আবু দাউদ, হাদীস নং- ৪০৪৯; নাসাঈ, ৮/১৪৩; আহমদ, ৪/১৩৪; দেখুন: ইবন তাইমিয়্যাহ, ইকতিদাউস সিরাতিল মুসতাকীম: ১/৩০৪।
[6] দেখুন: সহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ৪১৩; সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং- ৬০২, ৬০৬, ৫২৩০; ইবন মাজাহ, হাদীস নং- ১২৪০; মুসনাদু আহমদ, ৫/২৫৩, ২৫৬।
[7] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ২০১৯।
মুসলিমগণ কর্তৃক কাফিরদের অন্ধ অনুকরণ ও তাদের সাথে সামঞ্জস্য বিধানের কারণ। যদিও তাতে রয়েছে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ এবং তিনি যা নিষেধ করেছেন তাতে লিপ্ত হওয়া
প্রথমত: এটা জানা দরকার যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী মুসলিমগণ কর্তৃক কাফেরদের অনুকরণ-অনুসরণ ও তাদের সাথে সামঞ্জস্য বিধানের ঘটনা ঘটেছে। আর তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী যা এখনও ঘটেনি তা অবশ্যম্ভাবীরূপে ঘটবে।
দ্বিতীয়ত: পূর্ববর্তী মূলনীতিসমূহের ওপর ভিত্তি করে আমাদের উপলব্ধি করতে হবে যে, যারা কাফিরদের অনুকরণে লিপ্ত হয়েছে, তারা সত্যের অনুসারী নয় এবং তারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘য়াতও নয়; বরং তারা প্রবৃত্তি ও বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী। আর যে দল বা গোষ্ঠীই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, কাফিরদের সাথে কম-বেশি তাদের সাদৃশ্য রয়েছে।
প্রথম কারণ: ইসলাম ও মুসলিমগণের বিরুদ্ধে কাফিরদের ষড়যন্ত্র
এ ষড়যন্ত্র ইসলাম আত্মপ্রকাশ করার প্রথম থেকে শুরু করে আজকের দিন পর্যন্ত চলছে। আকীদা-বিশ্বাস, ধর্ম ও চিন্তা-চেতনার মধ্যে মতভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও কাফিররা ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে আর অব্যাহতভাবে তাদের ষড়যন্ত্র চালিয়েই যাচ্ছে। তাদের ষড়যন্ত্রসমূহের মধ্যে অন্যতম ছিল মুসলিমগণ আকীদা-বিশ্বাস, স্বভাব-প্রকৃতি, উৎসব ও রীতিনীতি সংশ্লিষ্ট যেসব বিষয়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত আছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা থেকে তাদেরকে বিচ্যুত করা। এ জন্যই আমরা দেখতে পাই যে, এ উম্মাতের মধ্যে বিভক্তির মূল কারণ হচ্ছে কাফিরদের ষড়যন্ত্র। কোনো গোষ্ঠীই যখন মুসলিম উম্মাত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, তখন আমরা দেখতে পাব যে, তাদের বিচ্ছন্নতার কারণসমূহের মধ্য থেকে অন্যতম কারণ হলো কাফিরদের বিভিন্ন দল বা গোষ্ঠীর উপস্থিতি; হয় তারা মুসলিমগণের মধ্য থেকে প্রবৃত্তির পূজারী ব্যক্তিবর্গ ও সাদাসিধে লোকদের মাঝে সেগুলো ছড়িয়ে দেওয়া এবং তা প্রচলন করার কাজে অংশগ্রহণ করত, অথবা তারা সরাসরি এসব এসব সাদাসিধে মানুষগুলোর নেতৃত্ব দিত অথবা তাদের অনুসারী সেজে যেতো। সুতরাং বুঝা যাচ্ছে, কাফির তথা বিভিন্ন ধর্মীয় ও জাতিগোষ্ঠীর ষড়যন্ত্রই মুসলিমগণকে কর্তৃক কাফিরদের অনুসরণ-অনুকরণে লিপ্ত হওয়ার মূল কারণ। আর আল্লাহ তা‘আলা এ ব্যাপারে আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন, যেমন তিনি বলেছেন:
﴿وَلَن تَرۡضَىٰ عَنكَ ٱلۡيَهُودُ وَلَا ٱلنَّصَٰرَىٰ حَتَّىٰ تَتَّبِعَ مِلَّتَهُمۡۗ﴾ [البقرة: ١٢٠]
“আর ইয়াহূদী ও নাসারারা আপনার প্রতি কখনো সন্তুষ্ট হবে না, যতক্ষণ না আপনি তাদের মিল্লাতের অনুসরণ করেন”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১২০]
অনুরূপভাবে আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেছেন:
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا تَتَّخِذُواْ بِطَانَةٗ مِّن دُونِكُمۡ لَا يَأۡلُونَكُمۡ خَبَالٗا وَدُّواْ مَا عَنِتُّمۡ قَدۡ بَدَتِ ٱلۡبَغۡضَآءُ مِنۡ أَفۡوَٰهِهِمۡ وَمَا تُخۡفِي صُدُورُهُمۡ أَكۡبَرُۚ﴾ [ال عمران: ١١٨]
“হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদের ছাড়া অন্য কাউকে অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তারা তোমাদের অনিষ্ট করতে ত্রুটি করবে না; যা তোমাদেরকে বিপন্ন করে তা-ই তারা কামনা করে। তাদের মুখে বিদ্বেষ প্রকাশ পায় এবং তাদের হৃদয় যা গোপন রাখে তা আরও গুরুতর”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১১৮]
অনুরূপভাবে আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেছেন:
﴿مَّا يَوَدُّ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ مِنۡ أَهۡلِ ٱلۡكِتَٰبِ وَلَا ٱلۡمُشۡرِكِينَ أَن يُنَزَّلَ عَلَيۡكُم مِّنۡ خَيۡرٖ مِّن رَّبِّكُمۡۚ﴾ [البقرة: ١٠٥]
“কিতাবীদের মধ্যে যারা কুফুরী করেছে তারা এবং মুশরিকরা এটা চায় না যে, তোমাদের রবের কাছ থেকে তোমাদের ওপর কোনো কল্যাণ নাযিল হোক”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১০৫]
অনুরূপভাবে আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেছেন:
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِن تُطِيعُواْ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ يَرُدُّوكُمۡ عَلَىٰٓ أَعۡقَٰبِكُمۡ فَتَنقَلِبُواْ خَٰسِرِينَ ١٤٩﴾ [ال عمران: ١٤٩]
“হে মুমিনগণ! যদি তোমরা কাফেরদের আনুগত্য কর, তবে তারা তোমাদেরকে বিপরীত দিকে ফিরিয়ে দেবে; ফলে তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়বে”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৪৯]
অনুরূপভাবে আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেছেন:
﴿إِن تُطِيعُواْ فَرِيقٗا مِّنَ ٱلَّذِينَ أُوتُواْ ٱلۡكِتَٰبَ يَرُدُّوكُم بَعۡدَ إِيمَٰنِكُمۡ كَٰفِرِينَ ١٠٠﴾ [ال عمران: ١٠٠]
“তোমরা যদি তাদের দল বিশেষের আনুগত্য কর, তবে তারা তোমাদেরকে ঈমান আনার পর আবার কাফের বানিয়ে ছাড়বে”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১০০]
অতএব, কোনো সন্দেহ নেই যে, কাফিরদের ঐকান্তিক কামনা-বাসনা হলো মুসলিমগণকে তাদের দীন থেকে বিচ্যুত করা বা সরিয়ে দেওয়া। তারা (এ লক্ষ্যে) এখন অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি চেষ্টাসাধনা করছে। গোটা বিশ্বে বর্তমানে মুসলিমগণের বাস্তব অবস্থা সম্পর্কে চিন্তাভাবনাকারী প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তিই আজকের দিনে মুসলিম জাতির ওপর কাফিরদের প্রকাশ্য শত্রুতার ব্যাপারটি অনুধাবন করতে পারবে। কাফিররা চায় তাদের আকীদা-বিশ্বাস, আচার-আচরণ, রীতি-নীতি, রাজনীতি, চরিত্র ইত্যাদি মুসলিমগণের ওপর চাপিয়ে দিতে। কাফিররা ও তাদের সহযোগীরা মুসলিম জাতিকে তাদের অনুসরণ-অনুকরণ করানোর জন্য অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি ঐক্যবদ্ধ।
দ্বিতীয় কারণ: মুসলিমগণের অংশবিশেষের অজ্ঞতা এবং দীন সম্পর্কে যথার্থ জ্ঞানের অভাব
দীনের বিধিবিধান এবং সালফে সালেহীনের রীতিনীতি সম্পর্কে মুসলিমগণের অজ্ঞতা তাদেরকে কাফেরদের অনুকরণ-অনুসরণে লিপ্ত করেছে।
তৃতীয় কারণ: মুসলিমগণের বস্তুগত, অভ্যন্তরীণ ও সামরিক দুর্বলতা
বস্তুগত, আভ্যন্তরীন ও সামরিকভাবে মুসলিমগণ দুর্বল হওয়ার কারণে তাদের মধ্যে দুর্বলতা ও পরাস্ত হওয়ার অনুভূতি কাজ করে। তারা অনুভব করছে যে জীবনের অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদের ওপর কাফিরদের প্রাধান্য রয়েছে।
চতুর্থ কারণ: মুনাফিকদের ষড়যন্ত্র
এ মুনাফিকরা মুসলিমগণের মাঝেই বসবাস করে, তারা কাফিরদের সেবায় প্রাচীন ও আধুনিক কালে সবচেয়ে বেশি কার্যকরী ও শক্তিশালী অস্ত্র। সুতরাং যেসব মুনাফিক মুসলিমগণের মাঝে অবস্থান করে, মুসলিমদেরকে কাফিরদের অনুসরণ-অনুকরণের দিকে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে তাদের বড় ধরনের প্রভাব রয়েছে। এখানে মুনাফিক বলতে কয়েক ধরণের লোক উদ্দেশ্য:
তন্মধ্যে এক ধরনের রয়েছে, যারা কাফির সম্প্রদায়ের মধ্য থেকে নিজেদেরকে মুসলিম বলে দাবি করেছে বস্তুত তারা ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার জন্যই তাতে প্রবেশ করেছে।
আরেক ধরনের লোক রয়েছে, যে মূলত মুসলিম ছিল কিন্তু সে দীন ত্যাগ করে মুরতাদ হয়ে গেছে ও বিপথগামী হয়ে গেছে।
আরেক ধরনের লোক রয়েছে, যে অন্যায় ও অপরাধে আকণ্ঠ নিমজ্জিত, যদিও সে নিজেকে মুসলিম দাবি করে। তাদের অনেকেই এমন রয়েছে, যারা মুসলিমগণকে কাফিরদের অনুসরণ-অনুকরণ করার দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে, তারা ঐ শ্রেণির লোকজনের অন্তর্ভুক্ত, যাদের অন্তরে ব্যাধি রয়েছে। আর যারা কামনা-বাসনা করে যেন মুসলিমদের মধ্যে কুপ্রবৃত্তি ও অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ুক, যেমন তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী ও তাদের মত লোকেরা পছন্দ করে।
মোটকথা: মুসলিমগণ কর্তৃক কাফিরদের অনুসরণ-অনুকরণে লিপ্ত হওয়ার কারণ অনেক।