মুমিনের দু‌‘আ ডা. মুহাম্মদ আবুবকর সিদ্দিক (সংকলক) ৩৭ টি
মুমিনের দু‌‘আ ডা. মুহাম্মদ আবুবকর সিদ্দিক (সংকলক) ৩৭ টি

الحمد لله والصلاة والسلام على رسول الله وعلى آله وصحبه أجميين.

দু‌`আ মুসলিমের অত্যন্ত গুরুতপূর্ণ ইবাদাত। দু‌`আর মাধ্যমে মুসলিম আল্লাহর কাছে তার আকাক্ষা পেশ করতে পারে এবং আম্লাহ তাআলার তাওফীকে দুনিয়া ও আখিরাতে অপার নিয়ামত, সামর্থ্য ও কাজের সক্ষমতা অর্জন করতে পারে এবং অর্জন করতে পারে প্রভূত সাওয়াব। বাংলা ভাষায় দু'আর অনেক বই রয়েছে। এর মধ্যে প্রফেসর ড সাঈদ আল-কাহতানী কর্তৃক সংকলিত ‘হিসনুল মুসলিম গ্রন্থটি খুবই প্রণিধানযোগ্য। এ বই থেকে বেশ কিছু দু‌`আ নির্বাচন করে আমেরিকার নিউ ইয়র্ক প্রবাসী জনাব ডাঃ মুহাম্মদ আবুবকর সিদ্দীক বাংলাভাষী মুসলিম ভাইবোনদের জন্য একটি পকেট সাইজের ছোট বই প্রকাশের আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছেন। আমি তাকে এ কাজে উদ্বুদ্ধ করেছি এবং তার সংকলিত সকল দু'আ আমি ও আমার সাথে তাইবাহ একাডেমির রিসার্চ টিমের সদস্যগণ দেখে দিয়েছি। এই দু'আসমূহ যাচাই-বাছাই করে আমরা কেবল সহীহ ও হাসান হাদীসসমূহে উল্লেখিত দু‌`আ এ বইয়ে স্থান দিয়েছি। আমরা আশা করি দু'আর এই ছোট বইয়ের মাধ্যমে দৈনন্দিন গুরুত্বপূর্ণ দু'আসমূহ প্রত্যেকেই পাঠ করতে পারবেন এবং সবসময় বইটি পকেটে বহন করতে পারবেন। ফলে পাঠক যেকোনো সময় বিশুদ্ধ দু‌`আ পাঠের আগ্রহ মেটাতে পারবেন। আল্লাহ রাব্বল আলামীন এ বইয়ের সংকলক এবং যারা এ বইয়ের পেছনে অবদান রেখেছেন, তাদের প্রত্যেককে কবুল করুন, বেশি বেশি ভালো কাজ সম্পাদনের তাওফীক দান করুন এবং এ ভালো কাজসমূহকে কিয়ামতের দিন তাদের আমলের পাল্লায় যুক্ত করে দিন।

هذا وصلى الله وسلم على نبينا محمد وعلى آله وصحبه أجمعين

ড. মুহাম্মদ মানজুরে ইলাহী
১৭ রমাদান ১৪৪৩
১৯ এপ্রিল ২০২২

কুরআন ও সহীহ হাদীসে বহু জায়গায়  তাওবাহ ও ক্ষমা প্রার্থনার কথা উল্লেখিত হয়েছে এবং এর মাধ্যমে যারা মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভ করেছে, তাদের প্রশংসা করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন,

إِنَّ اللهَ يُحِبُّ التَّوَّابِيْنَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِيْنَ

 ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওবাহকারীদের ভালোবাসেন এবং পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালোবাসেন’ (সূরা আল-বাকারাহ : ২২২) ।

 আনাস বিন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

لَلّٰهُ أَشَدُّ فَرَحًا بِتَوْبَةِ عَبْدِهِ حِيْنَ يَتُوبُ إِلَيْهِ، مِنْ أَحَدِكُمْ كَانَ عَلَى رَاحِلَتِهِ بِأَرْضِ فَلَاةٍ، فَانْفَلَتَتْ مِنْهُ وَعَلَيْهَا طَعَامُهُ وَشَرَابُهُ، فَأَيِسَ مِنْهَا، فَأَتَى شَجَرَةً، فَاضْطَجَعَ فِي ظِلِّهَا، قَدْ أَيِسَ مِنْ رَاحِلَتِهِ، فَبَيْنَا هُوَ كَذَلِكَ إِذَا هُوَ بِهَا، قَائِمَةً عِنْدَهُ، فَأَخَذَ بِخِطَامِهَا، ثُمَّ قَالَ مِنْ شِدَّةِ الْفَرَحِ : اَللّٰهُمَّ أَنْتَ عَبْدِيْ وَأَنَا رَبُّكَ، أَخْطَأَ مِنْ شِدَّةِ الْفَرَحِ"

‘বান্দা যখন আল্লাহর নিকট তাওবাহ করে তখন তিনি তার তাওবায় ঐ ব্যক্তির চাইতেও বেশি খুশি হন যে নিজ বাহনের উপর মরুভূমীতে সফররত অবস্থায় ছিল, হঠাৎ তার সাওয়ারী হারিয়ে যায়, এমনকি তার খাবার ও পানীয় সাওয়ারীর পিঠের উপরেই ছিল। অতঃপর সন্ধান করে তা হতে নিরাশ হয়ে গিয়ে একটি গাছের তলায় এসে তার ছায়ায় শুয়ে পড়ে। এই নিরাশ অবস্থায় হঠাৎ দেখে যে, তার সাওয়ারী ফিরে এসে তার নিকট দাঁড়িয়ে আছে। তখন সে বাহনের লাগাম ধরে খুশির চোটে বলে ফেললো, হে আল্লাহ, তুমি আমার বান্দা আর আমি তোমার রব! সে এই ভুল অধিক খুশির কারণে করে ফেলেছিল’ (মুসলিম, হা/২৭৪৭)।


আব্দুল্লাহ মাস‘ঊদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

لتَّائِبُ مِنَ الذَّنْبِ، كَمَنْ لَا ذَنْبَ لَهُ

‘গুনাহ হতে তাওবাহকারী ঐ ব্যক্তির মতো হয়ে যায়, যার কোনো গুনাহই নেই’ (ইবনু মাজাহ, হা/৪২৫০)।


আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

كُلُّ ابْنِ آدَمَ خَطَّاءٌ وَخَيْرُ الخَطَّائِيْنَ التَّوَّابُوْنَ

 ‘প্রত্যেক আদম সন্তান ভুল করে থাকে, আর ভুলকারীদের মধ্যে উত্তম সেই ব্যক্তি, যে তাওবাহ করে নেয়’ (তিরমিযী, হা/২৪৯৯)।

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

وَالَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِهِ لَوْ لَمْ تُذْنِبُوْا لَذَهَبَ اللهُ بِكُمْ، وَلَجَاءَ بِقَوْمٍ يُذْنِبُوْنَ، فَيَسْتَغْفِرُوْنَ اللهَ فَيَغْفِرُ لَهُمْ

আল্লাহর শপথ করে বলছি, যার হাতে আমার প্রাণ! তোমরা যদি গুনাহ না করো, তাহলে আল্লাহ তোমাদের সরিয়ে দিয়ে এমন এক জাতিকে নিয়ে আসবেন, যারা গুনাহ করে মহান আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে, তখন তিনি তাদের ক্ষমা করবেন’ (মুসলিম, হা/২৭৪৯)।

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি,

وَاللهِ إِنِّىْ لَأَسْتَغْفِرُ اللهَ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ فِى الْيَوْمِ أَكْثَرَ مِنْ سَبْعِيْنَ مَرَّةً

‘আল্লাহর শপথ! আমি আল্লাহর নিকট প্রতিদিন সত্তর বারের বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করি এবং তাওবাহ করি’ (বুখারী, হা/৬৩০৭)।


উল্লিখিত হাদীসসমূহ দ্বারা জানা যায় যে, পাপী ব্যক্তি তাওবাহ ও ক্ষমাক্ষামা প্রার্থনার মাধ্যমে নিজ গুনাহের বোঝা থেকে মুক্ত হতে পারে। তারপর যত বেশি সৎ কাজ করবে তার দ্বারা সে আল্লাহর তত বেশি নৈকট্য লাভ করতে পারবে। এভাবে যখন সে মহান আল্লাহর নিকট কোনো কিছু চায় তখন তার দু‘আ আল্লাহ কবুল করে নেন।

অনুরূপ যদি কোনো ব্যক্তি নিজ গুনাহ হতে তাওবাহ ও ক্ষমা প্রার্থনা করার পরিবর্তে তাসবীহ (সুবহানাল্লাহ), তাহমীদ (আলহামদুলিল্লাহ) ও তাহলীল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) পাঠ করে, তাহলে সে নিজ অবস্থার প্রেক্ষাপটে অনুপযুক্ত কাজ করল।

এ সম্পর্কে ইমাম ইবনুল জাওযী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, ময়লাযুক্ত কাপড়ে সুগন্ধি ব্যবহারের পরিবর্তে তা সাবান দিয়ে পরিষ্কার করা উচিত। অর্থাৎ পাপী ব্যক্তি তাওবাহ ও ক্ষমা প্রার্থনা করে সর্বপ্রথম নিজেকে গুনাহের ময়লা হতে পরিষ্কার করে এরপর তাসবীহ ও তাহলীলের দ্বারা সুগন্ধিময় করবে।

কুরআন ও সহীহ সুন্নাহর আলোকে আলেমগণ তাওবাহ কবুলের জন্য নিম্নের শর্তাবলি আরোপ করেছেন-

১. গুনাহ পরিত্যাগ করতে হবে।

২. গুনাহের জন্য লজ্জিত ও অনুতপ্ত হতে হবে।

৩. ঐ পাপ পুনরায় না করার ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করতে হব।

৪. আর মানুষের হক নষ্ট করলে বা কাউকে কষ্ট দিলে অবশ্যই সেই ব্যক্তির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। কোনো জিনিস চুরি করলে তা ফেরত দিতে হবে। নতুবা তাওবাহ শুদ্ধ হবে না।

যদি উল্লিখিত কোনো একটি শর্ত পূরণ না করেই তাওবাহ করা হয় তাহলে সেই তাওবাহ কবুল হবে না (নববী, রিয়াযুস সালেহীন, ‘তাওবাহ’ অনুচ্ছেদ)।

দু‘আ (دُعَاء) শব্দের অর্থ ডাকা, কিছু চাওয়া, প্রার্থনা করা ইত্যাদি। বিনয়ের সাথে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করা হলো দু‘আ। আল্লাহ বলেন বলেন, ‘তোমরা আমার নিকট দু‘আ করো, আমি তোমাদের দু‘আ কবুল করব’ (সূরা আল-মুমিন : ৬০)।

নবী করীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘কোনো মুসলিম ব্যক্তি যদি আল্লাহর নিকট দু‘আ করে এবং সে দু‘আর মধ্যে পাপ ও আত্মীয়তা ছিন্ন করার কথা না থাকে, তবে আল্লাহ উক্ত উক্ত দু‘আর বিনিময়ে তাকে তিনটির যেকোনো একটি দান করেন। যথা-

(১) তার দু‘আ দ্রুত কবুল করেন।

অথবা

(২) তার প্রতিদান আখেরাতে প্রদানের জন্য জমা রাখেন।

অথবা

(৩) তার থেকে অনুরূপ আরেকটি কষ্ট দূরীভূত করেন।

এ কথা শুনে সাহাবীগণ বললেন, তা হলে আমরা বেশি বেশি দু‘আ করব। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ আরও আরও বেশি দু‘আ কবুলকারী’ (মুসনাদে আহমাদ, মিশকাত, হা/২২৫৯)।

১. আল্লাহর প্রতি ইখলাস ও একনিষ্ঠতা।

২.  দু‘আর শুরুতে আল্লাহর প্রশংসা করা, অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি দরূদ পাঠ করা এবং দু‘আর শেষেও পুনরায় দরূদ পাঠ করা।

৩.  একাগ্রতা ও দৃঢ়তার সাথে দু‘আ করা এবং কবুলের ব্যাপারে নিশ্চিত থাকা।

৪. দু‘আ কবুলের ব্যাপারে তাড়াহুড়ো না করা।

৫. সুখে-দুঃখে সবসময় দু‘আ করা।

৬. আল্লাহ ব্যতীত ব্যতীত অন্য কারও নিকট প্রর্থনা না করা।

৭. বার বার দু‘আ করা।

৮.  পরিবার-পরিজন, ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি ও নিজের উপর বদ দু‘আ না করা।

৯. মধ্যম স্বরে বিনয়ের সাথে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করা।

১০. ছন্দবদ্ধ বা মিলযুক্ত গদ্য দিয়ে কৃত্রিমভাবে দু‘আ না করা।

১১.  ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে দু‘আ করা।

১২. আল্লাহর সুন্দর নামসমূহের অসীলায় দু‘আ করা।

১৩. ওযূ করে কিবলামুখী হয়ে দু‘আ করা।

১৪. নেক আমলের মাধ্যমে গভীর আগ্রহের সাথে দু‘আ করা।

১৫. হারাম খাদ্য, পানীয়, বস্ত্র বর্জন করে দু‘আ করা।

১৬.  দুই রাকাত সালাত আদায় করে দু‘আ করা।

১৭. দু‘আয় সীমালঙ্ঘন না করা।

১৮. অন্যের জন্য দু‘আ করলে প্রথমে নিজের জন্য দু‘আ করা।

১৯. অপরাধ স্বীকার করে বিশুদ্ধ নিয়তে দু‘আ করা।

২০. যাবতীয় পাপাচার থেকে বিরত থাকা।

১. সালাতে সিজদায় এবং শেষ বৈঠকে তাশাহহুদের পর।

২. কদরের রাতে ও আরাফার দিনে।

৩. রমাদান মাসে দু‘আ করা।

৪. আযানের সময়, আযান ও ইকামতের মধ্যকার সময় এবং যুদ্ধের সময়।

৫. জুমু‘আর দিনে ইমামের মিম্বরে বসা হতে সালাত শেষ হওয়া পর্যন্ত সময়।

৬. শেষ রাতে এবং ফরয সালাতের পর।

৭. বৃষ্টির সময়।

৮. কারও মৃত্যুর পর মানুষের দু‘আ।

৯. পবিত্র হয়ে ঘুমানোর পর রাতে উঠে দু‘আ করা।

১০. অনুপস্থিত মুসলিম ভাইয়ের জন্য দু‘আ করা।

১১. যুলুমকারীর উপর মাযলুমের দু‘আ।

১২. সন্তানের জন্য পিতা-মাতার দু‘আ।

১৩. মুসাফিরের দু‘আ।

১৪. সিয়াম পালনকারীর ইফতারের সময় দু‘আ।

১৫. বিপদগ্রস্ত ব্যক্তির দু‘আ।

১৬. ন্যায়পরায়ণ শাসকের দু‘আ।

১৭. ছোট ও মধ্য জামরায় কঙ্কর নিক্ষেপের দু‘আ।

১৮. কা‘বার ভেতরে দু‘আ করা।

১৯. সাফা-মারওয়া পাহাড়ের উপর দু‘আ করা।

২০. আল্লাহর রাস্তায় (জিহাদ) সৈন্যদের অগ্রসর হওয়ার সময়।

মূলত মুমিন ব্যক্তি যেখানেই থাকুক যে অবস্থাতেই থাকুক সদা-সর্বদা আল্লাহর নিকট বিনয়ের সাথে দু‘আ করবে। তবে উল্লিখিত সময়, স্থান ও অবস্থা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

 

الْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْ أَحْيَانَا بَعْدَ مَا أَمَاتَنَا، وَإِلَيْهِ النُّشُوْرُ

‘যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি (নিদ্রারূপ) মৃত্যুর পর আমাদেরকে জীবিত (জাগ্রত) করলেন, আর তাঁরই নিকট সকলের পুনরুত্থান’ (বুখারী, হা/৬৩১২)।

لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَريْكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ، سُبْحَانَ اللهِ، وَالْحَمْدُ لِلّٰهِ، وَلَا إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ، وَاللهُ أَكْبَرُ، وَلاَ حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلاَّ بِاللهِ الْعَلِيِّ الْعَظِيْمِ «رَبِّ اغْفرْ لِيْ»

‘আল্লাহ ব্যতীত আর কোনো সত্য ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই; রাজত্ব তাঁরই, প্রশংসাও তাঁরই; আর তিনি সকল কিছুর ওপর ক্ষমতাবান। আল্লাহ পবিত্র-মহান। সকল প্রশংসা আল্লাহর। আল্লাহ ব্যতীত কোনো সত্য ইলাহ নেই। আল্লাহ সর্বমহান। সুউচ্চ সুমহান আল্লাহর সাহায্য ব্যতীত (পাপ কাজ থেকে দূরে থাকার) কোনো উপায় এবং (সৎকাজ করার) কোনো শক্তি কারো নেই। হে রব, আমাকে ক্ষমা করুন’ (ইবনু মাজাহ, হা/৩৮৭৮)।


الْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْ عَافَانِيْ فِي جَسَدِيْ، وَرَدَّ عَلَيَّ رُوحِيْ، وَأَذِنَ لِيْ بِذِكْرِهِ

‘সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমার দেহকে নিরাপদ করেছেন, আমার রূহকে আমার নিকট ফিরিয়ে দিয়েছেন এবং আমাকে তাঁর যিকির করার অনুমতি (সুযোগ) দিয়েছেন’ (তিরমিযী, হা/৩৪০১)।


إِنَّ فِيْ خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ لَآيَاتٍ لِّأُولِي الْأَلْبَابِ ¤ الَّذِيْنَ يَذْكُرُوْنَ اللهَ قِيَامًا وَّقُعُوْدًا وَّعَلٰى جُنُوْبِهِمْ وَيَتَفَكَّرُوْنَ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ رَبَّنَا مَا خَلَقْتَ هَذَا بَاطِلًا سُبْحَانَكَ فَقِنَا عَذَابَ النَّارِ ¤ رَبَّنَا إِنَّكَ مَنْ تُدْخِلِ النَّارَ فَقَدْ أَخْزَيْتَهُ وَمَا لِلظَّالِمِيْنَ مِنْ أَنْصَارٍ ¤ رَبَّنَا إِنَّنَا سَمِعْنَا مُنَادِيًا يُّنَادِيْ لِلْإِيْمَانِ أَنْ آمِنُوا بِرَبِّكُمْ فَآمَنَّا رَبَّنَا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَكَفِّرْ عَنَّا سَيِّئَاتِنَا وَتَوَفَّنَا مَعَ الْأَبْرَارِ ¤ رَبَّنَا وَآتِنَا مَا وَعَدْتَّنَا عَلَى رُسُلِكَ وَلَا تُخْزِنَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِنَّكَ لَا تُخْلِفُ الْمِيعَادَ فَاسْتَجَابَ لَهُمْ رَبُّهُمْ أَنِّيْ لَا أُضِيْعُ عَمَلَ عَامِلٍ مِنْكُمْ مِنْ ذَكَرٍ أَوْ أُنْثٰى بَعْضُكُمْ مِنْ بَعْضٍ فَالَّذِيْنَ هَاجَرُوا وَأُخْرِجُوا مِنْ دِيَارِهِمْ وَأُوْذُوا فِيْ سَبِيْلِي وَقَاتَلُوا وَقُتِلُوا لَأُكَفِّرَنَّ عَنْهُمْ سَيِّئَاتِهِمْ وَلَأُدْخِلَنَّهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ ثَوَابًا مِّنْ عِنْدِ اللهِ وَاللهُ عِنْدَهُ حُسْنُ الثَّوَابِ ¤ لَا يَغُرَّنَّكَ تَقَلُّبُ الَّذِيْنَ كَفَرُوا فِي الْبِلَادِ ¤ مَتَاعٌ قَلِيْلٌ ثُمَّ مَأْوَاهُمْ جَهَنَّمُ وَبِئْسَ الْمِهَادُ ¤ لٰكِنِ الَّذِيْنَ اتَّقَوْا رَبَّهُمْ لَهُمْ جَنَّاتٌ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَا نُزُلًا مِنْ عِنْدِ اللهِ وَمَا عِنْدَ اللهِ خَيْرٌ لِّلْأَبْرَارِ ¤ وَإِنَّ مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ لَمَنْ يُّؤْمِنُ بِاللهِ وَمَا أُنْزِلَ إِلَيْكُمْ وَمَا أُنْزِلَ إِلَيْهِمْ خَاشِعِيْنَ لِلّٰهِ لَا يَشْتَرُوْنَ بِآيَاتِ اللهِ ثَمَنًا قَلِيْلًا أُولٰئِكَ لَهُمْ أَجْرُهُمْ عِنْدَ رَبِّهِمْ إِنَّ اللهَ سَرِيْعُ الْحِسَابِ ¤ يَاأَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوا اصْبِرُوا وَصَابِرُوا وَرَابِطُوا وَاتَّقُوا اللهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ

‘নিশ্চয়ই আসমানসমূহ ও জমিনের সৃষ্টিতে, রাত ও দিনের পরর্বিতনে নিদর্শন রয়েছে বোধশক্তি সম্পন্ন লোকদরে জন্য। যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আসমানসমূহ ও জমিনের সৃষ্টি সম্বন্ধে চিন্তা করে আর বলে, “হে আমাদের রব, আপনি এগুলো অর্নথক সৃষ্টি করেননি, আপনি অত্যন্ত পবিত্র, অতএব আপনি আমাদেরকে আগুনের শাস্তি হতে রক্ষা করুন। হে আমাদের রব, তুমি যাকে আগুনে নিক্ষেপ করবে, তাকে অবশ্যই তুমি অপমান করবে আর যালিমদের কোনো সাহায্যকারী নেই।
হে আমাদের রব, আমরা একজন ঘোষণাকারীকে ঈমানের ঘোষণা করতে শুনেছি যে, ‘তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের প্রতি ঈমান আনো’। সে অনুযায়ী আমরা ঈমান এনেছি। সুতরাং হে আমাদের রব, আমাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দাও এবং আমাদের থেকে আমাদের মন্দ কাজগুলো বিদূরিত করে দাও আর নেককার বান্দাদের সঙ্গে শামিল করে আমাদের মৃত্যু ঘটাও। হে আমাদের রব, তুমি স্বীয় রাসূলদের মাধ্যমে আমাদেরকে যেসব বস্তুর ওয়াদা শুনিয়েছো, তা আমাদের দান করো এবং কিয়ামতের দিন আমাদের লাঞ্ছিত কোরো না, নিশ্চয়ই তুমি ওয়াদা খেলাফ করো না।”

তখন তাদের রব তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে বললেন, “তোমাদের মধ্যে পুরুষ হোক কিংবা নারীই হোক কারওই কর্মফল আমি নষ্ট করি না, তোমরা একে অপরের অংশ। সুতরাং যারা হিজরত করবে, স্বীয় গৃহ হতে বিতাড়িত হবে এবং আমার পথে নির্যাতিত হবে, যুদ্ধ করবে ও নিহত হবে, নিশ্চয়ই আমি তাদের গুনাহসমূহ দূর করে দেবো এবং নিশ্চয়ই তাদেরকে এমন জান্নাতে দাখিল করবো, যার নিচ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে নদ-নদী, আল্লাহর নিকট হতে পুরস্কার হিসেবে, বস্তুতঃ আল্লাহর নিকটই রয়েছে উত্তম বিনিময়।” দেশে দেশে কাফিরদের সদম্ভ পদচারণা তোমাকে যেন বিভ্রান্ত না করে। সামান্য ভোগ, তারপর জাহান্নাম তাদের আবাস, আর তা কতই না নিকৃষ্ট বিশ্রামস্থল! কিন্তু যারা তাদের রবকে ভয় করে, তাদের জন্য আছে জান্নাত, যার পাদদেশে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত, তারা তাতে চিরকাল থাকবে, এ হলো আল্লাহর নিকট হতে আতিথ্য আর আল্লাহর নিকট যা আছে, তা সৎকর্মপরায়ণদের জন্য অতি উত্তম।

আহলে কিতাবদের মধ্যকার কিছু লোক নিঃসন্দেহে এমনও আছে, যারা আল্লাহর উপর এবং তোমাদের উপর অবতীর্ণ কিতাব ও তাদের প্রতি অবতীর্ণ কিতাবের উপর ঈমান রাখে, তারা আল্লাহর প্রতি বিনয়াবনত, তারা আল্লাহর আয়াতকে তুচ্ছমূল্যে বিক্রয় করে না, এরাই তারা যাদের জন্য তাদের কর্মফল নির্ধারিত রয়েছে তাদের প্রতিপালকের নিকট, আল্লাহ হিসাব গ্রহণে ত্বড়িতগতি। হে মুমিনগণ, ধৈর্য অবলম্বন করো, দৃঢ়তা প্রদর্শন করো, নিজেদের প্রতিরক্ষাকল্পে পারস্পরিক বন্ধন মজবুত করো এবং আল্লাহকে ভয় করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো।’ (সূরা আলে ‘ইমরান : ১৯০-২০০)।

অযুর পূর্বে দু‘আ

بِسْمِ اللهِ

‘আল্লাহর নামে’ (আবূ দাঊদ, হা/১০১)।


 অযু শেষ করার পর দু‘আ

أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّداً عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ..

‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত আর কোনো সত্য ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসূল’ (মুসলিম, হা/২৩৪)।


اَللّٰـهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ أَنْ أَضِلَّ، أَوْ أُضَلَّ، أَوْ أَزِلَّ، أَوْ أُزَلَّ، أَوْ أَظْلِمَ، أَوْ أُظْلَمَ، أَوْ أَجْهَلَ، أَوْ يُجْهَلَ عَلَيَّ

‘হে আল্লাহ, আপনি আমাকে তাওবাহকারীদের অর্ন্তভুক্ত করুন এবং পবত্রিতা র্অজনকারীদেরও অর্ন্তভুক্ত করুন’ (তিরমিযী, হা/৫৫)।

বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময়ের দু‘আ

بِسْمِ اللهِ وَلَجْنَا، وَبِسْمِ اللهِ خَرَجْنَا، وَعَلَى اللهِ رَبِّنَا تَوَكَّلْنَا

‘আল্লাহর নামে (বের হচ্ছি), আল্লাহর ওপর ভরসা করলাম। আর আল্লাহর সাহায্য ছাড়া (পাপ কাজ থেকে দূরে থাকার) কোনো উপায় এবং (সৎকাজ করার) কোনো শক্তি কারও নেই” (আবূ দাঊদ, হা/৫০৯৫)।


اَللّٰـهُمَّ اجْعَلْ فِي قَلْبِي نُوراً، وَفِي لِسَانِي نُوراً، وَفِي سَمْعِي نُوراً، وَفِي بَصَرِي نُوراً، وَمِنْ فَوْقِي نُوراً، وَمِنْ تَحْتِي نُوراً، وَعَنْ يَمِينِي نُوراً، وَعَنْ شِمَالِي نُوراً، وَمِنْ أَمَامِي نُوراً، وَمِنْ خَلْفِي نُوراً، وَاجْعَلْ فِي نَفْسِي نُوراً، وَأَعْظِمْ لِي نُوراً، وَعَظِّم لِي نُوراً، وَاجْعَلْ لِي نُوراً، وَاجْعَلْنِي نُوراً، اَللّٰـهُمَّ أَعْطِنِي نُوراً، وَاجْعَلْ فِي عَصَبِي نُوراً، وَفِي لَحْمِي نُوراً، وَفِي دَمِي نُوراً، وَفِي شَعْرِي نُوراً، وَفِي بَشَرِي نُوراً».

«[ اَللّٰـهُمَّ اجْعَلْ لِي نُوراً فِي قَبْرِي... وَنُوراً فِي عِظَامِي]» [«وَزِدْنِي نُوراً، وَزِدْنِي نُوراً، وَزِدْنِي نُوراً»] [«وَهَبْ لِي نُوراً عَلَى نُورٍ»[.

‘হে আল্লাহ, আপনি আমার অন্তরে নূর (আলো) দান করুন, আমার যবানে নূর দান করুন, আমার শ্রবণশক্তিতে নূর দান করুন, আমার র্দশনশক্তিতে নূর দান করুন, আমার ওপরে নূর দান করুন, আমার নিচে নূর দান করুন, আমার ডানে নূর দান করুন, আমার বামে নূর দান করুন, আমার সামনে নূর দান করুন, আমার পেছনে নূর দান করুন, আমার আত্মায় নূর দান করুন, আমার জন্য নূরকে বড় করে দিন, আমার জন্য নূর বাড়িয়ে দিন, আমার জন্য নূর নির্ধারণ করুন, আমাকে আলোকময় করুন। হে আল্লাহ, আমাকে নূর দান করুন, আমার পেশীতে নূর প্রদান করুন, আমার গোশতে নূর দান করুন, আমার রক্তে নূর দান করুন, আমার চুলে নূর দান করুন ও আমার চামড়ায় নূর দান করুন’ (বুখারী, হা/৬৩১৬)।


[‘হে আল্লাহ, আমার জন্য আমার কবরে নূর দিন, আমার হাড়সমূহেও নূর দিন’ (তিরমিযী, হা/৩৪১৯)], [‘আমাকে নূরে বৃদ্ধি করে দিন, আমাকে নূরে বৃদ্ধি করে দিন, আমাকে নূরে বৃদ্ধি করে দিন’ (আল-আদাবুল মুফরাদ, হা/৬৯৫)।], [‘আমাকে নূরের ওপর নূর দান করুন’ (ফাতহুল বারী, ১১/১১৮)]।

মাসজিদে প্রবেশের দু‘আ

ডান পা দিয়ে ঢুকবে (হাকিম, ১/২১৮; সিলসিলাতুল আহাদীস আস-সহীহা, হা/২৪৭৮) এবং বলবে,

اَللّٰـهُمَّ افْتَحْ لِي أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ

‘হে আল্লাহ, আপনি আমার জন্য আপনার রহমতের দরজাসমূহ খুলে দিন’ (মুসলিম, হা/৭১৩)।


মাসজিদ থেকে বের হওয়ার দু‘আ

বাম পা দিয়ে শুরু করবে (হাকিম, ১/২১৮) এবং বলবে

اَللّٰهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِك

‘হে আল্লাহ, আমার জন্য আপনার অনুগ্রহের দরজাসমূহ খুলে দিন’ (মুসলিম, হা/৭১৩)।

দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১০ পর্যন্ত, সর্বমোট ৩৭ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ 1 2 3 4 পরের পাতা »