পবিত্র বাইবেল পরিচিতি ও পর্যালোচনা ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.) ৮৬৬ টি
পবিত্র বাইবেল পরিচিতি ও পর্যালোচনা ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.) ৮৬৬ টি

প্রশংসা মহান আল্লাহর নিমিত্ত। সালাত ও সালাম তাঁর বান্দা ও রাসূল মুহাম্মাদ (ﷺ) এর জন্য, তাঁর বান্দা আদম, নূহ, ইবরাহিম, ইসমাইল, ইসহাক, ইয়াকুব, মূসা, ঈসা ও অন্যান্য সকল নবী-রাসূলের জন্য, তাঁদের পরিজন ও সহচরদের জন্য।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মতত্ত্ব অনুষদে অধ্যাপনার কারণে তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব আমাদের পড়তে ও পড়াতে হয়। ছাত্র ও গবেষকবৃন্দ এ বিষয়ে কিছু লেখা আশা করেন। পাশাপাশি সংযুক্ত হয়েছে ধর্মপ্রচার বিষয়ক বিশেষ প্রেক্ষাপট। বিশ্বায়নের মাধ্যমে পৃথিবীর সকল সভ্যতা, ভাষা ও সংস্কৃতির মত সকল ধর্মও কাছাকাছি হয়ে গিয়েছে। বেড়েছে আমত্মঃধর্মীয় আলোচনা, সংলাপ, বিতর্ক ও দ্বনদ্ব। বিভিন্ন ধর্মের প্রচার বেড়েছে। বিভিন্ন ধর্ম অধ্যয়নে মানুষের আগ্রহও বেড়েছে। বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীরা নিজ ধর্মের প্রচারের পাশাপাশি নিজ ধর্মের বিরুদ্ধে অন্যান্য ধর্মের প্রচারকদের প্রচারণা খণ্ডনের চেষ্টাও বাড়িয়েছেন। এ প্রেক্ষাপটেই এ পুস্তকটার রচনা।

বিগত শতাব্দীর শেষ ভাগ থেকেই খ্রিষ্টধর্মীয় প্রচারকরা বাংলাদেশে খ্রিষ্টধর্মের প্রচার জোরদার করেছেন। স্বভাবতই তারা বাংলাদেশের হিন্দু, বৌদ্ধ বা মুসলিমকে খ্রিষ্টধর্মের গুরুত্ব বোঝাতে কমবেশি হিন্দু, বৌদ্ধ বা ইসলাম ধর্ম ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব বা নবীর উপর আক্রমণ করেন। বিশেষ করে মুসলিমরা যেহেতু তাওরাত, যাবুর, ইঞ্জিল ইত্যাদি ধর্মগ্রন্থের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং মূসা, ঈসা ও অন্যান্য নবীদের (সকলের প্রতি মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে শান্তি বর্ষিত হোক) প্রতি ভক্তিপ্রবণ, সেহেতু মুসলিম সমাজে খ্রিষ্টধর্ম প্রচারের ক্ষেত্রে তারা এ সকল ধর্মগ্রন্থ ও ধর্মীয় ব্যক্তিদের নাম ব্যবহার করেন। এ ছাড়া মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর অনুসরণের মাধ্যমে মুক্তি সম্ভব নয় বলে প্রমাণ করার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে অবমাননাকর কথা প্রচার করেন। তাদের বক্তব্য অনেক মুসলিমকে আহত করে। কখনো বা সংঘাত সৃষ্টি করে।

মুসলিম প্রচারকরা এ বিষয়ে তথ্য নির্ভর গ্রন্থাদি আশা করেন। বাংলা ভাষায় এ জাতীয় বইয়ের অভাব। এ অভাব পূরণ করে পবিত্র বাইবেল পর্যালোচনা ও সমালোচনায় বাঙালি পাঠকের সামনে সামগ্রিক তথ্যাদি তুলে ধরাই এ পুস্তকের উদ্দেশ্য।

ধর্মতত্ত্বের পাঠক ও পাঠদাতা হিসেবে আমরা মনে করি, ধর্ম আলোচনায় কেউ কখনোই নিরপেক্ষ হতে পারেন না, তবে বস্ত্তনিষ্ঠ হতে পারেন এবং হওয়াই উচিত। প্রতিটা মানুষই তার বিশ্বাসের পক্ষে এবং বিশ্বাস দ্বারা প্রভাবিত। নাস্তিক, ধর্মবিহীন আস্তিক এবং ধর্মানুসারী আস্তিক প্রত্যেকেই তার বিশ্বাস দ্বারা প্রভাবিত ও পরিচালিত হন। আমিও আমার বিশ্বাস দ্বারা প্রভাবিত ও পরিচালিত। তবে আমি আমার সাধ্যমত তথ্য উপস্থাপনায় ও পর্যালোচনায় বস্ত্তনিষ্ঠ থাকার চেষ্টা করেছি। বিশেষত অন্য ধর্মের আলোচনায় কুরআন ও সুন্নাহ যে নির্দেশনা ও বিধিনিষেধ আরোপ করেছে তা মেনে চলার চেষ্টা করেছি। কুরআন বলছে: ‘‘তোমরা ধর্মগ্রন্থ-অনুসারীদের (অন্য ধর্মের অনুসারীদের) সাথে সর্বোত্তম পদ্ধতিতে ছাড়া বিতর্ক করবে না’’ (সূরা-২৯ আনকাবূত: আয়াত ৪৬)। কুরআন অন্যত্র বলেছে: ‘‘আল্লাহ ছাড়া যাদের তারা ডাকে তোমরা তাদের বিষয়ে কটুক্তি করবে না।’’ (সূরা-৬ আনআম: আয়াত ১০৮)।

গবেষণার বস্তুনিষ্ঠতা ও ধর্মীয় নির্দেশনার আলোকে আলোচনা, পর্যালোচনা ও সমালোচনার ক্ষেত্রে আমরা কয়েকটা মূলনীতি রক্ষার চেষ্টা করেছি:

প্রথমত: পবিত্র বাইবেল বিষয়ক সকল তথ্য ইহুদি-খ্রিষ্টান বা পাশ্চাত্য বাইবেল গবেষকদের থেকে গ্রহণ করা হয়েছে।

দ্বিতীয়ত: বাইবেলের পর্যালোচনা বা সমালোচনায় ইহুদি-খ্রিষ্টান বা পাশ্চাত্য বাইবেল গবেষক বা সমালোচকদের উপর নির্ভর করা হয়েছে। প্রয়োজনে গবেষকদের মূল ইংরেজি বক্তব্য যথাসম্ভব উদ্ধৃত করার পরে অনুবাদ করা হয়েছে, যেন আগ্রহী পাঠক মূলের সাথে অনুবাদ মিলিয়ে দেখতে পারেন।

তৃতীয়ত: সকল পর্যালোচনায় বাইবেলের বক্তব্যের উপরে নির্ভর করা হয়েছে। বাইবেলের উদ্ধৃতি প্রদানের ক্ষেত্রে বাইবেল সোসাইটি বা খ্রিষ্টধর্মীয় প্রতিষ্ঠান প্রচারিত বঙ্গানুবাদের উপর নির্ভর করা হয়েছে। বাংলা অনুবাদের অস্পষ্টতা দূর করার প্রয়োজন ছাড়া স্বাধীন অনুবাদ পরিহার করা হয়েছে।

পবিত্র বাইবেল ও মুসলিম মানস

প্রথমত: ধর্মগ্রন্থ ও ইসলামি বিশ্বাস

তাওরাত, যাবুর, ইঞ্জিল নামগুলো মুসলিম মানসে ভক্তিপূত। তবে এ সকল গ্রন্থের বিষয়ে কুরআনের নির্দেশনা অধিকাংশ মুসলিমই জানেন না। ফলে বর্তমানে প্রচলিত এ সকল নামের গ্রন্থগুলোর মধ্যে বিদ্যমান অশোভন তথ্য তাদেরকে ভয়ঙ্করভাবে আহত করে। এ সকল ধর্মগ্রন্থ সম্পর্কে কুরআনের নির্দেশনা নিম্নরূপ:

(ক) মহান আল্লাহ মূসা (আ)-কে তাওরাত, দাউদ (আ)-কে যাবূর ও ঈসা (আ)-কে ইঞ্জিল নামক ধর্মগ্রন্থ ওহীর মাধ্যমে প্রদান করেন। (সূরা-৩ আল-ইমরান ৩, ৪৮, ৬৫; সূরা-৪ নিসা: ১৬৩; সূরা-৫ মায়িদা: ৪৬, ৬৬, ৪৭, ৬৬, ৬৮, ১১০; সূরা-৬ আন‘আম: ১৫৪; সূরা-৭ আ’রাফ: ১৫৭; সূরা-৯ তাওবা: ১১১; সূরা-১৭ বনী ইসরাঈল: ৫৫; সূরা-৪৮ ফাতহ: ২৯; সূরা-৫৭ হাদীদ: ২৭ আয়াত)

(খ) তাঁদের অনুসারীরা গ্রন্থগুলি বিকৃত করেছেন। তিনভাবে তারা তা বিকৃত করেছেন: (১) নিজেরা মনগড়াভাবে কিছু লেখে ধর্মগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত করেছেন ও ধর্মগ্রন্থ হিসেবে প্রচার করেছেন, (২) ধর্মগ্রন্থের বক্তব্য পরিবর্তন, সংযোজন বা বিয়োজনের মাধ্যমে বিকৃত করেছেন। (৩) ধর্মগ্রন্থের অনেক পুস্তক বা তথ্য তারা ভুলে গিয়েছেন বা হারিয়ে ফেলেছেন। (সূরা-২ বাকারা ৭৫, ৭৯; সূরা-৩ আল-ইমরান ৭৮-৭৯; সূরা-৫ মায়িদা: ১৩, ১৪, ১৫, ৪১ আয়াত)

(গ) বিকৃতি, সংযোজন, বিয়োজন, বিলুপ্তি, ভুলে যাওয়া, গোপন করা ইত্যাদির পরেও ‘আহল কিতাব’দের নিকট তাওরাত, যাবূর ও ইঞ্জিল নামে কিছু কিতাব রয়েছে, যেগুলোর মধ্যে আল্লাহর বাণী ও মানবীয় বিকৃতি সংমিশ্রিত হয়ে রয়েছে। এ ছাড়া এ সকল বিকৃত গ্রন্থও তাদের মধ্যে প্রচলিত ধর্মবিশ্বাস প্রমাণ করে না। বরং তাদের মধ্যে প্রচলিত অনেক বিশ্বাস ও কর্মই প্রচলিত বিকৃত ধর্মগ্রন্থের নিন্দা বা অপ্রমাণ করে। কুরআন মাঝে মাঝে এ বিষয়টার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। (সূরা-২ বাকারা: ১১৩; সূরা-৩ আল-ইমরান: ৯৩; সূরা-৫ মায়িদা: ৪৩, ৪৭, ৬৮; সূরা-১০ ইউনূস: ৯৪ আয়াত)

(ঘ)  কুরআন কারীমই সংরক্ষক-বিচারক।  মহান আল্লাহর বাণী ও মানবীয় বিকৃতির সংমিশ্রণ এ সকল ধর্মগ্রন্থের মধ্যে ঠিক কোন্ কথাটা সঠিক ওহী এবং কোন্ কথাটা বিকৃতি তা বোঝার বা যাচাই করার কোনো বৈজ্ঞানিক, পান্ডুলিপিগত বা অন্য কোনো পথ নেই। এখন এগুলোর মধ্য থেকে সঠিক বক্তব্য যাচাই করার একমাত্র ভিত্তি আল্লাহর সর্বশেষ ওহী আল-কুরআন। মহান আল্লাহ বলেন: ‘‘এবং আপনার উপর সত্যসহ গ্রন্থ অবতীর্ণ করেছি, তার পূর্বে অবতীর্ণ গ্রন্থসমূহের সমর্থক (confirmer) ও পর্যবেক্ষক-নিয়ন্ত্রক (watcher) রূপে।’’ (সূরা-৫ মায়িদা: ৪৮ আয়াত)

দ্বিতীয়ত: নবীদের মর্যাদায় বাইবেল ও কুরআন

ইসলামি বিশ্বাসে মহান আল্লাহর মহান নবীরা সকলেই মানুষ ছিলেন এবং মানবীয় সততা ও পবিত্রতায় আদর্শ ছিলেন। মহান আল্লাহর বিধান পালন, বাস্তবায়ন, বিনয়, সততা, ক্রন্দন ও আল্লাহ-ভীতিতে তাঁরা অনুকরণীয় আদর্শ ছিলেন। কুরআন ও হাদীসে তাঁদেরকে এভাবেই চিত্রিত করা হয়েছে। কুরআনে বর্ণিত অনেক নবীর নাম পবিত্র বাইবেলের মধ্যেও বিদ্যমান। একজন মুসলিম স্বভাবতই ধারণা করেন যে, বাইবেলও তাঁদের পবিত্রতা ও মর্যাদা বর্ণনা করেছে। কিন্তু প্রকৃত বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। পবিত্র বাইবেলে নবীদেরকে অত্যন্ত নোংরাভাবে চিত্রিত করা হয়েছে। খ্রিষ্টধর্মীয় বিশ্বাসে নবীরা নিষ্পাপ নন, তবে ঈসা মসীহ নিষ্পাপ। কিন্তু ইঞ্জিল শরীফে তাঁকেও নোংরাভাবে চিত্রিত করা হয়েছে। পর্যালোচনার প্রয়োজনে আমাদেরকে এ সকল বিষয় উদ্ধৃত করতে হয়েছে। বিষয়গুলো বিশ্বাসী মুসলিমকে ভয়ঙ্করভাবে আহত করে। কারণ কোনো ধর্মের কোনো নবীর বিষয়ে এ জাতীয় নোংরা কথা তারা চিন্তাও করতে পারেন না। আমাদের এ গ্রন্থে এ সকল বিষয় উল্লেখ করাকে তারা ইসলামি বিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিক বলে গণ্য করতে পারেন।

তাদেরকে বুঝতে হবে যে, আমরা পবিত্র বাইবেলের বর্ণনামূলক পর্যালোচনার জন্যই এ সকল তথ্য উল্লেখ করেছি। এ সকল তথ্য এ সকল মহান মানুষের পাপ বা নীচতা প্রমাণ করে না, বরং এ সকল গ্রন্থের অপ্রামাণ্যতা প্রমাণ করে। বাইবেলীয় এ সকল তথ্য ইহুদি বা খ্রিষ্টানরা তাদের বিশ্বাসের আলোকে ব্যাখ্যা করেন, তবে মুসলিম বিশ্বাসে এগুলো সবই বানোয়াট ও ভিত্তিহীন মিথ্যা।

বাইবেলের বঙ্গানুবাদ, পরিভাষা ও বানান

ব্রিটিশ প্রটেস্ট্যান্ট প্রচারক উইলিয়াম কেরি সর্বপ্রথম বাংলা ভাষায় বাইবেল অনুবাদ করেন ১৮০৯ খ্রিষ্টাব্দে। ধর্মপুস্তক বা পবিত্র বাইবেল নামে তা প্রচারিত হয়। পরবর্তী প্রায় দু’শত বছর যাবৎ বাইবেলের বাংলা অনুবাদে মূলত কেরির পরিভাষাগুলোই ব্যবহার করা হয়। বিগত কয়েক দশক ধরে খ্রিষ্টান প্রচারকরা ‘ইসলামী বাংলায়’ বাইবেলের অনুবাদ করছেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ বাইবেল সোসাইটি প্রকাশিত পবিত্র বাইবেল-২০০০, বাংলাদেশ বাইবেল সোসাইটি প্রকাশিত কিতাবুল মোকাদ্দস-২০০০ ও ২০০৬ এবং বাচিব প্রকাশিত কিতাবুল মোকাদ্দস-২০১৩।

প্রথম অধ্যায়ে অনুবাদ প্রসঙ্গে পাঠক দেখবেন যে, কেরির অনুবাদ মূলানুগ হলেও তা দুর্বোধ্য। পরবর্তী অনুবাদ সহজবোধ্য হলেও অনেক সময় তাতে মূল অর্থ সংরক্ষিত হয়নি। মূল অর্থ সংরক্ষণের পাশাপাশি সহজবোধ্য অনুবাদ উদ্ধৃত করার জন্য আমাদেরকে বিভিন্ন বাংলা বাইবেল থেকে উদ্ধৃতি প্রদান করতে হয়েছে। অনুবাদের ভাষা ও পরিভাষার পরিবর্তন অনুধাবনের জন্য কয়েকটা উদ্ধৃতি উল্লেখ করছি।

প্রথম উদ্ধৃতি: ইঞ্জিল শরীফের প্রথম পুস্তক ‘মথি’ ৩ অধ্যায় ১-৩ শ্লোক

(১) কেরি: ‘‘সেই সময়ে যোহন বাপ্তাইজক উপস্থিত হইয়া যিহূদিয়ার প্রান্তরে প্রচার করিতে লাগিলেন, তিনি বলিলেন, মন ফিরাও, কেননা স্বর্গ-রাজ্য সন্নিকট হইল। ইনিই সেই ব্যক্তি, যাঁহার বিষয়ে যিশাইয় ভাববাদী দ্বারা এই কথা কথিত হইয়াছিল, ‘প্রান্তরে এক জনের রব, সে ঘোষণা করিতেছে, তোমরা প্রভুর পথ প্রস্ত্তত কর।’’

(২) পবিত্র বাইবেল জুবিলী বাইবেল-১৯৯৯, ২০০৬: ‘‘নির্ধারিত সময়ে দীক্ষাগুরু যোহন আবির্ভূত হলেন। তিনি যুদেয়ার মরুপ্রান্তরে প্রচার করতেন, তিনি বলতেন, মন পরিবর্তন কর, কেননা স্বর্গরাজ্য কাছে এসে গেছে। ইনিই সেই ব্যক্তি যার বিষয়ে নবী ইসাইয়া বলেছিলেন, এমন একজনের কণ্ঠস্বর যে মরূপ্রান্তরে চিৎকার করে বলে, প্রভুর জন্য পথ প্রস্ত্তত কর...।’’

(৩) পবিত্র বাইবেল-২০০০: ‘‘পরে বাপ্তিস্মদাতা যোহন যিহূদিয়ার মরু-এলাকায় এসে এই বলে প্রচার করতে লাগলেন, পাপ থেকে মন ফেরাও, কারণ স্বর্গ-রাজ্য কাছে এসে গেছে। এই যোহনের বিষয়েই নবী যিশাইয় বলেছিলেন, মরু-এলাকায় একজনের কণ্ঠস্বর চিৎকার করে জানাচ্ছে, তোমরা প্রভুর পথ ঠিক কর...।’’

(৪) মোকাদ্দস-২০০০ ও ২০০৬: ‘‘পরে তরিকাবন্দীদাতা ইয়াহিয়া এহুদিয়ার মরুভূমিতে এসে এই বলে তবলিগ করতে লাগলেন, তওবা কর, কারণ বেহেশতী রাজ্য কাছে এসে গেছে। এই ইয়াহিয়ার বিষয়েই নবী ইশাইয়া বলেছিলেন, মরুভূমিতে একজনের কণ্ঠস্বর চিৎকার করে জানাচ্ছে, তোমরা মাবুদের পথ ঠিক কর।’’

(৫) মোকাদ্দস-২০১৩: ‘‘সেই সময়ে বাপ্তিস্মদাতা ইয়াহিয়া উপস্থিত হয়ে এহুদিয়ার মরুভূমিতে তবলিগ করতে লাগলেন, তিনি বললেন, তওবা কর, কেননা বেহেশতী-রাজ্য সন্নিকট হল। ইনিই সেই ব্যক্তি, যাঁর বিষয়ে নবী ইশাইয়া বলেছিলেন, ‘মরুভূমিতে এক জনের কণ্ঠস্বর, সে ঘোষণা করছে, তোমরা প্রভুর পথ প্রস্তুত কর।’’

ইংরেজি অনুবাদ অধ্যয়ন করলে পাঠক দেখবেন যে, সেগুলোতে শব্দ ব্যবহারে পরিবর্তন ঘটলেও নাম (proper noun) বা ধর্মীয় পরিভাষাগুলোর ক্ষেত্রে পরিবর্তন ঘটে না। কিন্তু বাংলায় এ জাতীয় পরিবর্তন পাঠকের জন্য সমস্যা তৈরি করে। উপরের অনুবাদে বিশেষ করে নিম্নের পরিবর্তন লক্ষণীয়: ইংরেজি John the Baptist বাংলায় যোহন বাপ্তাইজক, দীক্ষাগুরু যোহন, বাপ্তিস্মদাতা যোহন,  তরিকাবন্দীদাতা ইয়াহিয়া এবং বাপ্তিস্মদাতা ইয়াহিয়া। ইংরেজি Judaea বাংলায় যিহূদিয়া, যুদেয়া এবং এহুদিয়া। ইংরেজি Repent বাংলায় মন ফিরাও, মনপরিবর্তন কর এবং তওবা কর। ইংরেজি kingdom of heaven বাংলায় স্বর্গ-রাজ্য এবং বেহেশতী রাজ্য। ইংরেজি prophet বাংলায় ভাববাদী ও নবী। ইংরেজি Esaias/ Isaiah বাংলায় যিশাইয়, ইসাইয়া এবং ইশাইয়া এবং ইংরেজি Lord বাংলায় প্রভু ও  মাবুদ।

এখানে কিতাবুল মোকাদ্দসের অনুবাদে পরিবর্তনশীলতা বিশেষভাবে লক্ষণীয়। ২০০০ ও ২০০৬ সংস্করণে John the Baptist অনুবাদ করেছে ‘‘তরিকাবন্দীদাতা ইয়াহিয়া’’; কিন্তু ২০১৩ সংস্করণ লেখেছে ‘‘বাপ্তিস্মদাতা ইয়াহিয়া’’।

দ্বিতীয় উদ্ধৃতি: মথি ১০ অধ্যায়ের ৫-৭ শ্লোক

(১) কেরি: ‘‘এই বারো জনকে যীশু প্রেরণ করিলেন, আর তাঁহাদিগকে এই আদেশ দিলেন- তোমরা পরজাতিগণের পথে যাইও না এবং শমরীয়দের কোন নগরে প্রবেশ করিও না; বরং ইস্রায়েল-কুলের হারান মেষগণের কাছে যাও। আর তোমরা যাইতে যাইতে এই কথা প্রচার কর, স্বর্গ-রাজ্য সন্নিকট হইল।’’

(২) জুবিলী: ‘‘এই বারোজনকে যীশু প্রেরণ করলেন, আর তাদের এই নির্দেশ দিলেন, তোমরা বিজাতীয়দের এলাকায় যেয়ো না, সামারীয়দের কোন শহরেও প্রবেশ করো না; বরং ইস্রায়েলকুলের হারানো মেষগুলোর কাছে যাও। পথে যেতে যেতে তোমরা এ কথা প্রচার কর, স্বর্গরাজ্য কাছে এসে গেছে।’’

(৩) বাইবেল-২০০০: ‘‘যীশু সেই বারোজনকে এই সব আদেশ দিয়ে পাঠালেন, ‘‘তোমরা অযিহূদীদের কাছে বা শমরীয়দের কোন গ্রামে যেয়ো না, বরং ইস্রায়েল জাতির হারানো মেষদের কাছে যেয়ো। তোমরা যেতে যেতে এই কথা প্রচার করো যে, স্বর্গ-রাজ্য কাছে এসে গেছে।’’

(৪) মোকাদ্দস-২০০০ ও ২০০৬: ‘‘ঈসা সেই বারোজনকে এই সব হুকুম দিয়ে পাঠালেন, ‘‘তোমরা অ-ইহুদীদের কাছে বা সামেরীয়দের কোন গ্রামে যেয়ো না, বরং ইসরাইল জাতির হারানো ভেড়াদের কাছে যেয়ো। তোমরা যেতে যেতে এই কথা তবলিগ কর যে, বেহেশতী রাজ্য কাছে এসে গেছে।’’

(৫) মোকাদ্দস-২০১৩: ‘‘এই বারো জনকে ঈসা প্রেরণ করলেন, আর তাঁদেরকে এই হুকুম দিলেন- তোমরা অ-ইহুদীদের পথে যেও না এবং সামেরিয়দের কোন নগরে প্রবেশ করো না, বরং ইসরাইল-কুলের হারানো মেষদের কাছে যাও। আর তোমরা যেতে যেতে এই সুসমাচার তবলিগ কর, ‘বেহেশতী-রাজ্য সন্নিকট’।’’

এখানে ইংরেজি Jesus বাংলায় যীশু ও ঈসা; Gentiles বাংলায় পরজাতি, বিজাতীয়, অযিহূদী, অইহুদী; Samaritans বাংলায় শমরীয়, সামরীয়, সামেরিয়; Israel বাংলায় ইস্রায়েল ও ইসরাইল এবং heaven  বাংলায় স্বর্গ ও বেহেশত।

তৃতীয় উদ্ধৃতি: মথি ২৬ অধ্যায়ের ৬৩-৬৫ শ্লোক

(১) কেরি: ‘‘মহাযাজক তাঁহাকে কহিলেন, আমি তোমাকে জীবন্ত ঈশ্বরের নামে দিব্য দিতেছি, আমাদিগকে বল দেখি, তুমি কি সেই খ্রীষ্ট, ঈশ্বরের পুত্র? যীশু উত্তর করিলেন, তুমিই বলিলে; আরও আমি তোমাদিগকে কহিতেছি, এখন অবধি তোমরা মনুষ্যপুত্রকে পরাক্রমের দক্ষিণ পার্শ্বে বসিয়া থাকিতে এবং আকাশের মেঘরথে আসিতে দেখিবে। তখন মহাযাজক আপন বস্ত্র ছিঁড়িয়া কহিলেন, এ ঈশ্বর-নিন্দা করিল, আর সাক্ষীতে আমাদের কি প্রয়োজন ? দেখ, এখন তোমরা ঈশ্বর-নিন্দা শুনিলে...।’’

(২) জুবিলী: ‘‘মহাযাজক তাঁকে বললেন, ‘জীবনময় ঈশ্বরের দিব্যি দিয়ে আমি তোমাকে  বলছি, আমাদের বল, তুমি কি সেই খ্রীষ্ট, সেই ঈশ্বর পুত্র? উত্তরে যীশু তাঁকে বললেন, আপনি নিজেই কথাটা বললেন, এমন কি আমি আপনাদের বলছি, এখন থেকে আপনারা মানবপুত্রকে পরাক্রমের ডান পাশে বসে থাকতে ও আকাশের মেঘবাহনে আসতে দেখবেন। তখন মহাযাজক নিজের পোশাক ছিঁড়ে ফেলে বললেন, এ ঈশ্বরনিন্দা করল! সাক্ষীতে আমাদের আর কী দরকার ? দেখুন, আপনারা এইমাত্র ঈশ্বরনিন্দা শুনলেন...।’’

(৩) বাইবেল-২০০০: ‘‘মহাপুরোহিত আবার তাকে বললেন, ‘তুমি জীবন্ত ঈশ্বরের দিব্য দিয়ে আমাদের বল যে, তুমি সেই মশীহ, অর্থাৎ ঈশ্বরের পুত্র কি না।’ তখন যীশু তাঁকে বললেন, ‘হ্যাঁ, আপনি ঠিক কথাই বলেছেন। তবে আমি আপনাদের এটাও বলছি, এর পরে আপনারা মনুষ্যপুত্রকে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের ডান পাশে বসে থাকতে এবং মেঘে করে আসতে দেখবেন।’ তখন মহাপুরোহিত তাঁর কাপড় ছিঁড়ে ফেলে বললেন, ‘‘এ ঈশ্বরকে অপমান করল। আমাদের আর সাক্ষীর কি দরকার? এখনই তো আপনারা শুনলেন, সে ঈশ্বরকে অপমান করল।’’

(৪) মোকাদ্দস-২০০০ ও ২০০৬: ‘‘মহা-ইমাম আবার তাকে বললেন, ‘তুমি আল্লাহ্র কসম খেয়ে আমাদের বল যে, তুমি সেই মসীহ্ ইবনুল্লাহ কি না। তখন ঈসা তাঁকে বললেন, ‘জ্বী, আপনি ঠিক কথাই বলেছেন। তবে আমি আপনাদের এটাও বলছি, এর পরে আপনারা ইবনে-আদমকে সর্বশক্তিমান আল্লাহ্র ডান পাশে বসে থাকতে এবং মেঘে করে আসতে দেখবেন।’ তখন মহা-ইমাম তাঁর কাপড় ছিঁড়ে ফেলে বললেন, ‘এ কুফরী করল। আমাদের আর সাক্ষীর কি দরকার? এখনই তো আপনারা শুনলেন, সে কুফরী করল।’’

(৫) মোকাদ্দস-২০১৩: ‘‘মহা-ইমাম তাকে বললেন, আমি তোমাকে জীবন্ত আল্লাহ্র নামে কসম দিচ্ছি, আমাদেরকে বল দেখি তুমি কি সেই মসীহ, আল্লাহ্র পুত্র? জবাবে ঈসা বললেন, তুমিই বললে; আরও আমি তোমাদেরকে বলছি, এখন থেকে তোমরা ইবনুল-ইনসানকে পরাক্রমের ডান পাশে বসে থাকতে এবং আসমানের মেঘরথে আসতে দেখবে। তখন মহা-ইমাম তাঁর কাপড় ছিঁড়ে বললেন, এ কুফরী করল, আর সাক্ষীতে আমাদের কি প্রয়োজন? দেখ, এখন তোমরা কুফরী শুনলে...।’’

এখানেও ভাষার পরিবর্তনের পাশাপাশি পরিভাষার পরিবর্তন লক্ষণীয়। উপরে আলোচিত শব্দগুলো ছাড়াও এখানে লক্ষণীয়: ইংরেজি high priest বাংলায় মহাযাজক, মহাপুরোহিত ও মহা-ইমাম। ইংরেজি God বাংলায় ঈশ্বর ও আল্লাহ। ইংরেজি blasphemy বাংলায় ঈশ্বর নিন্দা, ঈশ্বর অপমান ও কুফরী।

ইংরেজি Son of God বাংলা অনুবাদে ‘ঈশ্বরের পুত্র’ থেকে মুসলমানি বাংলায়  ‘আল্লাহর পুত্র’ না হয়ে আরবি ভাষায় ‘ইবনুল্লাহ’ হয়ে গিয়েছে। ইংরেজি Son of man বাংলা অনুবাদে ‘মনুষ্যপুত্র’ ও ‘মানবপুত্র’ থেকে আরো সহজ বাংলায় ‘মানুষের ছেলে’ হতে পারত। কিন্তু বঙ্গানুবাদে তা আরবি হয়ে গিয়েছে। মোকাদ্দস-২০০০ ও ২০০৬-এ ইবনে আদম হওয়ার পরে মোকাদ্দস-২০১৩-এ তা ‘ইবনুল ইনসান’ হয়ে গিয়েছে।

এখানেও আমরা কিতাবুল মোকাদ্দস নামক বাংলা বাইবেলে পরিভাষার পরিবর্তন লক্ষ্য করছি। Son of man বা মানুষের পুত্র বাক্যাংশটার অনুবাদ এক সংস্করণে ইবনে আদম ও অন্য সংস্করণে ইবনুল ইনসান লেখা হয়েছে। বাঙালি পাঠকের জন্য দুটোই দুর্বোধ্য, বিশেষত ‘ইবনুল ইনসান’ কথাটার অর্থ শিখিয়ে না দিলে মুসলিম বা অমুসলিম কোনো বাঙালি পাঠকই বোঝবেন না। ‘ঈশ্বরের পুত্র’ পরিবর্তন করে ‘ইবনুল্লাহ’ লেখাও একইরূপ। আল্লাহর পুত্র বললে মুসলিম-অমুসলিম সকল বাঙালি পাঠকই বুঝেন। তবে ‘ইবনুল্লাহ’ কথাটার অর্থ কোনো বাঙালিই বোঝেন না। তবে যদি কেউ আরবি ভাষায় অভিজ্ঞ হন তবে ভিন্ন কথা।

চতুর্থ উদ্ধৃতি: ইঞ্জিলের তৃতীয় পুস্তক লূক, ১১ অধ্যায় ৫০-৫১ শ্লোক

(১) কেরি: ‘‘যেন জগতের পত্তনাবধি যত ভাববাদীর রক্তপাত হইয়াছে, তাহার প্রতিশোধ এই কালের লোকদের কাছে লওয়া যায়- হেবলের রক্ত অবধি সেই সখরিয়ের রক্ত পর্যন্ত যিনি যজ্ঞবেদি ও মন্দিরের মধ্যস্থানে নিহত হইয়াছিলেন...।’’

(২) জুবিলী: ‘‘যেন জগৎপত্তন থেকে যে সকল নবীর রক্ত ঝরানো হয়েছে, তার হিসাব এই প্রজন্মের মানুষদের কাছে চেয়ে নেওয়া হয়,- আবেলের রক্ত থেকে শুরু ক’রে সেই জাখারিয়ারই রক্ত পর্যন্ত যাঁকে যজ্ঞবেদি ও গৃহের মাঝখানে হত্যা করা হয়েছিল।’’

(৩) বাইবেল-২০০০: ‘‘এর ফল হল, জগৎ সৃষ্টির সময় থেকে আরম্ভ করে যত জন নবীকে খুন করা হয়েছে, তাদের রক্তের দায়ী  হবে এই কালের লোকেরা। হ্যাঁ, আমি আপনাদের বলছি, হেবলের খুন থেকে আরম্ভ করে যে সখরিয়কে বেদী এবং পবিত্র স্থানের মধ্যে মেরে ফেলা হয়েছিল সেই সখরিয়ের খুন পর্যন্ত...।’’

(৪) মোকাদ্দস-২০০০ ও ২০০৬: ‘‘এর ফল হল, দুনিয়া সৃষ্টির সময় থেকে শুরু করে যতজন নবীকে খুন করা হয়েছে, তাঁদের রক্তের দায়ী হবে এই কালের লোকেরা। জ্বী, আমি আপনাদের বলছি, হাবিলের খুন থেকে শুরু করে যে জাকারিয়াকে কোরবানগাহ্ এবং পবিত্র স্থানের মধ্যে হত্যা করা হয়েছিল সেই জাকারিয়ার খুন পর্যন্ত..’’

(৫) মোকাদ্দস-২০১৩: ‘‘যেন দুনিয়া পত্তনের সময় থেকে যত নবীর রক্তপাত হয়েছে তার প্রতিশোধ এই কালের লোকদের কাছ থেকে নেয়া যায়-  হাবিলের রক্ত থেকে সেই জাকারিয়ার রক্ত পর্যন্ত যিনি কোরবানগাহ ও বায়তুল-মোকাদ্দসের মধ্যস্থানে নিহত হয়েছিলেন- ...।’’

এখানে ইংরেজি Abel বাংলায় হেবল, আবেল ও হাবিল; Zacharias বাংলায় সখরিয়, জাখারিয়া ও জাকারিয়া; altar বাংলায় যজ্ঞবেদি, বেদী ও কোরবানগাহ এবং temple বাংলায় মন্দির, গৃহ, পবিত্র স্থান ও বায়তুল মোকাদ্দস। এখানেও কিতাবুল মোকাদ্দসের অনুবাদের পরিবর্তন লক্ষণীয়। ২০০০ ও ২০০৬ সংস্করণে ‘টেম্পল’ শব্দটার অর্থ পবিত্র স্থান। কিন্তু ২০১৩ সংস্করণে শব্দটার অর্থ ‘বায়তুল মোকাদ্দস’।

পঞ্চম উদ্ধৃতি: নতুন নিয়ম বা ইঞ্জিলের চতুর্থ পুস্তক যোহন বা ইউহোন্নার প্রথম অধ্যায়ের ৪৫-৪৬ শ্লোক

(১) কেরি: ‘‘ফিলিপ নথনেলের দেখা পাইলেন, আর তাঁহাকে কহিলেন, মোশি ব্যবস্থায় ও ভাববাদিগণ যাঁহার কথা লিখিয়াছেন, আমরা তাঁহার দেখা পাইয়াছি; তিনি নাসরতীয় যীশু, যোষেফের পুত্র ...।’’

(২) জুবিলী: ‘‘ফিলিফ নাথানায়েলের সঙ্গে দেখা করতে গেলেন; তাঁকে বললেন, ‘মোশী বিধান-পুস্তকে যাঁর কথা লিখেছিলেন, নবীরাও যাঁর কথা লিখেছিলেন, আমরা তাঁর সন্ধান পেয়েছি; তিনি যোসেফের ছেলে নাজারেথের সেই যীশু।’’

(৩) বাইবেল-২০০০: ফিলিপ নথনেলকে খুঁজে বের করে বললেন, ‘মোশি যাঁর কথা আইন-কানুনে লিখে গেছেন এবং যাঁর বিষয়ে নবীরাও লিখেছেন আমরা তাঁর দেখা পেয়েছি। তিনি যোষেফের পুত্র যীশু, নাসরত গ্রামের লোক’...।’’

(৪) মোকাদ্দস-২০০০ ও ২০০৬: ‘‘ফিলিপ নথনেলকে খুঁজে বের করে বললেন, ‘মূসা যাঁর কথা তৌরাত শরীফে লিখে গেছেন এবং যাঁর বিষয়ে নবীরাও লিখেছেন আমরা তাঁর দেখা পেয়েছি। তিনি ইউসুফের পুত্র ঈসা, নাসরত গ্রামের লোক’...।’’

(৫) মোকাদ্দস-২০১৩: ‘‘ফিলিপ নথনেলের দেখা পেলেন, আর তাঁকে বললেন, মূসা শরীয়তে ও নবীরা যাঁর কথা লিখেছেন, আমরা তাঁর দেখা পেয়েছি; তিনি নাসরতীয় ঈসা, ইউসুফের পুত্র ...।’’

এখানে আমরা ইতোপূর্বে আলোচিত নাম ও পরিভাষার পরিবর্তন ছাড়াও নতুন কয়েকটা বিষয় দেখছি। ইংরেজি Moses বাংলায় মোশি, মোশী ও মূসা; ইংরেজি the law বাংলায় ব্যবস্থা, বিধান-পুস্তক, আইন-কানুন, তৌরাত শরীফ ও  শরীয়ত; ইংরেজি Nazareth বাংলা নাসরত ও নাজারেথ এবং ইংরেজি Joseph বাংলায় যোষেফ, যোসেফ ও ইউসুফ।

এখানেও কিতাবুল মোকাদ্দসে অনুবাদে পরিবর্তন। ইংরেজি the law শব্দটার আভিধানিক অর্থ আইন। ধর্মীয় পরিভাষায় হিব্রু ‘তোরাহ’ শব্দটার অর্থ বিধান, ব্যবস্থা বা আইন। এজন্য তোরাহ বোঝাতে ইংরেজি বাইবেলে ‘the law’ পরিভাষা ব্যবহার করা হয়। পাঠক যদি ইন্টারনেটে হিব্রু বাইবেল অথবা ইংরেজি উচ্চারণে হিব্রু বাইবেল (hebrew bible english transliteration) পাঠ করেন তবে দেখবেন যে, ইংরেজিতে যেখানে ‘the law of Moses/ the law’ লেখা হয়েছে, হিব্রুতে সেখানে ‘তোরাহ’ লেখা রয়েছে। আমরা দেখলাম যে, পরিভাষাটার অনুবাদে কেরি: ‘ব্যবস্থা’, জুবিলী, ‘বিধান-পুস্তক’ এবং বাইবেল-২০০০ ‘আইন-কানুন’। আক্ষরিক অনুবাদ হিসেবে এগুলো গ্রহণযোগ্য। তবে কিতাবুল মোকাদ্দসে যেহেতু ‘তৌরাত’ পরিভাষা ব্যবহার করা হয়েছে সেহেতু ইংরেজি ‘ল’ পরিভাষার অনুবাদে মূল হিব্রু ‘তৌরাত’ লেখা স্বাভাবিক ছিল। আমরা দেখছি যে, মোকাদ্দস-২০০০ ও ২০০৬ শব্দটার অনুবাদ করেছে ‘তৌরাত শরীফ’, কিন্তু মোকাদ্দস-২০১৩ লেখেছে ‘শরীয়ত’।

কিতাবুল মোকাদ্দস-২০০০ ও ২০০৬ অধিকাংশ ক্ষেত্রে ‘ল’ শব্দের অনুবাদে ‘তৌরাত শরীফ’ বা ‘তৌরাত কিতাব’ লেখেছে, তবে কোথাও কোথাও ‘শরীয়ত’ লেখেছে। পক্ষান্তরে কিতাবুল মোকাদ্দস-২০১৩ ‘ল’ শব্দের অনুবাদে সর্বদা ‘শরীয়ত’ লেখেছে।

আমরা জানি যে, ‘শরীয়ত’ ও ‘তৌরাত’ কখনোই সমার্থক নয়; যেমন ‘কুরআন’ ও ‘শরীয়ত’ সমার্থক নয়। তাহলে তৌরাত শব্দটা বঙ্গানুবাদে ব্যবহার করা সত্ত্বেও অনুবাদের সময় মূল হিব্রু ‘তোরাহ’ শব্দটার অনুবাদে ‘তৌরাত’ না লেখে শরীয়ত লেখার কারণ কী? বাহ্যত তৌরাত বিষয়ক বহুবিধ অভিযোগ অস্পষ্ট করা। আরো কয়েকটা নমুনা দেখুন:

(১) যিহোশূয়/ ইউসা ৮/৩১-৩২: “as it is written in the book of the law of Moses ... And he wrote there upon the stones a copy of the law of Moses, which he wrote in the presence of the children of Israel.”

এখানে ‘the law of Moses’ বাক্যাংশ দু’ শ্লোকে দু’ বার ব্যবহার করা হয়েছে। মোকাদ্দস-২০০০ ও ২০০৬ প্রথমে তৌরাত ও পরে শরীয়ত লেখেছে। ‘‘মূসার তৌরাত কিতাবে যেমন লেখা আছে সেই অনুসারেই তিনি তা তৈরি করলেন। ... ইউসা পাহাড়ের উপরে বনি-ইসরাইলদের সামনে পাথরের উপরে মূসার শরীয়ত লিখলেন।’’

মোকাদ্দস-২০১৩ উভয় স্থানেই শরীয়ত লেখেছে। ‘‘তেমনি তারা মূসার শরীয়ত-কিতাবে লেখা হুকুম অনুসারে ... সেখানে পাথরগুলোর উপরে বনি-ইসরাইলদের সম্মুখে তিনি মূসার লেখা শরীয়তের একটি অনুলিপি লিখলেন।’’

‘HEBREW TRANSLITERATION SCRIPTURE’ ওয়েবসাইটে শ্লোকদ্বয় নিম্নরূপ[1]: “as it is written in the sefer ha Torah Mosheh ... And he wrote there upon the stones a copy of ha Torah Mosheh, which he wrote in the presence of Benai Yisrael” ‘‘মোশেহর তৌরাত পুস্তকে যেভাবে লেখা... তিনি পাথরের উপরে মোশেহর তৌরাতটি লেখলেন, যা তিনি লেখলেন বনি-ইসরাইলের সম্মুখে।’’

(২) ১ বাদশাহনামা/ রাজাবলি ২/৩ ইংরেজি KJV: And keep the charge of the LORD thy God, to walk in his ways, to keep his statutes, and his commandments, and his judgments, and his testimonies, as it is written in the law of Moses..” হিব্রু উচ্চারণ নির্ভর ইংরেজি অনুবাদ: “.... as it is written in the Torah Mosheh: মোশেহের তৌরাতে যেভাবে লেখা আছে।’’[2]

অথচ কিতাবুল মোকাদ্দসের সকল সংস্করণেই এখানে তৌরাত না লেখে শরীয়ত লেখা হয়েছে। মোকাদ্দস-২০০৬: ‘‘তোমার মাবুদ আল্লাহর ইচ্ছামত তুমি তাঁর পথে চলবে এবং মূসার শরীয়তে লেখা মাবুদের সব নিয়ম, হুকুম, নির্দেশ ও দাবি মেনে চলবে...।’’ মোকাদ্দস-২০১৩: ‘‘আর তোমার আল্লাহ মাবুদের রক্ষণীয় বিধান রক্ষা করে তাঁর পথে চল, মূসার শরীয়তে লেখা তাঁর বিধি, তাঁর হুকুম, তাঁর অনুশাসন ও তাঁর সমস্ত সাক্ষ্য পালন কর...।’’

(৩) ২ বাদশাহনামা/ রাজাবলি ২৩/২৫ হিব্রু অনুসারী ইংরেজি অনুবাদ: “that turned to YHWH with all his heart, and with all his soul, and with all his might, according to all the Torah of Mosheh...”[3] ইংরেজি: KJV: “... turned to the LORD with all his heart, and with all his soul, and with all his might, according to all the law of Moses.”

এখানেও আমরা দেখছি যে, হিব্রু ‘মোশেহের তৌরাত’ বাক্যাংশকে ইংরেজিতে ‘ল অব মোসেস’ বলা হয়েছে। কিন্তু কিতাবুল মোকাদ্দসের সকল সংস্করণেই ‘তৌরাত’ বাদ দিয়ে ‘শরীয়ত’ লেখা হয়েছে।

এভাবে ভাষার বিবর্তনের পাশাপাশি বাইবেল অনুবাদকরা ধর্মীয় নাম ও পরিভাষাও পরিবর্তন করেছেন। আরেকটা নমুনা প্রেরিত বনাম সাহাবী। যীশু খ্রিষ্টের বার জন নির্বাচিত শিষ্যকে ইংরেজিতে (Apostle) বলা হয়। শব্দটার আভিধানিক অর্থ ‘প্রেরিত’। যীশু শিষ্যদের মধ্য থেকে যে বার জনকে প্রচার ও সেবার জন্য ‘প্রেরণ’ করেন খ্রিষ্টধর্মীয় পরিভাষায় তাদেরকে প্রেরিত বলা হয়। কেরির অনুবাদে এবং পরবর্তী অনুবাদগুলোতে প্রেরিত পরিভাষাই ব্যবহার করা হয়েছে। বর্তমানে ‘মুসলিম’ অনুবাদগুলোতে প্রেরিত বোঝাতে ‘সাহাবী’ শব্দ ব্যবহার করা হচ্ছে। পাশাপাশি ‘সাধারণ’ অনুবাদগুলোতে প্রেরিত পরিভাষার ব্যবহার অব্যাহত রয়েছে। কোনো বাইবেলে ‘সাহাবী’ এবং কোনো বাইবেলে ‘প্রেরিত’। ‘প্রেরিত’ পরিভাষার সাথে পরিচিত পাঠকের কাছে ‘সাহাবী’ পরিভাষা দুর্বোধ্য অস্পষ্ট। এর বিপরীতে সাহাবী পরিভাষার সাথে পরিচিত পাঠকের কাছে প্রেরিত শব্দটা অপরিচিত। আমরা কোন পরিভাষা ব্যবহার করব?

অনুরূপভাবে বাইবেলের প্রথম পুস্তকটার নাম কোনো কোনো বাইবেলে ‘আদিপুস্তক’ এবং কোনো কোনো বাইবেলে ‘পয়দায়েশ’। আমরা কোন নাম ব্যবহার করব? একটার সাথে পরিচিতের কাছে অন্যটা দুর্বোধ্য।

নাম ও পরিভাষার পরিবর্তনের একটা সংক্ষিপ্ত তালিকা দেখুন:

ইংরেজি

কেরি ও অন্যান্য

কিতাবুল মোকাদ্দস

Abraham

অবরাহাম

ইব্রাহিম

Amalek

অমালেক

আমালেক

Angel

দূত, ঈশ্বরের দূত

ফেরেশতা

Aron

হারোণ

ঘারুন

Canaan

কনান

কেনান

Children of Israel

ইস্রায়েল সন্তানগণ

বনি ইসরাইল

Christ

খ্রীষ্ট, মশীহ

এসীহ

Church

মণ্ডলী

জামাত

disciple, Apostle

শিষ্য, প্রেরিত

গাহাবী

Ezra

ইয্রা

উযাইর

Gentile

পরজাতি

অ-ইহুদি

Gospel

সুসমাচার

ইঞ্জিল

High priest

মহাযাজক, মহাপুরোহি

মহা-ইমাম

Holy Ghost/ Spirit

পবিত্র আত্মা

পাক-রূহ

Israel

ইস্রায়েল

ইসরাইল

Jacob, James

যাকোব

ইয়াকুব

Jerusalem

যিরুশালেম

জেরুজালেম, জেরুশালেম

Jesus

ঐীশু

ঈসা

Jew

যিহূদী

ইহুদী

John

যোহন

ইয়াহিয়া

John

যোহন

ইউহোন্না

Joshua

যিহোশূয়

ইউসা

Judah Judaea, Judea

যিহূদা (রাজ্য)

এহুদা/ এহুদিয়া

Judah, Judas, Jude

যিহূদা (ব্যক্তি)

এহুদা

Moses

মোশি, মোশী

মূসা

Passover

নিস্তার পর্ব

উদ্ধার ঈদ, ঈদুল ফেসাখ,

Pharaoh

ফরৌণ

ফেরাউন

Philistines

পলেষ্টীয়

ফিলিস্তিনী

Priest

যাজক, পুরোহিত

ইমাম

Sacrifice

ঊলি

কোরবানী/ বলি

Scribe

অধ্যাপক

আলেম

Scripture

শাস্ত্র

পাক-কিতাব

Solomon

শলোমন

সোলায়মান

Temple

মন্দির, ধর্মধাম,

এবাদতখানা, বাইতুল মোকাদ্দস

The law

ব্যবস্থা

তৌরাত, শরীয়ত

Joseph

যোষেফ, যোসেফ

ইফসুফ

উপরের জটিলতার আলোকে আমরা অনুবাদ ও পরিভাষার ক্ষেত্রে নিম্নের মূলনীতি অনুসরণের চেষ্টা করেছি।

(ক) সাধু ভাষার উদ্ধৃতি কেরির অনুবাদ থেকে গৃহীত। চলিত ভাষায় মুসলমানি অনুবাদ কিতাবুল মোকাদ্দস-২০০৬ ও কিতাবুল মোকাদ্দস-২০১৩ থেকে গৃহীত। চলিত সাধারণ বাংলা অনুবাদ পবিত্র বাইবেল-২০০০ থেকে গৃহীত। ক্যাথলিক বাইবেলের উদ্ধৃতিগুলো জুবিলী বাইবেল থেকে গৃহীত।

(খ) কেরির অনুবাদকে মূল ধরা হয়েছে। এজন্য কেরি থেকে উদ্ধৃতি প্রদানের সময় শুধু বাইবেলের পুস্তক, অধ্যায় ও শ্লোক উল্লেখ করা হয়েছে, সংস্করণের উল্লেখ করা হয়নি। যেমন (মথি ৩/১-৩), (লূক ১১/৫০-৫১), (যোহন ১/৪৫-৪৬) ইত্যাদি। অন্যান্য সংস্করণ থেকে উদ্ধৃতি প্রদানের ক্ষেত্রে বাইবেলের পুস্তক, অধ্যায় ও শ্লোকের পাশাপাশি উদ্ধৃতির শুরুতে বা শেষে সংস্করণের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। যেমন  (মথি ৩/১-৩, জুবিলী), (মথি ৩/১-৩, বা.-২০০০), (মথি ৩/১-৩, মো.-০৬), (মথি ৩/১-৩, মো.-১৩), (যোহন ১/৪৫-৪৬, জুবিলী), (যোহন ১/৪৫-৪৬, বা.-২০০০), (ইউহোন্না ১/৪৫-৪৬, মো.-০৬), (ইউহোন্না ১/৪৫-৪৬, মো.-১৩)... ইত্যাদি। অষ্টম ও নবম অধ্যায়ে কিতাবুল মোকাদ্দস-২০০৬ থেকে অধিকাংশ উদ্ধৃতি প্রদান করা হয়েছে বলে অধ্যায়ের শুরুতে উল্লেখ করেছি।  এজন্য এ সংস্করণ থেকে উদ্ধৃতির ক্ষেত্রে সংস্করণের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়নি। অন্যান্য সংস্করণ থেকে উদ্ধৃতির ক্ষেত্রে তা উল্লেখ করা হয়েছে।

(গ) নবীদের এবং বাইবেলীয় পুস্তকগুলোর নামের ক্ষেত্রে আমরা কেরির পরিভাষা অধিক ব্যবহার করেছি। পাশাপাশি কিতাবুল মোকাদ্দসের পরিভাষাও ব্যবহার করেছি। যেমন অবরাহাম, ইবরাহিম, মোশি, মূসা, শলোমন, সুলায়মান, যীশু, ঈসা, খ্রিষ্ট, মসীহ, পবিত্র আত্মা, পাক-রুহ, প্রেরিত, সাহাবী, যিহুদা, এহুদা, যাজক, ইমাম, বলি, কোরবানি, ব্যবস্থা, তৌরাত.... ইত্যাদি। অনুরূপভাবে আদিপুস্তক, পয়দায়েশ, যাত্রাপুস্তক, হিজরত, গণনাপুস্তক, শুমারী, যিহোশূয়, ইউসা, বিচারকর্তৃগণ, কাজীগণ, শমূয়েল, শামুয়েল, রাজাবলি, বাদশাহনামা, ইত্যাদি।

অনেক ভাষাতেই বানান সমস্যা রয়েছে। ইংরেজি ভাষা বানান সংস্কারের প্রক্রিয়া পার হয়ে এসেছে। ফলে সমস্যাগুলো স্থির রয়েছে এবং সাধারণ লেখক ও পাঠকদের জন্য ভাষার ব্যবহার সহজ হয়েছে। বাংলা বানানের বিবর্তন ও পরিবর্তন চলমান। বস্ত্তত ভাষাবিদদের হাতে বাংলা ভাষার সাথে আমরা সাধারণ বাঙালিরাও নাস্তানাবুদ হয়ে পড়েছি। ছোটবেলা থেকে যে বানানগুলো লেখে ও দেখে অভ্যস্ত হয়েছি এখন সেগুলো বাতিল বা ভুল বলে গণ্য হচ্ছে। শ্রবণের সাথে বানান মিলাতে যেয়ে দর্শনের সাথে সঙ্ঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। এ সমস্যার সাথে আমাদের এ গ্রন্থে যুক্ত হয়েছে বাইবেলের বিভিন্ন অনুবাদে বানানের ভিন্নতা। আমাদের সমস্যার সাথে পাঠককে একাত্ম করার উদ্দেশ্যে নিম্নে কয়েকটা বিষয় উল্লেখ করছি:

  • বাংলা বানানের ক্ষেত্রে বঙ্গানুবাদ বাইবেলগুলো বিভিন্ন নিয়ম অনুসরণ  করেছে। এজন্য উদ্ধৃতির মধ্যে মূল গ্রন্থের বানান অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
  • ঙ, ং, ই-কার, ঈ-কার, উ-কার, ঊ-কার, ও-কার ইত্যাদি বিষয়ে উদ্ধৃত পাঠের বানান অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। লেখকের নিজের বক্তব্যে প্রমিত রীতি অনুসরণের চেষ্টা করা হয়েছে। যেমন যিহূদী, ইহুদী, ইহুদি, কোরবানী-কোরবানি, ফিলিস্তিনী, ফিলিস্তিনি, বারো, বার, এগারো, এগার, বলব, বলবো, বলছ, বলছো, রং, রঙ, আংগুর, আঙ্গুর, সংগে, সঙ্গে...
  • ‘যীশু খ্রীষ্ট’ বানানটার বিষয়ে বাংলা প্রমিত নিয়ম অনুসারে ‘যিশু খ্রিস্ট’ লেখতে হয়। তবে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মানুষেরা ‘যীশু’ শব্দটা সর্বদা ঈ-কার দিয়েই লেখেন। আর ‘খ্রীষ্ট’ শব্দটার ক্ষেত্রে ‘ষ’ ব্যবহারের পাশাপাশি সাধারণত ঈ-কার ব্যবহার করেন। কিন্তু ‘খ্রিষ্টান’, ‘খ্রিষ্টাব্দ’ ইত্যাদি লেখতে সাধারণত সকলেই ই-কার ব্যবহার করেন। সামগ্রিক বিবেচনায় আমরা ‘যীশু খ্রিষ্ট’, ‘খ্রিষ্টান’, ‘খ্রিষ্টাব্দ’ ব্যবহার করেছি।
  • ঈসা মসীহ লেখতে কিতাবুল মোকাদ্দসে ‘ম’-এর সাথে ‘আ’-কার ব্যবহার করা হয়নি, যদিও আরবি প্রতিবর্ণায়ন নিয়মে ‘মাসীহ’ লেখা উচিত। আমরা সর্বত্রই ‘মসীহ’ ব্যবহার করা চেষ্টা করেছি।
  • আরবি উচ্চারণ অনুসারে আমরা ‘তাওরাত’ লেখে ও বলে অভ্যস্ত। তবে কিতাবুল মোকাদ্দসের অনুবাদে সর্বদা ‘তৌরাত’ লেখা হয়েছে। এজন্য এ গ্রন্থে আমরা সাধারণভাবে ‘তৌরাত’ লেখেছি। আরবি উচ্চারণ অনুসারে ‘ইনজীল’ লেখাই বিধেয়, তবে কিতাবুল মোকাদ্দসের ব্যবহার অনুসারে আমরা সর্বদা ‘ইঞ্জিল’ লেখেছি।
  • ফেরেশতা, বেহেশত ইত্যাদি শব্দের ক্ষেত্রে কিতাবুল মোকাদ্দস এ-কার ব্যবহার করেছে। আমরা সকল ক্ষেত্রেই এভাবে এ-কার ব্যবহার করতে চেষ্টা করেছি, যদিও সাধারণভাবে আমরা এ সকল ক্ষেত্রে ই-কার ব্যবহার করে অভ্যস্থ।
  • আমরা দেখলাম, ‘জেরুজালেম’ বানানে কিতাবুল মোকাদ্দস-২০০৬ ও ২০১৩-এর মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। উদ্ধৃতির বাইরে আমরা সর্বত্র ‘জেরুজালেম’ ব্যবহার করেছি।

এই পুস্তক রচনার ক্ষেত্রে অনেকেই উৎসাহ ও পরামর্শ দিয়েছেন। মুশাহিদ আলী, এমদাদুল হক, আব্দুল মালেক, হোসেন এম জাকির ও অন্যান্য শ্রদ্ধাভাজন বন্ধু প্রম্নফ দেখে অনেক পরামর্শ দিয়েছেন। সাইফ আলী প্রচ্ছদ তৈরী করে দিয়েছেন। সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। মহান আল্লাহ তাদের সকলকে উত্তম পুরুস্কার প্রদান করুন।


খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর

[1] http://www.messianic-torah-truth-seeker.org/Scriptures/Tenakh/Yehoshua/Yehoshua08.htm
[2] http://www.messianic-torah-truth-seeker.org/Scriptures/Tenakh/Melekim-Alef/Melekhim-Alef02.htm
[3] http://www.messianic-torah-truth-seeker.org/Scriptures/Tenakh/Melekim-Bet/Melekhhim- Bet23.htm
১. ১. বাইবেল: নামকরণ ও অর্থ - ১. ১. ১. উৎপত্তি ও অর্থ

‘বাইবেল’ শব্দটা বাঙালিদের নিকট অতি পরিচিত। বাংলাদেশ ও ভারতের সকল বাংলাভাষী সাধারণভাবে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ধর্মগ্রন্থকে ‘বাইবেল’ নামে চেনেন। ইংরেজি ও সকল ইউরোপীয় ভাষায় ইহুদি ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ধর্মগ্রন্থ ‘বাইবেল’ নামে পরিচিত। ১৭৫৭ খ্রিষ্টাব্দে পলাশীর যুদ্ধে বিজয় লাভের পর বৃটিশ খ্রিষ্টান মিশনারিরা বাংলাদেশে খ্রিষ্টান ধর্ম প্রচারক প্রেরণ করেন। তারা তাদের ধর্মগ্রন্থকে ‘পবিত্র বাইবেল’ নামে বাংলায় অনুবাদ করে প্রচার করেন।
বাইবেল শব্দটার অর্থ ‘পুস্তক’। ভূমধ্যসাগরের উপকূলে বর্তমান বৈরুতের নিকটবর্তী প্রাচীন ফনিশিয়া (Phoenicia) রাজ্যের একটা শহরের নাম ছিল ‘বিব্লস’ (Byblos)। এ শহর থেকেই গ্রিকরা প্রাচীন ‘কাগজ’ প্যাপিরাস (papyrus) আমদানি করত। এজন্য গ্রিক ভাষায় প্যাপিরাস বা কাগজ এবং প্যাপিরাস বান্ডল (papyrus scroll) ‘বিবলস’ (Byblos/biblos) এবং কাগজে লেখা ছোট পুস্তক ‘বিবলিয়ন’ (biblion=small book) নামে পরিচিত ছিল। মাইক্রোসফট এনকার্টা বিশ্বকোষের ‘বাইবেল’ আর্টিকেলে এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে:


The term Bible is derived through Latin from the Greek biblia, or “books,” the diminutive form of byblos, the word for “papyrus” or “paper,” which was exported from the ancient Phoenician port city of Biblos. By the time of the Middle Ages the books of the Bible were considered a unified entity.


‘‘বাইবেল শব্দটা ল্যাটিন ভাষার মাধ্যমে গ্রিক ‘বিবলিয়া’ শব্দ থেকে আগত। এটা মূলত ‘বিবলস’ শব্দ থেকে গৃহীত। বিবলস অর্থ ছিল প্যাপিরাস বা কাগজ, যা প্রাচীন ফনিসিয়ান বন্দরনগরী ‘বিবলস’ থেকে আমদানি করা হত। মধ্যযুগে এসে বাইবেলের পুস্তকগুলোকে একীভূত অস্তিত্ব হিসেবে গণ্য করা হত।’’

উপরের তথ্য থেকে আমরা দেখছি যে, ‘বাইবেল’ শব্দটার অর্থ ‘পুস্তক’ বা ‘পুস্তকমালা’। আমরা আরো দেখছি যে, প্রাচীন যুগে ‘বাইবেল’-কে ‘পবিত্র বাইবেল’ বলার প্রচলন ছিল না। মধ্যযুগে ল্যাটিন ভাষায় কখনো কখনো ‘বিবলিয়া’ শব্দটার সাথে ‘স্যাকরা’ (sacra) শব্দ ব্যবহার করা হত, যার অর্থ পবিত্র (sacred)। এ ব্যবহারের ভিত্তিতে ইংরেজিতে ‘the holy Bible’ বা ‘পবিত্র বাইবেল’ বলার প্রচলন ছিল। বর্তমানে ‘বাইবেল’ ও ‘পবিত্র বাইবেল’ উভয় পরিভাষাই দেখতে পাওয়া যায়।

আমরা দেখছি যে, ইহুদি ও খ্রিষ্টধর্মের ধর্মগ্রন্থটার নাম মূলত গ্রিক ভাষা থেকে গৃহীত এবং ল্যাটিন ভাষায় পরিমার্জিত হয়ে ‘পবিত্র বাইবেল’ নামে পরিচিত। পরবর্তী আলোচনা থেকে আমরা দেখব যে, এ গ্রন্থটা মূলত হিব্রু ভাষায় রচিত ও প্রচারিত। অনেক শতাব্দী পরে গ্রন্থটা গ্রিক ভাষায় অনুবাদ করা হয়। আমরা জানি, প্রতিটা গ্রন্থেরই তার নিজস্ব ভাষায় নাম থাকে। পরবর্তীতে বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ হলেও গ্রন্থটার মূল নাম (proper noun) অবিকৃত ও অভিন্নই থাকে। তাহলে ‘বাইবেল’ নামক এ বইটার হিব্রু ভাষায় নাম কী ছিল? বইটার সংকলক ও প্রচারকরা কি হিব্রু ভাষায় বইটার কোনো নাম দেননি? দিলে তা কী ছিল এবং কেনই বা তা পরিবর্তন করে গ্রিক ভাষায় নামকরণ করা হল? প্রশ্নগুলোর উত্তর সুস্পষ্ট নয়। পরবর্তী আলোচনায় আমরা দেখব যে, বাইবেলের মধ্যে বিদ্যমান গ্রন্থগুলোর প্রত্যেকটার ভিন্ন ভিন্ন হিব্রু নাম রয়েছে। সংকলিত গ্রন্থমালারও হিব্রু নাম আছে। তবে গ্রিক ভাষার বাইবেল শব্দটাই নাম হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে।

১. ১. ৪. বাইবেল বনাম কিতাবুল মোকাদ্দস

‘বাইবেল’ শব্দটা মূল আভিধানিক অর্থে যে কোনো গ্রন্থের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলেও ব্যবহারিকভাবে তা খ্রিষ্টধর্মের ধর্মগ্রন্থের নাম যা ব্যাকরণের পরিভাষায় ‘proper noun’ অর্থাৎ নিজস্ব নাম বা সংজ্ঞাবাচক নাম। যেমন ‘কুরআন’, ‘বেদ’, ‘গীতা’, ‘ত্রিপিটক’ ইত্যাদি প্রত্যেক শব্দের আভিধানিক অর্থ যাই হোক না কেন ব্যবহারিকভাবে তা বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থের নিজস্ব নাম বা ‘proper noun’-এ পরিণত হয়েছে। এজন্য এ সকল গ্রন্থ যে ভাষাতেই অনুবাদ করা হোক না কেন, গ্রন্থের মূল নাম অপরিবর্তিত থাকে।

খ্রিষ্টান ধর্মগুরু ও পণ্ডিতরা সাধারণভাবে এ নীতি অনুসরণ করলেও আমরা দেখি যে, অনেক সময় তারা ব্যক্তি, স্থান বা গ্রন্থের নিজস্ব নামও অনুবাদ করেন। বাইবেলের ক্ষেত্রেও এরূপ হয়েছে। বাইবেল শব্দটা ‘proper noun’ হওয়ার কারণে বাইবেলের বিভিন্ন ভাষার অনুবাদে তারা নামটা বহাল রেখেছেন। বাংলা অনুবাদের ক্ষেত্রেও তারা ‘বাইবেল’ নামটা অপরিবর্তিত রেখেছিলেন।

১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দে আমেরিকার কলরাডো (Colorado) রাষ্ট্রের কলরাডো স্প্রীংস (Colorado springs) শহরে অনুষ্ঠিত (north American conference on muslim evangelization) ‘মুসলিমদের খ্রিষ্টান বানানো বিষয়ে উত্তর আমেরিকান সম্মেলনে’ খ্রিষ্টান প্রচারকরা মুসলিমদেরকে খ্রিষ্টধর্মে ধর্মান্তরিত করার লক্ষ্য অনেকগুলো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এগুলোর মধ্যে ছিল ধর্মগ্রন্থগুলোকে মুসলিমদের মধ্যে প্রচলিত ও আকর্ষণীয় পরিভাষায় অনুবাদ করা। এ লক্ষ্য সামনে রেখে বর্তমানে বাংলাদেশ বাইবেল সোসাইটি বাইবেলকে ‘কিতাবুল মোকাদ্দস’ নাম দিয়ে প্রকাশ করেছে।

মধ্যযুগ থেকে বাইবেলের আরবি অনুবাদের ক্ষেত্রে খ্রিষ্টানরা ‘আল-কিতাবুল মুকাদ্দাস’ শব্দ ব্যবহার করেন। ‘কিতাব’ শব্দটা ‘বাইবেল’ শব্দের আরবি অনুবাদ, অর্থাৎ ‘গ্রন্থ’। আর ‘মুকাদ্দাস’ শব্দের অর্থ ‘পবিত্র’। এভাবে ‘কিতাবুল মোকাদ্দাস’ অর্থ ‘পবিত্র গ্রন্থ’। এখানে লক্ষণীয়, গ্রন্থটার বাংলা অনুবাদ গ্রন্থের জন্য আরবি অনুবাদ নাম ব্যবহার। এখানে প্রথমত একটা নাম (proper noun)-এর অনুবাদ করা হয়েছে, যা অনুবাদের ক্ষেত্রে পরিত্যাজ্য। দ্বিতীয়ত অনুবাদের ভাষায় নামটার অনুবাদ না করে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা ভাষার অবোধ্য বা দুর্বোধ্য নাম ব্যবহার করা হয়েছে। বাহ্যত এর উদ্দেশ্য মুসলিমদেরকে আকৃষ্ট করা।

১. ১. ৫. কী নাম ছিল এ গ্রন্থের যীশুর যুগে?

মূসা (আ.) বা মোশি থেকে ঈসা (আ.) বা যীশু পর্যন্ত প্রায় দেড় হাজার বছর যে ধর্মগ্রন্থটা প্রচলিত ছিল তার নিশ্চয় একটা নাম ছিল। কী নাম ছিল তার? বাইবেল থেকে জানা যায় যে, যীশু ও তাঁর শিষ্যরা ‘বাইবেল’ বা ‘কিতাবুল মোকাদ্দস’ নাম জানতেন না। ‘বাইবেল’ নামক গ্রন্থটা বুঝাতে তাঁরা নিম্নের পরিভাষা ব্যবহার করতেন:

(১) the scripture/scriptures। এ শব্দটার মূল অর্থ: লিখিত বিষয় (what is written) বা লিখিত পুস্তক। ব্যবহারিকভাবে এর অর্থ ধর্মগ্রন্থ বা লিখিত শাস্ত্র।[1]

(২) The Law and the Prophets। অর্থাৎ ‘তৌরাত ও নবীগণ’। কেরির অনুবাদে ‘ব্যবস্থা ও ভাববাদীগণ’। (দেখুন: মথি ৫/১৭; ৭/১২; ১১/১৩; ২২/৪০; লূক ১৬/১৬; ২৪/৪৪; যোহন ১/৪৫; প্রেরিত ১৩/১৫; ২৪/১৪; ২৮/২৩; রোমীয় ৩/২১)

 (৩) the law of Moses, and in the prophets, and in the psalms। ‘মূসার তৌরাত এবং নবীগণ ও গীতসংহিতা অথবা দাউদের গীতসংহিতা। (দেখুন: লূক ২৪/৪৪। আরো দেখুন: লূক ২০/৪২; প্রেরিত ১/২০)

পরবর্তীতে আমরা দেখব যে, ইহুদি বাইবেল তিন অংশে বিভক্ত: (১) তৌরাত (The Law), (২) নাবিয়্যীম: নবীগণের পুস্তক (the Prophets) এবং (৩) কিতুবীম: লিখনিসমূহ (the Writings)। গীতসংহিতা পুস্তকটা তৃতীয় অংশের মধ্যে বিদ্যমান। ‘তৌরাত-এর ‘তা’, ‘নাবিয়্যীম’-এর ‘না’ ও ‘কিতুবীম’-এর ‘ক’ নিয়ে একত্রে বাইবেলের পুরাতন নিয়মের ইহুদি সংস্করণকে ইহুদিরা ‘তানাক’ বলেন।

এভাবে আমরা দেখছি যে, প্রথম খ্রিষ্টীয় শতকে বাইবেল নামক ধর্মগ্রন্থের কোনো একক  নাম ছিল না। এ গ্রন্থসমষ্টিকে একত্রে ‘ধর্মগ্রন্থ’ বলা হত। অথবা এ গ্রন্থের দুটো অংশকে পৃথকভাবে নাম উল্লেখ করে বলা হত: ‘তৌরাত ও নবীগণ’। ইহুদি বাইবেল বা পুরাতন নিয়মের তৃতীয় অংশ ‘কিতুবীম’-এর মধ্য থেকে গীতসংহিতা পুস্তকটা সে সময়ে প্রসিদ্ধি লাভ করেছিল। বাহ্যত ‘কিতুবীম’ নামক এ অংশটা তখনও পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়নি এবং ‘ধর্মগ্রন্থ’-এর অংশ হিসেবে গণ্য হয়নি।

[1] মথি ২১/৪২; ২২/২৯; ২৬/৫৪; ২৬/৫৬; মার্ক ১২/১০; ১২/২৪; ১৪/৪৯; ১৫/২৮; লূক ৪/২১; ২৪/২৭; ২৪/৩২; ২৪/৩৯; যোহন ২/২২; ৫/৩৯; ৭/৩৮; ৭/৪২; ১০/৩৫; ১৩/১৮; ১৭/১২; ১৯/২৪; ১৯/২৮; ১৯/৩৬; ১৯/৩৭; ২০/৯; প্রেরিত ১/১৬; ৮/৩২; ৮/৩৫; ১৭/২; ১৭/১১; ১৮/২৪; ১৮/২৮; রোমীয় ১/২, ৪/৩; ৯/১৭; ১০/১১; ১১/২; ১৫/৪; ১৬/২৬; গালাতীয় ৩/৮; ৩/২২; ৪/৪০; ১ কলসীয় ১৫/৩; ১৫/৪; ১ তীমথিয় ৫/১৮; ২ তীমথিয় ৩/১৫; ৩/১৬; যাকোব ২/৮; ২/২৩; ৪/৫; ১ পিতর ২/৬; ২ পিতর ২/২০; ৩/১৬।
১. ২. বাইবেলের পুরাতন নিয়ম - ১. ২. ১. খ্রিষ্টধর্মীয় বাইবেলের দু’টা অংশ

খ্রিষ্টানরা তাদের ধর্মীয় গ্রন্থগুলোকে দুভাগে ভাগ করেন: পুরাতন নিয়ম বা পুরাতন সন্ধি (Old Testament) ও নতুন নিয়ম, নতুন সন্ধি বা নবসন্ধি (New Testament)। প্রথমভাগের গ্রন্থাবলি সম্পর্কে তারা দাবি করেন যে, সেগুলো ইহুদি ধর্মের ধর্মগ্রন্থ। অর্থাৎ যীশুর আগমনের পূর্বে বনি-ইসরাইল বা ইহুদিদের মধ্যে যে সকল নবী আগমন করেছিলেন তাঁদের গ্রন্থগুলোকে ইহুদিরা ধর্মগ্রন্থ হিসেবে সংকলন করেন। এটা ইহুদি বাইবেল (Jewish Bible) এবং হিব্রু বাইবেল (Hebrew Bible) নামে পরিচিত। এটাকেই খ্রিষ্টানরা তাদের বাইবেলের পুরাতন নিয়ম হিসেবে গণ্য করেন। দ্বিতীয় অংশ নতুন নিয়মের গ্রন্থগুলোর বিষয়ে তারা দাবি করেন যে, এগুলো যীশুর ‘ইঞ্জিল’ এবং তাঁর শিষ্যদের বা তাঁদের শিষ্যদের লেখা বিভিন্ন গ্রন্থ বা পত্র।

১. ২. ২. বিভিন্ন প্রকারের বাইবেল ও বিভিন্ন সংখ্যার পুস্তক

আমরা সকলেই জানি যে, প্রত্যেক ধর্মের অনেক দল-উপদল আছে। কিন্তু একই ধর্মের দল-উপদলের জন্য ভিন্নভিন্ন ধর্মগ্রন্থ থাকে বলে হয়ত আমাদের কোনো পাঠকই জানেন না। হিন্দু, বৌদ্ধ ও ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে অনেক দল-উপদল বিদ্যমান। কিন্তু কুরআন, বেদ, ত্রিপিটক ইত্যাদির ভিন্নভিন্ন সংস্করণ বা ভিন্নভিন্ন বই আছে বলে আমরা জানি না। কিন্তু খ্রিষ্টান ধর্মের বিষয়টা ভিন্ন। খ্রিষ্টান ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে বিভিন্ন চার্চ বা ধর্মীয় জামাতের জন্য ভিন্নভিন্ন ‘বাইবেল’ বিদ্যমান। এ সকল বাইবেলের মধ্যে বিদ্যমান পুস্তকের সংখ্যার মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। যে সকল পুস্তক সকল বাইবেলে বিদ্যমান সেগুলোর বিষয়বস্ত্ত, অধ্যায়, অনুচ্ছেদ, শ্লোক ইত্যাদির মধ্যেও অনেক পার্থক্য বিদ্যমান। বাইবেলের পার্থক্য জানার জন্য খ্রিষ্টধর্মের বিভিন্ন সম্প্রদায় সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। বর্তমানে বিশ্বের খ্রিষ্টানরা মূলত তিনটা বৃহৎ দলে বিভক্ত: ক্যাথলিক, প্রটেস্ট্যান্ট ও অর্থোডক্স। এ তিনটা বৃহৎ সম্প্রদায়ের বিভক্তির মূল কারণ পোপের আধিপত্য।

(১) ক্যাথলিক বা সর্বজনীন: খ্রিষ্টধর্মের মূল ধারা ক্যাথলিক (Catholic) অর্থাৎ সর্বজনীন বা রোমান ক্যাথলিক (Roman Catholic) হিসেবে পরিচিত। রোমের বা ভ্যাটিকানের চার্চ ও পোপের নিয়ন্ত্রনাধীন খ্রিষ্টধর্ম এ নামে পরিচিত।

শুরু থেকেই খ্রিষ্টান প্রচারকরা বিভিন্ন অঞ্চলের প্রধান পুরোহিত ও ধর্মযাজককে ‘বিশপ’ (Bishop/greek: episkopos) অর্থাৎ সর্দার বা তত্ত্বাবধায়ক  (overseer) অথবা প্রেসবিটার (presbyter) অর্থাৎ মুরবিব (elder) বলে আখ্যায়িত করতেন। বিশপকে সাধারণত ‘বাবা’ বা পিতা বলে ডাকা হত। এই শব্দটার গ্রিক পাপ্পাস (pappas), ল্যাটিন পাপা (papa) এবং ইংরেজি পোপ (Pope)। ক্রমান্বয়ে রোমের বিশপ, অর্থাৎ ভ্যাটিকানে অবস্থিত সেন্ট পিটার চার্চের প্রধান পুরোহিত নিজেকে পুরো খ্রিষ্টধর্মের প্রধান বা প্রধান বিশপ বলে দাবি করতে থাকেন। একমাত্র তিনিই বাবা বা পোপ হিসেবে আখ্যায়িত হতে থাকেন। মূলত একাদশ খ্রিষ্টীয় শতাব্দী পর্যন্ত খ্রিষ্টধর্ম পুরোপুরিই ভ্যাটিকানের পোপের নিয়ন্ত্রণে ছিল। অর্থাৎ খ্রিষ্টধর্মের প্রথম হাজার বছর খ্রিষ্টধর্ম বলতে ক্যাথলিক ধর্মকেই বুঝানো হত।[1]

(২) অর্থোডক্স বা গোঁড়া: ৩২৫ খ্রিষ্টাব্দে রোমান সম্রাট কন্সটান্টাইন (Constantine the Great) খ্রিষ্টধর্মকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ঘোষণা করেন। রোমান সাম্রাজ্য পশ্চিমে ইউরোপ থেকে পূর্বে এশিয়া মাইনর, সিরিয়া ও ফিলিস্তিন পর্যন্ত বিসত্মৃত ছিল। ক্রমান্বয়ে রোমান সাম্রাজ্য পূর্ব ও পশ্চিমে বিভক্ত হয়ে যায়। গ্রিকভাষী পূর্ব রোমান সাম্রাজ্যের বিশপরা রোমের বিশপের একছত্র আধিপত্য মানতে অনিচ্ছুক ছিলেন। তাদের বিশ্বাসে প্রত্যেক বিশপই স্বাধীন ‘পাপা’, বাবা বা পোপ এবং সকল বিশপ সম মর্যাদার অধিকারী। ক্রমান্বয়ে তাদের মধ্যে ধর্মীয় বিষয়েও মতানৈক্য দেখা দেয়। বিশেষ করে যীশু খ্রিষ্টের প্রকৃতি নিয়ে। খ্রিষ্টধর্মের মূল কালিমা ‘নাইসীন ক্রীড’ বা নিসিয়ার আকীদার মধ্যে পশ্চিমের খ্রিষ্টানরা সংযোজন করেন যে, ‘পবিত্র আত্মা পিতা ও পুত্র উভয় থেকে আগত’। পূর্বের খ্রিষ্টানরা এ সংযোজন বিভ্রান্তি বলে গণ্য করেন। বিবাদের এক পর্যায়ে ১০৫৪ সালে পূর্বের খ্রিষ্টানরা পশ্চিমের বা ভ্যাটিকানের পোপের প্রভাবাধীন খ্রিষ্টানদের থেকে বিভক্ত হয়ে যান। তারা অর্থোডক্স (Orthodox) অর্থাৎ গোঁড়া, মৌলবাদী বা মূলধারার অনুসারী হিসেবে পরিচিত। খ্রিষ্টধর্মের ইতিহাসে এ বিভক্তি বড় বিভক্তি (Great Schism) নামে পরিচিত।[2]

(৩) প্রটেস্ট্যান্ট বা প্রতিবাদী: খ্রিষ্টধর্মের মূল ধারা পোপের নিয়ন্ত্রণেই চলতে থাকে। ১৬শ খ্রিষ্টীয় শতকে পোপের নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে কোনো কোনো ধর্মগুরু বিদ্রোহ করেন। এদের অন্যতম ছিলেন প্রসিদ্ধ জার্মান ধর্মগুরু মার্টিন লুথার (১৪৮৩-১৫৪৬ খ্রি.)। তিনি এবং সমসাময়িক কিছু ধর্মগুরু ধর্মের মধ্যে পোপের নেতৃত্ব ও অধিকার সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন। তাদের আন্দোলনের মাধ্যমে যে নতুন ধর্মীয় ফিরকা বা ধারার সৃষ্টি হয় সেটা প্রটেস্ট্যান্ট (Protestant) বা প্রতিবাদী বলে পরিচিত।[3]

(৪) মূল এ তিন সম্প্রদায়ের তিন প্রকার বাইবেল ছাড়াও আরো অনেক সম্প্রদায়ের পৃথক বাইবেল বিদ্যমান। বিশেষত খ্রিষ্টধর্মের সুতিকাগার ও খ্রিষ্টীয় প্রথম দুই শতাব্দীতে যে সকল অঞ্চলে খ্রিষ্টধর্ম প্রসার লাভ করে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে ফিলিস্তিন ও বৃহত্তর সিরিয়া, আরমেনিয়া, মিসর ও ইথিওপিয়া। এ সকল এলাকার খ্রিষ্টানরা প্রাচীন যুগ থেকে নিজস্ব ‘বাইবেল’ অনুসরণ করেন। তাদের বাইবেলের সাথে প্রচলিত ক্যাথলিক ও প্রটেস্ট্যান্ট বাইবেলের অনেক পার্থক্য বিদ্যমান।

[1] Microsoft Encarta, articles: catholic, bishop, pope, papacy, schism.
[2] Microsoft Encarta: Orthodox church, bishop, pope, papacy, schism.
[3] Microsoft Encarta, articles: protestant, protestantism, Martin Luther
১. ২. ৩. খ্রিষ্টধর্মীয় পুরাতন নিয়ম বনাম ইহুদি বাইবেল

উপরের কয়েক প্রকার বাইবেলের আলোচনার জন্য প্রথমে ইহুদি বাইবেলের আলোচনা প্রয়োজন। আমরা দেখেছি যে, ইহুদিদের ধর্মগ্রন্থ ইহুদি বাইবেল (Jewish Bible) এবং হিব্রু বাইবেল (Hebrew Bible) নামে পরিচিত। ইহুদি বাইবেলই খ্রিষ্টান বাইবেলের পুরাতন নিয়ম, তবে ইহুদি বাইবেল ও খ্রিষ্টান বাইবেলের পুরাতন নিয়মের মধ্যে পুস্তকের সংখ্যা ও বিন্যাসে পার্থক্য রয়েছে।

খৃস্টান বাইবেলের পুরাতন নিয়মের মূল ভিত্তি ইহুদি বাইবেলের ‘গ্রীক অনুবাদ’ বা গ্রিক সংস্করণ। ইহুদি বাইবেলের গ্রিক সংস্করণকে সেপ্টুআজিন্ট (Septuagint) বা সত্তরের কর্ম বলা হয়।

ইহুদিদের ধর্মীয় ও ব্যবহারিক ভাষা হিব্রু। পুরাতন নিয়মের গ্রন্থগুলো হিব্রু ভাষায়  লেখা ছিল। খ্রিষ্টপূর্ব ৩৩২ সালে আলেকজান্ডার প্যালেস্টাইন দখল করেন এবং তা গ্রিক সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। ইহুদিরা গ্রিক নাগরিকে পরিণত হয় এবং ক্রমান্বয়ে তাদের মধ্যে গ্রিক ভাষার কিছু প্রচলন শুরু হয়। প্রায় এক শতাব্দী পরে, খ্রিষ্টপূর্ব ২৮৫-২৪৫ সালের দিকে ইহুদি ধর্মগ্রন্থগুলো গ্রিক ভাষায় অনুবাদ করা হয়। কথিত আছে যে, মিসরের শাসক ২য় টলেমি: টলেমি ফিলাডেলফাস (Ptolemy Philadelphus)- এর রাজত্বকালে (খ্রি. পূ. ২৮৫-২৪৬) তাঁর নির্দেশে ৭০/৭২ জন পণ্ডিত তা ‘আলেকজান্ড্রীয় গ্রিক ভাষায়’ অনুবাদ করেন। এই গ্রিক অনুবাদটাই the Septuagint (LXX) বা সত্তরের অনুবাদ বলে প্রসিদ্ধ। একে গ্রিক পুরাতন নিয়মও (Greek Old Testament) বলা হয়। যীশুর সময়ে এ অনুবাদটা প্রচলিত ছিল।

বাহ্যত প্রজাদের মধ্যে প্রচলিত প্রসিদ্ধ ধর্মগ্রন্থের বিষয়বস্ত্ত জানার উদ্দেশ্যে শাসকরা এ অনুবাদ তৈরি করেন। যেমন মুসলিম শাসকদের অনুরোধে সর্বপ্রথম রামায়ণের বাংলা অনুবাদ করা হয়। তবে ক্রমান্বয়ে এ গ্রিক সংস্করণের ব্যবহার ইহুদিদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। ইহুদিরা, বিশেষত ফিলিস্তিনের বাইরে, আলেকজান্দ্রিয়া ও অন্যান্য স্থানে বসবাসকারী ইহুদিরা হিব্রু ভাষায় দুর্বল হয়ে পড়েন। তারা গ্রিক ভাষা ব্যবহারে অধিক অভ্যস্থ হয়ে পড়েন। তারা এ গ্রিক বাইবেলের উপর নির্ভর করতে থাকেন। প্রথম প্রজন্মের খ্রিষ্টানরা এটার উপরেই নির্ভর করতেন। খ্রিষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দী থেকে খ্রিষ্টীয় পঞ্চম শতাব্দীর শেষ পর্যন্ত প্রায় তিনশত বছর ইহুদিরা এ গ্রিক বাইবেলের উপরেই নির্ভর করতেন। ইহুদি পণ্ডিতরা ইহুদি বাইবেলের হিব্রু সংস্করণ ও গ্রিক সংস্করণকে একইরূপ গ্রহণযোগ্য বলে গণ্য করতেন। উইকিপিডিয়া ‘Septuagint’ প্রবন্ধের ‘Jewish use’ অনুচ্ছেদে লেখেছে: “Pre-Christian Jews, Philo and Josephus considered the Septuagint on equal standing with the Hebrew text.” অর্থাৎ ‘‘খ্রিষ্টপূর্ব ইহুদি ফিলো (মৃত্যু ৫০ খ্রিষ্টাব্দ) এবং যোসেফাস (মৃত্যু ১০০ খ্রিষ্টাব্দ) সেপ্টুআজিন্ট বা সত্তরের অনুবাদকে হিব্রু ভাষ্যের মত একইরূপ গ্রহণযোগ্য বলে গণ্য করতেন।’’

পঞ্চম খ্রিষ্টীয় শতকের শেষ দিক থেকে ইহুদিরা গ্রিক পাণ্ডুলিপি পরিত্যাগ করে হিব্রু পাণ্ডুলিপির দিকে ঝুঁকে পড়েন। তবে খ্রিষ্টানরা গ্রিক নির্ভরতা অব্যাহত রাখেন। প্রথম খ্রিষ্টীয় শতাব্দী থেকে পরবর্তী প্রায় দেড় হাজার বছর সকল খ্রিষ্টানই গ্রিক পুরাতন নিয়মের উপর নির্ভর করেন। প্রাচীন সকল খ্রিষ্টীয় বাইবেলের ভিত্তি এ ‘সত্তরের অনুবাদ’। উইকিপিডিয়ার ভাষায়: ‘‘The Septuagint is the basis for the Old Latin, Slavonic, Syriac, Old Armenian, Old Georgian and Coptic versions of the Christian Old Testament.’’: ‘‘সেপ্টুআজিন্ট-ই প্রাচীন ল্যাটিন, সস্নাভোনিক, সিরীয়, প্রাচীন আর্মেনিয়ান, প্রাচীন জর্জিয়ান ও কপ্টিক সকল খ্রিষ্টান বাইবেলের পুরাতন নিয়মের ভিত্তি’’ (উইকিপিডিয়া: Septuagint)। সপ্তদশ শতক থেকে প্রটেস্ট্যান্টরা হিব্রু ভাষ্যের উপর নির্ভর করতে শুরু করেন।[1]

এভাবে আমরা দেখছি যে, পুরাতন নিয়মের ক্ষেত্রে প্রটেস্ট্যান্ট বাইবেলের ভিত্তি হিব্রু সংস্করণ। অবশিষ্ট সকল খ্রিষ্টান বাইবেলের ভিত্তি সেপ্টুআজিন্ট। তবে বাস্তবে আমরা দেখি যে, গ্রিক সেপ্টুআজিন্ট-এর সাথে ক্যাথলিক ও অন্যান্য বাইবেলের অনেক পার্থক্য রয়েছে। আমরা নিম্নে হিব্রু ইহুদি বাইবেলের মধ্যে বিদ্যমান পুস্তকগুলোর পাশাপাশি গ্রিক সেপ্টুআজিন্ট, ক্যাথলিক, প্রটেস্ট্যান্ট ও গ্রিক অর্থোডক্স চার্চ স্বীকৃত ‘ক্যানন’ বা বিধিসম্মত বাইবেলের পুরাতন নিয়মের পুস্তকগুলোর তালিকা প্রদান করছি। উল্লেখ্য যে, মিসরীয়, কপ্টিক, ইথিওপীয়, আর্মেনীয় ইত্যাদি খ্রিষ্টধর্মীয় চার্চের নিকট স্বীকৃত বাইবেলের পুরাতন নিয়মের পুস্তকাদির ক্ষেত্রে আরো কিছু ভিন্নতা রয়েছে। বিস্তারিত জানতে পাঠক এনকার্টার Bible/Books of the Bible এবং উইকিপিডিয়ার Books of the Bible  ও Septuagint প্রবন্ধগুলো পাঠ করুন:

 

ক্রমিক

ইহুদি বাইবেল

(২৪ পুস্তকে ৩৯)

প্রটেস্ট্যান্ট

৩৯ পুস্তক

ক্যাথলিক

৪৬ পুস্তক

অর্থোডক্স

৫১ পুস্তক

সেপ্টুআজিন্ট

৫৩ পুস্তক

1

Genesis

Genesis

Genesis

Genesis

Genesis

2

Exodus

Exodus

Exodus

Exodus

Exodus

3

Leviticus

Leviticus

Leviticus

Leviticus

Leviticus

4

Numbers

Numbers

Numbers

Numbers

Numbers

5

Deuteronomy

Deuteronomy

Deuteronomy

Deuteronomy

Deuteronomy

6

Joshua

Joshua

Joshua

Joshua (Iesous)

Joshua

7

Judges

Judges

Judges

Judges

Judges

8

1 Samuel

Ruth

Ruth

Ruth

Ruth

9

2 Samuel

1 Samuel

1 Samuel

1 Samuel 

I Samuel

10

1 Kings

2 Samuel

2 Samuel

2 Samuel 

II Samuel

11

2 Kings

1 Kings

1 Kings

1 Kings

I Kings

12

Isaiah

2 Kings

2 Kings

2 Kings

II Kings

13

Jeremiah

1 Chronicles

1 Chronicles

1 Chronicles

I Chronicles

14

Ezekiel

2 Chronicles

2 Chronicles

2 Chronicles

II Chronicles

15

Hosea

Ezra

Ezra

1 Esdras

1 Esdras

16

Joel

Nehemiah

Nehemiah

Ezra (2 Esdras)

Ezra

17

Amos

Esther

Tobit

Nehemiah

Nehemiah (2 books as one)

18

Obadiah

Job

Judith

Tobit (Tobias)

Tobit/ Tobias

19

Jonah

Psalms

Esther

Judith

Judith

20

Micah

Proverbs

1 Maccabees

Esther

Esther with additions

21

Nahum

Ecclesiastes

2 Maccabees

1 Maccabees

1 Maccabees

22

Habakkuk

Song of Solomon

Job

2 Maccabees

2 Maccabees

23

Zephaniah

Isaiah

Psalms

3 Maccabees

3 Maccabees

24

Haggai

Jeremiah

Proverbs

4 Maccabees

Psalms

25

Zechariah

Lamentations

Ecclesiastes

Job

Psalm 151

26

Malachi

Ezekiel

Song of Songs

Psalms

Prayer of Manasseh

27

Psalms

Daniel

Wisdom

Prayer of Manasseh

Job

28

Proverbs

Hosea

Sirach

Proverbs

Proverbs

29

Job

Joel

Isaiah

Ecclesiastes

Ecclesiastes

30

Song of Songs

Amos

Jeremiah

Song of Songs

Song of Solomon

31

Ruth

Obadiah

Lamentations

Wisdom

Wisdom

32

Lamentations

Jonah

Baruch

Sirach

Sirach/ Ecclesiasticus

33

Ecclesiastes

Micah

Ezekiel

Isaiah

Psalms of Solomon

34

Esther

Nahum

Daniel

Jeremiah

Hosea

35

Daniel

Habakkuk

Hosea

Lamentations

Amos

36

Ezra

Zephaniah

Joel

Baruch

Micah

37

Nehemiah

Haggai

Amos

Letter of Jeremiah

Joel

38

1 Chronicles

Zechariah

Obadiah

Ezekiel

Obadiah

39

2 Chronicles

Malachi

Jonah

Daniel

Jonah

40

 

 

Micah

Hosea

Nahum

41

 

 

Nahum

Joel

Habakkuk

42

 

 

Habakkuk

Amos

Zephaniah

43

 

 

Zephaniah

Obadiah

Haggai

44

 

 

Haggai

Jonah

Zachariah

45

 

 

Zechariah

Micah

Malachi

46

 

 

Malachi

Nahum

Isaiah

47

 

 

 

Habakkuk

Jeremiah

48

 

 

 

Zephaniah

Baruch

49

 

 

 

Haggai

Lamentations

50

 

 

 

Zechariah

Letter of Jeremiah

51

 

 

 

Malachi

Ezekiel

52

 

 

 

 

Daniel with additions

53

 

 

 

 

4 Maccabees

 

মিসরীয়-আফ্রিকান কপ্টিক অর্থোডক্স খৃস্টান সম্প্রদায়ের অন্যতম অংশ ইথিওপিয়া-ইরিত্রিয়ার অর্থোডক্স টেওয়াহিদো (Orthodox Tewahedo) খৃস্টমণ্ডলী। এ সম্প্রদায় স্বীকৃত ও ইথিওপিয়া-ইরিত্রিয়ায় বর্তমানে প্রচলিত বাইবেলকে অর্থোডক্স টেওয়াহিদো বাইবেল (the Orthodox Tewahedo Bible) বলা হয়। এ বাইবেলের মধ্যে অর্থোডক্স বাইবেলের উপরের ৫১ পুস্তক ছাড়াও নিম্নের অতিরিক্ত পুস্তকগুলো বিদ্যমান: (১) Jubilees, (২) Enoch, (৩) Ezra 2nd, (৪)  Ezra Sutuel, (৫) 4 Baruch, (৬) Josippon,। এছাড়া এ বাইবেলের মধ্যে বিদ্যমান মাকাবীয় পুস্তকগুলো অর্থোডক্স বাইবেলের মাকাবীয় চারটা পুস্তক থেকে সম্পুর্ণ ভিন্ন। ইথিওপীয় বাইবেল বা আবিসিনিয়ান ক্যানন (Abyssinian canon)-এর বিভিন্ন সংস্করণ বা পাণ্ডুলিপির মধ্যে Ascension of Isaiah নামক আরো একটা পুস্তক বিদ্যমান। পাঠক বিস্তারিত জানতে উইকিপিডিয়ায়: Orthodox Tewahedo biblical canon, Ascension of Isaiah, Book of Jubilees, Book of Enoch, 1 Esdras, 4 Baruch, Josippon প্রবন্ধগুলো পাঠ করুন।

সুপ্রিয় পাঠক, এখানে নিম্নের বিষয়গুলো লক্ষণীয়:

প্রথমত: ইহুদি বাইবেল বা তানাখ/তানাক (Tanakh/Tenak)-এর পুস্তকসংখ্যা ২৪, যেগুলোর মধ্যে উপরের ৩৯টা পুস্তক বিদ্যমান। তালিকাটা নিম্নরূপ:

 

(১-৭)

১ থেকে ৭ নং পুস্তক: ৭টা পৃথক পুস্তক।

(৮)

৮ ও ৯ নং পুস্তক: ১ শমূয়েল ও ২ শমূয়েল একটা পুস্তক।

(৯)

১০ ও ১১ নং পুস্তক: ১ রাজাবলি ও ২ রাজাবলি একটা পুস্তক।

(১০-১২)

১২ থেকে ১৪ নং তিনটা পৃথক পুস্তক (যিশাইয়, যিরমিয়, যিহিষ্কেল)

(১৩)

১৫ থেকে ২৬ নং পর্যন্ত ১২টা পুস্তক একত্রে ‘দ্বাদশ’ (The Twelve/ Trei Asar) (বারজন গৌণ নবী) নামে একটা পুস্তক।

(১৪-২২)

২৭ থেকে ৩৫ নং পর্যন্ত ৯টা পৃথক পুস্তক।

(২৩)

৩৬ ও ৩৭ নং পুস্তকদ্বয় (ইযরা ও নহিমিয়) একত্রে একটা পুস্তক।

(২৪)

৩৮ ও ৩৯ নং পুস্তকদ্বয় (১ বংশাবলি ও ২ বংশাবলি)

 

দ্বিতীয়ত: ইহুদিদের একটা সম্প্রদায় শমরীয় (Samaritan) ইহুদিরা পুরাতন নিয়মের শুধু প্রথম ৫টা গ্রন্থ বিশুদ্ধ ও পালনীয় বলে স্বীকার করেন, যা শমরীয় তৌরাত, শমরীয় পঞ্চপুস্তক বা শমরীয় বৈধ বাইবেল (The Samaritan Pentateuch/ the Samaritan Torah/ The Samaritan canon) নামে প্রসিদ্ধ। বাইবেলের অন্য সকল পুস্তকের বৈধতা ও গ্রহণযোগ্যতা তারা অস্বীকার করেন। তারা মূল হিব্রু পাণ্ডুলিপির অনুসরণ করেন। এনকার্টায় শমরীয় তৌরাতকে তৌরাতের প্রাচীনতর ভাষ্য (an older text of the first five books of the Bible) বলা হয়েছে। আধুনিক ইহুদি তৌরাত এবং গ্রিক তৌরাতের সাথে শমরীয় তৌরাতের প্রায় ৬ হাজার পার্থক্য রয়েছে। আধুনিক যুগে আবিষ্কৃত মৃত সাগরের পাণ্ডুলিপি (Dead Sea Scrolls) আবিষ্কারের পর পাশ্চাত্য গবেষকরা নিশ্চিত করেছেন যে, ইহুদি বাইবেল ও খ্রিষ্টান বাইবেলের চেয়ে শমরীয় বাইবেল প্রাচীন পাণ্ডুলিপিগুলোর সাথে অধিক মিল-সম্পন্ন।[2]

তৃতীয়ত: ইহুদি বাইবেল ও প্রটেস্ট্যান্ট বাইবেলের পুস্তকগুলোর সংখ্যা একই। তবে পুস্তকগুলোর ক্রমবিন্যাসে অনেক পার্থক্য। ধর্মগ্রন্থের সূরা বা পুস্তকগুলোর মধ্যে এরূপ অমিল মুসলিম পাঠকের কাছে খুবই অগ্রহণযোগ্য ও অবিশ্বাস্য বিষয়। ধর্মগ্রন্থের সূরা, অধ্যায় বা পুস্তকগুলোকে এভাবে ইচ্ছামত আগে পরে করা যায় বলে মুসলিমরা ভাবতেও পারেন না। এমনকি কোনো সাধারণ লেখকের সংকলিত ও সম্পাদিত একটা গ্রন্থমালার বইগুলো পরবর্তীকালে কেউ আগে পিছে করলে তা সকল গবেষক ও সমালোচকের নিকট অগ্রহণযোগ্য হবে। কিন্তু খ্রিষ্টান পণ্ডিতরা বিষয়টাকে হাল্কা হিসেবেই দেখেন।

চতুর্থত: আমরা দেখলাম যে, পুরাতন নিয়মের মূল ভিত্তি গ্রিক সেপ্টুআজিন্ট (Septuagint)-এর মধ্যে ৫৩টা পুস্তক, অর্থোডক্স পুরাতন নিয়মে ৫১টা পুস্তক, ক্যাথলিক পুরাতন নিয়মে ৪৬টি পুস্তক এবং প্রটেস্ট্যান্ট পুরাতন নিয়মে ৩৯টা পুস্তক বিদ্যমান। একই ধর্মের একই ধর্মগ্রন্থের মধ্যে এত পার্থক্য পৃথিবীর আর কোনো প্রসিদ্ধ ধর্মের ধর্মগ্রন্থের মধ্যে আছে বলে জানা যায় না।

‘বাইবেলের বৈধ-বিশুদ্ধ গ্রন্থাবলি: এক গোঁড়া বাইবেল বিশ্বাসী প্রেক্ষাপট:The Canon of the Bible A conservative, bible believing perspective’ নামক আর্টিকেলে (দেখুন http://www.bible.ca/canon.htm) এবং ‘খ্রিষ্টীয় বাইবেল, রোমান ক্যাথলিক বাইবেল, গ্রীক অর্থোডক্স বাইবেলের তালিকা: List of books in the Christian Bible, Roman Catholic Bible, Greek Orthodox Bible’ (দেখুন http://www.bible.ca/b-canon-orthodox-catholic-christian-bible-books.htm) থেকে বিভিন্ন খ্রিষ্টীয় বাইবেলের মধ্যকার পার্থক্য উল্লেখ করছি। উল্লেখ্য যে, এসব ওয়েবসাইটে খ্রিষ্টীয়ান বাইবেল বলতে প্রটেস্ট্যান্ট বাইবেল বুঝানো হয়েছে।

 

 

ইংরেজি নাম

বাংলা নাম

 

Christian's Bible (খ্রিষ্টান বাইবেল)

Roman Catholic Bible

(রোমান ক্যাথলিক বাইবেল)

Greek Orthodox Bible

(গ্রীক অর্থোডক্স বাইবেল)

The Septuagint

(সেপ্টুআ-জিন্ট)

  1.  

1 Esdras

১ ইসদরাস

নেই

নেই

আছে

আছে

  1.  

Tobit

 তোবিত

নেই

আছে

আছে

আছে

  1.  

Judith

যুদিথ

নেই

আছে

আছে

আছে

  1.  

Additions to Esther (103 Vrs)

ইস্টেরে (১০৩ শ্লোক) সংযোজন

নেই

আছে

আছে

আছে

  1.  

Wisdom of Solomon

সলোমনের প্রজ্ঞাপুস্তক

নেই

আছে

আছে

আছে

  1.  

Ecclesiasticus

বিন সিরাহ

নেই

আছে

আছে

আছে

  1.  

Baruch

বারুক

নেই

আছে

আছে

আছে

  1.  

Epistle of Jeremiah

যিরমিয়ের পত্র

নেই

আছে

আছে

আছে

  1.  

Song of the Three Children

তিন শিশুর সঙ্গীত

নেই

আছে

আছে

আছে

  1.  

Story of Susanna

সুসান্নার গল্প

নেই

আছে

আছে

আছে

  1.  

Bel and the Dragon

 বেল ও ড্রাগন

নেই

আছে

আছে

আছে

  1.  

Prayer of Manasseh

মনশির প্রার্থনা

নেই

আছে

আছে

আছে

  1.  

1 Maccabees

১ মাকাবীয়

নেই

আছে

আছে

আছে

  1.  

2 Maccabees

২ মাকাবীয়

নেই

আছে

আছে

আছে

  1.  

3 Maccabees

৩ মাকাবীয়

নেই

নেই

আছে

আছে

  1.  

4 Maccabees

৪ মাকাবীয়

নেই

নেই

আছে

আছে

  1.  

Psalm 151

গীতসংহিতা ১৫১

নেই

নেই

আছে

আছে

  1.  

Psalms of Solomon

সলোমনের গীতসংহিতা

নেই

নেই

নেই

আছে

 

পঞ্চমত: আমরা দেখছি যে, ক্যাথলিক বাইবেলের পুরাতন নিয়মের পুস্তক সংখ্যা ৪৬ এবং অর্থোডক্স পুরাতন নিয়মের পুস্তক সংখ্যা ৫১। পক্ষান্তরে তারা সকলেই যে মূল গ্রিক সংস্করণ বা সেপ্টুআজিন্টের উপর নির্ভর করেছেন তার মধ্যে পুস্তকের সংখ্যা ৫৩। এভাবে আমরা দেখছি যে, মূল গ্রিক সেপ্টুআজিন্টের মধ্যে ১৪টা পুস্তক বিদ্যমান যেগুলো ইহুদি ও প্রটেস্ট্যান্ট খ্রিষ্টানরা বাতিল বলে গণ্য করেছেন। এগুলোর মধ্য থেকে ৭টা পুস্তক ক্যাথলিকরা গ্রহণ করেছেন। অবশিষ্ট ৭টার মধ্যে ৫টা অর্থোডক্সরা গ্রহণ করেছেন। অবশিষ্ট দু’টা পুস্তক তিন সম্প্রদায়ই বাতিল করেছেন। আমরা আগেই বলেছি যে, ইথিওপীয়, মিসরীয়, সিরীয় ইত্যাদি প্রাচীন খ্রিষ্টান সম্প্রদায়গুলোর বাইবেলের মধ্যে এ সকল পুস্তক বিদ্যমান।

ষষ্ঠত: প্রটেস্ট্যানটরা ক্যাথলিক পুরাতন নিয়মের ৭টা পুস্তককে সন্দেহভাজন বা ‘জাল’ বলে গণ্য করেছেন। প্রায় ১৬০০ বছর পবিত্র বাইবলের অন্তর্ভুক্ত আসমানি গ্রন্থ বা ঐশ্বরিক পুস্তক হিসেবে গণ্য হওয়ার পর প্রটেস্ট্যানটরা সপ্তদশ শতাব্দীতে এগুলোকে বাদ দিয়ে তাদের বাইবেল মুদ্রণ করেন। তবে প্রটেস্ট্যান্টদের স্বীকৃত নতুন নিয়মের পুস্তকগুলোর মধ্যে এ সকল জাল বা বাতিলকৃত বইয়ের উদ্ধৃতি পাওয়া যায়।[3]

[1] উপরের বিষয়গুলোর জন্য উইকিপিডিয়া, এনকার্টা, ব্রিটানিকা ইত্যাদি বিশ্বকোষে নিম্নের আর্টিকেলগুলো দেখুন: Septuagint, Old Testament, Development of the Hebrew Bible canon, Development of the Old Testament canon

[2] উইকিপিডিয়া: The Samaritan Pentateuch, ব্রিটানিকা: biblical literature/ The Samaritan canon, এনকার্টা: Samaria.

[3] বিস্তারিত দেখুন: The New Encyclopedia Britannica, 15th Edition, Vol-2, Biblical Literature, pp883, 932-935. উইকিপিডিয়া: Non-canonical books referenced in the Bible.
১. ২. ৪. পুরাতন নিয়মের আরো অনেক পুস্তক

পুরাতন নিয়মের উপরের গ্রন্থগুলো ছাড়াও আরো অনেক পুস্তক রয়েছে, যেগুলো প্রাচীনকাল থেকে ইহুদি সমাজে এবং প্রথম শতাব্দীগুলোর খ্রিষ্টান সমাজে আসমানী গ্রন্থ বা ধর্মগ্রন্থ হিসেবে প্রচলিত থাকলেও পরবর্তী যুগের ইহুদি-খ্রিষ্টান পণ্ডিত ও ধর্মগুরুরা সেগুলোকে ‘বিশুদ্ধ’ বা ‘আইনসিদ্ধ’ (canonical) বলে গ্রহণ করেননি। এগুলোকে তারা এপক্রিপা (apocrypha) অর্থাৎ সন্দেহজনক, অনির্ভরযোগ্য, লুকানো বা জাল পুস্তক বলে গণ্য করেছেন। তবে তাদের স্বীকৃত কোনো কোনো পুস্তকে এ সকল জাল পুস্তকের উদ্ধৃতি বিদ্যমান। এছাড়া স্বীকৃত বাইবেলের অনেক প্রাচীন পাণ্ডুলিপির মধ্যেও এ সকল সন্দেহজনক বা জাল পুস্তক বিদ্যমান। নিম্নে এজাতীয় কিছু পুস্তকের নাম দেখুন:[1]

[1] এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা: biblical literature; উইকিপিডিয়া: Jewish apocrypha, Biblical apocrypha, Pseudepigrapha, The Lost Books of the Bible and the Forgotten Books of Eden, Non-canonical books referenced in the Bible. আরো দেখুন: The Forgotten Books of Eden, by Rutherford H. Platt, Jr., [1926], full text e text at sacred-texts.com.
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১০ পর্যন্ত, সর্বমোট ৮৬৬ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ 1 2 3 4 5 6 · · · 84 85 86 87 পরের পাতা »