আল্লাহ তা‘আলা তার দীনকে পরিপূর্ণ করেছেন। ফলে দীনে নতুন করে কোনো কিছু সংযোজন বা বিয়োজনের কোনো প্রয়োজন নেই। কিয়ামত অবধি মানবজাতির সব সমস্যার সমাধান এ দীনে অবশ্যই রয়েছে। এ দীন বা ইসলাম পূর্ণাঙ্গ ও নিখুঁত দীন। এতদসত্বেও দেশ ও সমাজে বিদ‘আত ও কু-সংস্কারের ছড়াছড়ি। এ থেকে মুসলিম উম্মাহকে সতর্ক করা ও এর ভয়াবহ পরিণতি থেকে বেঁচে থাকার জন্য তাদের দাওয়াত দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শাইখ মুহাম্মদ ইবন সালেহ আল-উসাইমীন রহ.-এর লিখিত ‘আল-ইবদা‘ ফী কামালিশ শার‘ঈ ওয়া খাতরুল ইবতি‘দা’ নামক পুস্তিকাটি এ ক্ষেত্রে অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আমার বিশ্বাস। পুস্তিকাটিতে দীনের পরিপূর্ণতা ও নিখুঁত হওয়ার বিষয়টি কুরআন ও সুন্নাহের আলোকে খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে এবং বিদ‘আতীদের বিভিন্ন আপত্তি ও তাদের বিভিন্ন যুক্তির উত্তর দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও পুস্তিকাটিতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইত্তেবা বা অনুসরণ-অনুকরণ সাব্যস্ত হওয়ার জন্য যে সব বিষয়গুলো জরুরি তা সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরা হয়েছে। একজন সুন্নাতের অনুসারী বা রাসূলের উম্মতের জন্য এ বিষয়গুলো জেনে থাকা খুবই জরুরি। বিষয়বস্তুর গুরুত্ব, সময়ের দাবি, সমাজের প্রয়োজন ও বাস্তবতাকে সামনে রেখে পুস্তিকাটির বাংলা ভাষায় অনুবাদ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও মহৎ কর্ম বলে অনুভব করি। তাই বাংলা ভাষাভাষী মুসলিম ভাইদের জন্য পুস্তিকাটির সরল বাংলা অনুবাদ তুলে ধরা হলো। বাংলায় পুস্তিকাটির নাম দেওয়া হলো, ‘শরী‘আতের স্বয়ংসম্পূর্ণতা ও বিদ‘আতের ভয়াবহতা’।
আশা করি পুস্তিকাটি অধ্যয়ন করে আপনারা উপকৃত হবেন। সুন্নাতের প্রতি আপনাদের আগ্রহ বাড়বে। বিদ‘আত বর্জন করবেন, বিদ‘আত ও বিদ‘আতী থেকে সতর্ক থাকবেন। অবশেষে আল্লাহর নিকট এ মুনাজাত করি, তিনি যেন আমার এ ক্ষুদ্র প্রচেষ্টাকে কবুল করেন এবং পরকালে নাজাতের কারণ ও উপায় হিসেবে তা গ্রহণ করেন। আমীন।
জাকেরুল্লাহ আবুল খায়ের
সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহর। আমরা তাঁরই প্রশংসা করি, তাঁর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করি, তাঁরই নিকট ক্ষমা চাই। আর আমরা আমাদের আত্মার অনিষ্টতা এবং আমাদের আমলসমূহের মন্দ পরিণতি থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই। আল্লাহ যাকে হিদায়াত দেন, তাকে গোমরাহ করার কেউ নেই এবং যাকে গোমরাহ করেন তাকে হিদায়াত দেওয়ারও কেউ নেই। আর আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, একমাত্র আল্লাহ ছাড়া সত্যিকার কোনো ইলাহ নেই, তার কোন শরীক নেই। আর আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ তাঁর বান্দা ও রাসূল, যাকে আল্লাহ তা‘আলা হিদায়াত ও সত্য দীন দিয়ে প্রেরণ করেন। ফলে তিনি রিসালাতের দায়িত্ব যথাযথ পালন করেন এবং আমানতকে পৌঁছে দেন। উম্মতের কল্যাণ সাধন করেন এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আল্লাহর পথে যথাযথ জিহাদ করেন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনীত দীন একটি পূর্ণাঙ্গ দীন:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উম্মতকে দীনের বিষয়ে দিনের আলোর মত সু-স্পষ্ট দলীলের ওপর রেখে যান। একমাত্র হতভাগা ছাড়া কেউ তা থেকে বিচ্যুত বা পথভ্রষ্ট হতে পারে না। উম্মতের প্রয়োজনীয় সবকিছুই তিনি স্পষ্ট করেন। এমনকি আবু যর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন,
«ما ترك النبي صلى الله عليه وسلّم طائراً يقلب جناحيه في السماء إلا ذكر لنا منه علماً».
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাতাসে দুই ডানা মেলে উড়ন্ত পাখীর বিষয়েও আমাদের শিক্ষা দিতে ছাড়েন নি”।[1]
একজন মুশরিক সালমান ফারসী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বলেন,
«علمكم نبيكم حتى الخراة ـ آداب قضاء الحاجة ـ قال: «نعم، لقد نهانا أن نستقبل القبلة بغائط أو بول أو أن نستنجي بأقل من ثلاثة أحجار، أو أن نستنجي باليمين أو أن نستنجي برجيع أو عظم».
“তোমাদের নবী তোমাদেরকে সবকিছু শিখিয়েছেন, এমনকি পায়খানা পেশাবের নিয়ম-পদ্ধতি। তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ’। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের পায়খানা ও পেসাবের সময় কিবলামূখ হওয়া, তিনটির কম পাথর দ্বারা পবিত্রতা হাসিল করা, ডান হাত দ্বারা পবিত্রতা হাসিল করা অথবা গোবর ও হাড় দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করতে নিষেধ করেছেন”।[2]
আর তুমি কুরআন অধ্যয়ন করলে দেখতে পাবে, আল্লাহ তা‘আলা তাতে দীনের মৌলিক বিষয়সমূহ এবং শাখা-প্রশাখা সবই বর্ণনা করেছেন। তাওহীদের প্রকারসমূহ স্ব-বিস্তারে কুরআনে বর্ণনা করেছেন। এমনকি কারো ঘরে প্রবেশ করতে হলে কীভাবে অনুমতি গ্রহণ করতে হবে এবং একটি মজলিশে বসলে কি কি শিষ্টাচার অবলম্বন করতে হবে, তাও কুরআনে বর্ণনা করে দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِذَا قِيلَ لَكُمۡ تَفَسَّحُواْ فِي ٱلۡمَجَٰلِسِ فَٱفۡسَحُواْ يَفۡسَحِ ٱللَّهُ لَكُمۡۖ وَإِذَا قِيلَ ٱنشُزُواْ فَٱنشُزُواْ يَرۡفَعِ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ مِنكُمۡ وَٱلَّذِينَ أُوتُواْ ٱلۡعِلۡمَ دَرَجَٰتٖۚ وَٱللَّهُ بِمَا تَعۡمَلُونَ خَبِيرٞ ١١﴾ [المجادلة: ١١]
“হে মুমিনগণ, তোমাদেরকে যখন বলা হয়, ‘মজলিসে স্থান করে দাও’, তখন তোমরা স্থান করে দেবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য স্থান করে দেবেন। আর যখন তোমাদেরকে বলা হয়, ‘তোমরা উঠে যাও’, তখন তোমরা উঠে যাবে। তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে আল্লাহ তাদেরকে মর্যাদায় সমুন্নত করবেন। আর তোমরা যা কর আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্যক অবহিত”। [সূরা আল-মুজাদালাহ, আয়াত: ১১]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا تَدۡخُلُواْ بُيُوتًا غَيۡرَ بُيُوتِكُمۡ حَتَّىٰ تَسۡتَأۡنِسُواْ وَتُسَلِّمُواْ عَلَىٰٓ أَهۡلِهَاۚ ذَٰلِكُمۡ خَيۡرٞ لَّكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَذَكَّرُونَ ٢٧ فَإِن لَّمۡ تَجِدُواْ فِيهَآ أَحَدٗا فَلَا تَدۡخُلُوهَا حَتَّىٰ يُؤۡذَنَ لَكُمۡۖ وَإِن قِيلَ لَكُمُ ٱرۡجِعُواْ فَٱرۡجِعُواْۖ هُوَ أَزۡكَىٰ لَكُمۡۚ وَٱللَّهُ بِمَا تَعۡمَلُونَ عَلِيمٞ ٢٨﴾ [النور : ٢٧، ٢٨]
“হে মুমিনগণ, তোমরা নিজদের গৃহ ছাড়া অন্য কারও গৃহে প্রশে করো না, যতক্ষণ না তোমরা অনুমতি নেবে এবং গৃহবাসীদেরকে সালাম দেবে। এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর। অতঃপর যদি তোমরা সেখানে কাউকে না পাও তাহলে তোমাদেরকে অনুমতি না দেওয়া পর্যন্ত তোমরা সেখানে প্রবেশ করো না। আর যদি তোমাদেরকে বলা হয়, ‘ফিরে যাও’ তাহলে ফিরে যাবে। এটাই তোমাদের জন্য অধিক পবিত্র। তোমরা যা কর আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক অবগত”। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ২৭,২৮] লিবাস-পোশাকের শিষ্টাচার বর্ণনা করতে গিয়ে আল্লাহ তা’আলা বলেন,
﴿وَٱلۡقَوَٰعِدُ مِنَ ٱلنِّسَآءِ ٱلَّٰتِي لَا يَرۡجُونَ نِكَاحٗا فَلَيۡسَ عَلَيۡهِنَّ جُنَاحٌ أَن يَضَعۡنَ ثِيَابَهُنَّ غَيۡرَ مُتَبَرِّجَٰتِۢ بِزِينَةٖۖ وَأَن يَسۡتَعۡفِفۡنَ خَيۡرٞ لَّهُنَّۗ وَٱللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٞ ٦٠﴾ [النور : ٦٠]
“আর বৃদ্ধা নারীরা, যারা বিয়ের প্রত্যাশা করে না, তাদের জন্য কোন দোষ নেই, যদি তারা তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে তাদের কিছু পোশাক খুলে রাখে এবং এ থেকে বিরত থাকাই তাদের জন্য উত্তম। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, মহাজ্ঞানী”। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৬০]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّبِيُّ قُل لِّأَزۡوَٰجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَآءِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ يُدۡنِينَ عَلَيۡهِنَّ مِن جَلَٰبِيبِهِنَّۚ ذَٰلِكَ أَدۡنَىٰٓ أَن يُعۡرَفۡنَ فَلَا يُؤۡذَيۡنَۗ وَكَانَ ٱللَّهُ غَفُورٗا رَّحِيمٗا ٥٩﴾ [الاحزاب : ٥٩]
“হে নবী, তুমি তোমার স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে ও মুমিনদের নারীদেরকে বল, ‘তারা যেন তাদের জিলবাবে[3]র কিছু অংশ নিজেদের উপর ঝুলিয়ে দেয়, তাদেরকে চেনার ব্যাপারে এটাই সবচেয়ে কাছাকাছি পন্থা হবে। ফলে তাদেরকে কষ্ট দেওয়া হবে না। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু”। [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৫৯]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿وَلَا يَضۡرِبۡنَ بِأَرۡجُلِهِنَّ لِيُعۡلَمَ مَا يُخۡفِينَ مِن زِينَتِهِنَّۚ ٣١﴾ [النور : ٣١]
“আর তারা যেন নিজদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশ করার জন্য সজোরে পদচারণা না করে”। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩১]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
﴿وَلَيۡسَ ٱلۡبِرُّ بِأَن تَأۡتُواْ ٱلۡبُيُوتَ مِن ظُهُورِهَا وَلَٰكِنَّ ٱلۡبِرَّ مَنِ ٱتَّقَىٰۗ وَأۡتُواْ ٱلۡبُيُوتَ مِنۡ أَبۡوَٰبِهَاۚ وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ ١٨٩﴾ [البقرة: ١٨٩]
“আর ভালো কাজ এটা নয় যে, তোমরা পেছন দিক দিয়ে গৃহে প্রবেশ করবে। কিন্তু ভালো কাজ হলো, যে তাকওয়া অবলম্বন করে। আর তোমরা গৃহসমূহে তার দরজা দিয়ে প্রবেশ কর এবং আল্লাহকে ভয় কর, যাতে তোমরা সফল হও”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৯]
এ ছাড়াও অসংখ্য আয়াত রয়েছে, যদ্বারা এ কথা স্পষ্ট হয় যে, এ দীন পরিপূর্ণ, নিখুঁত ও পূর্ণাঙ্গ। এ দীনে কোনো কিছু বাড়ানো বা কমানোর কোনো প্রয়োজন নেই। এ কারণেই আল্লাহ তা‘আলা কুরআনের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন,
﴿وَنَزَّلۡنَا عَلَيۡكَ ٱلۡكِتَٰبَ تِبۡيَٰنٗا لِّكُلِّ شَيۡءٖ وَهُدٗى وَرَحۡمَةٗ وَبُشۡرَىٰ لِلۡمُسۡلِمِينَ ٨٩﴾ [النحل: ٨٩]
“আর আমি তোমার উপর কিতাব নাযিল করেছি প্রতিটি বিষয়ের স্পষ্ট বর্ণনা, হিদায়াত, রহমত ও মুসলিমদের জন্য সুসংবাদস্বরূপ”। [সূরা আন-নাহাল, আয়াত: ৮৯]
[2] সহীহ মুসলিম, তাহারাত অধ্যায়, পরিচ্ছেদ- আল-ইস্তিতাবাহ, হাদীস নং ২৬৯
[3] জিলবাব হচ্ছে এমন পোশাক যা পুরো শরীরকে আচ্ছাদিত করে।
মানবজাতি তাদের মু‘আমালা (লেনদেন) মু‘আশারা (দাম্পত্যজীবন)সহ জীবনের যাবতীয় ক্ষেত্রে যা কিছুর প্রয়োজন অনুভব করে তার সবকিছুর বর্ণনাই আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে দিয়েছেন। হয় সরাসরি বর্ণনা করেছেন অথবা ইশারায় বা অর্থ দ্বারা বুঝিয়েছেন অথবা কথা দ্বারা বুঝিয়ে দিয়েছেন।
হে আমার ভাইয়েরা! অনেকেই আল্লাহ তা‘আলার বাণী-
﴿وَمَا مِن دَآبَّةٖ فِي ٱلۡأَرۡضِ وَلَا طَٰٓئِرٖ يَطِيرُ بِجَنَاحَيۡهِ إِلَّآ أُمَمٌ أَمۡثَالُكُمۚ مَّا فَرَّطۡنَا فِي ٱلۡكِتَٰبِ مِن شَيۡءٖۚ ثُمَّ إِلَىٰ رَبِّهِمۡ يُحۡشَرُونَ ٣٨﴾ [الانعام: ٣٨]
“আর যমীনে বিচরণকারী প্রতিটি প্রাণী এবং দু’ডানা দিয়ে উড়ে এমন প্রতিটি পাখি, তোমাদের মতো এক একটি উম্মত। আমরা কিতাবে কোনো ত্রুটি করি নি। অতঃপর তাদেরকে তাদের রবের কাছে সমবেত করা হবে”। [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ৩৮] -এর তাফসীর করতে গিয়ে এ ব্যাখ্যা করেছেন যে, مَّا فَرَّطۡنَا فِي ٱلۡكِتَٰبِ مِن شَيۡءٖۚ এখানে ٱلۡكِتَٰبِ কিতাব দ্বারা উদ্দেশ্য কুরআন – বস্তুত এ ব্যাখ্যটি সঠিক নয়।
সঠিক ব্যাখ্যা হলো, এখানে কিতাব দ্বারা উদ্দেশ্য লাওহে মাহফুয বুঝানো হয়েছে। কারণ, কুরআনের গুণাগুণ আল্লাহ তা‘আলা উল্লিখিত আয়াতের নাফী তথা না সূচক বর্ণনা (ত্রুটি করি নি) এর ছেয়েও অধিক প্রাঞ্জল ও স্পষ্ট ভাষায় হাঁ সূচক শব্দ দ্বারা ব্যক্ত করেছেন। আর তা হলো, আল্লাহ তা‘আলার বাণী, তিনি বলেন,
﴿وَنَزَّلۡنَا عَلَيۡكَ ٱلۡكِتَٰبَ تِبۡيَٰنٗا لِّكُلِّ شَيۡءٖ وَهُدٗى وَرَحۡمَةٗ وَبُشۡرَىٰ لِلۡمُسۡلِمِينَ ٨٩﴾ [النحل: ٨٩]
“আর আমরা আপনার ওপর কিতাব নাযিল করেছি প্রতিটি বিষয়ের স্পষ্ট বর্ণনা, হিদায়াত, রহমত ও মুসলিমদের জন্য সুসংবাদস্বরূপ”। [সূরা আন-নাহাল, আয়াত: ৮৯] এ কথাটি উল্লিখিত আয়াত— مَّا فَرَّطۡنَا فِي ٱلۡكِتَٰبِ مِن شَيۡءٖۚ ثُمَّ إِلَىٰ رَبِّهِمۡ يُحۡشَرُونَ -এর তুলনায় অধিক সুন্দর ও স্পষ্ট।
কেউ যদি এ প্রশ্ন করে যে, কুরআনের কোথায় সালাতের রাকা‘আতসমূহের বর্ণনা রয়েছে? যদি আমরা কুরআনে সালাতের রাকাতসমূহের বর্ণনা না পাই তাহলে আল্লাহ তা‘আলার বাণী,
﴿وَنَزَّلۡنَا عَلَيۡكَ ٱلۡكِتَٰبَ تِبۡيَٰنٗا لِّكُلِّ شَيۡءٖ وَهُدٗى وَرَحۡمَةٗ وَبُشۡرَىٰ لِلۡمُسۡلِمِينَ ٨٩﴾ [النحل: ٨٩]
“আর আমরা আপনার ওপর কিতাব নাযিল করেছি প্রতিটি বিষয়ের স্পষ্ট বর্ণনা, হিদায়াত, রহমত ও মুসলিমদের জন্য সুসংবাদস্বরূপ”। [সূরা আন-নাহাল, আয়াত: ৮৯] – এ দাবি কীভাবে সঠিক হয়ে থাকে?
এর উত্তর হলো, আল্লাহ তা‘আলা তার স্বীয় কিতাবে আমাদের এ নির্দেশ দিয়ে বলেছেন যে, আমাদের জন্য ওয়াজিব হলো, আমরা যেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেছেন এবং তিনি যে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন তার অনুসরণ করি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿مَّن يُطِعِ ٱلرَّسُولَ فَقَدۡ أَطَاعَ ٱللَّهَۖ وَمَن تَوَلَّىٰ فَمَآ أَرۡسَلۡنَٰكَ عَلَيۡهِمۡ حَفِيظٗا ٨٠﴾ [النساء : ٨٠]
“যে রাসূলের আনুগত্য করল, সে আল্লাহরই আনুগত্য করল। আর যে বিমুখ হলো, তবে আমি তোমাকে তাদের উপর তত্ত্বাবধায়ক করে প্রেরণ করি নি”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৮০]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿وَمَآ ءَاتَىٰكُمُ ٱلرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَىٰكُمۡ عَنۡهُ فَٱنتَهُواْۚ وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَۖ إِنَّ ٱللَّهَ شَدِيدُ ٱلۡعِقَابِ ٧﴾ [الحشر: ٧]
“রাসূল তোমাদের যা দেয় তা গ্রহণ কর, আর যা থেকে সে তোমাদের নিষেধ করে তা থেকে বিরত হও এবং আল্লাহকেই ভয় কর, নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তি প্রদানে কঠোর”। [সূরা আল-হাসর, আয়াত: ৭]
সুন্নত দ্বারা বর্ণিত বিষয়গুলো অবশ্যই কুরআনে নির্দেশিত। কারণ, সুন্নাত অহীর প্রকারদ্বয়ের এক প্রকার; যা আল্লাহ তা‘আলা তার রাসূলের ওপর নাযিল করেছেন এবং তাকে শিক্ষা দিয়েছেন। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَأَنزَلَ ٱللَّهُ عَلَيۡكَ ٱلۡكِتَٰبَ وَٱلۡحِكۡمَةَ وَعَلَّمَكَ مَا لَمۡ تَكُن تَعۡلَمُۚ وَكَانَ فَضۡلُ ٱللَّهِ عَلَيۡكَ عَظِيمٗا ١١٣﴾ [النساء : ١١٣]
“আর আল্লাহ তোমার প্রতি নাযিল করেছেন কিতাব ও হিকমাত এবং তোমাকে শিক্ষা দিয়েছেন যা তুমি জানতে না। আর তোমার উপর আল্লাহর অনুগ্রহ রয়েছে মহান”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১১৩]
এরই ভিত্তিতে বলা চলে যা সুন্নাতে বর্ণিত হয়েছে, তা মূলত কুরআনেরই বর্ণনা।
হে আমার ভাইয়েরা!
যখন তোমাদের নিকট বিষয়টি স্পষ্ট হলো, তা হলে তোমরা বল, যে দীন তোমাদেরকে আল্লাহর নিকট পৌঁছে দেবে সে দীনের এমন কোন বিধান অবশিষ্ট আছে কি যার বর্ণনা তোমাদেরকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেন নি, অথচ তিনি দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়ে গেছেন? কখনই না!
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীনের যাবতীয় সবকিছুই তার কথা, কর্ম, ও স্বীকৃতি দ্বারা বাতলিয়ে দিয়েছেন। কখনো তিনি পূর্ণাঙ্গ বাক্য দ্বারা, আবার কখনো প্রশ্নের উত্তর দ্বারা, আবার কখনো আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে কোনো অপরিচিত লোককে পাঠানো দ্বারা -আল্লাহ তাকে পাঠাতেন যাতে রাসূলের দরবারে এসে দীনের এমন বিষয়গুলো জিজ্ঞাসা করত যা রাসূলের সাথে সার্বক্ষণিক অবস্থানকারী সাহাবীরা জিজ্ঞাসা করত না। এ কারণেই তারা রাসূলের দরবারে এমন একজন গ্রাম্য লোকের আগমনে তারা খুশি হতো, যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে গুরুত্বপূর্ণ মাসায়েল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবে।
একজন মানুষ তার ইবাদত, মু‘আমালা ও মু‘আশারাসহ যাবতীয় বিষয়ে যত কিছুর প্রয়োজন অনুভব করে তার সবকিছুর বর্ণনাই আল্লাহর রাসূল তাদের জন্য তুলে ধরেছেন। এর প্রমাণ আল্লাহ তা‘আলার বাণী -তিনি বলেন,
﴿ٱلۡيَوۡمَ أَكۡمَلۡتُ لَكُمۡ دِينَكُمۡ وَأَتۡمَمۡتُ عَلَيۡكُمۡ نِعۡمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ ٱلۡإِسۡلَٰمَ دِينٗاۚ ٣﴾ [المائدة: ٣]
“আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের উপর আমার নিআমত সম্পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্য দীন হিসেবে পছন্দ করলাম ইসলামকে”। [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৩]
হে মুসলিম ভাই, তোমার নিকট এ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি স্পষ্ট হওয়ার পর, মনে রেখো, যে ব্যক্তি আল্লাহর দীনে নতুন কোনো শরী‘আত ভালো উদ্দেশ্যে হলেও আবিষ্কার করে, তার আবিষ্কৃত বিদ‘আতটি গোমরাহী বা ভ্রষ্টতা হওয়ার সাথে সাথে আল্লাহর দীনের ব্যাপারে অনাস্থা, প্রশ্ন তোলা হিসেবেই গণ্য হবে। আর আল্লাহকে তার স্বীয় বাণী- ٱلۡيَوۡمَ أَكۡمَلۡتُ لَكُمۡ دِينَكُمۡ তে মিথ্যুক সাব্যস্ত করা হবে। কারণ, যে ব্যক্তি আল্লাহর দীনে কোনো শরী‘আত বা বিধান আবিষ্কার করল, যা দীনের অন্তর্ভুক্ত নয়, তার অবস্থা দাবী করছে যে সে যেন বললো, দীন পূর্ণাঙ্গ নয়, দীন এখনো পরিপূর্ণতা লাভ করে নি। কারণ সে মনে করছে দীনের যে বিধানটি সে আবিষ্কার করল, যদ্বারা সে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে চায় তা এখনো অবশিষ্ট রয়ে গেছে। আরও আশ্চর্যের বিষয় হলো, মানুষ এমন এমন বিদ‘আত আবিষ্কার করে যা আল্লাহ তা‘আলার সত্ত্বা, নামসমূহ ও সিফাতসমূহের সাথে সম্পর্ক রাখে। তারপর সে দাবি করে যে, সে এ দ্বারা তার রবের মহত্ব সাব্যস্তকারী, তার রবের পবিত্রতা বর্ণনাকারী এবং এ দ্বারা সে আল্লাহ তা‘আলার এ বাণীর﴿فَلَا تَجۡعَلُواْ لِلَّهِ أَندَادٗا وَأَنتُمۡ تَعۡلَمُونَ ٢٢﴾ [البقرة: ٢٢] “তোমরা আল্লাহর জন্য শরীক সাব্যস্ত করো না অথচ তোমরা জান” এর নির্দেশনা বাস্তবায়নকারী। তুমি এর চেয়ে আরও বেশি আশ্চর্য হবে, যখন দেখবে, আল্লাহ তা‘লার সত্ত্বার সাথে সম্পৃক্ত এমন একটি বিদ‘আত আবিষ্কার করল, যার ওপর উম্মতের পূর্বসূরী বা ইমামগণের কোনো সমর্থন নেই, অথচ সে দাবি করে, সে আল্লাহর বড়ত্ব ও পবিত্রতা বর্ণনাকারী এবং আল্লাহ তা‘আলা বাণী-
﴿فَلَا تَجۡعَلُواْ لِلَّهِ أَندَادٗا وَأَنتُمۡ تَعۡلَمُونَ ٢٢﴾ [البقرة: ٢٢]
“তোমরা আল্লাহর জন্য শরীক সাব্যস্ত করো না অথচ তোমরা জান” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২২] এর যথাযথ বাস্তবায়নকারী। আর যে তার আবিষ্কৃত বিদ‘আতের বিরোধিতা করবে, তাকে সে সাদৃশ্য সাব্যস্তকারী বা দৃষ্টান্তস্থাপনকারী ইত্যাদি জঘন্য খারাপ উপাধি দ্বারা ভূষিত করে। অনুরূপভাবে তুমি আশ্চর্য হবে এমন সম্প্রদায়ের বিষয়ে যারা আল্লাহর দীনে নেই এমন কিছু বিদ‘আত আবিষ্কার করে যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সম্পৃক্ত। এ দ্বারা তারা দাবি করে যে, তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রেমিক, রাসূলের সম্মান রক্ষাকারী। আর যে তাদের আবিষ্কৃত সেসব বিদ‘আতের সাথে ঐক্যমত পোষণ করে না, তাকে রাসূলের শত্রু ও অসম্মানকারী ইত্যাদি খারাপ উপাধিতে আখ্যায়িত করে গালি দেয়।
আরও আশ্চর্যজনক বিষয় হলো, এ ধরনের লোকেরা বলে, আমরাই আল্লাহ ও তার রাসূলের যথাযথ সম্মান প্রদর্শনকারী। অথচ তারা যখন আল্লাহর দীন বা তার দেওয়া শরী‘আত -যা নিয়ে দুনিয়াতে আল্লাহর রাসূল আগমন করেছেন, তাতে এমন কিছু আবিষ্কার করে, যা তার দীনের অংশ নয়, তখন তারা অবশ্যই আল্লাহ ও তার রাসূলের সামনে অগ্রগামী হলো। অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا تُقَدِّمُواْ بَيۡنَ يَدَيِ ٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦۖ وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَۚ إِنَّ ٱللَّهَ سَمِيعٌ عَلِيمٞ ١﴾ [الحجرات: ١]
“হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সামনে অগ্রবর্তী হয়ো না এবং তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর, নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ”। [সূরা আল-হুজরাত, আয়াত: ১]
হে মুসলিম ভাইয়েরা! আমি তোমাদের প্রশ্ন করি এবং আল্লাহর শপথ দিয়ে বলছি, আমি চাই তোমরা আমার প্রশ্নের উত্তর তোমাদের অন্তর থেকে দিবে শুধু আবেগে মুখ দিয়ে নয়, তোমাদের দীনের দাবী অনুযায়ী উত্তর দিবে কারো অন্ধ অনুসরণে নয়, যে ব্যক্তি দীনের মধ্যে এমন কোনো বিধান আবিষ্কার করল, যা দীনের বিষয় নয়, চাই তা আল্লাহর সত্ত্বার সাথে সম্পৃক্ত হোক বা তার সিফাত তথা গুণাগুণের সাথে বা নামের সাথে অথবা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে সম্পৃক্ত হোক। তারপর তারা বলে, আমরাই আল্লাহ ও তার রাসূলের সম্মান রক্ষাকারী। এসব লোক কি সত্যিকার অর্থে আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের সম্মান রক্ষা বিষয়ে অধিক হকদার? নাকি ঐ সব লোক বেশি হকদার, যারা এক চুল পরিমাণ আল্লাহর দেওয়া শরী‘আত থেকে বিচ্যুত হয় না, শরী‘আতের যে সব বিধান তাদের নিকট এসেছে সে সম্পর্কে তারা বলে, আমরা ঈমান এনেছি এবং মনে প্রাণে বিশ্বাস করেছি সে সব বিষয়ের ওপর, যার ব্যাপারে আমাদেরকে সংবাদ দেওয়া হয়েছে। আরও বলে, যে সব বিষয়ে আমাদেরকে আদেশ দেওয়া বা নিষেধ করা হয়েছে তা আমরা শুনলাম ও মানলাম। আর যেসব বিষয়ে শরী‘আত নিয়ে আসে নি সেসব বিষয়সমূহ সম্পর্কে তারা বলে, আমরা বিরত থাকলাম, আমাদের জন্য উচিৎ হবে না যে, আমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ওপর অগ্রগামী হই। আর আমাদের জন্য উচিৎ নয় যে, আমরা আল্লাহর দীনে এমন কিছু আবিষ্কার করি যা তার দীনের অংশ নয়। এ উভয় দলের কোন দলটি আল্লাহ ও তার রাসূলের মহব্বতকারী হিসেবে পরিগণিত হওয়ার হকদার এবং সম্মানরক্ষাকারী হওয়ার হকদার? নিঃসন্দেহে বলা যায়, সে দলটি উত্তম যারা বলে আমরা ঈমান এনেছি, বিশ্বাস করেছি, আমাদের নিকট যে সংবাদ এসেছে, তা মনে প্রাণে বিশ্বাস করেছি, আমাদের যা নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তা আমরা শুনেছি ও অনুসরণ করেছি এবং যা আমাদের আদেশ করা হয় নি তা থেকে আমরা আমাদের হাত গুটিয়ে নিলাম এবং তা হতে আমরা বিরত থাকলাম। আর তারা বলে, আমরা আল্লাহর শরী‘আতের মধ্যে এমন কিছু আবিষ্কার করতে অক্ষম যা শরী‘আত নয় এবং এমন কোনো বিদ‘আত করতে অক্ষম যা দীনের মধ্যে নেই। সন্দেহ নেই যে, এ ধরনের লোকেরাই তাদের নিজেদের মর্যাদা কি তা জানতে পেরেছে এবং স্রষ্টার মর্যাদা কি তা জানতে পেরেছে। প্রকৃতপক্ষে তারাই আল্লাহ ও তার রাসূলকে যথাযথ সম্মান দেখিয়েছে এবং তারাই আল্লাহ ও তার রাসূলের সত্যিকার মহব্বত ও ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে। তারা নয়, যারা আল্লাহর দীনে নতুন কিছু আবিষ্কার করেছে, যা দীনের মধ্যে বিশ্বাসে, কথায় ও আমলে কোথাও নেই।
তুমি আরও আশ্চর্য হবে, ঐ সম্প্রদায়ের লোকদের বিষয়ে যারা আল্লাহর রাসূলের কথা—«إياكم ومحدثات الأمور فإن كل محدثة بدعة، وكل بدعة ضلالة، وكل ضلالة في النار». “সাবধান! তোমরা নতুন আবিষ্কৃত বিষয়গুলো হতে বেঁচে থাকো; কারণ, প্রতিটি নতুন আবিষ্কৃত বিষয় বিদ‘আত। আর প্রত্যেক বিদ‘আত গোমরাহী, আর প্রত্যেক গোমরাহীর গন্তব্য জাহান্নাম”।[1] -এ মহান বাণীটি তারা ভালোভাবেই জানে। আর তারা এ কথাও জানে আল্লাহর রাসূলের বাণীতে «كل بدعة»“প্রত্যেক বিদ‘আত” কথাটি ব্যাপক, মৌলিক। এখানে ব্যাপকতার সবচেয়ে শক্তিশালী শব্দ«كل» কে ব্যবহার করা হয়েছে। আর এ শব্দটি যিনি উচ্চারণ করেছেন তিনি অবশ্যই এ শব্দের মর্মার্থ সম্পর্কে অবগত আছেন। কারণ, তিনি সমস্ত মাখলুকের তুলনায় অধিক ভাষাবিদ, মাখলুকের জন্য সবচেয়ে বেশি হিতাকাংখি মাখলুক। তিনি কখনোই এমন কথা উদ্দেশ্য ছাড়া বলতে পারেন না। ফলে তিনি যখন এ কথা «كل بدعة ضلالة» “প্রত্যেক বিদ‘আত গোমরাহী” বলেছেন, তখন তিনি অবশ্যই জানতেন তিনি কি বলছেন এবং তিনি যা বলছেন তার অর্থ কি। ফলে সার্বিক দিক দিয়ে উম্মতের পরিপূর্ণ কল্যাণের দিক বিবেচনা রেখেই তার থেকে এ কথাটি উচ্চারিত হয়েছে।
আর যখন কোনো বাণীতে উপরোক্ত তিনটি বিষয় অর্থাৎ পরিপূর্ণ কল্যাণকামিতা ও তার ইচ্ছা, পুর্ণাঙ্গ বর্ণনা ও তার সুস্পষ্টতা এবং পূর্ণাঙ্গ ইলম ও জ্ঞান, এ তিনটি বিষয় অন্তর্ভুক্ত হওয়া স্পষ্ট হলো, তখন তা থেকে প্রমাণিত হলো যে, সে কথার যে স্বাভাবিক অর্থ বুঝা যায় তা অবশ্যই বক্তার উদ্দেশ্য। আর সেটাই তার মূল অর্থ। সুতরাং হাদীসে এমন একটি ব্যাপক ও সামগ্রিক কথা (সকল প্রকার বিদ‘আত) এটা বলার পরও বিদ‘আতকে তিন প্রকার বা পাঁচ প্রকার ভাগ করা কীভাবে শুদ্ধ হতে পারে? না কখনই না, এভাবে ভাগ করা কোনো ক্রমেই শুদ্ধ নয়। যে সব আলেম এ কথা দাবি করে যে বিদ‘আতে হাসানাহ নামে এক প্রকার বিদ‘আত রয়েছে, তা দুই অবস্থার কোনো একটি থেকে মুক্ত নয়:
এক- মূলতঃ তা বিদ‘আত নয়, সে সেটাকে বিদ‘আত ধারণা করেছে।
দুই- অথবা তা বিদ‘আত। নিন্দনীয় বা খারাপ। তবে তার খারাবী সম্পর্কে তারা অবহিত নয়। সুতরাং যে কোনো ব্যক্তিই এ কথা বলে, ‘এক প্রকার বিদ‘আত আছে বিদ‘আতে হাসানা’ তার উত্তর উপরের কথাই। এ কথার ভিত্তিতেই বলা যায় যে, যারা বিদ‘আতী, তাদের জন্য বিদ‘আতকে হাসানা বলে চালিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমাদের হাতে রয়েছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী- «كل بدعة ضلالة» “প্রত্যেক বিদ‘আত গোমরাহী” নামক ধারালো তলোয়ার বা উন্মুক্ত অসি। এটি এমন একটি তলোয়ার যা নবুওয়াত ও রিসালাতের কারখানায় নির্মাণ করা হয়েছে। কোনো সাধারণ কারখানায় তৈরি করা হয় নি। নবুওয়াতের কারখানায় তৈরি করা এ সুন্দর ও অভিনব তলোয়ার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ হাতে তৈরি করেছেন। যার হাতে এ ধরনের ধারালো তলোয়ার থাকবে, বিদ‘আতীদের দ্বারা- কোনো বিদ‘আতকে ‘তা বিদ‘আতে হাসানা’ এটা বলে তার মুকাবিলা করা সম্ভম হবে না। কারণ সে তখনই বলতে সক্ষম হবে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো বলেছেন, «كل بدعة ضلالة»“প্রত্যেক বিদ‘আতই গোমরাহী”।
তবে তোমাদের অন্তরে একটি পোকা রয়েছে বলে আমি অনুভব করি যে বলে, আমীরুল মুমিনীন উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর কথার কী উত্তর দেবেন? যখন তিনি উবাই ইবন কা‘ব ও তামীম আদ-দারী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমাকে নির্দেশ দেন যে, রমযান মাসে তারা যেন মানুষের সালাতের ইমামতি করেন। তারপর তিনি বের হয়ে দেখলেন মানুষ তাদের ইমামের পিছনে একত্র। তখন তিনি বললেন,
«نعمت البدعة هذه والتي ينامون عنها أفضل من التي يقومون»
“এটি কতই না উত্তম বিদ‘আত, তবে যে সালাত থেকে তারা ঘুমিয়ে থাকে (অর্থাৎ শেষ রাতের সালাত), তা সেটা থেকে উত্তম যার কিয়াম তারা করে থাকে। (অর্থাৎ প্রথম রাতের সালাত)”[1]
এ প্রশ্নের উত্তর দুইভাবে দেওয়া যেতে পারে:
এক- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথাকে কোনো মানুষের কথা দ্বারা মুকাবিলা করা জায়েয নেই। এমনকি আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু, যিনি নবীদের পর এ উম্মতের সবচেয়ে উত্তম ব্যক্তি, উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু, যিনি নবীদের পর এ উম্মতের দ্বিতীয় ব্যক্তি, উসমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু, যিনি এ উম্মতের তৃতীয় ব্যক্তি এবং আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু, যিনি নবীদের পর এ উম্মতের চতুর্থ ব্যক্তি প্রমুখদের কথা দ্বারাও রাসূলের কথার মুকাবিলা করা যাবে না। এদের ছাড়া অন্য কারোও কথা দ্বারা মুকাবিলা করার প্রশ্নই আসে না। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ فَلۡيَحۡذَرِ ٱلَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنۡ أَمۡرِهِۦٓ أَن تُصِيبَهُمۡ فِتۡنَةٌ أَوۡ يُصِيبَهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمٌ ٦٣﴾ [النور : ٦٣]
“অতএব যারা তাঁর নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তারা যেন তাদের ওপর বিপর্যয় নেমে আসা অথবা যন্ত্রণাদায়ক আযাব পৌঁছার ভয় করে”। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৬৩]
(আয়াতের ব্যাখ্যায়) ইমাম আহমদ রহ, বলেন, তোমরা কি জান ফিতনা কী? ফিতনা হলো শির্ক। হতে পারে যখন কোনো ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কোনো কথা প্রতাখ্যান করে, তখন তার অন্তরে কিছুটা হলেও বক্রতা দেখা দেয়। ফলে সে ধ্বংস হয়।
আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন,
«يوشك أن تنزل عليكم حجارة من السماء أقول قال رسول الله صلى الله عليه وسلّم وتقولون قال أبو بكر وعمر».
“আমি আশঙ্কা করছি যে, তোমাদের ওপর আসমান থেকে পাথর বর্ষিত হবে। আমি তোমাদের বলি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আর তোমরা বল আবু বকর ও উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেছেন”।
দুই- আমরা এ কথা নিশ্চিত করে বলতে পারি যে, আমীরুল মুমিনীন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আল্লাহ তা‘আলা ও তার রাসূলের কথার সম্মান দেওয়ার ক্ষেত্রে অত্যন্ত দৃঢ় ও কঠোর। আল্লাহর নির্দেশের সামনে মাথা নত করা ও মেনে নেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি একজন সু-প্রসিদ্ধ ব্যক্তি। এমনকি তাকে আল্লাহর কথার সামনে অবনতকারী হিসেবে আখ্যায়িত করা হত।
ঐ মহিলার ঘটনা (যদি তা বিশুদ্ধ হয়ে থাকে) যে মহিলা মোহরানা নির্ধারণের ক্ষেত্রে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুর বিরোধিতা করেছিল তা অধিকাংশের নিকট অজ্ঞাত নয়। ঐ ঘটনায় মহিলা আল্লাহ তা‘আলার বাণী— ﴿وَكَيۡفَ تَأۡخُذُونَهُۥ وَقَدۡ أَفۡضَىٰ بَعۡضُكُمۡ إِلَىٰ بَعۡضٖ وَأَخَذۡنَ مِنكُم مِّيثَٰقًا غَلِيظٗا ٢١﴾ [النساء : ٢١] “আর তোমরা তা কীভাবে নেবে অথচ তোমরা একে অপরের সাথে একান্তে মিলিত হয়েছ; আর তারা তোমাদের থেকে নিয়েছিল দৃঢ় অঙ্গীকার?” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ২১] দ্বারা উমার রাদিয়াল্লাহ ‘আনহুর বিরোধিতা করেন। অতঃপর উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু মোহরানা নির্ধারণের সিদ্ধান্ত থেকে বিরত থাকেন। তবে এ ঘটনার বিশুদ্ধতা সম্পর্কে প্রশ্ন রয়েছে। সুতরাং উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তিনি যেই হোক না কেন তার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথার বিরোধিতা করা এবং কোনো একটি বিদ‘আতকে যে বিদ‘আত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম «كل بدعة ضلالة» “প্রত্যেক বিদ‘আত গোমরাহী” বলেছেন «نعمة البدعة» “কত সুন্দর বিদ‘আত” বলা কোনো ক্রমেই সম্ভব নয়। বরং উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু যে বিষয়টিকে কেন্দ্র করে «نعمة البدعة» “কত সুন্দর বিদ‘আত” বলেছেন, তার কথাকে এমন বিদ‘আতের ওপর প্রয়োগ করতে হবে যেটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী «كل بدعة ضلالة» “প্রত্যেক বিদ‘আত গোমরাহী” -এর উদ্দেশ্যের অন্তর্ভুক্ত হবে না। উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তার কথা «نعمة البدعة هذه» “কত সুন্দর বিদ‘আত” দ্বারা বিক্ষিপ্ত লোকগুলো এক ইমামের পেছনে একত্র করার দিকে ইঙ্গিত করেছেন। অন্যথায় রমযানে কিয়ামুল-লাইল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগ থেকেই ছিল। সহীহ বুখারী ও মুসলিম শরীফে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে হাদীস বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষের সাথে তিন রাত কিয়াম করেন। চতুর্থ রাত্রিতে তিনি দেরি করে বের হন এবং বলেন,
«إني خشيت أن تفرض عليكم فتعجزوا عنها»
“আমি আশঙ্কা করেছি যে তোমাদের ওপর ফরয করে দেবে ফলে তা তোমরা আদায় করতে অক্ষম হবে”।[2] রমযান মাসে কিয়ামুল-লাইল করা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামেরই সুন্নাত। আর উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাকে বিদ‘আত বলে নাম রেখেছেন এ হিসেবে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কিয়াম ছেড়ে দিয়েছেন লোকেরা বিক্ষিপ্ত হয়ে গিয়েছেন। কেউ কেউ মসজিদে একা কিয়াম করতেন। আবার কেউ কেউ কিয়াম করতেন তার সাথে একজন মানুষ থাকতেন। আবার কেউ কেউ কিয়াম করতেন তার সাথে দুইজন বা তিনজন মানুষ থাকত। আবার কারো সাথে এক জামা‘আত থাকত। আমীরুল মুমিনীন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তার সঠিক ও নির্ভুল মতামত দ্বারা তাদের সবাইকে একজন ইমামের পেছনে একত্র করা ভালো মনে করলেন। সুতরাং তার এ কর্মটি ইতঃপূর্বে লোকেরা বিক্ষিপ্ত হওয়ার দিক বিবেচনায় বিদ‘আত ছিল। সুতরাং এটি একটি তুলনামুলক ও শাব্দিক বিদ‘আত, এটি নব আবিষ্কৃত কোনো বিদ‘আত নয়, যাকে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আবিষ্কার করেছেন। কারণ, এ সুন্নাতটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে ছিল। এ কারণেই কিয়ামুল-লাইল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগের সুন্নাত। তবে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এর যুগ পর্যন্ত এ সুন্নতটি পরিত্যাক্ত ছিল আর উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তা আবার চালু করলেন। এ বিষয়টি স্পষ্ট হওয়ার পর বিদ‘আতীদের জন্য উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কথা থেকে, তারা যে বিদ‘আতকে ভালো ও সুন্দর মনে করে সেটার সপক্ষে, কোনো দলীল-প্রমাণ বের করার পথ খুঁজে পাওয়া সম্ভব হবে না।
>[2] বর্ণনায় সহীহ বুখারী তারাবীর সালাত অধ্যায়, পরিচ্ছেদ- রমযান মাসে কিয়ামুল-লাইল করার ফযীলত, হাদীস নং ২০১০; সহীহ মুসলিম, মুসাফিরের সালাত অধ্যায়, পরিচ্ছেদ- রমযান মাসে কিয়ামুল-লাইল করার প্রতি উৎসাহ প্রদান প্রসেঙ্গ। হাদীস নং ৭৬১
- কেউ কেউ এ বলে প্রশ্ন করতে পারে যে, এখানে কতক বিষয় আছে যা নব আবিষ্কৃত অথচ মুসলিমরা তা গ্রহণ করেছে এবং তার ওপর তারা আমল করছে অথচ এগুলো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে উপস্থিত ছিল না। যেমন, মাদ্রাসা নির্মাণ, কিতাব লিপিবদ্ধ করা ইত্যাদি। এ ধরনের বিদ‘আতকে মুসলিমরা বিদ‘আত বলে আখ্যায়িত করে না বরং তারা এ ধরনের কর্মকে ভালো মনে করেন, তদনুযায়ী আমল করেন এবং তারা মনে করেন এগুলো ভালো কর্ম ও গুরুত্বপূর্ণ কর্ম। তাহলে কিভাবে এ কর্মসমূহ যা মুসলিমদের মাঝে ইজমার রূপ লাভ করছে এবং মুসলিমদের নেতা ও নবী এবং আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ হতে যিনি নবী তার কথা «كل بدعة ضلالة» “প্রত্যেক বিদ‘আত গোমরাহী” এর মাঝে সামঞ্জস্য সাধন করবে?
উত্তর:
বাস্তবে এগুলো কোনো বিদ‘আত নয়; বরং এগুলো হলো শরী‘আতের ওপর আমল করা ও শরী‘আত সম্পর্কে জানার মাধ্যম। আর যেগুলো মাধ্যম বা অসীলা হয় সেগুলো সময় ও স্থানের ব্যবধানে প্রার্থক্য হয়ে থাকে। আর স্বীকৃত নিয়ম হলো, মাধ্যমগুলো বিধান আর উদ্দ্যেশের বিধান একই হয়ে থাকে। বৈধ বিধানের মাধ্যম বৈধ। আর যা অবৈধ তার মাধ্যমও অবৈধ; বরং হারাম কর্মের মাধ্যম হারাম এবং ভালো কর্ম যদি খারাপ কর্মের মাধ্যম হয়ে থাকে তখন তাও হারাম হয়ে যায়। আল্লাহর বাণীর দিকে মনোযোগ দাও। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلَا تَسُبُّواْ ٱلَّذِينَ يَدۡعُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ فَيَسُبُّواْ ٱللَّهَ عَدۡوَۢا بِغَيۡرِ عِلۡمٖۗ ١٠٨﴾ [الانعام: ١٠٨]
“আর তোমরা তাদেরকে গালমন্দ করো না, আল্লাহ ছাড়া যাদেরকে তারা ডাকে, ফলে তারা গালমন্দ করবে আল্লাহকে, শত্রুতা পোষণ করে অজ্ঞতাবশত”। [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১০৮]
মুশরিকদের ইলাহদের গালি দেওয়া শত্রুতা নয় বরং তা সত্য ও বাস্তব সম্মত; কিন্তু রাব্বুল আলামীনকে গালি দেওয়া অসঙ্গত, অবাস্তব, সীমালঙ্ঘন ও অন্যায়। কিন্তু মুশরিকদের ইলাহদের গালি দেওয়া ভালো কাজ হলেও যেহেতু তা আল্লাহকে গালি দেওয়ার কারণ বা অসীলা হয়ে থাকে তাই তা নিষিদ্ধ ও হারাম।
আমি এখানে মাধ্যম ও উদ্দেশ্যের বিধান এক হওয়ার দলীল টেনে ধরলাম। মাদ্রাসাসমূহ, ইলম সংকলন ও কিতাব লিখন ইত্যাদি যদিও যদি রাসূলের যুগে এ পদ্ধতিতে না থাকার কারণে তা বিদ‘আত কিন্তু এ সব কোনো কিছুই উদ্দেশ্য নয়। এগুলো সবই হলো মাধ্যম বা অসীলা। আর মাধ্যমের বিধান ও উদ্দেশ্যের বিধান এক। এ কারণেই যদি কোনো ব্যক্তি কোন হারাম শিক্ষা দেওয়ার জন্য একটি মাদ্রাসাহ নির্মাণ বা চালু করে তখন তার মাদ্রাসাহ নির্মাণ করা বা চালু করা হারাম বলে গণ্য হবে। আর যদি বৈধ শিক্ষা শেখানোর উদ্দেশ্যে হয়, তা হলে তার নির্মাণ বা চালু করা হবে বৈধ হবে।
- আর যদি কেউ বলে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা «من سن في الإسلام سنة حسنة فله أجرها وأجر من عمل بها إلى يوم القيامة» “যে ব্যক্তি ইসলামের মধ্যে একটি ভালো সুন্নত প্রচলন করল তার জন্য কিয়ামত পর্যন্ত তার আমলের সাওয়াব এবং যে ব্যক্তি সে অনুযায়ী আমল করল তার সাওয়াব মিলবে”।[1] এর কি উত্তর দেবে?
এ প্রশ্নের উত্তর হলো, যিনি «من سن في الإسلام سنة حسنة» “যে ব্যক্তি ইসলামের মধ্যে একটি ভালো সুন্নত প্রচলন করল” এ কথা তিনিই বলেছেন তিনি স্বয়ং «كل بدعة ضلالة» “প্রত্যেক বিদ‘আত গোমরাহী” কথাটি বলেছেন। একজন মহা সত্যবাদী দ্বারা এমন কথা বলা কখনো সম্ভব নয় যে, তার একটি কথা অপর কথাকে মিথ্যা সাব্যস্ত করবে। রাসূলের কথায় কোনো প্রকার বৈপরীত্য থাকা কখনো সম্ভব নয়। যে ব্যক্তি এ ধারণা করে যে, আল্লাহর কথা ও তার রাসূলের কথার মধ্যে বৈপরীত্য রয়েছে, তাকে অবশ্যই পূণরায় তার দৃষ্টি ঘুরিয়ে দেখতে হবে এবং আবার ভেবে দেখতে হবে। তার এ ধারণা হয়তো তার ঈমানী দুর্বলতার কারণে হতে পারে বা অলসতার কারণে হতে পারে। আল্লাহ তা‘আলার কথা বা তার রাসূলের কথার মধ্যে বৈপরীত্য বা কোনো প্রকার দুর্বলতা পাওয়া কখনোই সম্ভব নয়। এ কথা স্পষ্ট হওয়ার পর উভয় হাদীস তথা «كل بدعة ضلالة» “প্রত্যেক বিদ‘আত গোমরাহী” এবং «من سن في الإسلام سنة حسنة» “যে ব্যক্তি ইসলামের মধ্যে একটি ভালো সুন্নত প্রচলন করল” বৈপরীত্ব না থাকা সুস্পষ্ট। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, «من سن في الإسلام سنة حسنة» “যে ব্যক্তি ইসলামের মধ্যে একটি ভালো সুন্নত প্রচলন করল” আর বিদ‘আত তো ইসলাম থেকে নয়। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, «حسنة» হাসানাহ’। বিদ‘আত তো কখনো হাসানাহ হতে পারে না। আর তিনি السن ‘চালু করা’ এবং التبديع ‘আবিষ্কার করা’ উভয়ের মধ্যে প্রার্থক্য করেছেন।
এখানে আরও একটি উত্তর রয়েছে, আর তা হলো, এখানে «من سن» অর্থ, যে ব্যক্তি কোনো সুন্নাতকে জীবিত করল, অর্থাৎ সুন্নতটি পূর্বে ছিল পরবর্তীতে তা বিলীন হওয়ার পর আবার তা চালু করল। এ অর্থ অনুযায়ী একটি সুন্নত চালু করার অর্থ সূন্নাতটি পূর্বেই ছিল তা পরিত্যক্ত হওয়ার কারণে তা আবার চালু করা। সুতরাং, চালু করা মানে নতুন আবিষ্কার নয়। এখানে এ প্রশ্নের আরো একটি উত্তর রয়েছে, যে উত্তরটি হাদীস অবতীর্ণের কারণ থেকে প্রতীয়মান। আর তা হলো, একদল লোক রাসূলের নিকট আসল। তাদের আর্থিক অবস্থা অত্যন্ত খারাপ ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের জন্য দান করতে আহ্বান করলেন, তখন একজন আনসারী লোক আসল, তার হাতে একটি রূপার থলে ছিল যার ওজনে তার হাত খুব ভারী মনে হলো, সে থলেটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে রাখল। তা দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেহারা আনন্দ ও খুশিতে চমকিতে লাগলো এবং তিনি বললেন, «من سن في الإسلام سنة حسنة فله أجرها وأجر من عمل بها إلى يوم القيامة» “যে ব্যক্তি ইসলামের মধ্যে একটি ভালো সুন্নত প্রচলন করল তার জন্য কিয়ামত পর্যন্ত তার আমলের সাওয়াব এবং যে ব্যক্তি সে অনুযায়ী আমল করল তার সাওয়াব মিলবে”।[2] সুতরাং এখানে «السن» অর্থ, আমল বাস্তবায়ন করা আবিষ্কার করা নয়। ফলে «من سن في الإسلام سنة حسنة» “যে ব্যক্তি ইসলামের মধ্যে একটি ভালো সুন্নত প্রচলন করল” এর অর্থ হলো, কোন আমল বাস্তবায়ন করা আবিষ্কার করা নয়। কারণ, আবিষ্কার করা নিষিদ্ধ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, «كل بدعة ضلالة» “প্রত্যেক বিদ‘আত গোমরাহী”।
>[2][2] বর্ণনায় সহীহ মুসলিম, যাকাত অধ্যায়, হাদীস নং ১০১৭
হে মুসলিম ভাইয়েরা! একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা তোমাদের অবশ্যই জানতে হবে। আর তা হলো, যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো আমল শরী‘আতের ছয়টি বিষয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত সে আমলের মধ্যে রাসূলের অনুকরণ ও অনুসরণ করা বাস্তবায়িত হবে না।
এক- “কারণে মিল থাকা” সুতরাং আল্লাহর ইবাদাত যদি এমন কোনো কারণে করা হয় যে কারণটি শরী‘আত অনুমোদিত নয়। এ ধরনের ইবাদাত হবে বিদ‘আত এবং তার আমলটি হবে প্রত্যাখ্যাত। যেমন, কতক লোক রজবের সাতাশ তারিখ রাতে ইবাদাত-বন্দেগী ও সালাত আদায় করে। তাদের দলীল হলো: এ রাতে আল্লাহ তা‘আলা তার রাসূলকে আসমানে তুলে নিয়ে যান এবং এ রাতে রাসূলের মি‘রাজ সংঘটিত হয়। তাহাজ্জুদ যদিও গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত কিন্তু যখন তা এ কারণের সাথে সম্পৃক্ত হলো তখনই তা শরী‘আত অনুমোদিত না হয়ে বিদ‘আতে পরিণত হলো। কারণ, এ ইবাদতটিকে এমন একটি উপলক্ষকে সামনে রেখে সে করেছে, যা শরী‘আতে উপলক্ষ্য হিসেবে প্রমাণিত নয়। এ বিষয়টি (ইবাদতের কারণটি শরী‘আত সম্মত হওয়া) খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ দ্বারা অনেক আমল যেগুলোকে সুন্নাত মনে করা হয় অথচ তা সুন্নাত নয় সেগুলো বিদ‘আত হিসেবে চিহ্নিত হবে।
দুই- “প্রকারের দিকে থেকে মিল থাকা” সুতরাং ইবাদাতটি প্রকারের দিক থেকে শরী‘আত অনুযায়ী হতে হবে। তাই যদি কোনো লোক আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় এমন কোনো ইবাদাত করে শরীয়তে যে প্রকারের ইবাদাত পাওয়া যায় না, তা অগ্রহণযোগ্য হবে। যেমন,
কোনো ব্যক্তি ঘোড়া দিয়ে কুরবানী করলে তার কুরবানী সহীহ হবে না। কারণ, সে কুরবানীর পশুর প্রকার নির্ধারণ বিষয়ে শরী‘আতের বিরোধিতা করেছে। শরী‘আত অনুমোদিত চতুষ্পদ জন্তু গরু, ছাগল ও উট সে কুরবানী করে নি।
তিন- “পরিমাণে মিল থাকা”। সুতরাং যদি কোনো ব্যক্তি চায় যে, কোনো এক ওয়াক্ত ফরয সালাত বাড়াবে আমরা তাকে বলব, এটি একটি নব আবিষ্কৃত বিদ‘আত, এটি অগ্রহণযোগ্য। কারণ, তা পরিমাণের ক্ষেত্রে শরী‘আতের নির্ধারিত সংখ্যার সম্পূর্ণ বিরোধী। যদি বিষয়টি এমনই হয় তাহলে যদি কোনো ব্যক্তি যোহরের সালাত চার রাকা‘আতের জায়গায় পাঁচ রাকা‘আত পড়ে তাহলে তার সালাত সবার ঐকমত্যে বাতিল হওয়া, তার সালাত শুদ্ধ না হওয়া সহজেই অনুমেয়।
চার- “ধরন-পদ্ধতিতে মিল থাকা”। সুতরাং যদি কোনো ব্যক্তি অযু করতে গিয়ে শুরুতে পা ধোয়া আরম্ভ করল, তারপর মাথা মাসেহ করল, তারপর দুই হাত ধৌত করল এবং তারপর চেহারা ধৌত করল, আমরা বলব, তার অযু অবশ্যই বাতিল। কারণ, তার অযু ধরন ও পদ্ধতিগত দিক দিয়ে শরী‘আত অনুমোদিত পদ্ধতির পরিপন্থী।
পাঁচ- “সময়-কালের সাথে মিল থাকা”। সুতরাং যদি কোনো ব্যক্তি যিলহজ মাসের শুরুতে কুরবানী করে তাহলে তার কুরবানী শুদ্ধ হবে না। কারণ, তার কুরবানী শরী‘আত কর্তৃক নির্ধারিত সময়ের বিপরীত হয়েছে। আমি শুনেছি অনেক মানুষ রমযান মাসে ছাগল জবেহ করে। জবেহ করার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করাই তার উদ্দেশ্য। কিন্তু তার এ আমল এ পদ্ধতিতে সম্পূর্ণ বিদ‘আত। কারণ, জবেহ করার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ কেবল কুরবানী, হাদী বা আকীকার মাধ্যমেই সম্ভব। তাই রমযান মাসে জবেহ করা দ্বারা কুরবানীর ঈদের দিন জবেহ করার মত ছাওয়াব পাওয়া যাবে এ ধরনের বিশ্বাস করা বা সাওয়াবের আশা রাখা সম্পূর্ণ বিদ‘আত। তবে মাংস খাওয়ার উদ্দেশ্যে রমযান মাসে জবেহ করা সম্পূর্ণ বৈধ।
ছয়- “স্থানের সাথে মিল থাকা”। সুতরাং যদি কোনো ব্যক্তি মসজিদের বাইরে ই‘তিকাফ করে, তার ই‘তিকাফ সহীহ হবে না। কারণ, ই‘তিকাফ শুধু মসজিদেই হয়ে থাকে। যদি কোনো মহিলা বলে আমি ঘরে সালাত আদায়ের স্থানে ই‘তিকাফ করব, তার ই‘তিকাফ শুদ্ধ হবে না। কারণ, ই‘তিকাফের স্থানের নির্ধারণের ক্ষেত্রে শরী‘আত পরিপন্থী কাজ করেছে।
এর আরও দৃষ্টান্ত- কোনো ব্যক্তি তাওয়াফ করতে গিয়ে দেখে মাতাফে জায়গা নেই। তার আশপাশে মানুষের ভিড়। তখন সে নিরুপায় হয়ে মসজিদের চার পাশে তাওয়াফ করা আরম্ভ করল। তার তাওয়াফ করা কোনো ক্রমেই শুদ্ধ হবে না। কারণ, তাওয়াফের স্থান হলো আল্লাহর ঘর। আল্লাহ তা‘আলা ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে বলেন,
﴿وَطَهِّرۡ بَيۡتِيَ لِلطَّآئِفِينَ وَٱلۡقَآئِمِينَ وَٱلرُّكَّعِ ٱلسُّجُودِ ٢٦﴾ [الحج : ٢٦]
“এবং আমার ঘরকে পাক সাফ রাখবে তাওয়াফকারী, রুকূ-সিজদা ও দাঁড়িয়ে সালাত আদায়কারীর জন্য’’।[1]
>সুতরং কোনো ইবাদত ততক্ষণ পর্যন্ত নেক আমল বা আমলে সালেহ বলে গণ্য হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তার মধ্যে দুটি শর্ত না পাওয়া যাবে:
এক- ইখলাস।
দুই- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুকরণ।
আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুকরণ উল্লিখিত ছয়টি বিষয় না পাওয়া যাওয়া পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয় না।
আমি ঐ সব লোকদের বলব, তোমরা যারা বিদ‘আতে লিপ্ত হয়েছ অথচ তোমাদের উদ্দেশ্য ভালো এবং তোমরা কল্যাণ চাও, আল্লাহর কসম করে বলছি, আমি তোমাদের জন্য সালাফে সালেহীনের পথ ও পদ্ধতির চেয়ে উত্তম কোনো পথ ও পদ্ধতি জানি না।
হে আমার ভাইয়েরা! তোমরা আল্লাহর রাসূলের সুন্নাতকে মজবুত করে আঁকড়ে ধর। তোমরা পূর্বসূরিদের সুন্নাতের অনুসরণ কর। তারা যে পথের ওপর ছিল তোমরাও সে পথের ওপর থাক। দেখো তা তোমাদের কোনো প্রকার ক্ষতি করতে পারে কিনা?
আমি বলি, আর আমি আল্লাহর নিকট এমন কথা বলা থেকে আশ্রয় চাই যে বিষয়ে আমার কোনো ইলম নেই- ঐ সব লোক যারা বিদ‘আতের প্রতি আসক্ত তাদের অধিকাংশকে তুমি দেখতে পাবে যে, তারা এমন সব বাস্তবায়ণ করতে অনীহা প্রকাশ করে থাকে যা শরী‘আত হিসেবে প্রমাণিত এবং যা সুন্নাত হিসেবে সাব্যস্ত। অতঃপর যখন তারা বিদ‘আত কর্ম পালন শেষ করে তখন তারা সুসাব্যস্ত সুন্নাত পালন করতে অপারগ হয়ে পড়ে ।
আর এ গুলো সবই হলো মানবাত্মার ওপর বিদ‘আতের কু-প্রভাব ও ক্ষতিকর দিক। মানবাত্মার ওপর বিদ‘আতের কু-প্রভাব খুবই প্রকট এবং তার ক্ষতিসমূহ খুবই মারাত্মক। যে কোনো সম্প্রদায়ের লোকেরা আল্লাহর দীনের মধ্যে কোনো একটি বিদ‘আত আবিষ্কার করে, সে সমপরিমাণ বা তার চেয়ে অধিক পরিমাণ সুন্নাতকে ধ্বংস করে। যেমনটি এ ধরনের কথা বলেছেন অনেক পূর্বসূরি আহলে ইলমগণ।
কিন্তু যখন একজন মানুষ এ কথা অনুভব করবে যে, সে কেবল একজন অনুসারী, সে শরী‘আত প্রবর্তনকারী নয়, এ দ্বারা তার মধ্যে আল্লাহর ভয়, আল্লাহর জন্য অবনত ও অনুগত হওয়া, আল্লাহর বান্দা হওয়ার সৌভাগ্য লাভ হবে এবং মুত্তাকীদের ইমাম, সমস্ত রাসূলদের সরদার ও সমগ্র জগতের রবের রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিপূর্ণ ইত্তেবা করার যোগ্যতা অর্জন করবে।