লগইন করুন
উত্তর: বল, তাওহীদের কালিমাটি শুধু একটি বাক্যই নয় যা বিশ্বাস করা, তার দাবি বাস্তবায়ন ও তা ভঙ্গকারী বিষয়সমূহ থেকে বিরত থাকা ছাড়া কেবল মুখে বলা হবে। বরং তার জন্য সাতটি শর্ত রয়েছে। আলেমগণ শর‘য়ী দলীলসমূহ অনুসন্ধান করে বের করেছেন। অতঃপর কুরআন ও সুন্নাহ প্রমাণসমূহ দ্বারা প্রমাণিত করে তা লিপিবদ্ধ করেছেন। আর সেগুলো হচ্ছে—
১- ইলম: নাকোচ করা ও সাব্যস্ত করাসহ কালিমার অর্থ জানা। এভাবে জানা যে, আল্লাহ এক। তার কোনো শরীক নেই। তিনিই ইবাদতের হকদার। আরো জানা যে, কালিমাটি আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুর ইলাহিয়াতকে নাকোচ করার ওপর প্রমাণ। সেই সঙ্গে কালিমাটির দাবি, তার আবশ্যিক বিষয়সমূহ, তা ভঙ্গকারী বিষয়গুলো জানা, যা অজ্ঞতার বিপরীত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
فَٱعۡلَمۡ أَنَّهُۥ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا ٱللَّه [محمد : ١٩]
“তুমি জেনে নাও যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই”। [সূরা মুহাম্মাদ, আয়াত: ১৯] তিনি আরো বলেন,
إِلَّا مَن شَهِدَ بِٱلۡحَقِّ وَهُمۡ يَعۡلَمُونَ [الزخرف: ٨٦]
“তবে যে সত্যের সাক্ষ্য দিল এমতাবস্থায় যে তারা জানে”। [সূরা যুখরূফ, আয়াত: ৮৬]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে মারা গেল এমতাবস্থায় যে, সে জানে আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে”। (সহীহ মুসলিম)
২- ইয়াকীন: আর সেটি হচ্ছে, তার প্রতি অকাট্য বিশ্বাস, যা সন্দেহ ও সংশয়ের পরিপন্থী। অর্থাৎ, অন্তরে গেঁথে যাওয়া ও সাব্যস্ত হওয়া। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
إِنَّمَا ٱلۡمُؤۡمِنُونَ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ ثُمَّ لَمۡ يَرۡتَابُواْ وَجَٰهَدُواْ بِأَمۡوَٰلِهِمۡ وَأَنفُسِهِمۡ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِۚ أُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلصَّٰدِقُونَ [الحجرات: ١٥]
“মুমিন কেবল তাঁরাই, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান এনেছে, তারপর সন্দেহ পোষণ করেনি। আর নিজেদের সম্পদ ও নিজদের জীবন দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করেছে। এরাই সত্যনিষ্ঠ”। [সূরা হুজুরাত, আয়াত: ২৫] আর রাসূলুল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি সাক্ষ্য দিল যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল। এ দু’টি বিষয়ে কোন প্রকার সন্দেহ না করে যে বান্দা আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করবে, সে জান্নাতে যাবে। (সহীহ মুসলিম)
৩- ইখলাস: এমন ইখলাস বা একনিষ্ঠতা, যা শির্কের সম্পূর্ণ বিপরীত। আর এটি লৌকিকতা বা শির্কের যে কোন কলুষ থেকে এবাদতকে সম্পূর্ণ রূপে মুক্ত ও পবিত্র রাখার মাধ্যমেই বাস্তবায়ন করা সম্ভব। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
أَلَا لِلَّهِ ٱلدِّينُ ٱلۡخَالِصُۚ [الزمر: ٣]
“জেনে রেখ আল্লাহর জন্যই বিশুদ্ধ ইবাদত”। [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৩] তিনি আরো বলেন,
وَمَآ أُمِرُوٓاْ إِلَّا لِيَعۡبُدُواْ ٱللَّهَ مُخۡلِصِينَ لَهُ ٱلدِّينَ حُنَفَآءَ وَيُقِيمُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَيُؤۡتُواْ ٱلزَّكَوٰةَۚ وَذَٰلِكَ دِينُ ٱلۡقَيِّمَةِ [البينة: ٥]
“আর তাদেরকে কেবল এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, তারা যেন আল্লাহর ইবাদত করে তার জন্যে দীনকে একনিষ্ঠ করে”। [সূরা আল-বাইয়্যিনাহ, আয়াত: ৫]
আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “কিয়ামতের দিন আমার সুপারিশ দ্বারা ঐ ব্যক্তি সবচেয়ে বেশী ভাগ্যবান হবে, যে তার নিজের অন্তর বা আত্মা থেকে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে”। হাদীসটি বর্ণনা করেছেন সহীহ বুখারী।
৪- ভালোবাসা: অর্থাৎ এই কালিমাকে এবং তা যার ওপর প্রমাণ তার প্রতি ভালোবাসা, তা দ্বারা আনন্দিত হওয়া। আর কালিমার ধারকদের ভালোবাসা ও তাদের সাথে সম্পর্ক কায়েম করা এবং তার বিপরীত বস্তুকে ঘৃণা করা ও কাফিরদের থেকে মুক্ত থাকা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَمِنَ ٱلنَّاسِ مَن يَتَّخِذُ مِن دُونِ ٱللَّهِ أَندَادٗا يُحِبُّونَهُمۡ كَحُبِّ ٱللَّهِۖ وَٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَشَدُّ حُبّٗا لِّلَّهِۗ [البقرة: ١٦٥]
“আর মানুষদের মধ্যে এমনও আছে, যারা আল্লাহ ছাড়া অন্যকে আল্লাহর সম্যকরূপে গ্রহণ করে, তাদেরকে আল্লাহর ভালোবাসার মতো ভালোবাসে। আর যারা ঈমান এনেছে, তারা আল্লাহর জন্য ভালোবাসায় দৃঢ়তর”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৬৫] আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তিনটি স্বভাব যার মধ্যে থাকবে সে অবশ্যই ঈমানের স্বাদ পাবে। আল্লাহ ও তার রাসূল তার নিকট বেশী প্রিয় হবে তাদের ভিন্ন অন্যান্য বস্তু হতে এবং একমাত্র আল্লাহর জন্যই মানুষকে ভালোবাসবে এবং সে কুফরিতে ফিরে যেতে অপছন্দ করবে যেমন সে অপছন্দ করে আগুনে নিক্ষিপ্ত হতে”। (সহীহ মুসলিম)
৫- সত্যবাদিতা, যা মিথ্যার পরিপন্থী: অন্তর ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গসমূহ মুখে তাওহীদের যে কালিমা উচ্চারণ করেছে তার সাথে একাত্মতা পোষণ করার মাধ্যমে তা হতে পারে। সুতরাং, মুখ যা বলছে, অন্তর ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গসমূহ সেটাকে সত্যায়ন করবে। ফলে বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ আনুগত্যের মাধ্যমে তা পালন করবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
فَلَيَعۡلَمَنَّ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ صَدَقُواْ وَلَيَعۡلَمَنَّ ٱلۡكَٰذِبِينَ [العنكبوت: ٣]
“ফলে আল্লাহ অবশ্যই জেনে নিবেন, কারা সত্য বলে এবং অবশ্যই তিনি জেনে নেবেন মিথ্যাবাদীদেরকে”। [সূরা আল-আনকাবুত, আয়াত: ৩]
তিনি আরো বলেন,
وَٱلَّذِي جَآءَ بِٱلصِّدۡقِ وَصَدَّقَ بِهِۦٓ أُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُتَّقُونَ [الزمر: ٣٣]
“আর যিনি সত্য নিয়ে এসেছেন এবং যে তা সত্য বলে মেনে নিয়েছে, তারাই মুত্তাকী”। [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৩৩] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে অন্তর থেকে সত্য জেনে সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো সত্য ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল সে জান্নাতে প্রবেশ করবে”। (এটি আহমদ বর্ণনা করেছেন)
৬- আত্মসমর্পন ও আনুগত্য: ইখলাস, আশা-আকাঙ্ক্ষা ও ভয়-ভীতি সহকারে সকল নির্দেশ পালন ও সমস্ত নিষেধ হতে বিরত থেকে তার হকসমূহ পালন করা এবং ইবাদতে তাকে এক জেনে আল্লাহর জন্য বিনয়াবনত হওয়া দ্বারা আনুগত্য করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَأَنِيبُوٓاْ إِلَىٰ رَبِّكُمۡ وَأَسۡلِمُواْ لَه [الزمر: ٥٣]
“আর তোমরা তোমাদের রবের অভিমুখী হও এবং তার কাছে আত্মসমর্পণ কর”। [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৫৪] তিনি আরো বলেন,
وَمَن يُسۡلِمۡ وَجۡهَهُۥٓ إِلَى ٱللَّهِ وَهُوَ مُحۡسِنٞ فَقَدِ ٱسۡتَمۡسَكَ بِٱلۡعُرۡوَةِ ٱلۡوُثۡقَىٰۗ [لقمان: ٢٢]
“আর যে ব্যক্তি একনিষ্ঠ ও বি-শুদ্ধচিত্তে আল্লাহর কাছে নিজকে সমর্পণ করে, সে তো শক্ত রশি আঁকড়ে ধরে”। [সূরা লুকমান, আয়াত: ২২]
৭- কালিমাকে গ্রহণ করা যা প্রত্যাখ্যান করার পরিপন্থী। আর তা অন্তর দিয়ে কালিমা ও তার মর্মার্থ এবং তার দাবিকে গ্রহণ করে নেওয়ার মাধ্যমেই হয়ে থাকে। তবে যে ব্যক্তি নিজস্বার্থে ও অহংকার-বশত তার দিকে আহ্বান করে তার থেকে তা সে গ্রহণ করবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
إِنَّهُمۡ كَانُوٓاْ إِذَا قِيلَ لَهُمۡ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا ٱللَّهُ يَسۡتَكۡبِرُونَ [الصافات : ٣٥]
“তাদেরকে যখন বলা হত লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ তখন তারা অহংকার করত”। [সূরা সাফফাত, আয়াত: ৩৫] যার অবস্থা এরকম সে মুসলিম নয়।