লগইন করুন
আর যে ব্যক্তি কোনো নবীর কবর অথবা সৎলোকের কবরের কাছে যায় অথবা এমন জায়গায় যায় যাতে এ বিশ্বাস করে যে, এটি কোনো নবীর কবর অথবা সৎ ব্যক্তির কবর, যদিও বাস্তবে তা নয় এবং তার কাছে কিছু চায় ও তার দ্বারা মুক্তি প্রার্থনা করে, তার এ কাজটি তিন প্রকার হতে পারে:
প্রথম প্রকার: সে উক্ত নবী বা সৎলোকের কাছে তার প্রয়োজন পূরণের প্রার্থনা জানাবে। যেমন, সে তার রোগমুক্তি চাইবে অথবা চতুস্পদজন্তুর রোগমুক্তি কামনা করবে অথবা তার ঋণ পরিশোধ চাইবে অথবা তার দ্বারা তার শত্রু থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ কামনা করবে অথবা তার নিজের বা তার পরিবার-পরিজন বা তার চতুস্পদ জন্তুর জন্য নিরাপত্তা প্রার্থনা করবে অথবা অনুরূপ কিছু চাইবে যা মহান আল্লাহ ব্যতীত আর কেউ করতে সমর্থ নয়। বস্তুত এমন কিছু করা সুস্পষ্ট শির্ক। এ ধরনের ব্যক্তিদের তাওবা করে দীনে ইসলামে ফিরে আসার নির্দেশ দেওয়া হবে, অতঃপর যদি সে তাওবা করে ভালো, অন্যথায় তাকে বিচারের মাধ্যমে হত্যা করা হবে।
আর যদি সে বলে: আমি তার কাছে চাচ্ছি; কেননা তিনি আমার চেয়ে আল্লাহ তা‘আলার অধিক নিকটবর্তী, যেন আমার এসব বিষয়ে তিনি আল্লাহর কাছে সুপারিশ করেন। কারণ, আমি তার দ্বারা আল্লাহর নিকট চাচ্ছি যেমনিভাবে রাষ্ট্রপ্রধানের কাছে তার বিশেষ ও সহযোগীদের মাধ্যমে চাওয়া হয়। বস্তুত এ কাজগুলো মুশরিক ও নাসারাদের কাজ। কেননা তাদের ধারণা মতে তারা তাদের ধর্মীয়-পণ্ডিত ও পীর-দরবেশদেরকে সুপারিশকারী রূপে গ্রহণ করে থাকে এ আশায় যে তারা তাদের উদ্দেশ্য সিদ্ধি করতে সুপারিশ করবে। তাছাড়া মহান আল্লাহ মুশরিকদের বিষয়েও অবহিত করেছেন যে, তারা বলত:
﴿مَا نَعۡبُدُهُمۡ إِلَّا لِيُقَرِّبُونَآ إِلَى ٱللَّهِ زُلۡفَىٰٓ ٣﴾ [الزمر: ٣]
“আমরা তো এদের ইবাদত এ জন্যেই করি যে, এরা আমাদেরকে পরিপূর্ণভাবে আল্লাহর সান্নিধ্যে এনে দিবে।” [সূরা আয-যুমার, আয়াত:৩]
মহান আল্লাহ আরও বলেন,
﴿أَمِ ٱتَّخَذُواْ مِن دُونِ ٱللَّهِ شُفَعَآءَۚ قُلۡ أَوَلَوۡ كَانُواْ لَا يَمۡلِكُونَ شَيۡٔٗا وَلَا يَعۡقِلُونَ ٤٣ قُل لِّلَّهِ ٱلشَّفَٰعَةُ جَمِيعٗاۖ لَّهُۥ مُلۡكُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِۖ ثُمَّ إِلَيۡهِ تُرۡجَعُونَ ٤٤﴾ [الزمر: ٤٣، ٤٤]
“তবে কি তারা আল্লাহ ছাড়া অন্যকে সুপারিশকারী ধরেছে? বলুন, ‘তারা কোনো কিছুর মালিক না হলেও এবং তারা না বুঝলেও?’ বলুন, ‘সকল সুপারিশ আল্লাহরই মালিকানাধীন, আসমানসমূহ ও যমীনের মালিকানা তাঁরই, তারপর তাঁরই কাছে তোমাদেরকে প্রত্যাবর্তিত করা হবে।”
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
﴿مَا لَكُم مِّن دُونِهِۦ مِن وَلِيّٖ وَلَا شَفِيعٍۚ أَفَلَا تَتَذَكَّرُونَ ٤﴾ [السجدة: ٤]
“তিনি ছাড়া তোমাদের কোনো অভিভাবক নেই এবং সুপারিশকারীও নেই; তবুও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না?” [সূর আস-সাজদাহ, আয়াত: ৪]
মহান আল্লাহ আরও বলেন,
﴿مَن ذَا ٱلَّذِي يَشۡفَعُ عِندَهُۥٓ إِلَّا بِإِذۡنِهِ﴾ [البقرة: ٢٥٥]
কে সে, যে তাঁর অনুমতি ব্যতীত তাঁর কাছে সুপারিশ করবে? [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৫৫]
এ আয়াতসমূহে আল্লাহ তা‘আলা তার মাঝে ও সৃষ্টিজীবের মধ্যে পার্থক্য বর্ণনা করেন। কেননা স্বভাবগতভাবে মানুষ তাদের মধ্যকার যে বড়, যাকে সে সম্মান করে থাকে, তার নিকট সুপারিশ কামনা করে এবং তাকে সুপারিশকারী হিসেবে চায়। ফলে তিনি উৎসাহী হয়ে অথবা ভীত হয়ে, লজ্জাশীল হয়ে অথবা ভালোবেসে অথবা অন্যান্য কারণে তার প্রয়োজন পূরণ করে থাকে। পক্ষান্তরে আল্লাহ তা‘আলার কাছে কোনো ব্যক্তিই সুপারিশ করে না, যতক্ষণ না সে সুপারিশকারী হিসেবে অনুমতি প্রাপ্ত হয়। সুতরাং সে আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতীত কোনো কিছুই করবে না, আর সুপারিশকারীর সুপারিশও তার অনুমতি সাপেক্ষে। ফলে সকল বিষয়ের একচ্ছত্র অধিপতি হচ্ছেন একমাত্র মহান আল্লাহ।
একারণেই আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, সহীহ বুখারী ও মুসলিমের হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এসেছে, তিনি বলেন,
«لَا يَقُولَنّ أَحَدُكُمْ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي إِنْ شِئْتَ اللَّهُمَّ ارْحَمْنِي إِنْ شِئْتَ لِيَعْزِمْ الْمَسْأَلَةَ فَإِنَّهُ لَا مُكْرِهَ لَهُ»
“তোমাদের কেউ এভাবে বলবে না যে, হে আল্লাহ! তুমি চাইলে আমাকে ক্ষমা কর, হে আল্লাহ। তুমি চাইলে আমাকে রহম কর। কিন্তু অবশ্যই সে চাওয়াকে দৃঢ় করবে। কেননা আল্লাহকে বাধ্য করার কেউ নেই।”[1]
সুতরাং হাদীসে স্পষ্ট হলো যে, নিশ্চয় মহান রব আল্লাহ তা‘আলা যা ইচ্ছা তা করতে পারেন। কেউ তার ইচ্ছার ব্যাপারে জোর-জবরদস্তি করার অধিকার রাখে না। অথচ দুনিয়ার মানুষদের মধ্যে কখনও কখনও সুপারিশকারী সুপারিশকৃত সত্ত্বাকে বাধ্য করে থাকে। অনুরূপ যাচ্ঞাকারী কখনও কখনও প্রার্থিত ব্যক্তির ওপর চাপ প্রয়োগ করে থাকে যখন সে তার কাছে বারবার চাইতে থাকে এবং তাকে চাওয়ার মাধ্যমে কষ্ট দিয়ে থাকে।
অতএব, অনুরাগ ও চাওয়া-পাওয়ার ইচ্ছা কেবলমাত্র আল্লাহর কাছেই হওয়া অবশ্যক। যেমন, মহান আল্লাহ বলেন,
﴿فَإِذَا فَرَغۡتَ فَٱنصَبۡ ٧ وَإِلَىٰ رَبِّكَ فَٱرۡغَب ٨﴾ [الشرح: ٧، ٨]
“অতএব, আপনি যখনই অবসর পান তখনই কঠোর ইবাদাতে রত হোন, আর আপনার রবের প্রতিই গভীর আনুরাগী হোন”। [সূরা আশ-শারহ, আয়াত: ৭-৮]
আর ভয়-ভীতি হবে আল্লাহর জন্যই। যেমন, মহান আল্লাহ বলেন,
﴿وَإِيَّٰيَ فَٱرۡهَبُونِ ٤٠﴾ [البقرة: ٤٠]
“আর তোমরা শুধু আমাকেই ভয় কর।” [সূরা আল বাকারা, আয়াত: ৪০]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
﴿ فَلَا تَخۡشَوُاْ ٱلنَّاسَ وَٱخۡشَوۡنِ ٤٤﴾ [المائدة: ٤٤]
“কাজেই তোমরা মানুষকে ভয় করো না এবং আমাকেই ভয় কর।”[সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৪৪]
আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে দো‘আর মধ্যে তাঁর ওপর দুরূদ পড়তে আদেশ দিয়েছেন এবং এটাকে আমাদের দো‘আ কবুল হওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন। (অর্থাৎ রাসূলকে মাধ্যম বানাতে বলেন নি, বরং তার ওপর দুরূদ পাঠকে দো‘আ কবুলের কারণ হিসেবে বলেছেন)
অধিকাংশ পথভ্রষ্টরা বলে থাকে, অমুক ব্যক্তি আমার থেকে আল্লাহর অধিক নিকটবর্তী, আমি আল্লাহ থেকে দূরে। আমার পক্ষে এর মাধ্যম ব্যতীত দো‘আ করা অসম্ভব। এ জাতীয় বক্তব্য মূলতঃ মুশরিকদের বক্তব্য (ঈমানদার এ ধরনের কথা কখনো বলতে পারে না)। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌۖ أُجِيبُ دَعۡوَةَ ٱلدَّاعِ إِذَا دَعَانِۖ ١٨٦﴾ [البقرة: ١٨٦]
“আর আমার বান্দাগণ যখন আমার সম্পর্কে আপনাকে জিজ্ঞেস করে, (তখন বলে দিন যে) নিশ্চয় আমি অতি নিকটে। আহ্বানকারী যখন আমাকে আহ্বান করে আমি তার আহবানে সাড়া দেই।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৬]
বর্ণনায় এসেছে যে, সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, আমাদের রব কি নিকটবর্তী? যাতে আমরা তাকে গোপনে ডাকবো নাকি দূরবর্তী? যাতে আমরা তাকে শব্দ করে ডাকবো? অতঃপর মহান আল্লাহ এ আয়াতটি অবতীর্ণ করেন।
অনুরূপ সহীহ বুখারীতে বর্ণিত হয়েছে, সাহাবীগণ কোনো এক সফরে ছিলেন এবং তারা জোরে জোরে তাকবীর পাঠ করছিলেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«أيها الناس أربعوا على أنفسكم فإنكم لا تدعون أصما ولا غائبا إنما تدعون سميعا بصيرا إن الذي تدعون أقرب إلى أحدكم من عنق راحلته»
হে মানুষ! তোমরা তোমাদের নিজেদের ওপর দয়া কর, কেননা তোমরা কোনো বধির ও অনুপস্থিত কাউকে ডাকছনা। বরং তোমরা ডাকছ এমন এক সত্ত্বাকে যিনি সর্বশ্রোতা ও নিকটবর্তী। নিশ্চয় তোমরা যে সত্ত্বাকে ডাকছ তিনি তোমাদের কারো কাছে তার বাহণের ঘাড় থেকেও নিকটবর্তী।”[2]
আর মহান আল্লাহ তার বান্দাদেরকে কেবল তারই কাছে সালাত ও দো‘আ করার আদেশ দিয়েছেন এবং তাদের সকলকে বলতে বলেছেন,
﴿إِيَّاكَ نَعۡبُدُ وَإِيَّاكَ نَسۡتَعِينُ ٥﴾ [الفاتحة: ٥]
“আমরা শুধু আপনারই ‘ইবাদাত করি এবং শুধু আপনারই সাহায্য প্রার্থনা করি,” [সূরা আল-ফাতিহা, আয়াত: ৫]
আর তিনি মুশরিকদের থেকে বর্ণনা করেন যে, তারা বলত:
﴿مَا نَعۡبُدُهُمۡ إِلَّا لِيُقَرِّبُونَآ إِلَى ٱللَّهِ زُلۡفَى﴾ [الزمر: ٣]
“আমরা তো এদের ইবাদত এ জন্যে করি যে, এরা আমাদেরকে পরিপূর্ণভাবে আল্লাহর সান্নিধ্যে এনে দিবে।” [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৩]
তাই উক্ত মুশরিককে (যে বলে থাকে, ‘অমুক ব্যক্তি আমার থেকে আল্লাহর অধিক নিকটবর্তী, আমি আল্লাহ থেকে দূরে। আমার পক্ষে এর মাধ্যম ব্যতীত দো‘আ করা অসম্ভব’ তাকে) বলা হবে, যখন তুমি একে (পীর বা কবর বা ওলী ইত্যাদিকে) এ ধারণা করে ডাক যে, সে (আল্লাহর চেয়েও) তোমার অবস্থা সম্পর্কে অধিক অবগত এবং তোমার প্রার্থনা পূর্ণ করতে অধিক সক্ষম অথবা তোমার প্রতি অধিক দয়াপরবশ। তাহলে তা হবে অজ্ঞতা, গোমরাহী ও কুফুরী। আর যদি তুমি জানো যে, মহান আল্লাহ অধিক জ্ঞাত ও অধিক ক্ষমতাবান ও অধিক দয়াশীল তাহলে তাকে বাদ দিয়ে অন্যের কাছে কেন প্রার্থনা কর? তুমি কি শুন নি যা ইমাম বুখারী রহ. ও অন্যান্যরা জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে সকল কাজে ইস্তেখারা করতে শিখিয়েছেন, যেমনিভাবে তিনি আমাদের কুরআনের সূরা শিখিয়েছেন। তিনি বলেছেন,
«إِذَا هَمَّ أَحَدُكُمْ بِالأَمْرِ فَليَرْكَعْ رَكْعَتَيْنِ مِنْ غَيْرِ الفَرِيضَةِ ثُمَّ لِيَقُلِ اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْتَخِيرُكَ بِعِلمِكَ وَأَسْتَقْدِرُكَ بِقُدْرَتِكَ ، وَأَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ العَظِيمِ ، فَإِنَّكَ تَقْدِرُ وَلاَ أَقْدِرُ وَتَعْلَمُ وَلاَ أَعْلَمُ وَأَنْتَ عَلاَّمُ الغُيُوبِ ، اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ خَيْرٌ لِي فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي أَوْ قَالَ عَاجِلِ أَمْرِي وَآجِلِهِ فَاقْدُرْهُ لي وَيَسِّرْهُ لي ثُمَّ بَارِكْ لي فِيهِ ، وَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ الأَمْرَ شَرٌّ لي في ديني وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي أَوْ قَالَ في عَاجِلِ أمري وَآجِلِهِ ، فَاصْرِفْهُ عَنِّى وَاصْرِفْنِي عَنْهُ ، وَاقْدُرْ هَذَا لِي الخَيْرَ حَيْثُ كَانَ ثُمَّ أَرْضِنِي به»
“যখন কেউ কোনো বিশেষ কাজের ইচ্ছা করে সে যেন ফরয ব্যতীত দু’ রাকাত সালাত আদায় করে। তারপর সে যেন বলে, হে আল্লাহ! আমি আপনার জ্ঞানের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করছি এবং আপনার ক্ষমতার মাধ্যমে এ কাজ করার ক্ষমতা প্রার্থনা করছি। আপনার নিকট আপনার অনুগ্রহ প্রার্থনা করছি। নিঃসন্দেহে আপনি ক্ষমতাবান। আমার কোনো ক্ষমতা নেই। আপনি সব কিছু জ্ঞাত, আমি কিছুই জানি না। আপনি সকল গায়েবী তথ্য সম্পর্কে ওয়াকিফহাল। হে আল্লাহ! আপনার ইলমে যদি এ কাজের মধ্যে আমার দীন ও জীবিকায় কল্যাণ নিহিত থাকে এবং পরিণামের দিক দিয়ে কাজটি ফলদায়ক হয়, তাহলে আপনি এ কাজটি বরাদ্দ করুন এবং তা আমার জন্য সহজ করুন। অতঃপর আমার জন্য তাতে বরকত দিন। আর যদি আপনার ইলমে এ কাজের মধ্যে আমার জন্য দীন ও জীবিকার দিক দিয়ে ক্ষতির আশংকা থাকে বা পরিণামে আমার জন্য অনিষ্টকর হয় তবে আপনি তা থেকে আমাকে বিরত রাখুন এবং আমাকে তা থেকে দুরে রাখুন আর আমার জন্য যেখানে কল্যাণ রয়েছে তা বরাদ্দ করুন। তারপর আপনি সেটার ওপর আমাকে সন্তুষ্টি দিন।” বর্ণনাকারী বলেন, ‘নিজ প্রয়োজন ও হাজতের কথা উল্লেখ করবে।”[3]
এখানে বান্দাকে আদেশ করা হয়েছে বলার জন্য যে,
«أَسْتَخِيرُكَ بِعِلمِكَ وَأَسْتَقْدِرُكَ بِقُدْرَتِكَ، وَأَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ العَظِيمِ»
“হে আল্লাহ আমি আপনার জ্ঞানের মাধ্যমে কল্যাণ প্রার্থনা করছি এবং আপনার ক্ষমতার মাধ্যমে এ কাজ করার ক্ষমতা প্রার্থনা করছি। আর আপনার নিকট আপনার অনুগ্রহ প্রার্থনা করছি।” (অর্থাৎ বলা হয় নি যে অমুকের মাধ্যমে চাও বা অমুকের অনুগ্রহে চাও) আর যদি তুমি জান যে, সে তোমার থেকে আল্লাহর অধিক নিকটবর্তী এবং তোমার থেকে অধিক মর্যাদাবান। তাহলে এটা একটি সত্য কথা, (কারণ, নবীগণ সাধারণ মানুষদের চেয়ে আল্লাহর বেশি নিকটবর্তী ও বেশি মর্যাদাবান) কিন্তু কথাটি সত্য হলেও তারা এর দ্বারা বাতিল উদ্দেশ্য নিয়েছে। কেননা সে তোমার থেকে আল্লাহর অধিক নিকটবর্তী ও মর্যাদাবান হওয়ার অর্থ হলো: তোমাকে যা দেওয়া হবে তাকে তোমার চেয়ে অধিক সাওয়াব ও প্রতিদান দেওয়া হবে। সে (নবী বা ওলী) আল্লাহর অধিক নিকটবর্তী ও মর্যাদাবান হওয়ার অর্থ এ নয় যে, সরাসরি তুমি আল্লাহকে ডাকলে আল্লাহ যা শুনবে, যখন তুমি সে নবী বা ওলীকে ডাকবে তখন মহান আল্লাহ তোমার প্রয়োজন পূরণ অধিক ত্বরান্বিত করবেন। (বিষয়টি মোটেও এরকম নয়।) কেননা তুমি যদি সত্যি সত্যিই কোনো শাস্তিযোগ্য অপরাধী হও, আর ধরে নাও তোমার দো‘আও প্রত্যাখ্যাত হয়ে গেল, যেহেতু তুমি দো‘আতে সীমালঙ্ঘন করেছ, তখন নবী ও সৎকর্মশীলগণ আল্লাহর অপছন্দনীয় কাজে কখনও তোমার কোনো সহায়তা করবেন না। আল্লাহর অসন্তুষ্টি হয় এমন কিছুতে তারা কোনো প্রচেষ্টা চালাবেন না। আর যদি তুমি এমনটি (শাস্তিযোগ্য অপরাধী) না হও, তবে রহমত ও কবুলের জন্য তো আল্লাহই অধিক উত্তম।
[2] সহীহ বুখারী (৪/৬৯); সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৭০৪; সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ১৫৩৮; জামে‘ তিরমিযী, হাদীস নং ৩৩৭১ ।
[3] সহীহ বুখারী (৩/৪০); আবু দাউদ, হাদীস নং ১৫৩৮; জামে তিরমিযী, হাদীস নং ৪৮০; সুনান নাসাঈ, হাদীস নং ৩২৫৫।