সাওম বিষয়ক আধুনিক কিছু মাসআলা সাওমপালনকারীর জন্য নাকের ড্রপ ব্যবহারের বিধান ইসলামহাউজ.কম
সাওমপালনকারীর জন্য নাকের ড্রপ ব্যবহারের বিধান

বিবরণ: কোনো কোনো সময় মানুষ এমন অসুখে আক্রান্ত হয় যে, তার জন্য নাকের ড্রপ ব্যবহার করা অপরিহার্য হয়ে পড়ে। যেমন, কেউ দীর্ঘস্থায়ী সর্দিতে আক্রান্ত হলে বা নাকে এলার্জির সমস্যা থাকলে ড্রপ ব্যবহার করতে হয়। এক্ষণে, রামাযানের দিবসে সাওম পালনকারীর জন্য নাকের এই ড্রপ ব্যবহারের হুকুম কী?

হুকুম: আধুনিক যুগের ফকীহগণ এই মাসআলায় ৩ ধরণের অভিমত ব্যক্ত করেছেন:

প্রথম অভিমত: নাকের ড্রপ মোটেও সাওম ভঙ্গ করবে না। কেননা

প্রথমত: ড্রপের মাধ্যমে যে উপাদানটুকু পাকস্থলী পর্যন্ত পৌঁছে, তা খুবই অল্প। ছোট্ট একটি চামচের তরল পদার্থকে ৭৫ ভাগে ভাগ করলে এর মাত্র ১ ভাগ পাকস্থলী পর্যন্ত পৌঁছে। কুলি করলে যতটুকু পানি পাকস্থলীতে যায়, তার চেয়ে এর পরিমাণ আরো কম। সুতরাং কুলি করলে যেমন সাওম ভঙ্গ হয় না, নাকের ড্রপ ব্যবহার করলেও তেমনি সাওম ভঙ্গ হবে না।

দ্বিতীয়ত: নাকের এই ড্রপ এক দিকে যেমন খুবই অল্প, অন্য দিকে তেমনি তা খাদ্যের কাজও দেয় না; বরং কোনো অবস্থাতেই একে খাদ্য বা পানীয় কোনোটাই গণ্য করা হয় না। আর আল্লাহ সাওম ভঙ্গকারী হওয়ার জন্য খাদ্য ও শক্তি সঞ্চারকারী হওয়ার শর্তারোপ করেছেন।

দ্বিতীয় অভিমত: নাকের ড্রপ সাওম ভঙ্গ করবে। বর্তমান যুগের ওলামায়ে কেরামের মধ্যে যাঁরা এই মত ব্যক্ত করেছেন, শাইখ আব্দুল আযীয ইবন বায এবং শাইখ মুহাম্মাদ ইবন উসাইমীন রহ. তাদের অন্যতম। লাক্বীত ইবন সবিরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«بَالِغْ فِي الِاسْتِنْشَاقِ، إِلَّا أَنْ تَكُونَ صَائِمًا»

“নাকের ভেতর অতি উত্তমরূপে পানি দিবে, তবে যখন তুমি সাওম অবস্থায় থাকবে, তখন নয়”।[1]

উক্ত হাদীস প্রমাণ করে যে, পাকস্থলীতে পৌঁছতে পারে এমন কোনো ড্রপ নাকে ব্যবহার করা সাওম পালনকারীর জন্য জায়েয নেই। আর হাদীস, বাস্তবতা ও আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের মাধ্যমে একথা সবারই জানা যে, নাক কণ্ঠনালীর প্রবেশ পথ।

উক্ত হাদীস প্রমাণ করে, নাক প্রথমে কণ্ঠনালী, অতঃপর পাকস্থলী পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার অন্যতম রাস্তা। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানও এটি প্রমাণ করেছে। বিশেষ করে ‘অঙ্গব্যবচ্ছেদ বিদ্যা’ (এ্যানাটমি/Anatomy) সন্দেহের এতটুকু সুযোগ রাখে নি যে, নাকের সাথে কণ্ঠনালীর গভীর যোগসূত্র রয়েছে।

তৃতীয় অভিমত: বর্তমান যুগের কোনো কোনো আলেমের মতে, নাকের ড্রপ ব্যবহারের বিষয়টি ব্যাখ্যা সাপেক্ষ। যদি এর কোনো অংশ কণ্ঠনালী পর্যন্ত না পৌঁছে, তাহলে তা সাওম ভঙ্গ করবে না। যেমন, কেউ তা নাকের এক প্রান্তে ব্যবহার করল। পক্ষান্তরে, যদি এর কোনো অংশ কণ্ঠনালী পর্যন্ত পৌঁছে, তাহলে তা সাওম ভঙ্গ করবে।

তাঁরা মূলতঃ উল্লিখিত উভয় পক্ষের দলীলসমূহের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করার প্রয়াস পেয়েছেন। তবে তাদের মতেও, ভেতরে যতটুকু যায়, তার পরিমাণ খুবই সামান্য; কুলি করার পরে যতটুকু লাবণ্য মুখের মধ্যে অবশিষ্ট থাকে, ঠিক তার মতই। আর এই সামান্য অংশ সাওমের কোনো ক্ষতি করবে না মর্মে ইজমা‘ রয়েছে।

[1] সুনান আবু দাঊদ, হাদীস নং ১৪২।